বাঁক ( ২০ পর্ব )

0
165

বাঁক ( ২০ পর্ব )
____________

মানহার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। দমবন্ধ হয়ে আসার উপক্রম তার। নড়তেও পারছে না। মৃদুল বাঁ পা দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে তাকে। ওর অর্ধেক শরীর মানহার ওপরে এনে বুকের দিকে হাত নিয়ে কোল বালিশের মতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গাল তারই মুখে রেখেছে। মানহার মনে হচ্ছে নাকটা এবার চ্যাপটা হয়ে যাবে। সে ধীরে ধীরে ওর গালের নিচ থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। মৃদুলের থুতনি পড়ে এবার তার ঘাড়ে। নাক থেকে উষ্ণ শ্বাস আছড়ে পড়ছে গলায়। মৃদুল ঘুমের ঘোরে মৃদু শব্দ করে বাঁ হাত মানহার বগলের দিকে নিয়ে আরও ঘনিষ্ঠ হয়। মানহার একবার ইচ্ছা হলো নিজেকে ছাড়িয়ে নেবে। পুনরায় ভাবে তাতে মৃদুলের ঘুম ভেঙে যাবে। ডান হাতটা কেবল আস্তে আস্তে বের করে ওর মাথায় রাখে। চুলে আঙুল ডোবায়। খানিক পর পর তীব্র ভালোবাসায় মাথায় ঠোঁট আর নাক চেপে ধরে চুমু খায়। মুহূর্তটা অসম্ভব ভালো লেগেছে মানহার। তবে ডান পা কেমন ‘ঝিঁঝিঁ’ করছে। আস্তে আস্তে বের করতে যেয়ে বাঁধলো বিপত্তি৷ মৃদুলের পুরো কোমর তার দু-পায়ের মধ্যখানে চলে এসেছে৷ তাকিয়ে দেখে ওর শরীর কেমন বাঁকা হয়ে আছে। কী করবে এখন? এভাবে থাকলে তো মানুষটার শরীর ব্যথা করবে। মানহা আস্তে আস্তে ওর বগলের দিকে দু-হাত নিয়ে টেনে পুরোপুরি ওপরে নিয়ে আসে। মৃদুলের বাঁ কান তার কানের সঙ্গে লেগে আছে। কাঁধের পেশি থুতনি চেপে ধরে ঠোঁটে এসে লেগেছে। মানহার পুরো শরীর কেঁপে উঠছে বারবার। দু’পায়ে মৃদুলকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দু’হাতে পিঠ প্যাঁচিয়ে কাঁধে নাক আর ঠোঁট আলতো করে ঘষতে থাকে। কী এক অসহ্যকর অনূভুতি হচ্ছে। ওর শরীরের উষ্ণতায় মানহার অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে।
মুখটাও বেশি নাড়াতে পারছে না। ঘাড়ে আর কাঁধ ঠোঁটের কাছে থাকায় বারবার নাক ঠোঁট ঘষছে আর চুমু খাচ্ছে। ইচ্ছা করছে মানুষটাকে খেয়ে ফেলতে। মৃদুল ঘুমের ঘোরে একটু মৃদু গোঙানি দিয়ে নড়ে উঠলো।
অসহ্য এক সুখের ব্যথায় আচমকা ওর পিঠ খামচে ধরে মানহা। দু’পায়ে মৃদুলকে আঁকড়ে ধরে কাঁধে দাঁত বসিয়ে দেয়। মৃদুল আর্তনাদ করে ঘুম থেকে উঠে ওর ওপর থেকে নেমে যায়। মানহা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ঘন ঘন শ্বাস ছাড়ছে। মৃদুল চোখ কচলাতে কচলাতে ওর দিকে তাকায়। কী হচ্ছিল এতক্ষণ সে কিছুই বুঝতে পারছে না। মানহার বুকের ওপর থেকে শাড়ি সরে পড়ে উম্মুক্ত হয়ে আছে। পেট উঠা-নামা করছে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে।

– ‘কী হয়েছে মানহা? তুমি আমার কাঁধে কামড় দিয়েছো কেন?’

মানহা ওর দিকে ক্রোধান্বিত চেহারায় তাকিয়ে বললো,

– ‘তোমার চরিত্র তো ভালো না মৃদুল। আমার শাড়ি শরীর থেকে টেনে সরিয়ে ওপরে উঠে যেখানে-সেখানে হাত দিয়েছো কেন? ছাড়াতে বলার পরও ছাড়ছো না দেখে কামড় দিয়েছি।’

মৃদুল বিস্মিত হয়ে বললো,

– ‘কী বলো এসব? আমি তো ঘুমে ছিলাম।’

– ‘তাহলে আমার ওপরে কীভাবে আসলে? আমি কি তোমার নিচে চলে গিয়েছিলাম যত্তসব বাহানা এখন।’

– ‘বিশ্বাস করো মানহা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’

– ‘চুপ করো তো, তোমরা পুরুষ মানুষদের জানা আছে ভালো করে। বিয়ে করবে না কিন্তু লোভ ঠিকই আছে। দেখছো ঘুমে আছি ওমনি আমার শাড়ি টেনে বুক থেকে সরিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছো। আমি তো একটুর জন্য দমবন্ধ হয়ে মারা যেতাম। পত্রিকায় তখন হেডলাইন হতো ধর্ষণের পর খুন।’

কথাটি বলেই মানহা বিছানা থেকে উঠে বাথরুমের দিকে চলে গেল। মৃদুল বোকার মতো তাকিয়ে আছে। কী থেকে কী হলো সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না৷ তবে পুরো রাত মানহাকে নিয়ে আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছে৷ হয়তো স্বপ্নের ঘোরে সে উলটা-পালটা কিছু করতে বসেছিল। এখন মানহার ভুল ভাঙাবে কী করে? এমনিতেই মেয়েটি তার জন্য মামা-খালার বকা খেয়েছে। বিশ্বাস করে বলেই একই রুমে থেকেছে আর সে কি-না ঘুমের ঘোরে কী থেকে কী করে বসেছে। নিশ্চয় বাজে কিছু হবে। সামান্য ব্যাপারে মানহা এরকম প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো মেয়ে না৷ দু’হাতে মুখটা আঁজলা করে সে বসে রইল পালঙ্কে। মানহা বাথরুমে গিয়ে আয়নায় নিজের কাপড় ঠিক করতে করতে ফিক করে হাসে৷ মৃদুলকে সহজে বোকা বানিয়ে ফেলায় সে অদ্ভুত এক মজা পাচ্ছে। সকালটা সুন্দর ছিল। ভালোই হলো আজ গোসল করবে না সে। ওর শরীরের উষ্ণতা সারাক্ষণ গায়ে লেগে থাকুক। কেবল শাড়ি ঠিক করে মুখটা ধুয়ে চুল ঠিক করে বের হয়ে গেল। মৃদুল মুখে হাত দিয়ে পালঙ্কে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। মানহা যেতেই সে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত কাতর গলায় বললো,

– ‘বিশ্বাস করো মানহা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না৷ ঘুমের ঘোরে বাজে কিছু করে থাকলে সরি।’

মানহা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আর থাকতে পারলো না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

– ‘ইশ আমি মজা করেছি, আমার বর সোনাটা কিচ্ছু করেনি। আমিই নিজেই বুকে টেনে নিয়ে ধন্য হয়েছি।’

মৃদুল আচমকা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ক্রোধে হাত তুলে বললো,

– ‘একটা থাপ্পড় দিয়ে সব কয়টা দাঁত ফেলে দেবো। চরিত্র ভালো না, ধর্ষণ করে খুন এগুলো তোমার কাছে মজার শব্দ তাই না? ঘুম থেকে উঠেই ফালতু একটা নাটক করে প্রেম দেখাচ্ছে।’

মানহা লজ্জায় থুতনি বুকের সাথে লাগিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল। মৃদুল বাথরুমের দিকে চলে যেতেই সে ধীরে ধীরে পালঙ্কে গিয়ে বসে। মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলে লজ্জা আর অপমানে। মৃদুল এরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে সে কল্পনাও করেনি। তারই ভুল হয়েছে, মানুষটা কামড় খেয়ে কাঁচা ঘুম থেকে উঠেছে৷ তার উপর সে চরিত্রহীন, ধর্ষক হেন-তেন বলতে গেল কেন? এখন কী করবে? মাফ চাইবে? লজ্জায় তো আর ওর সামনেও যেতে পারবে না।

মৃদুল বাথরুমে এসে আয়নায় তাকিয়ে দেখে কাঁধ লাল হয়ে দাঁতের দাগ বসে গেছে। কিন্তু মানহা তাকে টেনে বুকে নিয়েছে সে টের পায়নি কেন? কীভাবে সম্ভব? ঘুম ভেঙে যাবার কথা। যাইহোক, সে অতিরিক্ত করে ফেলেছে। এভাবে চড় মারার কথা বলা উচিৎ হয়নি। তার জন্য এতকিছু করছে। আর সামান্য কারণে এতো রাগ করে বসলো? তাছাড়া মেয়েটা তো তার মতো প্রেমের অভিনয় করছে না। ভালোবাসে বলেই এমন করে, তাকে আয়োজন করে বোকা বানায়। মৃদুল ঠিক করলো সোজাসুজি ক্ষমা না চাইলেও ট্রেনে যাবার পথে তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে খুশি করে ফেলবে। মেয়েদের হাজার খারাপের মধ্যে ভালো গুণ হচ্ছে পুরুষ মানুষরা খানিকটা সুন্দর করে কথা বললেই তারা সকল দুঃখ-কষ্ট ভুলে যায়। এই জায়গায় পুরুষ মানুষরা ঠিক উলটো। তীব্র রাগের সময় ভাঙাতে গেলে আরও বেশি রেগে যায়। মৃদুল মুখ-হাত ধুয়ে বাথরুম থেকে বাইরে এসে গেঞ্জিটা পরে নিল। ঠিক তখনই বেজে উঠে মানহার মোবাইল।

____চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here