বাঁক ( ৪র্থ পর্ব )

0
260

বাঁক ( ৪র্থ পর্ব )
_____________

কাঁথার ফাঁক দিয়ে চোরা চাহনিতে তাকায় মৃদুল। সাদা ট্রে-তে দু’টা প্লেট। প্লেটে পিস পিস করা লাল টকটকে পাকা পেঁপে দেখে জিভে জল চলে এলো তার। পেটের ক্ষুধা পুনরায় মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠলো। কিন্তু সে যে জ্বরে অপ্রকৃতিস্থ মানুষ। এখন কীভাবে মুখ ফুটে নিজ থেকে খেতে চাইবে? আপন মনে প্রার্থনা করে, এখন শুধু একবার ধাক্কা দেন কেউ। প্রার্থনা কবুল হলো না। সে নিজেকে সামলে নিয়ে কেবল চেয়ে রইল। চোখের সামনে বসেই মুরব্বি আর ইমাম সাহেব দুই প্লেট পেঁপে খেলেন। খানিক পর মেয়েটি আবার চা-বিস্কিট নিয়ে এলো। সে কাঁথার ফাঁক দিয়ে এই প্রথম তাকিয়ে দেখলো পিচ্চি ফাতিহাকে। ওর সামনের একটা দাঁত না থাকায় বিশ্রী লাগছে। বয়স কত হবে? সাত কি আট? দেখে তো মনে হচ্ছে তার থেকে কয়েক বছরের ছোট।

নাস্তা শেষে ইমাম সাহেব বললেন,
– ‘খান সাব এবার উঠি, মক্তবের সময় হয়ে যাবে।’

– ‘হ, আপনের তো যাইতেই হইব, আইচ্ছা যান।’

ইমাম সাহেব চলে গেলেন। মুরব্বি কাঁথার ভেতর দিয়ে তার কপালে হাত দিয়ে জ্বর আন্দাজ করলেন। ফাতিহা ট্রে হাতে নিল। তারপর দু’জন দরজা ভেজিয়ে বাইরে চলে গেলেন।
সে চুপচাপ শুয়ে থেকে নানান বিষয় নিয়ে ভাবে। সম্ভাব্য সকল প্রশ্নের অগ্রীম উত্তর ভেবে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়।
ঘন্টা খানেকের ভেতরে পুনরায় দরজার আর্তনাদ শুনতে পায়। বুঝতে পারে কেউ এসেছে। ভালোভাবে চোখবুজে নেয়। খানিক পর ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখে মুরব্বি মাটিতে শীতল পাটি বিছিয়ে গেছেন। পাশে পলিথিনের সাদা ব্যাগে ওষুধ। ফাতিহা ভাতের বাটি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। পেছনে পানির জগ আর গ্লাস নিয়ে মুরব্বিও এলেন। মৃদুল উনার দিকে এই প্রথম ভালোভাবে তাকায়। এই অল্প সময়ে অসম্ভব পছন্দ হয়ে গেছে মানুষটিকে। পরনে ফতুয়া। চুল-দাড়ি এখনও সাদা হয়নি। চওড়া কাঁধ, বুকের ছাতি বিশাল, দুধের মতো সাদা দাঁত, কৃষ্ণ বর্ণের চেহারা।
তার দিকে এগিয়ে আসছেন দেখে দ্রুত চোখবুজে নিল।

– ‘এই ছাগল উইটা ঘাস খা।’

দরজার ওদিকে চাপা হাসি শুরু হলো। ফাতিহা কি মুখ চেপে হাসছে? মেয়েটি মুরব্বির কী হয়? মেয়ে না-কি নাতনি?

তার মাথার ওপর থেকে কাঁথা সরে গেল।
সদ্য ঘুম থেকে উঠা মানুষের মতো ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকায় মৃদুল। মুরব্বি তার মাথা ঠেলে তুলে দেন।

– ‘চাচা আমি কোনে এখন?’

মুরব্বি রসিকতা করে বললেন,

– ‘শ্বশুরবাড়ি আছিস হারামজাদা। আমি তোরে ছাগল ডাইকা বইসা আছি। আর তুই আমারে চাচা ডাকতেছিস ক্যান? দাদা বল।’

ফাতিহা আবার খিলখিল করে হাসলো। মৃদুল চোখ কচলাতে লাগলো।
মুরব্বি এবার তাড়া দিয়ে বললেন,

– ‘রাতে বাইরে থাইকা জ্বর আনেছিস। এবার ভাত খা উঠে, ওষুধ খাইতে হবে তোর।’

মৃদুল ব্যগ্র গলায় বললো,

– ‘আমি এইখানে কীভাবে আইলাম দাদা?’

– ‘মসজিদের ঘাট থাইকা তোরে তুইলা নিয়া আসছি বিয়া দিবার লাইগা। ইমাম আসতাছেন বিয়া পড়ানোর জন্য। তাড়াতাড়ি উইটা ভাত খা।’

আবার ঝর্ণার পানির কলকলানি শোনা গেল ওদিকে। মৃদুল নিজের অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে ভাবলো, অনেক হয়েছে এবার খাওয়া যাক। সে ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে শীতল পাটিতে গিয়ে আসন পেতে বসে।

– ‘তুই সারা রাইত উপোস ছিলি, তাই নাস্তা না দিয়া বাড়িতে ভাত দিতে কইলাম। ব, তোর লগে আমিও ভাত খাইয়া নিমু। এই বান্দি, তুই খালি হাসতাছস কেন? আমাদের লগে খাবি?’

ফাতিহা মাথা দু’দিকে কাত করে বললো,

– ‘না।’

– ‘না ক্যান? তুই নজর দিবি না-কি বইসা বইসা? যা আরেকটা প্লেট নিয়া আয়। জলদি যা।’

সে পাতলা পায়ে এক দৌড়ে গিয়ে প্লেট নিয়ে এলো।

– ‘এই মাইলেনেউরি, জামাইর বাড়ি গিয়া তো খালি মাইর খাইবি। গ্লাস আর লবণ কে আনবো?’

সে আবার এক দৌড়ে গিয়ে গ্লাস আর লবণদানি নিয়ে এলো। বসলো তাদের সামনে আসন পেতে। দাদা তাদের দু’জনকে ভাত দিলেন। মৃদুলের পাতে রুই মাছের বিশাল মাথা দিয়ে বললেন,

– ‘আমরার পুকুরের মাছ। পেটপুরে খা।’

তারপর ফাতিহার দিকে তাকিয়ে বললেন,

– ‘তুই হা কইরা কি দেখতাছিস? দাঁত পড়া মাইয়া, গু খা টাইনা।’

ফাতিহা দাঁত কটমট করে তাকিয়ে ‘ওয়াক ভাতই খাইমু না’ বলে উঠে গেল। দাদা আবার ‘খ্যাক খ্যাক’ করে হাসতে হাসতে টেনে বসালেন।
মৃদুলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

– ‘লেবু কাঁচা মরিচ লাগলে নে, অবশ্য ডাইল আর গোসত ছাড়া লেবু জমে না। তোর লাগলে নে।’

মৃদুল একটা কাঁচা মরিচ নিয়ে কামড় দিয়ে তাকিয়ে দেখে একটা বিড়াল এসে ফাতিহাকে মানুষের হাতের মতো পা দিয়ে টানছে ফ্রকে ধরে। সে ভাত দিলে খায়, আবার খানিক্ষণ পর ফ্রকে টান দেয়।
দাদা একমনে খাচ্ছেন। তাদের খাবার শেষ হওয়ার পর ফাতিহা গিয়ে সুপারি আনলো। দাদা ওষুধ বের করে খেতে দিলেন মৃদুলকে। তিনি বিছানায় আসন পেতে বসলেন। ফাতিহা বাটি আর প্লেট ঘরে দিয়ে এসে বসলো চেয়ারে।
দাদা সুপারি মুখে পুরে বললেন,

– ‘এইবার ক তোর নাম কি?’

মৃদুলের পেট মোচড় দিয়ে উঠলো। তারমানে এখন একে একে সব জিজ্ঞেস করবেন? অবশ্য সে এই বিছানায় শুয়েই নিজেকে মনে মনে মিথ্যে পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। সকল প্রশ্নের মিথ্যে উত্তর তৈরি করে নিয়েছে। প্রথমেই নিজের আসল নাম গোপন রেখে বললো,

– ‘মৃদুল।’

– ‘এইটা আবার কি নাম। আমি তো উচ্চারণ ও করতে পারমু না। তা বল বাড়ি কোথায়? মসজিদের ঘাটে কোত্থাইকা আইলি?’

আবার সে খানিক আগে প্রস্তুত করা মিথ্যে কথাটি বলে দিলো,

– ‘আমার বাড়িঘর নাই।’

– ‘কি কছ? বাড়িঘর ছাড়া মানুষ কিরকম অয়? এখানে আওয়ার আগে কই আছিলি?’

– ‘রাস্তায় ছিলাম। আমার বাড়িঘর নাই। আমারে এক ফকির ডাস্টবিনে পাইছিল। সেইই পাইলা বড়ো করছে। আমি তার লগে ভিক্ষা কইরা বড়ো হইছি। কয়েকদিন আগে মারা গেছেন উনি। আমি পড়ছি মুসিবতে। কেউ আমারে ভিক্ষা দেয় না। কয় শরীর গতর ভালা আছে ভিক্ষা করছ ক্যান? কাম কইরা খা। কিন্তু কেউ কাম আর দেয় না। ওইদিন শেরপুর লঞ্চে উঠছিলাম ভিক্ষা করার জন্য। সেখানেও কেউ তেমন ভিক্ষা দিল না। আমারে না-কি ভিক্ষুক লাগে না। পেটের ক্ষুধায় লঞ্চে ঘুমাইয়া পড়ছিলাম। ঘুম থাইকা উইটা দেখি রূপগঞ্জ বাজারে চইলা আসছি। তারপর আঁতকা মনে অইল। লোকে কয় ভাটি অঞ্চলে মানুষ বাড়িতে চাকর রাখে। ভাবলাম বাজারে গিয়া দেখি। সারাদিন বাজার আর এলাকায় ঘুরছি কাজ কাম নাই। রাত হইয়া গেছে শরীরেও জ্বর জ্বর ভাব। ঘুমাইবার জায়গাও পাইছিলাম না। তারপর মসজিদ দেইখা ঘাটপাড়ে শুইয়া পড়ছিলাম।’

– ‘হায় হায় কি বলিস? তোর কেউ নাই? কাম-কাজও নাই?’

মৃদুল তাকিয়ে দেখলো দাদার চেহারায় সহানুভূতির চাপ।
মিথ্যে গল্পটা সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করলো ফাতিহার কোমল হৃদয়। সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে।
বুড়ো তাকে টেনে কোলে এনে বললেন,

– ‘কাদিস না বইন। ওরে আমরা রাইখা দিমু বাড়িতে। তোর লগে খেলবো। আমার লগে কাম করবো। তোর বাপ পইড়া আছে বিদেশ। আমি একা একা কি করমু। এখন মিদলও ও থাকবো।’

মৃদুল মনে মনে খানিকটা অবাকই হলো। এতো সহজে উনি বিশ্বাস করবেন আর কাজ দেবেন ভাবেনি সে। তারপর জীবনের প্রায় সতেরো বছর কেটে গেল এই সহজ-সরল মানুষদের সঙ্গে। যাদের হৃদয় অপার ভালোবাসা-মমতায় ভরপুর।
কিন্তু সে শেষপর্যন্ত কী করলো? তাদেরও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মূল্য কখনও দিতে পারেনি। পদে পদে চেতনে-অবচেতনে নিমকহারামি করেছে। চোখ ভিজে এলো মৃদুলের। আবার কী সে দাদার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে? একটুতে ফ্যাসফ্যাস করে কেঁদে ফেলা কোমল হৃদয়ের ফাতিহার বিশ্বাস কী রাখতে পারবে? সে আবার কী ফিরে পাবে মৃদুলকে? তার জীবন যে বড়ো বাঁক নেয়। পদে পদে বাঁক। ছোটবেলায় মা ছোট বোন ইশি আর তাকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নানাবাড়িতে এসেছিলেন। শৈশবের একটা অংশ দাদার বাড়িতে রেখে নানাবাড়ি এলো সে। তারপর সেখানেও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর পালিয়ে গেল রূপগঞ্জে। কত স্মৃতি জমা হলো রূপগঞ্জ। কত ভালোবাসার মানুষ। কতটা বছর কাটিয়ে বড়ো হলো সেখানে। কিন্তু ঠিকই সমস্যাটা পুনরায় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে জলেস্বরী বাজারে। হাতের উলটো পিঠে চোখের জল মুছে স্মৃতি রোমন্থনের ইতি টানলো মৃদুল।

মধ্যবয়স্ক লোকটি কোলে টেনে এনে গালে চুমু খাওয়ার জন্য ঠোঁট সামনে নিতেই চোখবন্ধ করে ইশি মুখ সরিয়ে নিল।

– ‘কি হইল এমন করতাছস কেন?’

ইশি কোনো জবাব না দিয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললো।

– ‘এমন তো কথা আছিল না ইশি। এক দুই টাকা না, বারো হাজার টাকা নিছস কইলাম।’

ইশি নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের জল মুছে সম্মতি জানিয়ে বললো, ‘হু।’

লোকটি এবার বুকে হাত দিয়ে গালে চুমু খেলো। ইশির যেন দমবন্ধ হয়ে আসছিল। সে চোখ বন্ধ করে শরীর শক্ত করে বসে রইল।

– ‘এইরকম টাইট হইয়া বইসা আছস ক্যান? শরীর ছাড় কইলাম।’

ইশি কোনো জবাব দিল না। লোকটি তাড়া দিয়ে বললো,

– ‘কামিজ খুল তো, বুক দেখি।’

ইশি বারবার নিজের সাথে যুদ্ধ করেও কামিজ খুলতে পারছে না। লজ্জায় ঘেন্নায় তার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
লোকটি বিরক্ত হয়ে নিজেই টেনে খুলে ফেললো। ইশি দুই হাতে বুক ঢেকে হাউ-মাউ করে কাঁদতে শুরু করে।

– ‘খানকি এমন করতাছস ক্যান টাকা নিয়া? তুই নিজেই তো রাজি হইছিলি। এখন এমন করলে আমি কিরকম মজা পাইমু? আনন্দই তো মাটি কইরা ফেলতাছিস। উঠ, বুক থাইকা হাত সরা।’

ইশির নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগে। কী করবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। লোকটি টেনে হাত সরিয়ে বুকে মুখ ডুবিয়ে রাখে খানিক্ষণ পর বললো,
– ‘সেলোয়ার খুল।’

ইশি এবার কান্নায় ভেঙে পড়ে লোকটির পা দু’টি জড়িয়ে ধরে বললো,

– ‘আমজাদ ভাই আমারে মাফ কইরা দেন। আমি এই কাজ পারমু না। আম্মার জন্য আমার মাথা ঠিক আছিল না। তাই রাজি হইয়া গেছিলাম।’

আমজাদ চুলের মুঠি ধরে বললো,

– ‘বেইমান্নীর বাইচ্চা বলিস কি? আমার টাকার কি হইব।’

– ‘খোদার কসম কইরা কইলাম ভাই, আমি কাম কইরা দিয়া দিমু আপনার টাকা।’

– ‘চুপ কর খানকি, আগে রাজি হইলি ক্যান?’

– ‘আম্মার জন্য রাজি হইয়া গেছি ভাই। আম্মা ছাড়া যে আমার আর কেউ নাই। তখন বুঝি নাই কাপড় খোলা যে আমার দ্বারা হইব না।’

– ‘এখন বুঝলে হইব? আমার টাকা এখন দিতে পারবি?’

– ‘এখন না পারলেও আমি কাম কইরা দিয়া দিমু ভাই। বিশ্বাস করেন দিয়া দিমু।’

– ‘চুপ করে কাপড় খুল তাড়াতাড়ি, না হয় এখন টাকা ফেরত দে। তুই বেইমান্নী। কথা রাখস নাই।’

ইশি কাঁদতে থাকে৷ নিজের ইজ্জত ভিক্ষা চায়। উত্তেজনার সময় কান্নাকাটি করার কারণে আমজাদ বিরক্ত হয়ে গালি দেয়।

সেদিন ইশি কাজ থেকে ফিরে এসে দরজা খুলতেই দেখতে পায় মা বিছানায় পড়ে পেটে হাত দিয়ে কাতরাচ্ছেন। সে হাঁটু গেঁড়ে বসে জিজ্ঞেস করে,

– ‘কি হইছে আম্মা? এমন করতাচ্ছো কেন?’

ইশির হাত খামচে ধরে তিনি বলেন,

– ‘পেট ব্যথা করতাছে রে মা। আমি আর সহ্য করতে পারতেছি না।’

– ‘কখন থাইকা এমন করতাছে?’

– ‘বিকাল থাইকা।’

কথাটি বলে বিছানায় গড়াগড়ি শুরু করলেন। ইশি বুঝতে পারে এটা স্বাভাবিক ব্যথা না। মা’র ধৈর্য সম্পর্কে সে জানে। কিন্তু এখন কি করবে? কলোনিতে সবাই ক্লান্ত হয়ে কাজ থেকে ফিরছে। কাকে কি বলবে গিয়ে সে? তাড়াতাড়ি গিয়ে রাস্তা থেকে একটা রিকশা এনে মোড়ের ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। ওরা কিছু ওষুধ দিয়ে বলে দিলো যদি ব্যথা না কমে সদর হসপিটালে নিয়ে যেও। ইশি মা’কে নিয়ে বাড়ি ফিরে। রাতের খাবার শেষে ওষুধ খাবায়। কিন্তু পুরো রাত ব্যথায় এপাশ-ওপাশ করে কেটে যায় মায়ের। ভোরে আবার একা একা সিএনজি এনে গেল সদর হসপিটালে। ওরা পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর বললো, এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা। দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। টাকা লাগবে দশ হাজার। সে এতো টাকা পাবে কোথায়? মা’কে হসপিটাল রেখে কলোনিতে ফিরে এসে সবার ধারে ধারে ঋণ চেয়ে পেল না৷ সবাই বললো কলোনির মালিকের কাছে গেলে ঋণ পেতে পারে। সে আমজাদের কাছে যেতে চাইছিল না৷ কারণ লোকটি তাকে কয়েকবার খারাপ প্রস্তাব দিয়েছে। তবুও সেদিন মায়ের জন্য যেতে বাধ্য হয়। আমজাদ ইনিয়ে-বিনিয়ে আগের প্রস্তাবের কথা মনে করিয়ে দেয়। ইশি তখন বলে সবকিছু করতে রাজি সে। শুধু টাকা যেন দেয়। তার মা যেন বাঁচেন। আমজাদ তখন তাকে কাছে টেনে বললো, ‘কান্নাকাটি করিস না। এসব ব্যথা অহরহ হয় এখন৷ অপারেশন হইলেই ভালা হয়ে যাইব তোর মা। চল আমিও যাই তোর লগে হসপিটাল। আমি তোরে ভালোবাসি বইলাই তো কাছে চাই। তোর বিপদে আমজাদ থাকবো না কীভাবে বুঝলি? আগেই আসতি আমার কাছে আমি নিজেই ভর্তি করে দিয়া আসতাম।’

আমজাদ তার কথা রেখেছে। ইশির মা’র অপারেশনের টাকা সহ দেখাশোনা সবকিছুই পাশে থেকে করেছে সে। অপারেশন শেষ। তিনি এখন সিটে আছেন। ডাক্তার বলেছে কিছুদিন হসপিটালে থাকতে হবে৷ আজ ইশিকে নিয়ে নিজের পাওনা আদায়ের জন্য আমজাদ একটা হোটেলে এসেছে।
কিন্তু ইশি এখনও কান্নাকাটি থামছেই না। কোনোভাবেই কাপড় খুলতে রাজি হচ্ছে না সে। আমজাদের ধৈর্যের বাদ ভেঙে গেল। ক্রোধে জোরে একটা চড় দেয় ইশির গালে। তারপর নিজেই টেনে সেলোয়ার খুলতে যায়।

—- চলবে —–

লেখা: MD Jobrul Islam

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here