‘সিক্ত সুভানুভব’
[০৬]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
মেঘ আলোর সামনে চেয়ারে বসে আছে,আর আলো বিছানাতে বসে আছে।মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,,
মেঘঃজানো আমার দাভাই তোমার প্রেমে পড়ে গেছে,সারাদিন তোমার ছবি সামনে নিয়ে বসে থাকে।একমাএ তোমার জন্য আমার দাভাই খাওয়া দাওয়াত ছেড়ে দিসে,তুমি আমার দাভাইকে কি জাদু করছো?আমার আম্মু তোমার উপর খুব রেগে আছে,তোমাকে কাছে পেলে তোমার পাটিসাপ্টার পিঠা বানাবে।
আলোঃআমি তো কিছু করি নি,,তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে,,
মেঘঃতুমি কিছু করো নি তো,আমার দাভাই পাগলের মত করছে কেন?আর তোমাকে কি আমি বকা দিসি যে তুমি কাঁদছো?জানো তোমাকে আমি পুলিশে দিতে পারি।আমার বাবা পুলিশের বড় অফিসার(ঢপ মেরে)
আলোঃদেখ ভাই তুমি আমাকে ভুল বুঝছো,আমি কিছু করি নি।আমি তো বার বার বলছি তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে,তুমি আমার সাথে হয়তো অন্য কাউকে গুলিয়ে ফেলছো।তোমার দাভাইয়ের সাথে আমার তেমন কোন রিলেশন নেই
মেঘঃআমার কোথাও ভুল হচ্ছে না,আমি ছোট নাকি যে আমার ভুল হবে।আচ্ছা তোমার নামটা কি যেন?নাম না জানলে তোমার নামে আম্মুর কাছে নালিশ করবো কি করে?তারাতারি নাম বলো,,
আলোঃআমার নাম আফকিয়া ইবনাত আলো,,(মাথা নিচু করে)
মেঘঃ আচ্ছা থাকো বাই,আমি কিন্ত আবার আসবো।
আলোঃ আচ্ছা
–
মেঘ এতক্ষণ আলোর সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন,মেঘ খুব রেগে আছে।আলো ভয় পেয়ে গেছে,তাই মেঘ যা যা জিজ্ঞাসা করছে সব বলে দিছে,হুট করে তো আর কেউ এসে এমন ভাবে বলবে না।মেঘ বের হয়ে আবার ফিরে এসে আলোকে মেঘের দিকে তাকাতে বলে,আলো তাকায় আর মেঘ ওর কয়েকটা পিক তুলে নেয়।আলো শুধু অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে,মেঘ পিক তুলে হনহন করতে চলে গেল।মেঘ ইচ্ছে করে আজ ফোন নিয়ে এসেছে আলোর পিক তোলার জন্য, মেঘ বাইরে গিয়ে পেট চেপে ধরে ইচ্ছেমত আগে হেসে নিল।আর একা একা বলতে থাকলো,,
–
মেঘঃরোদ মেহবুব এবার তোমার ১২+১২=১৩ টা বাজাবো আমি,আচ্ছা আমি অংক তো করলাম ঠিক আছে তো,আগে ফোনের ক্যালকুলেটর বের করি, আবার হিসাব করি১২+১+=২৪, ১২+১২=২৪ আবার কবে হলো।ধুর আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশে সব হয়,এত হাইপার হওয়ার কিছু নাই,,,। (নিজেই নিজের মাথা হাত বুলিয়ে)
(যা বাবা পাবলিকের সামনে আর একটু হলেই ইজ্জতের কটপটি হয়ে যেত,ওহ সরি কথাটা হবে চটপটি
এবার হিসাব ঠিক আছে,পাবলিক তো আর জানে না, আমি কতটা ইয়ে মানে কি যে বলে হ্য মেধাবী,,)
আমার পেছনে লাগতে আসো না তাই রোদ বাচ্চু,,
দাড়াও তোমার সাঁতার কাটার ব্যবসথা করছি আমি,আর এত বোকা একটা মেয়েকে বউমনি বানালে ভালোই হবে,ইচ্ছেমত বউমনির পেছনে লাগতে পারবো।তবে দাভাইয়ের চয়েজ আছে,বউমনি কিন্ত দেখতে খুব সুন্দর।
,,,,
আর এই কালার জামাতে খুব ভাল লাগছে,কি যেন কালার টা?ও হ্যা মনে পড়ছে কলা,আম,দুধ মাখালে তারপর মাংসের ঝোল মিশিয়ে একটু চটকে,তার ভেতরে শসার পেষ্ট দিয়ে একটু নেড়ে তারপর গাড় সবুজ রং মিশালো,তারপর তার সাথে চকলেট মিশালে যে কালারটা হয়,সেই কালাকের জামাতে সত্যি বউমনিকে দারুন মানিয়েছে,আমিও পরীকে একটা এই কালারের জামা কিনে দিবো।
(পাঠক/পাঠিকা আপনারা ভাবতে থাকেন,আসলে এটা কোন কালারের কথা বললো মেঘ।আমার মাথা ঘুরছে ভাবলে,,আপনারাই ভেবে আমাকে জানাবেন প্লিজ )
–
মেঘ বাসায় চলে গেল,ড্রাইভার ছিল ওর সাথে,মেঘ ড্রাইভারকেও এভাবে থ্রেট দিয়ে এখানে এনেছে,মেঘ ওর স্কুল ছুটির আগেই বাসায় চলে গেল।রোদের আম্মু তখন সোফাতে বসে ছিল,মেঘকে আসতে দেখে ওর আম্মু বললো,,
আম্মুঃকি ব্যাপার?মেঘ তুমি এত তারাতারি বাসায় ফিরে এলে কেন?তোমার তো আরো দু’ঘন্টা পর আসার কথা,মেঘ তুমি পালিয়ে এসেছো
মেঘঃ আম্মু তুমিও না বোকা বোকা কথা বলো,আমার পা থাকতে আমি অযথা পালিয়ে আসবো কেন?আর আমি পালিয়ে আসি নি,আমাদের কয়েকজন টিচারের ডায়রিয়া হয়েছে,টিচাররা ওয়াশরুমে যাবে নাকি আমাদের ক্লাস করাবে বলো।এজন্য আমাদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে,,,
আম্মুঃকয়েকজনের হবে কেন?মেঘ তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস না তো?আর একজনের হবে সেটা কমন বাট কয়েকজনের হবে কেন?
মেঘঃ আম্মু স্যাররা কালকে কয়েকজন মিলে কোথায় যেন খেতে গিয়েছিলো?তারপর থেকে এই অবস্থা,স্যার রা দৌড়ের উপর আছে,
আম্মুঃআজকাল কিছু রেস্টুরেন্ট গুলোতে, খারাপ খাবার রাখে, আর সেগুলোই কারো কারো খেয়ে এমন হয়।এসব কেন যে করে কে জানে?এগুলো খেলে তো শরীর খারাপ হবেই তাই না,
ওকে তুই যা,ফ্রেস খেয়ে নিবি,,তারপর পড়তে বসবি।
মেঘঃ আচ্ছা তোমার বড় রাজকুমার কই?উনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল,,বাসায় ফিরলে অবশ্যই বলবে আমার সাথে দেখা করতে
(তোমাকে ঢপ মারলাম আর তুমি বুঝতেই পারলে না আম্মু ,আহারে বেচারা স্যারদের ইয়ে হচ্ছে স্যারদের ইয়ে হয়ে আমি জানি বাট স্যাররাই জানে না ভাবা যাই)
আম্মুঃ আমার তো মাঝে মাঝে গুলিয়ে যাই,তুই বড় নাকি রোদ বড়,আর তুই কি আমাকে অর্ডার করছিস?আর রোদ অফিসে গেছে,তোর মত আকাম করে বেড়ায় না রোদ,
মেঘঃআরে না,আম্মু তুমি ভুল বুঝছো?আমি তো বিজি থাকি এজন্য তোমাকে বললাম,যাতে দাভাই আসলে আমার রুমে আসে,হুম জানি তো তোমার ছেলে ভাল ছেলে, পৃথিবীর সব থেকে সেরা ছেলে,,,আর আমি সব চেয়ে পচা
–
রোদ বসে বসে অফিসের বসে ওর কেবিনে ফাইল দেখছি,ওর ফোনের রিংটোনে বিরক্ত ফোনের দিকে তাকালো,আর আলোর নামটা দেখে রোদ মুছকি হেসে ফোন হাতে নিল,আর আলোর ফোন কেটে দিয়ে নিজে ফোন দিল।রোদের কেন জানি আলোর ফোন আসাতে, খুব খুশি লাগছে তার কারন জানা নেই।আলোর রোদের ফোন রিসিভ করাতে রোদ ভ্রু কুচকে,ডেস্কের উপর হাত মুঠে করে রাখলো,,আলো ফোনের ওপর পাশে থেকে,,
–
আলোঃ(….)
রোদঃকি হয়েছে আছে?তুমি কাঁদছো কেন?কেউ তোমাকে কিছু বলছে,আমাকে বলো কার এত বড় সাহস যে তোমাকে কিছু বলার,ওই ম্যানজারকে আর মেরে পুতে দিবো,,,ওকে বার বলছি যাতে কেউ তোমাকে না কিছু বলে সেদিকে খেয়াল রাখতে তারপরেও।,আর না কেদে কি হয়েছে?আমাকে বলো এভাবে কাঁদতে আমি নিষেধ করছি না,,
আলোঃআপনি এমন হবেন, আমি ভাবতেও পারি নি।এসব না করলেও পারতেন,বলতেন আমাকে আপনার বোঝা মনে হচ্ছে, তাহলেই তো আমি সরে যেতাম।তাই বলে এমন অপমান করার কোন মানেই হয় না।আপনাদের বড়লোকদের দুইদিনেই কাউকে ভালবাসে মরে যেতে পারেন কিন্ত তিনদিনের বেলাতে সেই ভালবাসার মানুষটাকে ছুড়ে ফেলতে আপনাকে বিবেকে বাঁধে না,আপনাকে আমি অন্যরকম ভেবেছি বাট আপনিও এমন,,আমার জায়গাটা আমাকে দেখিয়ে দিলেন যে, আমি নিম্নবিত্ত্ব,,,
রোদঃএনাফ ইফ এনাফ আলো,এবার মুখে লাগাম দাও।আমাকে তুমি এখনো চিন্তে পারো নি,রোদ মেহবুব এত নিচু মাইন্ড নিয়ে কাউকে বিচার করে না।সো যা বলবে ভেবে বলবে,আর হ্যা আমি কি করছি?আর আমাকে এসব বলার কারন কি?আমি কখন বললাম তুমি আমার বোঝা হয়ে গেছো,এই মেয়ে শোনো ফ্যাচ ফ্যাচ করে না কেঁদে, কি হয়েছে সেটা বলো?হ্যালো হ্যালো,,,,, আলো শুনতে পাচ্ছো,,
ধুর কল কেটে দিল,এই মেয়েকে মাঝে মাঝে মনে হয় তুলে তুলে আছাড় মারি,,,(রেগে গিয়ে ডেস্কে একটা বারি মেরে)
–
আলো কল কেটে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে,ওর সাথে বার বার এগুলো কেন হচ্ছে?ওই বাচ্চা ছেলেটা এসব কি বলে গেল?আমি তো উনাকে সেইরকম চোখে দেখেনি?আলো আর রোদ তো জানে না এখানে ওই বিচ্ছু মেঘটা, কলকাটি নেড়ে গেছে।রোদ বসে বসে আলোর বলা কথা গুলো ভাবছে বাট উওর মিলাতে পারছে না,হুট করে ফোন দিয়ে এসব বলার কারন কি?
–
আবৃতি রুমে এসে দেখে আলো আবার কাঁদছে, আবৃতি আলোকে জোর করে খেতে নিয়ে যাই,আর আলোকে বার বার হাসানোর চেষ্টা করছে বাট আলো শুধু জোর করে যে মুখে হাসি নিয়ে আসছে,,,আবৃতি আর আলো খেয়ে এসে দুজন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে যাই।বিকেল বেলা আবৃতি আলোকের জোর করে ছাদে নিয়ে যাই,,
–
আলো ছাদে যাওয়া আগে চুলগুলো বেধে মাথায় ওড়না দিয়ে তারপর ছাদে যাই।রোদ অফিসে বার বার আলোর কথাগুলো ভেবেও কোন উওর খুজে পাচ্ছে না,কারন এই দুইদিনে রোদ আলোকে এমনকিছু বলে নি যে,আলো এসব ভালবাসা বাসি নিয়ে কথা তুলবে,রোদ অফিস থেকে বের হয়ে,আলোর হোস্টেলর সামনে যাই,কি মনে করে উপরের তাকিয়ে দেখে,আলো রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে,রোদ কিছু সময় আলোর দিকে তাকিয়ে ছিল,এই প্রথম আলোকে হাসতে দেখছে।
–
রোদকে দেখে সকালের কথা মনে পড়ে আবার আলোর মন খারাপ হয়ে যাবে ভেবে,রোদ আলোর সাথে দেখা না করে উল্টো ঘুরে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো,আর একবার আলোর দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল,আবৃতির সাথে খুব সহজে আলো মিশে গেছে।রোদ বাসায় গিয়ে পৌঁছাতেই সন্ধ্যার আজান দিয়ে দিল,রোদ ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে নিল ওদিকে আলোও নিচে নেমে নামাজ পড়ে নিল।
–
রোদ নামাজ শেষে নিচে নেমে ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসলো আর সাহেলা(কাজের মেয়েকে)কফি দিতে বললো।রোদের আম্মু নামাজ শেষ তসবীহ হাতে রোদের পাশে এসে বসলো,মেঘ কোথায় থেকে দৌড়ে এসে ধপাস করে বসতে গিয়ে, নিচে পড়ে যাচ্ছিলো রোদ কোনরকম ধরে নিল।রোদের আম্মু মেঘের কান টেনে ভাল করে বসতে বললো,সাহেলা কফি আর মাংসের কাবার দিয়ে গেল,মেঘ দুইহাতে দুটো কাবাব তুলে নিল একবার ডান হাতের টা খাচ্ছে আর একবার বাম হাতের টা খাচ্ছে, রোদের আম্মু আবার আবার মেঘের কান টেনে ধরলো,,-
–
আম্মুঃএটা কেমন ধরনের বেয়াদবী, দুইহাতে খাচ্ছিন কেন?তোকে বলছি না এসব আমি দেখতে পারি না,তারপরেও তুই শুধরাবি না(মেঘের কান টেনে ধরে)
মেঘঃআও আও আম্মু আমার লাগছে তো আমি এভাবে খেতেই মজা পাই,তুমিও এভাবে খেয়ে দেখো তুমিও মজা পাবে,আর আমার মত তুমিও রেগুলার দুইহাতেই খাবে এভাবে দাভাই তুইও খেয়ে দেখ
–
চলবে,,