‘সিক্ত সুভানুভব’
[১৯]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
আলোঃআপনার সাহস হয় কি করে আমাকে এসব বলার?রোদ মেহবুব আপনি অনেক বলছেন আর না,অনেক বেশি সুযোগ দিয়েছি মানে এই না যে, আপনার বলা সব কথা আমি মেনে নিবো।(রোদের পান্জাবীর কলার ধরে)
রোদঃআলো আমার কলার ছাড়ো, আমার কলার ছেড়ে দিয়ে কথা বলো তুমি।আমিও কিন্ত তোমার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো,কারন কলার ধারে কথা বলা আমি সহ্য করতে পারি না।আর রোদের কলার ধরার সাহস তুমি কোথায় পেলে।
আলোঃ আপনার এত অহংকার কিসের?কিসের এত দেমাগ শুনি, নিজেকে কি মনে করেন?আমার মত নিম্নশ্রেনীতে জন্ম নিলে বুঝতেন আমি কতটা অসহায় ছিলাম,মুখে হাজার শান্তনার বাণী দেওয়া যায়। আপনি আমাকে সেভ রাখতে চেয়েছিলেন হোস্টেলে, দুইদিন পর আমার গায়ে যে বদনাম এসে পড়তো না এর গ্যারান্টি তো আপনি দেন নি তো,আমি তখন অসহায় ছিলাম এজন্য আপনার আম্মু বাড়িয়ে দেওয়া
সাহায্যের হাত ধরেছিলাম,তারমানে এই না যে আমি একদম নিকৃষ্ট কাজ করেছি।,সেদিন সকালে মেঘ এসেছিলো আমার কাছে আমাকে বলে আপনি নাকি ভালবাসেন আমাকে?আমিও জানতাম না মেঘ মজা করে বলেছিলো এসব এজন্য রেগে আপনাকে এত কথা বলেছিলাম।মেঘের থেকে আপনার আম্মু জেনেছিলো যে আপনি আমাকে হোস্টেলে রাখছিলেন।আম্মু রাতেই আমার সাথে দেখা করে আর আপনার আম্মুর মাধ্যমেই আমি নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে পাই।
রোদঃ আমাকে জানালে না কেন আলো?আমি তো জানতাম না এতসবের পেছনে আমার আম্মু আছে? আমাকে কেন তোমরা সবাই মিলে এতটা কষ্ট দিলে?আমার কি দোষ ছিলো?
আলোঃ আপনাকে বিশ্বাস করে আপনার এসে হোস্টেলে উঠছিলাম।আপনার প্রতি আমার একটা শ্রদধা ছিলো,,,
আপনার আম্মু আমাকে কসম দিয়েছিলো, এজন্য এই তিন বছর এত কষ্ট পেয়েও আমি কোন যোগাযোগ করি নি।যাকে নিজের থেকে বেশি ভালবাসি তার নামে দেওয়া কসম কি করে ভেঙে আসি বলো।তোমার মত নিজেও পুড়েছি, এই একই কষ্টে।তোমাকে মনে জায়গা দিয়েছি শুধু আর তুমি আজকে আমাকে রাস্তার মেয়ের সাথে তুলনা করলেন।
–
রোদের আম্মু ওদের কথা শুনেই রুমে আসে, আজ রোদকে সব বলতে কারন এখুনি সেই সময়। বেশি দেরি হয়ে গেলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে কারন রোদের যা রাগ ভুল বুঝে নিজেরই তখন কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে বসে থাকবে,,,,,,,
বাকিটা আমি তোমাকে বলছি তোমাকে পেছনে থেকে রোদের আম্মু বলে উঠে,।রোদের আম্মু রোদের সামনে এসে দাঁড়ায়। রোদের চোখে আজ হাজারো কৌতুহল কাজ করছে সেটা সবকিছু জানার, আর আলো বেডে বসে বসে কাঁদছে। রোদ ওর আম্মুর সামনে দাড়িয়ে ছলছল চোখ নিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,
রোদঃ আচ্ছা আম্মু তুমি আমাকে এতটা কষ্ট পেতে দেখেও চুপ কি করে থাকতে পারলে?,একবারো তোমার কি কষ্ট হয় নি?তুমি তো বলো আমাকে ভালবাসো তাহলে এত কষ্ট পেতে দেখেও তোমার বুক কাঁপলো না আম্মু,,,,একবারোও মনে হয়নি তোমার রোদের কষ্টটা তুমিই কমাতে পারতে।
আম্মুঃরোদ তোমার আম্মু উপর এখন তোমার অনেক অভিমান তাই তো,,,আমার এতে আপসোস নাই কেন জানো?কারন আমি মা আমাকে নিজের সন্তানের কথা ভাবলেই হবে না, আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি তাই তোমার এত অভিযোগ,, রোদ তুমি বাস্তবতা কতটা কঠিন তুমি কি করে জানবে?বাস্তবতা জিনিসটা কি আলোকে জিজ্ঞাসা করো?একটা মেয়েকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হোস্টেলে রাখলেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না রোদ।একটা মেয়ের জীবন এতটা সহজ না,বাবা মা থাকলেও কিছু কিছু পশুরা বদনাম দিতে কম করে না সেখানে আলোর তো কেউ নেই,ওকে হোস্টেলে রাখলেই নিরাপদে থাকবে তুমি এটা ভেবে বসে থাকলে,তোমারা মাথায় এটা আসলো না এখন সব নোংরা কাজ গুলো হোস্টেল থেকে শুরু হয়।এখানে কত রকমের লোকরা থাকে,রোদ আমি তোমার মা সো তোমার থেকেই কিছু টা হলেও বেশি বুঝি কারন আমিও মেয়ে।
–
আমি আলোকে বদনামের হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছি,অসহায় মেয়ের পাশে দাড়িয়েছি,আর বড় কথা আলো যাকে এখন আম্মু ডাকে আমার বান্ধবী রিদিতা
তার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি,তার কোল ভরিয়ে দিয়েছি, আলোকে সুস্থ ভাবে, সুস্থ পরিবেশ দিতে চেয়েছি ওদের কথা ভাবতে গিয়ে আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। এছাড়া কোন উপায় ছিলো না আমার রোদ,আমি তোমাকে বললে তুমি মেনে নিতে না কারন আলো সিঙ্গাপুর ছিলো এতদিন,আর তোমার সাথে যোগাযোগ থাকলে আলো এই আলো হয়ে নিজেকে গড়ে তুললে পারতো না। আশা করি তোমাকে বোঝাতে পেরেছি,,,এখন কেউ আঙ্গুল তুলতে পারবে না যে আলো রোদের যোগ্য বউ না,আমাদের নিকৃষ্ট সোসাইটি, আমাদের status নিয়ে যে বড়ায় করি সেখান থেকেও কেউ আঙুল তুলতে পারবে না,যদি জানতো আলো নিম্নশ্রেণীর তখন তুমি যতই আলোকে খোলসে আবৃত করতে, সমাজ বার বার ওকে বুঝিয়ে দিতো যে আলো *****নিম্নবিত্ত*****
বাট এখন আলোও আর নিজেকে বোঝা মনে করবে না।
–
রোদঃবাহ তোমরা সবাই সবটা জানতে বাট আমাকে জানাও নি,আচ্ছা আম্মু আমি সব মেনে নিলাম।আমি ওর জন্য কিছু করার আগেই আলো হারিয়ে গেছে, একজনে দায়িত্ব নিয়ে তার পরের দিন তাকেই হারিয়ে ফেলছি এটা কত বড় দায়িত্বহীনের মত কাজ এটা একবারো ভাবলে না,সিঙ্গাপুর কেন?ওকে বি ডি তে রাখতে আমাকে না বলতে। এতটা দুরে গিয়ে ওকেই বা কষ্ট টা কেন দিলে আম্মু?
আম্মুঃকারন রিদিতা(আলোর আম্মুর)চিকিৎসার প্রয়োজন ছিলো,বার বার সুইসাইড করতে যাচ্ছিলো। ও মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলো এজন্য,,,,
আলোঃ রোদ মেহবুব একটা কথা মনে রাখবে চোখের সামনে যা ভেসে বেড়ায় বা দেখা যায় সেটা সব সময় সত্যি হয় না,মাঝে মাঝে দেখার বা বোঝার আড়ালেও অনেক কিছু ধামাকা থাকে,তবে আমি আপনার দোষ দিবো না কারন আপনি এসবের কিছুই জানতেন না। তবে আজ আপনি আমাকে অনেক হার্ট করছেন অনেক,,,যাকে জড়িয়ে ধরছিলাম সে আমার বড় ভাই আমার বন্ধুর মত আমাকে সাপোর্ট করছে,,,,,(আলো কাঁদছে আর এসব বলছে)
আম্মুঃ যা হয়েছে সব ভুলে যাও নতুন করে শুরু করো, আশা করি অতীত টেনে এনে বতর্মানটাকে বার বার নষ্ট করো না।আমি গেলাম,,,(ওদের এবার একা থাকতে দেওয়া উচিত এজন্য)
–
রোদ কি বলবে? ওর মুখের কথা হারিয়ে ফেলছে,এতকিছু হয়ে গেছে ওর অজান্তে। রোদেও দোষ ছিলো না ওর তো জানা ছিলো না,,,,আজ সব পরিষ্কার হয়ে গেছে সব কৌতুহল মিটে গেছে।আলো,, রোদ,,,রোদের আম্মু কেউ কারো জায়গা থেকে ভুল করে নি কারন সবাই নিজের জায়গা থেকে নিজের নিজের বিবেচনায় সফল। রোদ মেঝেতে বসে আছে আর আলো বেডে বসে কাঁদছে। রোদ বা আলো কি কাকে কি বলবো বুঝতে পারছে না?দুজনেরই মাঝেই একটা অনুশোচনা কাজ করছে, আলো উঠে রোদ সামনে যায় রোদের হাত ধরে টেনে তোলে আর দেখের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে,আলো আগে রোদকে জড়িয়ে ধরে খুব শক্ত করে আর জড়িয়ে ধরেই কেঁদে দেয়।রোদও নিজেকে আটকাতে পারে না,দুজনেই তিনবছর অনেক কষ্ট পেয়েছে অনেক কেঁদেছে।রোদ আলোকে জড়িয়ে ধরেই বললো,,,
–
রোদঃআলো আই রিয়েলি সরি,,, আমি সত্যি জানতাম না তুমি এতকিছু সহ্য করছো। আমি তোমাকে তোমার মুখ থেকে সত্যি টা জানার জন্য এত কথা শুনিয়েছি,তোমাকে কথা শুনিয়েছি ঠিকই পরে নিজেই কেঁদেছি।আর কখনো কষ্ট পেতে দিবো না তোমাকে,,,,এবারেই মত মাফ করে দাও।
আলোঃচুপ আর এসব নিয়ে কোন কথা না,আমিও সরি এভাবে চড় মারাটা উচিত হয় নি আমার,খুব লেগেছে। (রোদের গালে হাত দিয়ে)
রোদঃ তা তো লেগেছেই।
আলোঃ সরি রেগে গিয়ে মেরে দিয়েছি,,,
রোদঃ এবার আদর দাও তাহলে মাফ করবো।
আলোঃ আমার বয়েই গেছে।
–
রোদঃআলো আমি তোমাকে আর কোন সুযোগ দিবো না আমাকে নিয়ে অভিযোগ করার।এবার থেকে আমি আমার ভালবাসা দিয়ে তোমাকে ভরিয়ে দিবো,আর কষ্ট পেতো দিবো না।I really love you,,,আমি তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্তেও টিকতে পারবো না,এক সেকেন্ডের জন্যও তোমার কথা আমার মন থেকে যায়না।
আলোঃহুমম আমারও আর কোন অভিযোগ নেই রোদ,তবে তোমাকে খুব মিস করতাম,আমিও যে খুব ভালবেসে ফেলেছিলাম মন চাইতো এক দৌড়ে এসে তোমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ি। কিন্ত আমি যে আমার রোদের জন্য নিজেকে রোদের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে,কেউ যাতে আমার জন্য তোমার দিকে আঙুল তুলে না পারে এজন্য।
রোদঃ তবে এতটা লাভ হয়েছে,একটা চড়ের জন্য সব রহস্যের উদঘাটন করা হলো।আমি তোমাকে রাগানোর জন্য বলছি আর তুমি আমার ফাঁদে পা দিলে,,,এটা বেশিদিন চলতে থাকলে আমাদের দুরত্ব তৈরী হতো, এতদিন পর ফিরে পেয়ে এভাবে আর হারাতে দিতে চাইনি আলো,তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না,এই তিনটা বছর আমার কেমন গেছে।
–
মেঘ এসে ডোর নক করে আর বলে,দাভাই আম্মু বলছে তোমাদের ঝগড়া ঝগড়ি,কান্নাকাটি শেষ হয়ে গেলে এবার নিচে আসতে।আমারও খুব খুধা লাগছে তারাতারি এসো,,
রোদঃহুমম তুমি যাও আমরা আসছি,,,
–
রোদ আর আলো নিচে যায় সবাই খাবার টেবিল ওদের জন্য ওয়েট করছিলো। রোদ আর আলোও বসে গিয়ে। বুয়া খাবার বেড়ে দেয়,রোদের আব্বু রোদের দিকে একটা খাম এগিয়ে দেয় আর বলে অফিসের কিছু কাজের জন্য রোদকে রাঙামাটি যেতে হবে,রোদ খামটা নিলো। রোদের যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেয় কেবল আলোর সাথে সব মিটে গেল আর এখন নাকি আবার ওকে দুরে কোথায় যেতে হবে?আলোরও মনটা খারাপ হয়ে গেলো।রোদের আম্মু ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
–
আম্মুঃআজকে তো আলোদের বাসায় যাওযার কথা ছিলো যাওয়া হলো না, কালকে যাবে ঘুরে আসবে।তাহলে সবারই ভালো লাগবে,,,
বাপিঃহুমম এয়ার টিকিট পরশুদিনে কালকে তো না, কাল আলোদের বাসায় যাও,আর রাঙামাটি দশদিন থাকতে হবে আমি রিসোর্ট বুক করে দিসি,,,,।
রোদঃহুমম।
চলবে,,,