‘সিক্ত সুভানুভব’
[২৪]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
বাসের সবাই জানালার দিকে তাকিয়ে পাহাড়, গাছপালা দেখছে, আলো রোদের হাত চেপে ধরে জানলার দিকে তাকায়, পাহাড় গুলো একটা মাটির তৈরী দেখে মনে হচ্ছে না,চারদিকে কেমন মনোরম পরিবেশ, যতদুর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ,কেমন একটা কুয়াশা কুয়াশা ভাব।আলো পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রোদের দিকে তাকায় আর বলে,,
–
আলোঃ আচ্ছা রোদ পাহাড়ের উপর থেকে কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া বের হচ্ছে, আচ্ছা পাহাড়ে কি আগুন লাগছে না কি?
রোদঃ না আগুন লাগি নি,পাহাড় দিয়ে এভাবে ধোঁয়া বের হয়।কেন বের হয় আমারও জানা নেই,,,
–
আলো আশাপাশ তাকিয়ে একটু করে জানলা খুলে দেয়,রোদ আলোর এই কাজে মুখ টিপে টিপে হাসছে।জানলা খুলতেই অনেক বাতাস আসে, আর আলো সেই বাসাতে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়,চুল গুলো এলোমেলো হয়।চোখ বন্ধ করে বাতাস টা উপভোগ করে,,, রোদ আলোর কানে কানে বলে,এমন করে জানলা খুলে না রাখতে, কারন গাড়িতে এসি চলছে আর কেউ দেখলে বকা দিবো।
–
আলোর কয়েক বার জোরে নিঃশ্বাস নেয় আর জানলা আটকে দেয়।রোদ আলোর দিকে চিপ্স আর একটা ডিউ এগিয়ে দেয়,আলো যে কতটা কান্ত হয়ে গেছে সেটা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আলো এর আগে এত লং জার্নি করেনি। আলো চিপ্স নিজে খাচ্ছে আর রোদের মুখে দিচ্ছে, এভাবে কিনা রাখা খাবার গুলো আলো নিজেও খায় আর রোদকেও খাওয়ায়।রোদের হেডফোন নিয়ে দুজনের কানে নেয় আর একটা গান দেয়।আলো সিটের উপর দুই পা তুলে বসে, রোদ কিছু বলছে না শুধু দেখছে।ওরা কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে আর সেই সাথে আলোও গুনগুন করছে,,,,
যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈই আঁধার,,, (।।)
এভাবে দুই ঘন্টা পর ওরা রাঙামাটি পৌঁছায়।রোদ ট্রলি নেয় আর এক হাতে দিয়ে আলোর হাত ধরে নামে,,,।
–
রোদরা রাঙামাটি বাস স্ট্যান্ডে নামতেই একটা গাড়ি ওদের নিতে আসে,রোদকে ওয়েলকাম করে আর গাড়িতে বসতে বলে।রোদের বাপির জেনে গিয়েছিলো তার গুনধর পুএ বাস জার্নি করছে এজন্য রিসোর্ট থেকে এভাবে ব্যবসথা করে দিসে,আর রাত হয়ে গেছে এজন্য রোদও কোন রিস্ক নিতে চাচ্ছে না,রোদ আর আলো গাড়িতে বসে, আবার গাড়ি চলতে শুরু করে উঁচু নিচু পথ দিয়ে,আলো গুটিশুটি হয়ে বসে রোদের একহাত শক্ত করে ধরে আছে,যদিও রোদের খুব ভালোই লাগছে,,, কারন যে মেয়ে সহজে কাছে এসে ধরা দেয় না, সে আজকে বার বার ওকে বার বার জড়িয়ে ধরছে।রোদ খুব ইনজয় করছে,,,।
–
এভাবে ৪৫ মিঃ যাওয়ার পর ওরা রিসোর্টের সামনে গাড়িটা থামে,রোদ আলোকে ডাকতে গিয়ে দেখে আলো ঘুমিয়ে গেছে,রোদও আর আলোকে ডাকতে চাচ্ছে না একটু ঘুমিয়ে নিক কারন রোদকেও একটু বাইরে যেতে হবে। আলোকে কোলে তুলে নেয় আর ড্রাইভারকে ইশারাতে ট্রলিটা নিয়ে আসতে হবে,রিসিশনে গিয়ে একটা স্টাফকে ইশরা করে চাবিটা আর ট্রলিটা নিয়ে ওর রুম দেখিয়ে দিতে বলে।ম্যানজার সহ রোদের এমন কান্ডে বাকিরা অবাক হলেও পরে,রোদের এমন ভালবাসা দেখে হেসে রোদকে ওর রুমটা দেখিয়ে দেয়,রোদ আলোকে নিয়ে ঢুকে আর আলোকে বেডে শুইয়ে দেয়।আর ওই স্টাফকে ধন্যবাদ জানায় আর রাতের ডিনারের অর্ডার করে,আর কখন খাবার নিবে সেটা পরে ওদের জানাবে।
–
রোদ রুমের ডোর লক করে দেয়,আলোর কাছে গিয়ে,,, আলো জামার কোটি টা খুলে ওড়ানা সরিয়ে ফেলে,তার জামা খুলে শুধু হাতকাটা লং টপটেন টা রাখে,সারাদিন একটা জামা পড়ে আছে।একটু রিলেক্স যাতে ঘুমাতে পারে
যদিও এখন আলোর সাওয়ার নেওয়া দরকার বাট আলোর এখন ঘুমেরও দরকার, কারন লং জার্নিতে কষ্ট হয়েছে,,।রোদ আলোর চুলের কাটা খুলে চুলে গুলোকে মেলে দেয়, তারপর ভালো করে শুইয়ে দেয় আর নিজে সাওয়ার নিতে যায়,,
–
রোদের আবার এখন একটা মিটিংয়ে এটেন্ড করার কথা,রোদ সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে,আর ভেজা টাওয়াল দিয়েই আলোর মুখটা,গলা, হাত মুছে দেয়। আলোর ঘুম এত ভারী যে ওর হুশই নেয় রোদ কি করছে?যদিও ভেজা টাওয়াল শরীর ছোয়াতে চমকে উঠছিলো বাট নড়ে চড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।রোদ শুধু হেসেছে আলো যে এত ঘুমকতুরে সেটা রোদের জানা ছিলো না।রোদ রেডি হয়ে ফাইল নিয়ে আলোর কপালে একটা আদর দিয়ে দেয় , চাদর টেনে দেয় আলোর গায়ে, তারপর দরজা বাইরে থেকে লক করে চলে যায়।
–
রোদের জন্য সবাই ওয়েট করছিলো রোদকে যেতে দেখে সবাই ওয়েকাম জানায় আর ওদের মিটিং শুরু করে,এভাবে প্রায় এক ঘন্টা পর ডিল সাইন করে আর মিটিং শেষ করে,রোদ মনে মনে হাসে কারন যেদিন থেকে আলোকে আবার ফিরে পেয়েছে সেদিন থেকে রোদ বড় বড় ডিল সাইন করছে,যা রোদের কোম্পানি শীর্ষে পৌঁছনোর জন্যই যথেষ্ট।রোদরা ডিল সাইন করে আর ডিনারের জন্য ওকে জোরাজুরি করে বাট রোদ কিছুতেই ডিনার করে না,কারন ওর মায়াবতীকে রেখে ও খাবে না?রোদ ওর বাপিকে ফোন করে জানায় যে ডিল সাইন হয়ে গেছে,রোদের বাপি জানতো রোদ পারবে।রোদ প্রজেক্ট নিয়ে কিছু কথা বলে আর সবার থেকে বিদায় নেয়,রোদের আসতে আসতে রাত বারো টা বেজে যায়,,,,,,,
–
ওদিকে আলোর ঘুম ভেঙে যায় আশপাশ তাকিয়ে রোদকে কোথাও পায় না,চারপাশটা তাকিয়ে দেখে অনেক সুন্দর একটা রুম,জানলার দিকে চোখ যেতে দেখে অনেক সুন্দর একটা চাঁদ দেখা যাচ্ছে,আলো উঠে বসে নিজের দিকে চোখ দেখে ও শুধু টপটেন পড়ে আছে,আলো জানে এটা রোদের কাজ।আলো উঠে চারপাশ দেখে অনেক সুন্দর করে সাজানো রুমটা, সাদা পর্দা,সাদা বেডের চাদর,অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো রুমটা,,আলো জানে রোদ অফিসের কাজেই বের হয়েছে,এজন্য আর কিছু না ভেবে সাওয়ার নিতে যায়।
–
সারাদিন জার্নির পর সাওয়ার নিলে, শরীরটা পাতলা লাগে।আলো ট্রলি খুলে দেখে ওর কোন ড্রেস আছে কি না?তারপর দেখে রোদ ওর কয়েকটা ড্রেস এনেছে,আলো একগাল হেসে ড্রেস নিয়ে সাওয়ার নিতে যায়। আর রোদকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দেয় এমন একটা সুন্দর জায়গা দেখানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। তবে মনে মনে একটু অভিমান করে এভাবে একা রেখে যাওয়াতে।
রোদ রিসোর্টে পৌঁছে রুমে দিকে হাঁটা দেয়,তারপর রুমে সামনে এসে ডোরের লক খুলে।
–
রোদ রুমে ঢুকে ডোর লক করে পেছনে ঘুরতেই দেখে আলো কেবল শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে,আলোর একটা পিংক কালারের লেডিস গেন্জী আর কালো লেডিস থ্রী কোয়াটার পড়ছে, রোদ ট্রলিতে আলোর জন্যও কয়েকটা ড্রেস নিয়েছিলো,তারমধ্যে এটা একটা।রোদ যে এসে দাড়িয়ে আছে, আলো দেখেও না দেখার ভান করে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় যায়, রোদ বুঝেছে আলো রাগ করছে,আলোর রাগ ভাঙানো বাট একটু পরে, রোদ আগে রিসিপশনে ফোন দিয়ে ওদের খাবারটা রুমে পাঠিয়ে দিতে বলে, আর রোদ ড্রেস বদলে মেরুন কালার গেন্জী আর সাদা থ্রী কোয়াটার পড়ে,তারপর রোদ ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে রুমে আসতেই, কে যেন ডোর নক করে, রোদ গিয়ে দেখে খাবার নিয়ে এসেছে,রোদ খাবার গুলো নিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রাখে,,,,,, আর পেছনে ফিরে আলোর দিকে একবার তাকায় আর ভেতর থেকে ডোর লক করে।
এবার রোদ গুটি গুটি পায়ে আলোর কাছে যায়।রোদ গিয়ে দেখে আলোর বারান্দার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে,রোদ গিয়ে আলোকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।আলো এমন একটা ভাব করে যেন কিছুই হয় নি।রোদ আলোর কাঁধে মাথে রাখে আর বলে,,,,,
রোদঃও আলোমনি রাগ করছো?রাগ করে না, আমি তোমাকে একা রেখে গিয়ে নিজেও টেনশনে ছিলাম।আমাকে জিজ্ঞাসা করবা না আমার মিটিং টা কেমন হলো?
আলোঃআমি জানি আপনি ডিল সাইন করছেন,আর এজন্য আপনি খুব খুশি,আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া করছি আমি যাতে আপনি সাকসেস হয়ে ফিরেন।ইনশাআল্লাহ তাই হয়েছে,,
রোদঃবাহ্ আমার বউটা তো বেশ বুদ্ধিমতী,এবার চলো খেয়ে নিবে অনেক রাত হয়েছে।
–
রোদের হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে রোদকে খাওয়াতে শুরু করে আর নিজেও খায়। তারপর আলো রোদের দিকে তাকিয়ে বলে আপনার কি হয়েছে?মুখটা এমন লাগছে কেন?মাথা ব্যাথা করছে নাকি?
রোদঃহুমম একটু একটু মাথা ব্যাথা করছে,তুমি বুঝলে কি করে।
আলোঃ হুমম আপনার মুখে দেখে,,সব কথা বলতে নেয়। আমি মাথা টিপে দিচ্ছি আপনি ঘুমান।
চলবে,,,!!