সিক্ত সুভানুভব’ [২৬]

0
288

‘সিক্ত সুভানুভব’
[২৬]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ আলোকে খুজে কোথাও পেলো না,এবার রোদ চিন্তাতে পড়ে গেলো আলো পাহাড় থেকে পা ফসকে পড়ে যায় নি তো,রোদ সামনের দিকে এগোতে থাকে,,সামনে টিলা দিয়ে নামতে নামতে একটা গাছের নিচের দেখে,আলো একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে বসে আছে। রোদ হাফ ছেড়ে বাঁচে, রোদ আলোর কাছে এগিয়ে যায়,আলো রোদকে দেখে উল্টো ঘুরে বসে।রোদ দেখে আলোর পাশে বসে থাকা একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।রোদও গিয়ে আলোর পাশে বসে,,,

আলোঃ আপনি এখানে কেন?কেন ওই সুন্দরী মেয়ের মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে খুব ভালো লাগে বুঝেছি তো,তাহলে এত তারাতারি চলে আসলেন যে,পেট ভরে গেছে।

রোদঃযা বাবা আমি এখানে কি করছি?তুমি তো বললে কাউকে কারো ভাললাগাটা কমন একটা ব্যাপার,তাহলে এত সিরিয়াস মুডে নিচেছা কেন এখন?নাকি কোন মেয়ে আমার প্রশংসা করছে এজন্য তোমার হিংসা হচ্ছে কোনটা?

আলোঃশুধু আপনাকেই এসব বলে নি,,অনেকক্ষণ ধরেই আপনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো,,,আমি বসে বসে এটাই দেখছিলাম।আপনাকে বলছিলাম না এই শার্ট পড়বেন না, তারপরেও পড়লেন কেন?

রোদঃওকে ওকে আমি আর কালো শার্ট পড়বো না,আর পড়লেও তোমার সামনে পড়বো শুধু।তাও রাগ করো না এখন। আর তুমি এভাবে চলে আসাতে,তোমাকে খুজে না পেয়ে জানো আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম।

আলো রাগী চোখে তাকাল।

রোদের সাথে আলো রাগ করে তখন হাটতে হাটতে একটা গাছের নিচে বসে। আর বসে বসে রোদের গুষ্ঠী উদ্ধারের কাজ করছিলো,তখন একটা মেয়ে আলোর সামনে আসে আর মেয়েটির সাথে গল্প জুড়ে দেয়।আলোর এই একটা বড়গুন খুব সহজে সবার সাথে মিশতে পারে,আলো মেয়েটির সাথে কথা বলে জানতে পারে মেয়েটির নাম ঝুমু,,,,,আর এই বসে থাকা অবস্থায় রোদ আলোকে খুজে পায়,আলো রোদের দিকে তাকিয়ে,,,
রোদকে ঝুমুর সাথে পরিচয় করে দেয়,ঝুমু রোদ আর আলোকে নিয়ে ওদের গ্রাম দেখাতে নিয়ে যায়।

ঝুমু আর আলো সামনে সামনে হাটছে আর রোদ পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে পেছন পেছন হাঁটছে।আলো আর ঝুমু ওরা কিছু একটা দেখে থেমে যায়, রোদ মনে করছে, বন্য কোন পশু দেখে ওরা থেমে গেছে। বাট পরে আলো একটা গাছের নিচে গিয়ে, গাছের দিকে তাকিয়ে থাকলো।রোদ বোঝার চেষ্টা করছে আলো গাছে দিকে তাকিয়ে কি দেখছে?রোদ যখন গাছের দিকে তাকালো তখন আর বুঝতে বাকি রইলো না ওদের মনে কি চলছে?আলো অলরেডি আঁচল গুজে একটা ডাল ধরার জন্য লাফাতে শুরু করছে।আসলে আলো আর ঝুমু তেঁতুল নামানোর মহৎ কাজে লেগে পড়ছে।

আলোর এভাবে লাফানোর জন্য ওর শাড়ি সরে গিয়ে নাভি দেখা যাচ্ছে, এমনি পড়ছে কালো শাড়ি,তারপরে চোখ ধাঁধানো পেট,,,তারপরে এভাবে,,,,,,,,,,,
রোদ মনে মনে বলছে,,,

রোদঃ এই মেয়ে মুখে তেমন কিছু বলে না?বাট ওর একেক সময় একেক রকমের রুপ দেখিয়ে আমাকে ঘায়েল করে।এভাবে কেউ শাড়ি পড়ে কোমরে আঁচল গুজে লাফায়,মেয়েটার বুদ্ধি হবে না,,, আজ তোমাকে একা পায় তারপর তোমার হচ্ছে।

রোদ আলোর কাছে যায় তারপর আলোর আঁচল কোমরে গুজে থাকা শাড়ি আচলটা টান দিয়ে খুলে দেয়।ঝুমু দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধু দেখছে,,,, রোদ শার্টের হাতা ফোল্ড করে আর আলোর কোমর ধরে উপরে তুলে যাতে আলো ইচ্ছে মত তেঁতুল ছিঁড়তে পারে।আলো ছেড়ে নিচে ফেলছে,আর ঝুমু কুড়িয়ে নিচেছ,,,ঝুমু যখন তেঁতুল কুড়াতে বিজি তখন রোদও এই ফাকে আলোর নাভিতে কিস করে দেয়,আর আলোরও তেঁতুল ছেড়া বন্ধ হয়ে যায়।

রোদ আলোকে নিচে নামায়, আলো রোদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে, ওরা আর কিছু সময় ঘুরাঘুরি করে,আর৷ তেঁতুল ভাগ করে নিয়ে খেতে থাকে।রোদকে খেতে বলে রোদ নেয়নি, তারপর ঝুমুর থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।ঝুমু চলে যেতেই আলো রোদকে মারতে থাকে,রোদ জানে ঝুমু ছিলো এজন্য আলো ওকে কিছু বলে নি, ঝুমু চলে গেলেই ও খবর আছে?

ওরাও এবার আরেকদিকে চলো গেলো আলো রোদকে জিজ্ঞাসা করছে কোথায় যাচ্ছে? রোদ কিছু বলছে না শুধু হাঁটিয়ে যাচ্ছে,,।আলো রেগে দাড়িয়ে যায় রোদ আলোর হাত ধরে টেনে একটানে কোলে তুলে নেয়,,,আলো হাত পা ছুড়তে থাকে।রোদ আলোকে নিয়ে হাঁটতে হাটতে একটা গ্রামের দিকে ডুকে পড়ে দেখে মনে হচ্ছে,,, কোন আদিবাসীদের গ্রাম।

রোদ আলোকে নিয়ে চাকমাদের গ্রামে ঢুকে পড়ে,আলো শুধু অবাক হয়ে দেখছে। বাঁশ দিয়ে বানানো ঘর গুলো,,,রোদ আলোকে কোল থেকে নামিয়ে একটা বাড়িতে মধ্যে ঢুকে পড়ে,আর ওই বাড়িতে গিয়ে মখাই বলো ডাক দেয়,কেউ একজন বের হয় আর রোদকে দেখে দৌড়ে আসে আর রোদকে জড়িয়ে ধরে।

আলোর অবাকের উপরে অবাক হয় কারন এমন জায়গায় রোদকে কেউ চিনে বা রোদের চেনা জানা কেউ আছে আলো কল্পনাতেও আনে নি,রোদ আলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।আলো দেখে কয়েকজন এসেও রোদের সাথে কথা বলে,আলোর চোখ যায় মহিলাদের উপর কারণ মহিলাগুলো নাভি বের করে শুধু ব্লাউজ আর নিচে ওড়না একটা ওড়না জড়িয়ে আছে(থামি),রোদের সামনে আলো প্রথমে লজ্জা পেলেও,সবাইকে দেখে বুঝলো ওখানে ওটা কমন ব্যাপার,,,।

মহিলা গুলো রোদের সাথে যেভাবে কথা বলছে, দেখেই মনে হচ্ছে অনেক ভাল ভাবেই রোদকে এরা চিনে।একটা বাচ্চা দৌড়ে এসে রোদের কোলে উঠলো,,,রোদ আর আলোকে বেতের তৈরী মোড়াতে বসতে দিল,রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বুঝলো আলোর অনেক কিছু জানতে চাচ্ছে,,,।রোদ মখাইয়ের দিকে তাকিয়ে,,,,

রোদঃমখাই তোমাদের কি অবস্থা? কেমন আছো তোমরা,,

মখাইঃরোদ ভাই আলহামদুলিল্লাহ ভালা আছি,,এইডা আমাদের নতুন ভাবি,,বিয়ে করলেন কবে,,

রোদঃহুমম এটা তোমাদের ভাবি।আর কতদিন একা থাকবো এজন্য বিয়ে করেই নিলাম।

মখাইঃআবির, সাগর,ফাহাদ ভাই কেমন আছে,,ওরা সবাই আসে নি কেন?

রোদঃওদের যে যার কাজে বিজি আছে,আর আমি এসেছি অফিসের কাজে,,এজন্য ওদের বলা হয়নি,,

মখাইঃআমাদের ভাবি কিন্ত দেখতে খুব সুন্দর,,, একবারে চাঁদের মত সুন্দরী।
রোদঃতাই নাকি?

মখাইদের বাড়ির আশে পাশের সবাই ওদের দেখতে আসছে, রোদ আর আলোকে সবাই এমন ভাবে ঘিরে ধরেছে যে মনে হচ্ছে কতদিনের চেনা কাউকে ফিরে পেয়েছে,মখাই একটা মাটির পাএ তে পানি নিয়ে আসলো,পাএটি দেখতে কিছুটা বদনার মত কিন্ত পাএটি লম্বাটে,,রোদ আর আলোকে বাড়িতে বানানো বিভিন্ন ধরনের নাড়ু,নকশী পিঠা,আরো বিভিন্ন পদের আইটেম ওদের সামনে খেতে দেয়। রোদ নাড়ু খাওয়া শুরু করে,আলো পানি নিয়ে খেলো,অনেক হেটেছে এজন্য গলা শুকিয়ে গেছে আলোর,পানিটা খুব ঠান্ডা,,, আলো রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,,

আলোঃ আচ্ছা মখাই ভাইয়াদের বাসাতে ফ্রিজ নাই? তাহলে ঠান্ডা পানি কই পেলো এত তারাতারি?

রোদঃএটা কোন টিউওয়েল বা ফ্রিজের পানি না,,এই পানিটা হচ্ছে পাহাড়ের গায়ে চুইয়ে চুইয়ে এসে পড়া পানি,,আর এই মাটির যে পাএটি দেখছো এটার নাম কুরতী,,,এই পাএটি পানি বেশ ঠান্ডা থাকে,,।তবে এই পানিটা খেয়ে দেখো মনে হবে না এটা পাহাড়ের গায়ে এসে চুইয়ে পড়া পানি,,এটা বিশুদ্ধ পানি, আমাদের কৃত্রিম উপায়ে ফিল্টারিং পানি খেয়ে এগুলো প্রথমে অন্যরকম লাগবে, বাট এখানে যা খাবে সেটাই টাটকা বা ফরমালিন ছাড়া জিনিস খাবে।

আলোঃহুমম এজন্য পানির টেস্ট টা একটু অন্যরকম,,,আর ঠান্ডাও

বাড়ির কয়েকজন মহিলা রান্নাঘরে কি যেন করছে,আলো উঠানের একসাইডে দেখে অনেক গুলো মাদুরের উপর কিসের যেন বীজ শুকাতে দেওয়াতে, চিনতে না পারায় আর কিছু বললো না।আলো রান্না ঘরে চলে গেল আর সবার সাথে কথা বলে, হাসি মজা করতে শুরু কররো,রোদ আর মখাই ও গল্প জুড়ে দিসে।ওরা নিজে নিজেরা ওদের ভাষায় কথা বললেও রোদ আর আলোর সাথে বাঙালী ভাষাতেই কথা বলছে,,।

আলোও পিড়া নিয়ে বসে হাতে হাতে কাজ করে, আর গল্প করে,,,আলোও ওদের সাথে মিশে গেছে দেখে মনে হচ্ছে না ওরা আজকেই তাদের পরিচয় হয়েছে।আলো ওদের রান্না করা দেখছে,, মখাইয়ের বউয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারে ওরা পরিবারে সদস্য চারজন,,দুই মেয়ে আর ওরা দুইজন।

রোদ,আর ওর বন্ধুরা এর আগে রাঙামাটিতে বেড়াতে এসে রাস্তা ভুলে গিয়েছিলো,,বন্য পশুদের তাড়া খেয়ে। সেই সময় মখাই তাদের বাঁচায় আর সেই সুএনুসারে রোদের সাথে পরিচয়,, মখাই রোদদের কে থাকার জায়গা দিয়েছিলো। রোদ ও মখাইদের সাহায্য করছিলো অর্থিক সাহায্য করে, কারন মখাইদের তখন খুব অভাবের সংসার,,,,,।মখাইয়ের বড় মেয়েটা তখন খুব অসুস্থও ছিলো। রোদরা সব চিকিৎসার টাকা দিয়েছিলো।রোদরা চারজন যে আন্তরিক ভাবে মিশেছিলো মখাইদের সাথে তেমনি মখাইরাও রোদদের সাথে খুব অল্পদের মিশে গিয়েছিলো।

চার বন্ধু এমন ভাবে মিশেছিলো মখাইদের সাথে যা ভুলে যাওয়ার মত না।আর কেউ ভুলতেও পারে নি,,,,,
মখাইয়ের সাথে রোদদের একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো,আর সেই টানে আজ রোদ আলোকে এমন একটা পরিবেশের সাথে পরিচয় করাতে এখানে নিয়ে এসেছে।কারণ প্রতিটা মানুষকে সব রকম পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া শিখতে হয়,কারন পরিস্থিতি সব সময় এক থাকে না,,,আর সব পরিবেশ নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।রোদও আলোকে সব পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলা শিখাতে চায়,,,।

চলবে,,,!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here