‘সিক্ত সুভানুভব’
[২৮]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
আলো ওদের দুবোনকে কাছে ডেকে আদর করলো অনেক কথা বললো।মধু গিয়ে খাবার বেড়ে মাদুর বিছিয়ে দিলো।মধু রোদকে ডেকে আনলো, রোদ হাতমুখ ধুয়ে রুমাল দিয়ে মুখ মুছে রুমের দিকে হাঁটা দিল।রোদ রুমে ঢুকে আলোকে দেখে থ হয়ে দাড়িয়ে আছে।মধু, মালতি আর পুষ্পকে ইশারায় ডেকে নিল। রোদ গিয়ে আলোর মুখ ধরে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।আলো রোদের এভাবে তাকানো দেখে লজ্জাতে মাথা নিচু করে ফেলে।রোদ শুধু আলোর কানে কানে বলে যে,,
–
রোদঃ আলোমনি আর কত রূপ আমাকে পাগল করবে,মাঝে মাঝে তো কনট্রোলে থাকতেও ইচ্ছে করে না।আমার মন চাচ্ছে তোমাকে সামনে বসিয়ে সারাদিন তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি,,,
আলোঃ খেতে চলুন।
রোদঃতোলা রইল, সময়মত সব উসুল করে নিবো।
–
সবাই এক সাথে খেতে বসলো,আলোর জোরাজুরি
তে, কারন মধু আর মখাই আলাদা করে খেতে চেয়েছিলো কিন্তু রোদ আর আলো শোনে নি।
–
আলোঃভাবি রান্নাটা অনেক ভাল হয়েছে,,,প্রতিটা পদই,আর এই চালের পায়েস, আমি এর আগে খায়নি,,এক কথায় দারুন খেতে।
রোদঃহুমম সত্যি রান্না অনেক ভালো হয়েছে,,আমি এই পায়েশটা এখানেই এসে খেয়েছিলাম।এজন্য জানা আছে এর টেস্ট।
মধুঃআপনাদের পছন্দ হয়েছে এতেই খুশি আমি,,আর আমি কিভাবে পায়েশ রাস্তা করলাম দেখলে তো,,তোমাকেও এই চাল দিবো তুমি বাড়িতে গিয়ে রান্না করে সবাইকে খাওয়াবে কেমন।
আলোঃ আচ্ছা ঠিক আছে,
মখাইঃআমার বউয়ের হাতে রান্না বলে কথা,ভালো তো হবেই।আর আজকে রান্নার সময় আমি দেখা দিয়েছি এজন্য এত টা ভালো হয়েছে
মধুঃবুড়ো বয়সে ভীমরতী।
রোদ আর আলো দু’জনে হেসে দিল।
ওরা সবাই খুব মজা করে খাওয়া শেষ করলো।আলো আর মধু খাবার গুলো গুছিয়ে নিলো,তারপর সবাই কিছুক্ষন গল্পতে মেতে উঠলো।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বললো,,,।
–
রোদঃআলো আমাদের এখন বের হতে হবে কারন পাহাড়ি এলাকাতে সন্ধ্যা নামে তারাতারি,আর সন্ধ্যায় বন্যপ্রানীদের উপদ্রব বাড়ে বেশি,,,
মখাইঃনা ভাই আজকে রাত টুকু থাকেন,জানিনা আবার কবে আসবেন।এই গরীবের বাড়িতে আজ রাত টুকু থেকে কাল যাবেন,,আজ আপনাদের যাওয়া হবে না।
মধুঃভাইয়া থাকেন আজকে,পিঠা বানাতেও পারলামনা,আরো বাকি পাহাড়ি খাবার তো আলোকে খাওয়াতে পারলাম না।এভাবে চলে গেলে আমাদের খারাপ লাগবে।
মালতি আর পুষ্পঃরোদ কাকু আজকে থাকো না,নতুন কাকির সাথে তো গল্পই করা হলো না।
রোদঃ আম্মু আমি তো অফিসের কাজে এখানে এসেছি, এজন্য থাকতে পারবো না।আমরা আবার আসবো(মালতি আর পুষ্পকে কাছে এনে আদর করে)
আলোঃ আমার তো যেতে ইচ্ছে করছে না।
রোদঃআমরা আবার আসবো,,, মন খারাপ করো না।
মখাইঃআজ থাকলে হয় না ভাই।
রোদঃমখাই আমরা আবার আসবো তো,এমন মন খারাপ করলে আর আসবো না কিনতু।
–
মধু তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন ধরনের আচার,মোড়া,পায়েশের চাল,এসব দিয়ে দিল।রোদরা মানা করলো তাও কথা শুনলো না।আলো ওর শাড়ি নিলো না ওটা ধুয়ে দেওয়াতে শুকায়নি,আর রুপার গয়না গুলো খুলে মধুকে দিতে চাইলো, মধু খুলতে দিলো না।আলো ওর কানের সোনার দুলটা মালতিকে আর সোনার চেনটা পুষ্পকে দেয়।মখাই আর মধু নিতে না চাইলোও আলোর কথার কাছে হেরে যায় আর নিতে বাধ্য হয়।রোদও আলোর এমন ব্যবহারে খুশি হয় কারন মখাইরা এত অভাবের সংসারে যদি কষ্টে বানানো রুপার গয়না দিতে পারে, তাহলে আলোরও তো কম নেয় তাহলে ও কেন দিবেনা?রোদ মখাইকে একটা খাম এগিয়ে দেয়, মখাই নিতে না চাইলোও রোদ ইশারায় বলে কোন কথা না।আলো থামি পড়ে রিসোর্টে ফিরবে এজন্য ওরা আর দেরি করলো না,ওদের থেকে বিদায় নিতে গিয়ে আলো মধুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই দিলো,সবার চোখে পানি ছলছল করছে।
–
আলো তো ভালবাসার কাঙাল এজন্য একটু ভালবাসা পেলে এত ইমোশনাল হয়ে যায়।ওরা বিদায় আবার হাঁটা শুরু করলো,পেছনে তাকিয়ে দেখে মধুরা এখনো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।রোদ আলোর একহাত ধরে মধুদের টাটা অন্য একটা রাস্তাতে ঢুকে পড়লো।আলোর মনটা খারাপ,,,, রোদ আলোকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বললো,,
–
রোদঃআলোমনি মন খারাপ করো না,আমরা আবার আসবো আর মখাইয়ের রুম ছোট আমরা যদি থেকে যায় ওদের কষ্ট হতো তাই না।
আলোঃহুমম
রোদঃআর আমরা ঘুরতে এসেছি,,আর কয়েকদিন মাএ আছি,তোমাকে যদি না ঘুরাতে পারি, তাহলে নিজের কাছে খারাপ লাগতো,,,মন খারাপ করো না,আরো অনেক জায়গাতে তোমাকে নিয়ে যাবো।
আলোঃহুমম,,,
রোদঃআমরা বেবি নিবো কবে?(আলোকে হাসানোর জন্য)
আলোঃআমিই তো বেবি,,, আবার বেবি আসবে কোথা থেকে?
রোদঃ বউ তুমি বড় হয়ে গেছো,,,, সেদিন আমাদের।
আলোঃআবার শুরু করলেন অসভ্যতামী।
রোদঃযা বাবা অসভ্যতামী কই করলাম আলোমনি,আজ রিসোর্টে চলো তারপর তোমার হচ্ছে,,,,, আলো আজ তোমাকে সত্যি খুব সুন্দর লাগছে এমন ড্রেসে, একদম পাহাড়ী মেয়েদের মত।নাক বুচি তো এজন্য আরো পাহাড়ি লাগছে।
আলোঃতুমি আমাকে বুচি বললে?
–
ওদিকে আজ মেঘকে পড়াতে এসেছে ওর টিচার, ওর পড়া কমপ্লিট হয়নি এজন্য পেট ব্যাথার অভিনয় শুরু করছে।মেঘের আম্মু মনে করছে মেঘের সত্যি পেট ব্যাথা করছে,এজন্য টিচারকে চলে যেতে বলে।টিচার চলে যাওয়ার পর ওর আম্মু ওকে শুয়ে থাকতে বলে চলে যায়। আর মেঘ শয়তানি হাসি দিয়ে গেম খেলা শুরু করে ওর ফোনে,,,মেঘ গান গাইছে,,,
মাগো কি ব্যাথা হ্যায় হ্যায়,,
পেটে কি ব্যাথা হ্যায় হ্যায়
অভিনয় করি ভাল হ্যায় হ্যায়।
আম্মুঃবাহ্ আমার ছেলে গানটা ভালোই গাইতে পারে,,,বাবা উঠো এবার পড়তে বসো।
টিচারঃচলো আজ তোমাকে মেরে ২+২=৫ হয় কি করে এটা শিখাবো,আমার সাথে বিটলামি।
মেঘঃও মা গো আমার সত্যি পেটে ব্যাথা করছে।
–
মেঘকে শুনিয়ে শুনিয়ে তখন টিচারকে চলে যেতে বলেছিলো,আর মেঘও মনে করছে সত্যি টিচার চলে গেলে।
মেঘের আম্মু টিচারকে লুকিয়ে থাকতে বলে,কারন মেঘ যে অভিনয় সেটা সবাই বুঝে গেছে।বেচারা মেঘ গ্যাড়াকলে পড়ে আবার উঠে পড়তে বসে,ওর আম্মু রুম থেকে চলে যায়।
–
রোদরা রিসোর্টে ফিরে যায়,তারপর ফ্রেস হয়ে নেয়।রাতের ডিনার সেরে নেয়,,, রোদ আলোর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আর আলোর রোদের চুল টেনে দিচ্ছে।আলো আর রোদ বাসাতে ফোন দিয়ে কথা বলে নিলো,রোদ ওদের রুমে কফি দিয়ে যেতে বললো,আলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। রোদ কফি নিয়ে আলোর কাছে যায়।রোদ আলোর কোমর ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে,,,, দুষ্টু হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,,
–
রোদঃ জানো কাপলের কফি খেতে হয় কি করে?আই মিন কফি কিভাবে খাওয়া উচিত?
আলোঃকাপলদের কফি খাওয়ারও নিয়ম আছে,এটা তো আমার জানা ছিলো না।
রোদঃআজ আমি তোমাকে জানাতে চাই,,, সেটা মুখে না।কাজে করে দেখিয়ে, সেটা তোমাকে শিখাতে চাই,,। তার আগে তুমি চোখ বন্ধ কর।
আলোঃওকে,,
–
রোদ পাশের কফির মগটা নিয়ে, ফু দিয়ে কফি নিজের মুখে নেয়।তারপর আলোকে টেনে নিয়ে আলোর ঠোঁটে ঠোঁট বসায় আর কফি আলোর মুখে দেয়,আলো প্রায় ১ মিনিট পর কফিটা গিলে, রোদের মনে যে এমন দুষ্টু বুদ্ধি চলছে আলো বুঝতে পারেনি।রোদ না আলোকে ছাড়ছে আর না ঠোঁট,,,,।
–
খুব সকালে ওরা ব্রেক ফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ে,আজকে দুজনেই কালো জিন্স আর আলো মেরুন কালারের টপস্,আর রোদ সবুজ গেন্জী।আলো চুল গুলোকে রিবন দিয়ে উচু করে বেঁধে নিলো,,,,ওরা আজ কাপ্তাই লেকে ঘুরতে যাবে,,,
–
ওরা লেকের পাশে গিয়ে একটা ইস্টিমার উঠে বসলো,,,এটাতে পুরো লোক ঘুরে দেখবে এজন্য।রোদ ইস্টিমারটা পুরোটাই রিজার্ভ করে নিলো যাতে আলো পরিবেশ ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারে।
লোকের মনোরম একটা সৌন্দর্য অসম্ভব সুন্দর জায়গা,,, চারপাশে পাহাড় আর লেকের নীলপানি,,,, এক কথা অপরুপ সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ জায়গাটা।আলো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে লোকের পানি আর চারপাশের পাহাড় গুলোর দিকে।আলো উঠে দাড়িয়ে চারপাশটা দেখতে দেখতে, এসব জায়গা না দেখলে বোঝা যাবে না মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আসলে কাকে বলে।ছোট ছোট দীপ, পাহাড়ি ঝর্না, আর সবুজ পাহাড়ের মাঝখানে দিয়ে বয়ে চলে এই লেক।
রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে আছে,,,,রোদ কয়েকটা পাহাড় দেখিয়ে বললো,,,
–
রোদঃএই পাহাড় গুলোর নাম কি জানো?
আলোঃনা আমার ধারণা নেই,,
রোদঃচিংড়ি,গাছালং,মাইনি,রাখাইন,থিরা এগুলো ছোট পাহাড়,,,আরো সামনে গেলে দেখতে পাবে রাম আর সীতার পাহাড়।আর এই দীপ গুলো যে বাড়ি গুলো দেখছো ওগুলোতে পাহাড়িরা বসবাস করে।
আলোঃ হুমম সত্যি জায়গা অনেক সুন্দর,,,
রোদঃএবার আমরা যাচ্ছি চাং পাং পাহাড়ে,,আর ওখানে একটা রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে খেতে,,,যদিও রেস্টুরেন্টটার নামও চাং পাং,,,
আলোঃওকে।
–
ওরা অনেক ঘুরাঘুরি করে চাং পাং রেস্টুরেন্টে গেল,, এটাও পাহাড়ের উপরেই,,এখানে উঠার জন্য সিড়ে বানানো হয়েছে,,ওরা উঠা শুরু করলো,আলো মাঝ সিড়িতে বসে পড়লো,,,কারন অনেক সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে।রোদ হুট করে,,
–
চলবে,,,!!