ভালোবাসার প্রতিদান #রোকসানা আক্তার পর্ব-০৬

0
634

#ভালোবাসার প্রতিদান
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-০৬

নদীর সামনে অনেক শক্ত থাকলেও বাসায় আসার পর খুব ভেঙ্গে পড়ি আমি।ভেঙ্গে পড়ি এই কারণে তিথি বান্ধবী হয়ে প্রতারণা করলো মানলাম,কিন্তু তারথেকেও প্রতারণা করলো সেই মানুষটি যাকে আমি সবথেকে বেশি ভালোবাসতাম।সবথেকে বেশি বিশ্বাস করতাম।পাঁচটা বছর সম্পর্ক ছিল আমাদের!সেই পাঁচটা বছরের ভেতর তারসাথে যতগুলো মোমেন্ট কেঁটেছিলো সবগুলো মোমেন্টেই তার একটাই কমন কথা ছিল।তা হলো-“প্রিয়া আমি তোমাকে ছাড়া আর কখনো অন্যমেয়ের হাত ধরতে পারবো না।অন্য মেয়ের কথা ভাবলেই আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।তুমিই আমার প্রথম আর তুমিই শেষ!”প্রথম ছিলাম কি না জানি না।তবে আজকের ঘটনায় মনে হলো একশোর পরের সিরিয়ালে ছিলাম।নাহলে সেই মানুষটি আমার সব মায়া,ভালোবাসা,বিশ্বাস সব ত্যাগ করে খুব সহজে অন্য আরেকটা মেয়ের হাত ধরতে পারতো না!বেঈমান,বিশ্বাসঘাতক একজনকে ভালোবেসেছি। ঘেন্না হয় আমার নিজের উপর!আর ওই ভালোবাসার উপর।
এভাবে ভাবতে ভাবতে নিজেকে অনেকক্ষণ কষ্ট দিই।তারপর আবারো নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করি। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দু’চোখের পানি মুছে নিয়ে তারপর মোবাইলটা হাতে তুলে নিই।আকাশ ভুঁইয়া অনিল নামের ওই ছেলেটিকে কল দিই।রিং হবার প্রথমে দফাতেই ছেলেটি কল রিসিভ করে।

“জ্বী,বলেন?”
“আপনি কি আগামী কাল আমার সাথে একজায়গায় যেতে পারবেন?”
“কোথায়?”

আমি এবার দৃঢ় একটা শ্বাস ছেড়ে বলি,

“রিয়াশের বাসায়।”
“রিয়াশ?রিয়াশ কে?”
“যার সাথে আমার বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল।”
“ওহ আচ্ছা,আচ্ছা!মনে পড়েছে এখন।আসলে একবার নামটা শুনলাম ত তাই ভুলে গেছি।”
“ইট’স ওকে।”
“তাহলে কাল কখন আসতে হবে?”
“এই ধরুন সকালের দিকে।কারণ সকালে ওর বাবাও বাসায় থাকেন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।আমি রেডি হয়েই আপনাকে কল করবো।”
“ধন্যবাদ।”
“মোস্ট ওয়েলকাম।”

কল রাখার পর ভাবী আমার রুমে আসেন।চায়ের কাপ টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলেন,

“আজ তোর জন্যে একটা সম্বন্ধ এসেছিল প্রিয়া।কিন্তু উনারা আমাদের বাসায় ঢুকার আগমুহূর্তেই কিছু প্রতিবেশী তোর বদনাম করে দেয়।তারপর লোকগুলো শুকনো মুখ নিয়ে আবার ফিরে যায়।”
“ফিরে যাক।”
“ফিরে গেছে তা সমস্যা না।খামোখা মিথ্যা অপবাদে ফিরে যাবে এটাই সবথেকে দুঃখের কথা!যাইহোক কোনো প্রমাণ বের করতে পেরেছিস?”
“পেরেছি ভাবী।সব ওই তিথিই করেছে।আমাকে বদনাম করে এখন ও রেস্টুরেন্টে বসে বসে রিয়াশের সাথে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে।বান্ধবী হয়ে এরকম কাজটা কীভাবে পারলো ভাবী?বিশ্বাস হয় তোমার?”
শেষ দুই বাক্য বলা মাত্রই আমার চোখজোড়া আবারো টলমল করে উঠে।লম্বা করে একটা হাঁক ছেড়ে কান্নাটা থামানোর চেষ্টা করি।ভাবী আমার কথায় মুখ টা “হা” করে বিস্ময় চোখে একদিকে দৃষ্টি ফেলে দাঁড়িয়ে রইলেন।চোখমুখ জুঁড়ে শুধু উৎপাত করছে অবিশ্বাসের চিহ্ন।এভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভাবী তার সৎবিৎ এ ফিরে আসেন।বলেন,

“তিথি এরকম করলো?তোর বেস্ট বান্ধবী টা?”

চুপ হয়ে যাই।আমারও কথা বলার ভাষা নাই।

“ছিঃছিঃছিঃ কিভাবে করতে পারলো ও এটা!আমার বিশ্বাস হচ্ছে না প্রিয়া!সত্যি বললি ত ওই এরকম করেছে?”
“সত্যি কিনা মিথ্যা কালই প্রমাণ পাবে!”

—————————————————————————

সকালে ফোনের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আমি বালিশের কিণার হাতরে ফোনটা হাতে নিই।রিসিভ করি।ঘুম জড়ানো গলায় বলি,

“হ্যালো?”
“রেডি হয়েছেন?”

“রেডি হয়েছেন ” কথাটা কানের সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকতেই আমার তন্দ্রা মাখা চোখজোড়া থেকে মুহূর্তে ঘুম ছুটে যায়।আমি তরহর ফোনটা কানের থেকে নামিয়ে সামনে এনে দেখি বেলা-৮টা বেজে ৯ মিনিট!এতটা বেলা!আজ এতটা বেলা করে ঘুমচ্ছি!আমার না সকাল সকাল বেরুনোর কথা!ভেবেই ছেলেটিকে আমতা আমতা কন্ঠে বলুন,

“একটু ওয়েট করুন।এই তো রেডি হয়ে আপনাকে কল করতেছি।”
“জ্বী,আচ্ছা।”

মোবাইলটা রেখে বাথরুমে দিকে ছুট দিলাম।চোখমুখে কোনোমতে পামি ছিটিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তারপর রেডি হলাম।রেডি হওয়া শেষ হলে ওই আকাশকে কল করে “সামান্তা ঘাট” আসতে বললাম।তার কয়েক মিনিট বাদে আমিও সেখানে পৌঁছে গেলাম।গিয়েই দেখি আকাশ আমার আগেই এসেছে।আমি খানিকটা লজ্জা পাওয়ার মতন হয়ে গেলাম।সে আমাকে খানিকটা দূর থেকে দেখে মৃদু হেসে বলে উঠলো,

“ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে,তাই না?”
আমি এগিয়ে যেতে যেতে বললাম,
“বুঝলেন কীভাবে?”
“যখন ফোনে কথা বলতেছিলাম।তখন কন্ঠস্বরেই বুঝলাম।”
“আচ্ছা। ”
বলে আমিও মৃদু হাসলাম।তারপর আমরা একটা রিক্সা নিলাম।রিক্সা আমাদের রিয়াশদের বাসার সামনে পৌঁছে দেয়।কলিংবেল চাপতেই রিয়াশের বাবা এসে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়।উনি আকাশের সাথে আমাকে দেখামাত্রই অবাক হয়ে যায়।তারপর খানিক্ষন নিশ্চুপ মুখে থেকে সামাজিকতা বজায় রাখতে বলেন,

“ভেতরে আসো।”

আমি এবং আকাশ ভেতরে গেলাম।”
“বসো ওখানে।” (সোফার দিকে ইঙ্গিত করে)
আমরা বসলাম।তিনিও বসলেন।আমাদের কথা শুনে রিয়াশের মাও এ রুমে ছুটে এলেন।
আমি বলে উঠলাম,

“আঙ্কেল?রিয়াশ কি বাসায় আছে?”
“আছে।”
“ওকে একটু ডাকতে পারবেন, প্লিজ?”
“রিয়াশকে ডেকে আনো।”
রিয়াশের মার দিকে তাকিয়ে।রিয়াশের মা তাতে সায় দিয়ে রিয়াশের রুমে যান।রিয়াশ আসে।আকাশের সাথে আমাকে দেখতে পেয়ে রিয়াশও বেশ অবাক হয়ে যায়।পরপর তার মা-বাবার তাকায় পরিস্থিতি আঁচ করার জন্যে!রিয়াশের মা-বাবাও তাই করেন!চোখমুখ কুঁচকে ইঙ্গিত করেন ছেলেকে-“আমরাও কিছু বুঝতেছি না।”আমি উনাদের মনের অবস্থা ধরতে পেরে এবার সহজ ভঙ্গিতে হেসে উঠি।বলি,

“এখানে কেন এসেছি তার কারণ বলছি আন্টি-আঙ্কেল!”

চলবে..

(অনেক খানি লিখেছিলাম!পুরো ঘটনাটা তিথির রিয়াশের!কিন্তু কপি করতে যেয়ে লাস্টের টুকু ডিলিট হয়ে যায়😑😑!বিরক্ত হয়েছিলাম খুব।ভাবলাম গল্প দিব না আজও!কিন্তু গতকাল দেই নি ভেবে নিজেকে আবারো ঝাঁলাই করে নিই।হয়তো অনেকে অপেক্ষা করছে সেই ভেবে।দুঃখিত, ছোট্ট হয়ে গেল!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here