#ভালোবাসার প্রতিদান
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-০৭
“এখানে কেন এসেছি তার কারণ বলছি আন্টি-আঙ্কেল!”
রিয়াশের মা-বাবা এবার আমার দিকে তাকান।রিয়াশও।বললাম,
“ইনার নাম আকাশ।আই হোপ আপনারা এতক্ষণে ইনাকে নিশ্চয়ই চিনে ফেলেছেন।আসলে আঙ্কেল ওদিন যেই ছবিটির জন্যে আপনারা সবাই আমাকে ভুল বুঝলেন ওই ছবিটির ব্যাপারে সত্যি আমি কিছুই জানতাম না।আর সবথেকে বড়কথা হলো আমার পাশে বসা ইনিও!”
আমার কথা শুনে রিয়াশের মা-বাবা খানিকটা অসংযত হয়ে যান।বিব্রত গলায় বলেন,
“তাহলে?”
“তিথি আঙ্কেল!”
“তিথি টা কে?”
তারপর ধীরে ধীরে সবটা উনাদের বলতে থাকি।সব শোনার পর উনাদের চোঁয়াল,চোখমুখ শক্ত হয়ে যায়।আর সাথে এক ফসলা রাগও।বেসিকেলি রাগটা রিয়াশের উপর।।কারণ সে এরফাঁকে তিথির সাথে যে সম্পর্ক জুড়েছে সেই জন্যে।রিয়াশ তার মা-বাবার সামনে নিজের দোষটা চাপাতে আমার উপর পাল্টা জবাব ছুঁড়ে দেয়,
“তিথি যে এসব করেছে তার প্রমাণ কি?”
ঠিক তখন আকাশ একটা ফিঁকে হাসি দিয়ে পাশ থেকে বলে উঠে,
“আছে প্রমাণ !”
“কই দেখি!?”
আকাশ এবার আমার দিকে ফিরে।ইতস্তত গলায় বলে,
“আপনাকে না জানিয়ে আমি একটা কাজ করে ফেলেছি, মিস প্রিয়া !”
“কী কাজ?”
“বলবো।ওয়েট..!”
বলে এবার আবার রিয়াশের দিকে ফিরে,
“মিস্টার রিয়াশ,আপনি তিথিকে কল করে এখানে একটু আসতে বলুন!যা প্রমাণ সব উনার সামনেই তুলবো । ”
রিয়াশের বাবা আকাশের কথায় সায় দিয়ে বলে উঠেন,
“আকাশ ঠিক বলেছে।তুই ওই মেয়েকে কল করে তাড়াতাড়ি এখানে নিয়ে আয়।”
“কিন্তু হঠাৎ এভাবে কিভাবে আন…!”
“বলবি যে আমার মা-বাবা তাকে দেখতে চাচ্ছে।বাবার আজই ছুটি।পরে আর ছুটি হবে না দেখতে।তাই আজই আসতে।”
“জ্বী আচ্ছা!”
বলে রিয়াশ মনে খানিকটা বিব্রত মনে তিথিকে কল দেয়।তার মিনিট বিশেক বাদেই তিথি চলে আসে।এসে আমাকে এবং আকাশকে দেখে সে চরম অবাক হয়ে যায়।সাথে অনেকটা জ্ঞানশূন্যতাও।যদিও তার মনের অবস্থা বুঝার উপায় নেই।তবে তার ভাবভঙ্গি তে আমি কিছুটা ধরতে পারি।সে ইতস্ততা কন্ঠে বলে,
“হঠাৎ আমাকে এখানে?”
রিয়াশের বাবা বলেন,
“প্রয়োজন আছে তাই বলেছে আসতে।আচ্ছা, তুমি দাঁড়িয়ে কেন?ওখানে বসো?”
তিথি আলতো মাথা দুলে ব্যাগটা কোলের তুলে সিঙ্গেল সোফাটায় গিয়ে বসে।তারপর তিনি এবার আকাশের দিকে ফিরে বলেন,
“তা কি যেন বলবে….!
” যেই নাম্বারটি থেকে ছবিটি পাঠানো হয় তার সব ডিটেইলস আমি বের করি।বের করার পর দেখি সিমটি একটা ছেলের নামে রেজিস্ট্রেশন করা।আর রেজিষ্ট্রেশনের ওই এড্রেস অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির বাসায় যাই।একা যাই নি।যদি কোনো গ্যাং হয়ে থাকলো তাই সেই ভেবে সাথে আরো দু’জন বন্ধুকে নিয়ে যাই।ছেলেটিকে নাম্বারটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। সে বলে তার সিমটি কয়েকদিন যাবৎ আলমারিতে বন্ধ পড়ে আছে।কেউ ইউজ করে না।তবে হ্যাঁ,মাঝেমধ্যে তার বন্ধুরা তাদের গার্লফ্রেন্ডদের সাথে রং নাম্বারে কথা বলতে সিমটা নেয় একটু এই!আমি ছেলেটির চোখমুখে বিচক্ষণ চোখে তাঁকাই।আর মস্তিষ্কে চেপে রাখি তার বলা ” তবে হ্যাঁ,মাঝেমধ্যে তার বন্ধুরা তাদের গার্লফ্রেন্ডদের সাথে রং নাম্বারে কথা বলতে সিমটা নেয়!”ভেঁজাল এই দুই জায়গায়।হয় এই ছেলেটি ওই ছবির সাথে যুক্ত আছে,নয়তো তার বন্ধুরা।তাদের উভয়ের মাঝেই কেউনা কেউ ওই কাজটি নিশ্চিত করেছে।এবার আমার কাজ এদের থেকে সত্যটা বের করা।কীভাবে বের করবো তা খানিক্ষন নিজে নিজেই ভাবতে থাকি!ভাবার পর আমার মস্তিষ্কে একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে যায়!আমি কী করি ওই ছেলেটির হাতে থাকা ফোনটা টপ করে আমার হাতে দখল করি!আর ফোনের কন্টাক্টে যেয়ে তার রিলেটিভ টাইপ কাউকে খুঁজতে থাকি।ভাগ্যক্রমে প্রথমেই তার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বারটি চোখের সামনে পড়ে!আমি তার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বারটি আমার ফোনে তরহর তুলে নিই।তারপর গ্যালারি থেকে তার একটা ফটো আমার ফোনেে আনি!এসব দেখে ছেলেটা হতাশ।চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“এসব আপনি কি করতেছেন?আমার ফোন নাম্বার এবং আমার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার কেন নিয়েছেন!?” “নিলাম এই কারণে আপনার এই ছবিটি মিসইউজ করে তা আপনার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বারে পাঠিয়ে দিব।”
“এসব কি বলতেছেন আপনি?আমার গার্লফ্রেন্ডের কাছে পাঠাবেন মানে?আমি কি কোনো ক্ষতি করেছি আপনাদের?”
ছেলেটির প্রশ্নবাক্যে আমি ছেলেটির মুখের সামনে আমাকে নিয়ে মিসইউজ করা ছবিটি তুলে ধরি,
“এই ছবিটি আপনি যেমন একটা মেয়ের বিয়ে ভাঙ্গতে আরেকজনের নাম্বারে পাঠিয়েছিলেন তেমনি আমিও তাই করবো!”
“আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতেছি না।কি বিয়ে ভেঙ্গেছি!আর এই মেয়েটাই বা কে যে আমি মেয়েটার ছবি দিয়ে এরকম করবো?আমার কোনো খেয়েদেয়ে কাজ আছে?আপনি এরজন্যে প্রয়োজনে আমাকে পুলিশর কাছে নিয়ে যান তারপরও বলবো আমি ওরকম কিছুই করিনি!আল্লাহর কসম!”
ছেলেটির কথা আমার অনেকটা বিশ্বাস হয়ে যায়।কারণ ছেলেটি যখন কথা বলতেছিলো তখন তার চোখমুখে কোনো চাটুকারি,ধূর্ততা ছিলনা।খুবই সাধারণ আর আহত গলায় কথাগুলো বলেছিল।তারপরও সন্দেহ কমাই নি।টার্গেটে তাকে অবশ্যই রেখেছি।তারপর সেকেন্ড সন্দেহ ছেলেটির ফ্রেন্ডসদের উপর।আর সেক্ষেত্রে হেল্প করে স্বয়ং ছেলেটিই।তাকে বলি তার ফ্রেন্ডস, যাদের সে সিমটা দিয়েছে তাদের সবার সাথে যোগাযোগ করতে যে তারা কেউ এরকম করেছে?বা তারাও আবার সিমটিও কাউকে দেয় নি ত!এরকম অনেকসময় হয়।দেখা যায় ক্রিমিনালরা হাতবদলের মতন কিছু ট্রিকস কাজে লাগায় যাতে সহজে তাদের উপর কেউ সন্দেহ না করতে পারে বা অন্যকারো উপর সন্দেহ হয়!
“হুম।তারপর?(আমি)
” তারপর ছেলেটি মেনে নেয়।তবে ছেলেটির উপর আমি একদম ভরসা কিন্তু করি নি।আমার কিছু ফ্রেন্ডসদের ওর পেছনে লাগিয়ে তারপর আমি বাসা ফিরি।আর বাসায় ফেরার ঠিক তিনদিন পর ওই ছেলেটি আমাকে কল করে,
“ভাইয়া,প্লিজ আপনি আমার ছবিটি নিয়ে কিছু করবেন না।আমি আমার ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলেছি।তারা কেউই ওরকম করেনি।তবে তাদের মধ্যে একজন বললো তার কোন একটা ফ্রেন্ড নাকি তার থেকে সাত মিনিটের জন্যে সিমটা একটু নিয়েছিল।তাও সে আবার নাকি তার কোন একটা ফ্রেন্ডসের সাথে একটু অচিনভাবে মেসেজ করে চমকে দেওয়ার জন্যে।এ ই।তা তেমন সিরিয়াস কিছু না!”
আমি এই ছোট্ট বিষয়টাকেও ছাড় দিই নি।সাথে সাথে বলি,
“যে নিয়েছে তার নাম ?”
“তিথি বোধহয়!”
প্রিয়ার বান্ধবীর নামও তিথি।আর ছেলেটি বললোও তিথি!দুটা নামেই একজনকে মনে হলো তখন বারবার।বলে এবার আকাশ তিথির দিকে ফিরে,
“সো মিস তিথি?আপনি ই কি সেই তিথি?”
তিথি বিষম খাওয়ার মতন অবস্থা হয়ে যায়।তোতলানো গলায় বলে,
“মানে?”
“যদি না শিকার যান তো আপনার ফ্রেন্ডকে কল করে এখুনি চলে আসতে বলি।আপনি কি চান কল করতে?”
“আপনি কি কোনো ইন্সপেক্টর যে কোন একটা তিথি নাম শুনেই আমাকে সে ব্যক্তি টার্গেট করে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করছেন!”
“এসব জিজ্ঞেস করতে ইন্সপেক্টর হওয়া লাগে না! আপনার মতন হীনমন্যতা কাজ করা কিছু মেয়েদের সমাজের কাছে জুতাপিটা করতে মাঝে মাঝে ইন্সপেক্টর অফিসার সাঁজা লাগে।নাহলে সত্যটা কখনো বের হয় না!এবার বলুন অচেনা একজন ছেলের ছবির সাথে অচেনা একজন মেয়ের ছবি ওরকম বাঁজে মিসইউজ করেছেন কেন?!আপনি কি আমাকে চেনেন?!”
“কেন আপনাকে চেনবো?আপনাকে ত এই প্রথম দেখলাম।আর আপনার বলা ওমন দুঃসাহস কথাগুলোকে!”
“সাহস ত অনেক দেখছি আপনার!সব করেও এখন মিথ্যে নাটক সাজাচ্ছেন আবার!বাহ!”
“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ!আপনি না জেনে না বুঝে কাউকে অপদস্ত করতে পারেন না!”
“যদি তাই হয় তাহলে এখুনি আপনার ফ্রেন্ডকে কল দিতেছি। ওয়েট।”
বলে আকাশ ফোনটা হাতে নিয়ে তিথির সেই বন্ধুকে কল দেয়!
চলবে…