রৌদ্রবিলাসী
৭ম পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত
আহান ভাই আমাকে বেধে রেখে তার কাহিনী বলা চালিয়ে যেতে থাকে।আমি চুপচাপ শুনে যাই কথাগুলো,চুপচাপ থাকতাম না যদি মুখে কাপড় গুজে দেয়া না থাকতো।তার মিথ্যা কাহিনীর বর্ণনা দেয়া খুবই কঠিন,তবে কিছু অংশ এমন,
–” শোন উষু,আমি যখন কালিয়া মাস্তানের সাথে কথা শেষ করে গাড়িতে ফিরে আসি তখন দেখি গাড়িতে তুই নাই।আমি আশেপাশে সব জায়গায় প্রায় অনেকক্ষন ধরে খোঁজাখুজি চালিয়ে যাই।সব শেষে বুঝতে পারি যে এটা কালিয়ার একটা চাল ছিল তোকে তার ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেবার।তখনি গাড়ি টান দিয়ে তাদের বাসার সামনে চলে যাই।সেখানে গিয়ে বুঝতে পারি আমার ধারণা ঠিকই বিয়ের আয়োজন চলছে ধুমধামে।
ওই মুহুর্তে আমার কি করা উচিত বুঝতে পারিনা?তাই অনেক ভেবে একটা বুদ্ধি বের করি।আমি কালিয়া মাস্তানকে বোঝাতে চেয়েছি যে আমি তোকে ভালোবাসি না এবং তোর প্রতি আমার কোনো ইন্টারেষ্ট নেই।এর জন্য ভাড়া করি ওই মেয়েটা তিথিকে অভিনয় করার জন্য।তাকে বুঝিয়ে দেই ওখানে গিয়ে এমনভাবে অভিনয় করবে যেন কালিয়া মাস্তান বিশ্বাস করে যে আমি আর তোকে ভালোবাসি না।তাহলে তোর সাথে আমার দেখা করতে দিত এবং আমি তোকে নিয়ে পিছন দিক দিয়ে পালিয়ে আসতে পারতাম।
তিথি ভালো অভিনয় করে কালিয়া মাস্তানকে বিশ্বাস করায়।তিনি দেখা করতে দিতে রাজিও হন।আমরা ভেতরে ঢুকে দেখি তুই নেই।মুহুর্তে আমি বুঝতে পেরে যাই তুই আমি যাওয়ার আগেই পালিয়ে এসেছিস।তখনি আমি তিথিকে নিয়ে বের হয়ে আসি।তারপর একটা রেষ্টুয়েন্টের সামনে গাড়ি দার করিয়ে তার টাকাটা দেই।ঠিক ওই সময় সিএনজি থামিয়ে তুই আমাকে টাকা দেয়া অবস্থায় দেখতে পাস।আমি দেখেছি তোর সিএনজি।কি কিছু ভুল বলেছি? ”
আমি মাথা ধাকিয়ে না বলি।আমি কথাগুলো শুনে মনে মনে বিশ্লেষণ করতে থাকি কথাগুলো মিথ্যা নাকি সত্য।প্রথমে প্রথমে মিথ্যা মনে হলেও এখন আর মিথ্যা মনে হচ্ছে না।আর যদি মিথ্যা হয়েও থাকে তাহলে বলতে হবে আহান ভাই বিশাল মাপের মিথ্যাবাদী।কারণ এত সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বলা যার তার পক্ষে সম্ভব নয়।
আহান ভাই এবার আমার মুখের কাপড়টা খুলে দেন।তারপর আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,
–” আমার কথা নিশ্চয় বিশ্বাস করিসনি।জানি করবিনা..”
কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে আমি বলে উঠি,
–” সব বিশ্বাস করেছি।বুঝতে পেরেছি আপনি সত্যই বলছেন ”
আমার কথা শুনে আহান ভাইয়ের ঠোটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।তিনি লাফ দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেন।তার এই কাজে আমি বেশ লজ্জা পাই।তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাতের বাধন খুলতে খুলতে বলেন,
–” থ্যাংকস গড তুমি বিশ্বাস করেছিস।তবে আমি একটা ব্যাপার এখনো বুঝতে পারছি না! ”
হাতের বাধন খুলে দেয়ায় আমি পুরোপুরি মুক্ত হই।তারপর আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু-নাচিয়ে বলি,
–” কোন ব্যাপারটা? ”
–” এইযে তিথির সাথে আজকেই প্রথম পরিচয়।তাকে শুধু ভাড়া করেছিলাম অভিনয় করার জন্য কিন্তু এখন সে সত্যি সত্যি নিজেকে আমার গার্লফ্রেন্ড দাবি করছে কেন? ”
–” নিশ্চয় কোনো এককালে আপনাদের সম্পর্ক ছিল ”
আমার কথা শুনে আহান ভাই বেশ রেগে আমার দিকে তাকান।পরমুহুর্তে তার মুখ হতাশায় ভরে যায়।তিনি আমার দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে বলেন,
–” তারমানে কোনো কথাই তুই বিশ্বাস করিসনি।করাও লাগবে না।তুই যেটা চাস সেটাই হবে।আমরা সেফারেট হব ”
কথাগুলো বলে তিনি আমার আর কোনো কথা না শুনে উঠে দাঁড়ান।আমি কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি তা না শুনে দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে যান।আমিও উঠে তার পিছন পিছন চলে যাই কিন্তু তাকে ডাকি না।এখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে কেন বললাম ওই কথাটা।মাত্র ৬টা শব্দের জন্য এখন মনেহয় দুজনকে আলাদা হতে হবে?
একপর্যায়ে আহান ভাই ছাদে চলে আসে।তাকে অনুসরণ করে আমিও ছাদে চলে আসি।সেখানে এসে লক্ষ্য করি আমার শাশুড়ি মানে আহান ভাইয়ের মা দাঁড়িয়ে আছে।তিনি আমাকে দেখে হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলেন,
–” তোমার সাথে তো সেই সকাল থেকে দেখাই নেই।নতুন বউ এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়ালে কেমনে হবে।এত রাতে ছাদে কেন? ”
আমি ইশারায় আহান ভাইকে দেখিয়ে দেই।বুঝিয়ে দেই তাকে ফলো করতে করতে ছাদে এসেছি।আমার শাশুড়ি আমার কান্ডকারখানা দেখে এক চোট হেসে বিদায় নেন সেখান থেকে।যাবার আগে বলে যান,তারাতারি ফিরতে।
আমি আস্তে আস্তে পা ফেলে একপর্যায়ে আহান ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ি।তিনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেন।আমাকে দেখিয়ে ফোন বের করে খুঁজতে শুরু করেন উকিলের নাম্বার।ভাবখানা এমন যেন এখনই সবকিছু রেডি করে ফেলবেন তিনি।কিন্তু অনেক খোঁজার পরও ফোনের মধ্যে উকিলের নাম্বার খুঁজে পাননা দেখে আমি হেসে ফেলি।তিনি আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে পুনরায় ফোনে নাম্বার খোঁজাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।
আমি তার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে বলি,
–” অযাথা এতবার ফোনটাকে টিপে কষ্ট দেয়ার মানে কি?কোনো মানেই নেই ”
আমার কথা শুনে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকান আহান ভাই।কিছু বলতে গিয়েও না বলে পুনরায় চুপ হয়ে থাকেন।তারপর আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেন।এমন সময় আমাদের পিছনে থেকে শিষ দিয়ে ওঠে কেউ একজন।
আমরা দুইজনে একসাথে পিছনে ঘুরে তাকাই।বরবেশে আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে বালিয়া মাস্তান।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলেন,
–” উষা তুমি চলে আসো।আরে আহান তো তোমাকে ভালোবাসে সে অন্য একজনকে ভালোবাসে ”
বলদে কি বলছে বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার।আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি সেখানে নাই।চারদিকে তাকিয়ে দেখি আহান ভাই বালিয়া মাস্তানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।হাতের মধ্যে তখনকার সেই কলমটা এখনো আছে।আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না আহান ভাই এখন কি করতে চাইছে?তিনি তখনকার মতো পুনরায় বালিয়া মাস্তানকে সুরসুরি দিতে শুরু করেন।
এদিকে সুরসুরি খেয়ে নাচতে শুরু করে বালিয়া সাহেব।তিনি নেচেই চলেছেন আর হাসতে হাসতে বলছেন,
–” এই এই আহান আরে থাম।মরে যাব আরে গেলাম তো মরে।আমি মরে গেলে তুই কিন্তু শেষ।আমি ভুত হয়ে সারাদিন তোকে এমনে সুরসুরি দিব কিন্তু,আরে থাম ”
তার কথা শুনে আহান ভাই নতুন উদ্যেমে আরো সুরসুরি দিতে থাকে।এমন সময় গাছ বেয়ে ছাদে উঠে পড়েন কালিয়া সাহেব।হাতের মধ্যে জ্বলজ্বল করে একটা পিস্তল তবে সেটা আসল নয় খেলনা।তিনি এই খেলনা পিস্তল নিয়ে এসেছেন তার ভাইয়ের অনুরোধে।আসল পিস্তল দেখে যদি আমি ভয় পাই তখন বালিয়া সাহেব কষ্ট পাবেন তাই ভাইয়ের অনুরোধে খেলনা পিস্তল নিয়ে আমাদের ভয় দেখাতে এসেছেন তিনি?
চলবে…ইনশাআল্লাহ
{কিছু কথা:-ইদানিং লক্ষ করছি অনেকে আমার গল্প কপি করে নাম ছাড়াই পোষ্ট করছে।এটা কি ঠিক বলেন আপনারা?আমি এত কষ্ট করে লিখি আর তারা নিজের নাম দিয়ে পোষ্ট করে।সত্যি খুব খারাপ লাগে এসব দেখতে।লেখার ইচ্ছা চলে যায়…তাই এখন থেকে যে আমার গল্প কপি করবে তার নামে সোজা কপিরাইট মামলা টুকে দেব}
আপনার নামাজেে কথা মনে আছে তো?আল্লাহ হাফেজ