শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি #রোকসানা_আক্তার #পর্ব_১২

0
299

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব_১২

সূবর্ণা আমার সাথে কথাই বলতেছে না ইদানীং। দেখলেও এড়িয়ে যায়!ব্যাপারটা যদিও খারাপ লাগে নিজের কদছে,তবে মন এটাই বুঝ দেয়, ও এখন যা করছে সব আবেগে!আমি বার কয়েক আরো সূবর্ণাকে বুঝাতে চেষ্টা করি।কিন্তু পারিনি।পরে উপায়ন্তর না পেয়ে বাবাকে কল করি।বিষয়টা বাবাকে জানাই!বাবা কথাগুলো শোনার সাথে সাথে বেশ চিন্তায় পড়ে যান।সাথে সাথে মাও।তারাও জানে নিহাল সুবিধের না খুব একটা!আমি বিকেলের দিকেই নিহালকে কল দিই।কল।দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করে নিহাল,
“কিরে কি ব্যাপার?আজকে হঠাৎ কি করে আমার কথা মনে পড়লো তোর?বিয়ের পর থেকে তো ভুলেই গেলি আমাদের!ভুলেই গেলি নিহাল নামের তোর যে সেই পাগলা কাজিনটা আছে,যে তোকে একসময় পাগলের মতন ভালোবাসতো!হা হা হা হা…!”
“দ্যাখ নিহাল হাসিতামাশার জন্যে কল দিই নি!”
“তাহলে কেনো কল দিয়েছিস শুনি?”

ধৈর্য্যের যেন বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে আমার!
“কিরে চুপ ক্যান?কথা ক!”
“নিহাল তুই এসব কি শুরু করেছিস!”
“কি শুরু করেছি!?”
“তুই জানিস না?!”
“কি জানি!”
“ন্যাকামো করিস না!এসব আমার একদম ভাল্লাগে না!”
“আহা..ন্যাকামো কেনো করবো রে!আমি ব্রিজের রেলিং এর উপর বসে ঠান্ডা হাওয়া খাচ্ছি বুঝছিস!তাই ক্লিয়ার করে বা বললে নিজের গভীরভাবে ভাবার ওই ফিলিংসটা এখন আসবে না!”
“তুই সূবর্ণার থেকে সরে যা!তুই ওর জীবনে ভালো কিছুর জন্যে উদ্দেশ্য করে আসিস নি এটা আমি ভালো করেই জানি!তাই এখনই বলছি,ভালো করে বলছি ওর লাইফ থেকে সরে যা!”
“ওহ আচ্ছা এই কথা!?তা ও তোকে সব বলে দিল নাকি?”
“সে আমাকে কিছুই বলেনি!”
“আচ্ছা…! ”
“কত মেয়ের সাথেই তো প্রেম করেছিস এই জীবনে!কত মেয়ের জীবন নষ্টও করে দিয়েছিস!শেষে তুই আমার সংসারে এসেছিস আগুন জ্বালাতে!”
ও হাসে!বললাম,
“নিহাল ভালো হচ্ছে না কিন্তু এসব!”
“তাহলে কি ভালো হবে শুনি?আমি সূবর্ণা কে ছেড়ে দিলে তবে তোর ভালো হবে?বিয়ের আগে আমাকে তুই অনেক কষ্ট দিয়েছিস!কত চেয়েছি তোকে বিয়ে করতে, কিন্তু তুই পাত্তা দিস নি আমাকে!এখনো সেই অপমাণ,ক্রোধ বুকের মাঝখানটায় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে!তুই অন্যের সাথে ফুর্তিতে সংসার করবি..আর আমি..?তুই সেদিন হয়তো ভুল করেছিস আমাকে না চিনে!এখন ঠিকই টের পাইবি এই নিহাল কি!”
“চিনি তো তোকে!তুই লম্পট একটা,গুন্ডা একটা এবং মস্তিষ্কহীন জানোয়ার একটা!”
“হিহিহিহিহিহিহিহি..!আর কিছু?”

কান্না চলে এলো প্রায়!চুপ করে রইলাম!নিহাল বললো,
“আচ্ছা শোন?তোর সংসারে আমি কিছুই করবো না!তবে,সূবর্ণাকে একদমই উসকাতে পারবি না আমার থেকে সরে যেতে!রাখলাম।আর বেস্ট অফ লাক!”

বলে নিহাল ফোনটা কেঁটে দেয়!আমি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠি।

তারপর আরো দুইদিন কেঁটে যায়।ফোনের দিকে তাকাই।আকাশের কোনো কল নাই!খোঁজ নাই!দুপুরে হঠাৎ আমার সেদিন ঘুম ভেঙ্গে যায়।বাইরে শাশুড়ী মায়ের চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ!আমি দৌড়ে রুমের বাইরে গেলাম।আর বাইরের দৃশ্য দেখেই হতভম্ব এবং স্তব্ধ হয়ে গেলাম পুরো।শাশুড়ী মা সূবর্ণার উপর ক্ষেপেছেন,

“তুই কার সাথে ফোনে কথা বলতেছিস!কার সাথে?কে ওই ছেলে?বল?কে!”

সূবর্ণা ফুঁপিয়ে কান্না করতেছে শুধু।কিছু বলছে না!শাশুড়ী মায়ের রাগ আরো বেড়ে যায়!
“তোর না পরিক্ষা কয়দিন পর!তোর পড়া আছে আছে বলে রুমে যেয়ে ছেলেদের সাথে ফুটুসফাটুস আলাপ?আমেনা(ছোটবোন)আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, ও এই বয়সে এসব!”

শাশুড়ী মায়ের চোখে যেন পানি চলে এলো!আন্টি ঠিক তখনই বলে উঠেন,
“গিয়ে খতিয়ে দেখো কেউ আবার উস্কিয়ে ছেলেদের সাথে লাইন করে দেয়নি তো?”

এ’কথাটি বলে আন্টি আমার দিকে একনজর তাকান।পরপর উনার বড় মেয়ে!তারপর শাশুড়ী মা!শাশুড়ী মা কিছু আমাকে যেন বলতে মুখটা নড়িয়েও নড়ালেন না।সূবর্ণার দিকে তাকালেন ওমনি।বললেন,
“তোর ফোন আমার কাছে থাকবে!এই ফোন তুই আর চালাতে পারবি না!রুমে যা এবার!যা!”

সূবর্ণা কাঁপা কাঁপা পায়ে রুমের ভেতর ঢুকে গেল!আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম শুধু।আর ভাবতে থাকলাম এসব কি হচ্ছে?নিজের রুমে তারপর এসে বসে পড়লাম!
তার দুইদিন পরই নিহাল কল করে আমাকে।করেই,

“কিরে?ননদীকে বারণ করে দিলি?আমার সাথে আর কথা না বলতে?ফোন বন্ধ কেন ওর?!”
“নিহাল?ভাই আমার তুই!তুই প্লিজ সূবর্ণার সাথে কথা বলার চেষ্টা করিস না!প্লিজ নিহাল!”
“তারমানে তুই ই বারণ করে দিলি কথা না বলতে!?ওকে….!তবে… তুই জানিস না তোর ননদীর কি না আমার কাছে আছে…!ফেঁসে গেলি!আর এটাই চেয়েছি আমি!হা হা হা হা!”

বলে সাথে সাথে কলটা কেঁটে দেয় নিহাল!এটা চেয়েছে মানে সে?কি বলতে চাচ্ছে নিহাল!
ব্যাকুল হয়ে আবার নিহালকে কল ব্যাক করি। কিন্তু ও ফোনটা বন্ধ করে ফেলে ততক্ষণে।এবার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে আমার!নিহাল ফোন অফ করলে কেন?আপনাদের আগেই বলেছি নিহাল সুবিধের না!ও খুবই ডেন্জারাস পার্সোন!আমি বাবাকে কল করি।বাবাকে সব বিষয় জানাই।বাবা নিহালের মা-বাবার সাথে কথা বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন।কিন্তু লাভ নেই।নিহাল ফুপা-ফুপীকে ওতটা গাঁয়ে মাখে না!বাবার কলটা কেঁটেই কেঁদে উঠলাম!

তারপর এভাবে আরো দুইদিন কেঁটে যায়।সূবর্ণাকে রুমের ভেতরই বদ্ধ রাখে শাশুড়ী মা!স্কুলেও যেতে পারে নি!আমি দুপুরে তখন রান্না ঘর গোছগাছ করতেছিলাম।এমন সময় সানহা এসে শাশুড়ী মায়ের দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ওই ছেলেটা আবারো কল করেছে আন্টি!কি করবো এখন!?রিসিভ করে বকাঝকা করে দিই?”

শাশুড়ী মা তখন বলে উঠেন,
“ছেলেটার জন্যে অপেক্ষা করতেছি!তবে অপেক্ষায় মনে হয় হবে না!ফোনটা দে!”

বলে টান মেরে সানহার হাত থেকে ফোনটা নেন!আর বলে উঠেন,
“ওই বেয়াদব তুই বারবার ফোনে কল দিতেছিস কেনো!?সূবর্ণার সাথে প্রেম, না?মজা বুঝাবো!আমার ছেলে আসুক!বেয়াদব!রাখ ফোন।আর কখনোই যেন না কল করতে দেখি!তাহলে….!”

ও’পাশের কথা শুনলাম না!শাশুড়ী মা বলেন,
“তুই কি করতে চাস?কি করবি আমার মেয়ের!”

এমন সময় কলটা কেঁটে যায়।ওপাশ থেকে কল কেঁটে দিয়েছে!শাশুড়ী মা রেগে সাথে সাথে ফোনটা ফ্লোরের উপর খুব সজোরে আচাড় মারেন!আর বলে উঠেন,
“ওই কুত্তাটা কে!ওই কুত্তা আমাকে হুমকি দেয়!আমার মেয়ের খারাপ ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করে দিবে!আমার ছেলে ফোন করতেছে না কেনো?উহহ আল্লাহ!”

চলবে…
(যারা যারা বলতেছেন আমার পরিক্ষা কি এখনো শেষ হয় নাই?তাদের বলি,আমার পনেরো দিন না যেতেই পরিক্ষা শুরু হয়ে যায়🙂!তারপর তাড়াহুড়োর জন্যে কিছু কিছু পরিক্ষা খারাপ হয়।তারপর ওইটাট জন্যে মন খারাপ থাকে ৩-৪ দিন!কোনো কিছুতে চাইলেও মন বসাতে পারি না।আর মি সহজে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না!জানি,এই অভ্যেসটা খারাপ,কিন্তু এই বদভ্যাসটা আমার কবে যাবে জানি না।সবাই দোয়া করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here