শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি #রোকসানা_আক্তার পর্ব-তৃতীয়

0
425

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-তৃতীয়

আজ দুপুরের পর বাবা আমাকে কল করেছেন।কল করেই নিজের অবস্থার কথা কিছু না বলে আমার অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করেন,

“সুপ্রভা, তুই ভালো আছিস মা ওই বাসাতে?
কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো তোর?সবকিছু ঠিকঠাক?বাবাকে বল!”

বাবার এধরনের কথা বলার কারণ আমি বুঝতে পারলাম।গতকাল শাশুড়ী মায়ের ওসব নালিশে হঠাৎ বাবার বাবার এরকম প্রশ্ন।আমি হাসলাম বাবার প্রশ্নে যাতে না বুঝেন কিছু!বললাম,

“দেখলেই তো বাসায় সব কাজ মা করতো।আমাকে কখনো কাজ করতে দিতে না।তাই আর কি কাজকর্মে এখনো অনেক আনাড়ী।যেকোনো কাজে ভুল করে বসি।শ্বশুর বাড়িতো..জানোই একটু ভুল ধরবেই।এই আর কি..আর এমনিতে আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি বাবা।”

বাবা আমার কথা আশ্বস্ত হতে পারলেন কি না বুঝতে পারলাম না।তবে সামনে থাকলে ঠিকই ধরে ফেলতে পারতেন।পরে বললেন,
“আমি বুঝতে পারছি এরা একটু ভুল দেখলেই অনেক ভুল মনে করে।তোর স্বামী তো এমনিতে তোর ভুলত্রুটি ধরে না।না মা?”
“না,বাবা!সে তো আরো ভালো।”

এ বলে নৈঃশব্দ্যে তাচ্ছিল্যকর হাসলাম নিজেই নিজের কাছে।বাবা বলেন,
“ছেলেকে দেখেই বুঝেছিলাম।ছেলে ভালো। ঠান্ডা-শীতল।তোর শাশুড়ী টা মনে হয় খটখটা ধরনের।”

আমি বললাম এবার,
“বাবা একটা কথা বলবো তেমাকে?”
“হ্যাঁ,মা বল…।”

এবার আমি থেমে গেলাম।ভাবছি গতকালকে শাশুড়ী মায়ের ওধরনের অসদাচরণ আচরণের প্রসঙ্গ তুলবো।বাবা তো উনার ওধরনের আচরণে খুব কষ্ট পেয়েছেন!খুবই।জিজ্ঞেস করলেও বলবে না জানি!কখনোই বলবে না!চোখজোড়া টপটপ করে পানি পড়তে থাকলো আমার।বলতে যেয়েও থেমে গেলাম।পরিবর্তে খুক খুক করে কাশতে থাকলাম।মুখটা শক্ত করে চেপে ধরলাম সাথে সাথে!যাতে বাবা আমার কাশি আঁচ না করতে পারে।করতে পারলেই আরো চিন্তায় পড়ে যাবেন!অসুস্থ মানুষ।হাই-প্রেশার।বেশি চাপ নিতে পারেনা।ডাক্তার বলেছেন ৯০ এর উপরে গেলে স্ট্রোক/হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকতে পারে!তাই বাবাকে প্রসার দিই না আমরা।আমি কিন্তু বিয়েতে রাজি হতাম না এত তাড়াতাড়ি। সেদিন বাবার মুখের দিকে চেয়েই রাজি হয়েছিলাম।তারপরও বাবা বুঝে ফেললেন,
“সুপ্রভা?তুই কাশতেছিস!তোর অসুখ নাকি রে মা?ঠান্ডা লেগেছে তোর?সুপ্রভা?এই সুপ্রভা?”

ধরা পড়ে গেলাম।তবে ধরাটা ধরতে দিলাম না।দম বন্ধ করে একশ্বাসে জবাব দিলাম বাবাকে,
“বাবা?মুখে মশা ঢুকেছে। পরে তোমাকে কল করতেছি বাবা।”
“আচ্ছা মা,আচ্ছা!”

কল কেঁটে দিয়ে আরো কাশতে থাকলাম।কাশতে কাশতে চোখমুখ লাল হয়ে এলো!সামনে সামনে ড্রেসিং টেবিল ছিল।সেদিকে তাকাতে দেখলাম।এভাবে অনেকক্ষণ যায়।তারপর কাশি কমে এলে হঠাৎ গালে হাত পড়তে হাতটা জ্বলে উঠে।আবার জ্বর এসেছে!সকালের দিকে কিছুটা ভালো ছিলাম।সব কাজ করতে পেরেছি।বাসার সবাই তখন দেখে বুঝলো সুস্থ হয়ে গিয়েছি পুরোপুরি।শাশুড়ী মা আরো বেশি তা মনে করলেন।জ্বরই নাই।রোবট আমি!অবশ্যি উনার কাছে আমি সবসময়ই রোবট!এখনো বাথরুমে আধধোয়া কিছু জামাকাপড় পড়ে আছে।সেগুলো ধৌত করতে হবে।।

——————————————————–
সন্ধার পর কাঁপিয়ে জ্বর উঠে।সুবর্ণা পাগলের মতন হয়ে যায়।মাথায় পানি ঢালতে থাকে।মেয়েটি স্কুল থেকে আসে শেষ বিকেলে।পরিক্ষা চলতেছে।পরিক্ষা শেষ করে প্রাইভেট টিচারের কাছে তিন বিষয়ের পড়া কষিয়ে তারপর বাসায় ফেরে।
এখন আমার মাথায় পানি ঢালতেছে আর ছোট ছোট কন্ঠে মাকে বকতেছে,
“এই মাও না?একটু সুস্থ থাকলেই সে সুস্থ হয়ে যায় নাকি পুরোপুরি?শরীরের ভেতর যে জ্বর থাকে তা বুঝে না মা?রাগ উঠে এখন!জ্বরটা তো হাতে ধরেই আনলো যা একটু সুস্থ হলো!মায়েরও জ্বর আসুক তারপর বুঝবে!”

এরকম বিড়বিড় কন্ঠে আরো কত কি জানি বলে মেয়েটা।আমার ওতটা হুঁশ নেই।জ্বরের তাড়নে কিছুকথা শুনি,আবার কিছুটা অস্পষ্ট। তখন হয়তো আকাশ রুমে ঢোকে।কেননা,সুবর্ণা কিছুটা আওয়াজস্ত কন্ঠে বলে উঠে,

“হ্যাঁ,ভাইয়া।আমি স্কুল থেকে ফিরে মেপে দেখি ১০৩।”

আমার চোখ ছুটে আসে সাথে সাথে।বুঝলাম আকাশকে বলতেছে।আকাশ আমার জ্বরের ব্যাপারে হয়তো কিছু জিজ্ঞেস করেছিল তাই একরম উত্তর সূবর্ণার। তারপর আকাশ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“আচ্ছা পানি দে।”

এমন সময় শাশুড়ী মা “সুবর্ণা,সুবর্ণা” বলতে বলতে এদিকে আসেন।এসে দেখে সুবর্ণা আমার মাথায় পানি ঢালতেছে।উনি যদিও এটা মেনে নিবেন না আমি উনাকে যতটুকু জানি।আসলেই মানলেন না।মেয়ের দিকে কঠিন চোখ মেলে বলেন,
“সে-কি সুবর্ণা,তুই স্কুল থেকে ফিরে এখনো স্কুল ড্রেস খুলিস নি!গাঁয়ে ঘামে লেপে আছে!এসব কি?চলাফেরা নাখাদ্রা কেনো তোর?আমি একদিন বলেছিলাম না নিয়মের মধ্যে থাকতিস!তারপরও কথা শুনিস না আমার!”

সুবর্ণা স্কুল থেকে ফেরার পর খুব অস্থির হয়ে যায়।আমাকে চা বানিয়ে খাওয়ায়।মেডিসিন দেয়।এসব করতে করতে মেয়েটা স্কুল ড্রেস খোলার কথাই ভুলে যায়।সুবর্ণা তার মাকে,
“মা ভাবীর মাথায় ঢালতেছি। একটু পর গিয়ে চেইন্জ করবো।”
“সেই স্কুল থেকে ফেরার পর থেকেই তো দেখতেছি…!এত পানি ঢালা লাগে না।এবার উঠ!”
“মা কিছুক্ষণ আগ থেকে মাত্র ঢালতেছিলাম।”
“ওঠ!”

আমি আস্তে গলায় বললাম,
“যা সুবর্ণা।ভাবীর এখন জ্বর নেই।”
“মিথ্যে বলো না ভাবী!”

আকাশ পাশ থেকে বলে উঠে,
“সুবর্ণা তুই যা।আমি দেখতেছি…!”

সুবর্ণা শাশুড়ী মায়ের সাথে উঠে চলে যায়।আকাশ হয়তো আমার মাথায় পানি ঢালবে ওর হাবভাবে যা মনে হলো।তাই হলো।আমার কাছে এসে ফোমের মোড়াটায় বসে বালতি থেকে মগ ভরে পানি যেই হাতে নিবে ওমনি আমি উঠে গেলাম।পাশে তোয়ালে ছিল।তা হাতে নিয়ে আমি আমার ভেঁজা মাথা মুছতে লাগলাম।আকাশ অবাক হয়ে গেল।বললো,

“সে-কি তুমি পানি দিবে না!তোমার খুব জ্বর!পানি না দিলে জ্বর যাবে না!”

আমি উত্তর করলাম,
“কোনো অনধিকার পুরুষ আমার মাথায় পানি ঢালবে সেটা আমি মেনে নিব কীভাবে ভাবলেন আপনি!আর আপনি নেক্সট বার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন না!আপনার সাথে আমার কথা বলার একদন্ডও ইচ্ছে নেই।”

আমার কথা শোনার পর আকাশ চুপ করে থাকে!আর আমি বারান্দায় চলে আসি।আর চোখ থেকে টপটপ করে পানি বেয়ে পড়তে থাকি।জানি না কেন কান্না করতেছি!আকাশের জন্যে,নাকি শাশুড়ী মায়ের এখন করে যাওয়া ব্যবহারে।কিছুই জানি না আমি!নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করতেছি।দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না কেনাজনি আর।বসে পড়লাম নিচে।নিচে ফ্লোর ঠান্ডা ছিল।কেঁপে উঠলাম সাথে সাথে।জ্বর শরীরে প্রচন্ড ফ্লোরে বসে বুঝতে পারলাম।কাঁপুনি,জ্বরের উত্তাপ তাপমাত্রায় আমি যেনো আরো জ্ঞানশূন্য হয়ে যাচ্ছি।শেষবার ফ্লোরে মাথা রাখার আগেই কে যেন আমাকে আলতোভাবে করে ধরে ফেলে।দুই-তিন সেকেন্ডেসের ব্যবধানেই বুঝলাম ভরশূণ্য।মানে কারো বাহুডোরে আছি।আর তার সান্নিধ্যে উষ্ণতায় তাকে আরো জড়িয়ে ধরেছি শীতভাবটা কমে যাওয়ার জন্যে।পরে আর কিছুই খেয়াল নেই।

চলবে……..
(টুইস্ট আসতেছে নেক্সট পর্বে।অপেক্ষা অপেক্ষা…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here