তৃণশয্যা #নিয়াজ_মুকিত #১৫তম_পর্ব

0
397

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৫তম_পর্ব

চারুর কথা শুনে আদনান না হেসে পারে না।আদনানের হাসি খুব তারাতারি সংক্রমিত হয় চারুর মধ্যে।চারুর আদনানের সাথে হাসতে শুরু করে।এই খানিকটা মুহুর্তের জন্যে হলেও চারুর মনে হয় ইস,সাড়া জীবন যদি এরকম হাসি-খুশিতে কাটিয়ে দিতে পারতাম।

এরকম হাসি-খুশিতে সাড়াজীবন কাটিয়ে দিতে না পারলেও খাওয়াটা হাসি-খুশিতেই শেষ হয় দুজনের।দুজনে হাত ধুয়ে এসে গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে বিছানার মধ্যে।

২৫.

বিছানায় শুয়ে দুইজনেই।চারু বারবার আদনা‌নের বুকে মাথা রাখার চেষ্টা করলেও ফলাফল প্রতিবারে ব্যার্থই দাঁড়ায়।একপর্যায়ে সে রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে।আদনান টের চোখ দিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তারপর এমন একটা ভাব নিয়ে শুয়ে থাকে ম‌নে হয় সে কিছুই জানেনা।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে খপ করে আদনানের হাত দুটো চিপে ধরে।তারপর এক লাফে আদনানের বুকে শুয়ে দুহাত দিয়ে আদনান আকড়ে ধরে নিজের মতো‌ করে।দুইবার চেষ্টার পর আদনান যখন ব্যার্থ হয় তখন চেষ্টা করাই ‌বাদ দিয়ে দেয়।

আদনান চেষ্টা করা বাদ দেয়াতে চারু মনে করে আদনান মনে হয় আর কিছু করবে না।কিন্তু এদিকে আদনানের মনে যে এরকম শয়তানি ছিল সেটা কে জানে?চারু এক ঢিল দিতেই আদনান চারুকে নিচে ফেলে‌ নিজের চারুর উপর শুয়ে পড়ে।আদনানের এত বড় শরিরের ওজন চারু সহ্য করতে পারে না।সে আদনানকে সড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে।

ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনের ঠোট একত্র হয় যায়।এরকম কিছু ঘটবে দুজনের কেউ আশা করেনি।চারুর লাল লিপষ্টিক আদনানের ঠোট ছুয়ে কিছুটা দাগ করে দেয়।দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে যায়।দুজনের মধ্যেই ফুটে ওঠে লজ্জা নামক বস্তুটা।

আদনা‌ন আস্তে করে চারুর উপর থেকে নেমে গিয়ে অন্যপাশে মাথা করে শুয়ে পড়ে।চারুও একই‌ কাজ‌ করে।সেও অন্যপাশে মাথা করে শুয়ে পড়ে।হঠাৎ এরকম কিছু হবে দুজনের কেউই ভাবেনি।প্রস্তুতও ছিল না তারা এই রকম ঘটনার জন্য।তার জন্য খানিকটা লজ্জা পায় দুইজনেই।দুজন দুদিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সেদিনের মতো।

২৬.

সকালবেলা সবার আগে ঘুম ভেঙ্গে যায় চারু নামের মেয়েটির।তারাতারি বিছানা থেকে উঠে জানালার পর্দাটা সড়িয়ে দেয়।পর্দা সড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে একফালি‌ রোদ এসে গ্রাস করে নেয় তাকে।চারু হাসিমুখে তাকায় পাশে শুয়ে থাকা আদনা‌নের দিকে।আদনানের ওষ্ঠের মধ্যে সে দেখতে পায় লাল লিপষ্টিকের দাগ।সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে উঠে পড়ে বিছানা থেকে।

এদিকে রোদের আলো এসে পড়ে আদনানের মুখে।ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।সে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়।সুর্য্যি মামার আলো এসে গ্রাস করে তার চোখকে।সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ভাবে,সত্ত্যি আজকে সকালটা অপুর্ব সুন্দর।

এই মুহুর্তে এক কাপ কফি নিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ায় চারু।সে কফির কাপটা এগিয়ে দেয় আদনানের দিকে।আদনান চারুর দিকে হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে বিনিময়ে একটা হাসি উপহার দেয় চারুকে।চারু খানিকটা দৌড়ে রান্নাঘরে যায়।তারপর নিজের কফির কাপটা নিয়ে আসে শোবার রুমে।আদনান বিছানায় আর চারু সোফায় বসে পড়ে।

দুজনে ঘন ঘন চুমুক বসাতে থাকে কফির কাপে।কারো‌ মুখে কোনোরকম কথা ফুটছে না।সবাই‌ নিজ নিজ কফির কাপের দিকে মনোযোগ দিয়ে বসে আছে।একপর্যায়ে কফি শেষ করে আদনান কাপটা চারুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

—‘ সত্ত্যি,কফিটা অসাধারণ ছিল।থ্যাংকস ‘

চারু আদনা‌নের কথার প্রতিউত্তরে ওয়েকলাম বলে।আদনান বিছানা থেকে উঠে বসে রওনা হয় ওয়াসরুমের দিকে।ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসে সে।এরপর চারু যায় ফ্রেস হতে।সেও ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসে।

চারু গিয়ে সোফায় বসে পড়ে।আদনান মোবাইল টিপছে।চারু সোফা থেকে উঠে মাথা চাড়া দিয়ে দেখার চেষ্টা করে আদনান কি দেখছে?আদনান যা করছে তা দেখে সে অবাক হয়ে যায়।আদনান নিত্তিয়ার সব ছবি নিজের ফোন থেকে ডিলেট করছে।চারু যেমন অবাক হয় তেমন খুশিও হয় এই ভেবে যে সে নিশ্চয় আদনানের মনে একটু হলেও নিজের জায়গা করে ‌নিতে পেরেছে।

এই মুহুর্তে কলিংবেল বেজে ওঠে।চারু দরজা খোলার জন্য যেতে ধরলে আদনান তাকে বসিয়ে দেয়।সে খানিকটা সন্দেহ নিয়ে এগোয় দরজার দিকে।কে আসলো এত তারাতারি?ওরাতো‌ ঢাকার কাউকে চেনে না।আদনান আস্তে করে দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন ডাক-পিয়ন।তার পোষাক দেখে আদনান চিনে ফেলে।ডাক-পিয়ন আদনানের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে এক জায়গায় সিগনেচার নিয়ে চলে‌ যায়।আদনান অবাক হয়ে চিঠিটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে ভিতরে আসে।চিঠি!কে পাঠালো!খামের উপরে লেখা আছে রাহিনা বেগম।তার মায়ের নাম।মা কে চিঠি পাঠাবে?এসব প্রশ্ন ঘুরঘুর করতে থাকে তার মাথায়।

সে চিঠিটা নিয়ে এসে বিছানায় বসে পড়ে।চারু আদনানের হাতে চিঠিটা দেখে অবাক হয়ে আদনানকে প্রশ্ন করে,

—‘ চিঠি,কে দিল? ‘

আদনান খামটা খুলতে খুলতে বলে,

—‘ উপরেতো আম্মুর নাম লেখা।দেখা যাক ভিতরে কি থাকে? ‘

রাহিনা বেগমের নাম লেখা আছে শুনে চারুর আগ্রহ আরো‌বেড়ে যায়।সেও আদনানের দিকে ঝুকে পড়ে।আদনান খামটা খুলে প্রথমে দুটো প্লেনের টিকেট বের করে।তারপর সেই টিকেট দুটা চারুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আস্তে করে বের করে আনে একটা বড় কালার পেপার।পেপারটার ভাজ খুলতে শুরু করে আদনান।ভাজ খুলতেই‌ চোখের সামনে ফুটে ওঠে বিভিন্ন কালার পেন্সিল দিয়ে রং করা একটা লেখা।লেখাটা হলো,

হ্যাপি হানিমুন😘

আদনান কাগজটা দেখে চারুর দিকে এগিয়ে দেয় কাগজটা।চারুও ভালোভাবে লক্ষ করে কাগজটা।কাগজটাতে সুন্দর করে লেখা আছে হ্যাপি হানিমুন।আর কোনো‌ কিছু লেখা নেই কাগজটাতে।আদনান এবার চারুর হাত থেকে টিকিট দুটো‌ নেয় দেখার জন্য যে কোথায় যাচ্ছে তারা।টিকিট দুটোতে লেখা আছে,ঢাকা টু লস অ্যাঞ্জেলস।জায়গাটা প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে,হলিউড থেকে মাত্র কয়েক মাইল দুরে।

চারু খানিকটা আনন্দ নিয়ে আদনানকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ কোথায় যাচ্ছি আমরা? ‘

আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ প্রশান্ত মহাসাগরে যাচ্ছি,আর মাত্র ২দিন পর।তুই একাই যাস আমি যাবো না। ‘

আদনানের এহেন কথা শুনে তার দিকে তাকায় চারু।চকিতে বুঝে ফেলে এটা মজা ছিল।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে।তার দেখা-দেখে আদনানও হেসে ফেলে।সে হাসতে হাসতে বলে,

—‘ আম্মু কতটা চালাক।সে আমাদের আসার আগেই ডাক-অফিসে চিঠি দিয়ে এসেছে কিন্তু আমাদের সড়াসড়ি দেয়নি।ওফ‌ সিট।ভিসা গুলো কই ‘

এই বলে সে আবার খামের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দেয়।বের করে আনে ঝকঝকে দুটো টুরিষ্ট ভিসা বই।দুজ‌নের মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তির এক হাসি।

২৬.

আমেরিকা যাওয়ার দিন সকাল বেলা এক নতুন একটা অঘটন ঘটিয়ে বসে থাকে চারু।এদিকে ঘনিয়ে আসছে ফ্লাইটের সময়।তাদের যাওয়া হবে কি হবেনা সবকিছু এখন ডিপেন্ড করছে একটা মেকানিকের হাত।তবে আর কয়েকমিনিটের মধ্যে শেষ না হলে তাদের আর যাওয়া হবে না আমেরিকা।হবে না কোন প্রকার…

চলবে..

{এই পর্বটা কালকে সন্ধ্যায় দেয়ার কথা ছিল।কিন্তু কালকে হঠাৎ ঝড়ের কারনে বিদ্যুৎ চলে যায়।বন্ধ হয়ে যায় ওয়াইফাই।ডাটা ছিল না।তাই পোষ্ট করতে পারি নাই।}

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here