#ভালোবাসার প্রতিদান
#রোকসানা আক্তার
বোনাস পর্ব
তিথিকে কল করে ফটো পেয়ে যাবো ভেবে যে আশ্বস্ত হতে পেরেছি তা কিন্তু নয়!পরপর সাত ঘন্টা পার হলো। তিথি এখনো আমাকে কল করে কিছু জানাচ্ছে না ফটো কালেক্ট করতে পেরেছে কি পারে নি!আমি বার কয়েক ওর ফোনে ট্রাই করেছি ও কোনো রেসপন্স করেনি।খুবই চিন্তা হচ্ছে!ওর উপর আশা রাখাটা আসলেই কি ঠিক হবে!?
“প্রিয়া?”
দরজার চৌকাঠে ভাবী পায়েস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি ঠিকঠাক হয়ে বসে ভাবীকে বলি,
“আসো ভাবী।”
ভাবী ভেতরে আসে।পায়েসের বাটিটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলেন,
“পায়েস টা তাড়াতাড়ি খেয়ে নিস।ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
আমি এ’কথার পিঠে জবাব দিই নি।আমার মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা।সেই৷ চিন্তা চেপে রেখেই ভাবীকে হঠাৎ আবার ডেকে উঠি,
“ভাবী?”
ভাবী চলে যেতে উদযোগ হলেন।আমার কথায় পেছন ফিরে তাকান।
“কিছু বলবি?”
দু’পাশে মাথা নেড়ে “হ্যা” ইঙ্গিত করি।ভাবী মৃদু হাসি টেনে আমার পাশে এসে বসেন।
“বল?কি বলবি?”
“ভাবী,একটা কথা বলতাম..”
“হ্যাল,বল?”
আমি কিছুটা দ্বিধান্বিত হতে থাকি।ভাবছি ভাবীকে আজকের দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বলবো।তিথি কল উঠাচ্ছে না।ওদিক দিয়ে ওর থেকে ফটোর আশা করে করে ছেলেটিও যদি আবার হাওয়া হয়ে যায় তাহলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে!কারো আর বিশ্বাস আমার উপর জন্মাবে না।এখন যেই অবিশ্বস্ত মনে সবার মনে বয়ে বেড়াচ্ছি সেই অবিশ্বস্ততা মনেই থেকে যাবো সারা জনম।তারচে ভাবীকে বললে ভাবী একটা কিছু করে ফেলবেন।তিথির উপর ভরসা করে সময় নষ্ট হবে না।
ভাবীকে উপর আমার বিশ্বাস আছে।ভেবেই বললাম,
“ভাবী আজকে আমি ওই ছেলেকে দেখেছি!”
“কোন ছেলেকে?”
“ওই যে যেই ছবির জন্যে রিয়াশের সাথে আমার বিয়েটা ভেঙ্গে গেল!”
সাথে সাথে ভাবী চমকে যান।চমকিত চোখের চাহনিতে খুব যে আনন্দের ঝলক ফুঁটে উঠে তা বুঝতে বাকি রইলো না।তিনি আমার আরো কাছে ঘেঁষে এসে বসেন।চোখের পাতা সংকুচিত করে বলেন,
“আল্লাহ!কীভাবে দেখলি? ”
তারপর সবকিছু ভাবীকে খুলে বলি।ভাবী মনোযোগ সহকারে সবটা শুনেন।শুনার পর ভাবীর চোখ একদম কপালের দিকে উঠে যায়।অবাক ভরা চোখে বলেন,
“এখন ওই ছেলে বলতেছে ও তোকে চেনে না? তোর কোনো ছবি মিসইউজও করেনি?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে এখানে দুটা জিনিস গেইজ করা যায়। ছেলেটি হয় ভালো সাঁজার নাটক করেছে, আর না হয় সত্য কথাই বলেছে!”
“যদি সত্য বলে থাকে তাহলে তা বুঝবো কীভাবে?”
“বুঝার অনেক ওয়ে আছে!আমাদের সেই ওয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।আচ্ছা যাইহোক, আগে ছেলেটির সাথে কথা বলে নিই।”
“আচ্ছা। ”
“আর ছবিটা আমি নিজেই রিয়াশের বাবার থেকে দেখি নিয়ে নিতে পারি কিনা।রিয়াশের নাম্বার ত অফ।না?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে ওর থেকেই নিতে পারতাম।যাইহোক এক ভাবে না একভাবে নিতে পারলেই হবে।আমাদের ত এখন জাস্ট ছবিটি প্রয়োজন।”
“হু।”
“টেনশন নিস না।দেখি আজ রাতের মধ্যেই কালেক্ট করতে পারি কি না।”
“ধন্যবাদ,ভাবী।অনেক ধন্যবাদ।আমাকে চিন্তামুক্ত করলে।”
“আচ্ছা হয়েছে বহুৎ।পায়েস টা ঠান্ডা হয়ে গেছে মনে হয়।তাড়াতাড়ি খেয়ে নে আমি গেলাম।”
“আচ্ছা। ”
ভাবী চলে যাওয়ার পর আমি পুরো পায়েসটা শেষ করি।শেষ করার পর বাথরুমে যাই।দুপুরের মাথাটা সেই এখনো খুব ভার।সাথে ক্লান্তিও।চোখমুখে কয়েক কোষ পানি ছিটিয়ে দিই ।এখন হালকা লাগছে কিছুটা।তারপর হাতমুখ তোয়ালে দিয়ে মুছে নিয়ে তোয়ালেটা জানলার পাশে টাঙ্গানো দড়িয়ে ঝুঁলিয়ে দিয়ে বিছানায় আসি।পাশ থেকে গোছানো বালিশগুলোর থেকে একটা বালিশ নিয়ে জায়গায় বিছিয়ে গা এলিয়ে দিই।কয়েক মিনিটস এভাবেই থাকি।হঠাৎ মনে পড়ে সেই ছেলেটির কথা!ছেলেটিকে একটা কল করে দেখি।এখন সন্ধে এখনতো আর ইন্টারভিউ না।তরহর আবার উঠে বসে তোষকের নিচ থেকে ছেলেটির কার্ডটা হাতে নিই।তারপর সেই নাম্বারে কল দিই।কল দেওয়ার সাথে সাথেই ছেলেটির নাম্বার বন্ধ বাতায়!আমার তীক্ষ্ণ কানে স্পষ্ট শব্দে শুনতে পাই-আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে।অনুগ্রহ করে আবার চেষ্টা করুন!তাহলে আমি মনে মনে যে ভয়টা পেলাম তাই হলো!?ছেলেটা আমাকে সব মিথ্যে বলে হাতে একটা নাম্বার গুঁজে দিয়ে কেঁটে পড়লো প্রাণ ভয়ের সংশয়ে !তারমানে দাঁড়ায় যা হলো সব ও ই করলো?এতে কোনো সন্দেহ নাই!বুকটা প্রচন্ড ভার হয়ে আসে আমার।মাথাটা মুহূর্তের জন্যে শূন্য হয়ে যায়।চোখের কোণে টুপটাপ পানি এসে জমা হয়।আফসোস নামের শব্দটা বারবার মস্তিষ্কে এসে ঠোক্কর খায়!এটা আমি কী করলাম?ওই ছেলেটা যদি সত্যিই সেই নরপিচাশ হয়ে থাকে তাহলে তাকে ছেড়ে কেন দিলাম!আফসোস আর চোখের পানিতে সারা রাত আমার এভাবেই পার হয়।এক ছিটেক ও ঘুমাই নি।তবে শেষ রাতে হালকা একটু তন্দ্রা এসেছিল।সেই তন্দ্রাটুকুও বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকে নি।পাখির কিচিরমিচির এবং সূর্যের আলো প্রবেশদ্বারে তন্দ্রা টা তরতর করে চোখ থেকে ছুটে যায়।
————————————————————————
শোয়া থেকে উঠতেই দরজায় করাঘাত পড়ে।আমি ক্লান্তি শরীরটা নিয়ে দরজা খুলে দেখি ভাবী।ভাবীর মুখখানা খুব চকচকা!চকচকা মুখে একটা ভূবন ভুলানো হাসি দিয়ে বলেন,
“পৃথী আমি ছবি কালেক্ট করে ফেলেছি!”
ভাবী ভাবলো আমি তার কথা শুনে খুব অবাক হব।অবাক চোখে হেসে উঠে ভাবীকে জড়িয়ে ধরে বলবো,ভাবী সত্যি?”কিন্তু আমার মাঝে এমন কিছুই হলো না।মুখটা আগের মতনই মলীন আর ক্লান্তিতে রয়ে গেল।তা দেখে ভাবী ভ্রু কুঁচকে ফেলেন।কপালে, গালে হাত দিয়ে বলেন,
“কি রে জ্বর নাকি তোর?”
আমি আগের মতনই স্বাভাবিক থেকে জবাব দিই,
“নাহ!মাথা ঘুরুচ্ছে একটু।”
“চিন্ত করিস যে খুব এজন্যে!চিন্তা করবি না একদম।ছেলেটাকে যেহেতু পেয়েই গেলাম তাহলে আর কোনো চিন্তা নাই!হ্যাভ আ রিলাক্স!বুঝলি?”
আমি আলতো দু’পাশে মাথা নাড়ি।তারপর ভাবী আরেক ফসলা হেসে দিয়ে বলেন,
“আমি ছবিটা তোর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওখান থেকে নিয়ে নিস।আর তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে।ফ্রেশ ফিল হবে।কিছুক্ষণ পর আমি নাস্তা নিয়ে আসতেছি।”
বলে ভাবী স্থান ত্যাগ করেন।আমি সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।এভাবে কয়েক সেকেন্ডস দাঁড়িয়ে থাকার পর টোন টোন ফোনকলের আওয়াজে আমার স্থিরতার ছেদ ঘটে।পেছনে ঘুরে ফোনটা হাতে নি।দেখি একটা আননউন নাম্বার থেকে কল করা হয়েছে।নাম্বারটি অবশ্যি আমি চিনি না।এই প্রথম হয়তো কল এসেছে।আমি দ্বিধান্বিত ভরা মনে কলটা রিসিভ করি।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে,
“হ্যালো?আপনি কি কালকের সেই ব্যক্তি যার সাথে আমি অর্ধ কথা বলা মাত্রই আমার বাস আসতেই আমি বাসে উঠে যাই?”
চলবে….
(আগামী কাল থেকে ইনসাল্লাহ পর্ব বড় করে দিব)