রৌদ্রবিলাসী তৃত্বীয় পর্ব

0
660

রৌদ্রবিলাসী
তৃত্বীয় পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত

–” আই লাভ ইউ..প্লিজ এক্সেপ্ট মি? ”
কথাটা বলে ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আহান ভাইয়ের দিকে না তাকিয়েই ভয়ে কাপতে থাকি আরো তাকালে কি হবে কে জানে?ততক্ষনে আহান ভাই বেশ অবাক হয় গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।তারপর বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটার দিকে তাকানো অবস্থায় তিনি আমার উদ্দেশ্যে বলেন,

–” গাড়িতে ওঠ উষা? ”

আমি বিন্দুমাত্র সময় অপচয় না করে গাড়িতে উঠে পড়ি।এইসময় তার কথা না শুনলে হিতে বিপরীত হতে পারে স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমি।তাই এ সময় ঘাড় ত্যারামি না করে সোজা গাড়িতে উঠে পড়ি।জানালা বন্ধ করে দিয়ে ভিতর থেকে তাকিয়ে থাকি বাহিরে।লক্ষ্য করি সম্পুর্ন ক্যাম্পাসের ৭০% মানুষের দৃষ্টি আহান ভাইদের দিকে।

ছেলেটা এবার উঠে দাঁড়ায়।তারপর বা হাত দিয়ে মুখের সামনে পড়া চুলগুলো উপরে তুলে রাখে।পাশ থেকে একটা ছেলে এসে উইগ পড়িয়ে দেয় তার মাথায়।ছেলেটা এবার বেশ ভাব নিয়ে তাকায় আহান ভাইয়ের দিকে।আহান ভাইও তাকিয়ে আছে তার দিকে।

টান টান উত্তেজনার একটা মুহুর্ত।কে কাকে মারবে বলা কঠিন?ঠিক এই মুহুর্তে ঠাস করে একটা আওয়াজ হয়।কে মার খেল দেখার জন্য আমি ভালো করে বাহিরে তাকাই।লক্ষ্য করি কালিয়া মাস্তানের ছোট ভাই গালে হাত দিয়ে মাটিতে বসে আছে।তার চোখ দিয়ে আগুনের ফিরকি ধরছে।রাগে থরথর করে কাপতেছে।আহান ভাই মুখ ভর্তি হাসির রেখা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” তোমার ভাই কালিয়া মাস্তান আ‌মাকে দেখলে এখনো হাত ধরে চুমু খায় আর তুমি তার ছোট ভাই হয়ে মানে তার পাওয়ারে চলে আমার ওয়াইফকে প্রপোজ করো।সাহস থাকা ভালো,তবে বেশি থাকা একটু ক্ষতিকর ”

ছেলেটার রাগ এখনো কমতেছে না।সে থরথর করে কাঁপছে রাগে।সে এবার উঠে দাঁড়ায়।তারপর আহান ভাইয়ের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে বলে,

–” আজ পর্যন্ত আমি যা চেয়েছি তাতো পেয়েছি পেয়েছিই সাথে যা চাইনি তাও পেয়েছি।আমি উষাকে ভালোবাসি মানে ভালোবাসি এবং তাকে আমি চাই।সো,কার কি হয় হোক সে আমার হবেই ”

আহান ভাই তার কথা শুনে হাত তালি দিয়ে চারদিকে তাকিয়ে বলে,

–” নাইস জোকস অফ দ্যা ইয়ার।আচ্ছা বাবু তুমি যাও,তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলবোনি।তুমি যাও কেমন? ”

ছেলেটা রাগে ফুসতে ফুসতে তার দলবল নিয়ে বিদেয় হয়।আহান ভাই গাড়িতে উঠে সর্বপ্রথম আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” আজ তুই শেষ ”

কথাটা বলে তিনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে শুরু করেন।আমি খানিকটা ভয় ভয় নিয়ে তার দিকে তাকাই।বোঝার চেষ্টা করি তিনি মনে মনে কি ভাবছেন?আহান ভাই টের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” আজ আর তোকে ক্লাস করা লাগবে না,বাসাও যাওয়া লাগবে না।আজ সারাদিন আমার অফিসে বসে থাকবি আমার সামনে ওকে ”

মানে কি বলবো আমি ভুলে যাই এই মুহুর্তে।মানুষ কতটা পরিমাণে শয়তান হলে এরকম একটা কথা বলতে পারে?সারাটা দিন আমি তার অফিসে তার সামনে বসে থাকবো,এটা কোনো কথা।আহান ভাই মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পেরে যায়।তিনি গাড়ি থামিয়ে ভ্রু-কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” কি থাকবি না? ”

এই মুহুর্তে ‘না’ উত্তর দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই।বাধ্য হয়ে শত চেষ্টা করে মুখের মধ্যে হাসি নিয়ে এসে কাধ ঝাকিয়ে বলি,

–” অবশ্যই থাকবো ”

আহান ভাই এবার হাসি মুখে আমার দিকে তাকান।তারপর পুনরায় গাড়ি চালাতে শুরু করেন।আ‌মি তার সিটটাতে বসে ভাবতে থাকি আপুর কপালটা এত ভালো কেন?সে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিল আহান ভাই পাবনা থেকে পালিয়ে আসা একজন পাগল?

কিছুক্ষনের যাত্রায় আমরা পৌছে যাই আহান ভাইয়ের অফিসে।তিনি গাড়িটা পার্ক করে আমাকে নিয়ে রওনা হন নিজ কক্ষের উদ্দেশ্যে।পথের মধ্যে অনেকের সাথে দেখা হলে প্রত্যেকে সালাম দেয়।আহান ভাই সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে আমাকে নিয়ে সোজা একটা রুমে চলে আসে।

রুমটার মধ্যে প্রবেশ করে আমি পাগল হয়ে যাইতে যাইতেও ভালো থাকি বহু কষ্টে,কারন এটা অফিসরুম নাকি বেডরুম সেটা নিয়েই কনফিউশনে পড়ে যাই আমি।একটা অফিস রুমে যা যা থাকা দরকার তার বিন্দুমাত্র উপাদানও এখানে নেই।তার পরিবর্তে একটা বেডরুমে যা যা থাকা দরকার তার সবকিছু এখানে আসে।শোয়ার জন্য বেড,বসার জন্য সোফা সবকিছুই এখানে বিদ্যমান।আমিতো অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেই ফেলি,

–” এটা কি অফিসরুম নাকি আপনার বেডরুম? ”

আমার কথা শুনে আহান ভাইয়ের ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেখা ফুটে ওঠে।সে আমার দিকে না তাকিয়ে সোফায় বসে বলতে শুরু করে,

–” সারাদিন একটা চেয়ারে বসে থাকতে চিন্তা করে না আমার।আর অফিসটা যেহেতু আমার বাপের,সো আমি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছি।মোটকথা এক জায়গায় ঢ্যাপসা কদমের মতো বসে থাকে ভালোলাগেনা তাই এইসব ব্যবস্থা ”

তার কথা শেষ হতে না হতে আমি ফট করে বলে ফেলি,

–” ডান্ডানাচুনি ”

ব্যাস এই শব্দটা পরবর্তি মুহুর্তে আমার জীবনের কাল হয়ে ফিরে আসে।আমার এই কথা শুনে আহান ভাইয়ের রাগ সপ্তম আসমান অতিক্রম করে মুহুর্তে।একটা পুঁচকো মেয়ে তাকে ডান্ডানাচুনি বলবে এটা তিনি কখনো মেনে নেবেন না।তাইতো এক লাফে সোফা থেকে উঠে বসে আমার সামনে এসে দাঁড়ান।তারপর ইয়াবড় হাতটা তুলে পিঠের মধ্যে ঠাস করে একটা বাড়ি লাগিয়ে দেন তিনি।

বাড়িটা খেয়ে কুকড়ে উঠি আমি।মুখ ব্যাথায় বিকৃত হয়ে যায়।আহান ভাই রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” পুঁচকো মেয়ে তোর সাহস অনেক বেড়ে গেছে।এখন চুপ হয়ে বসে থাক এখানে বুঝলি।বেশি কথা বললে মেরে ফাটাই দিব মাথা ”

আমি চুপচাপ তার কথায় মাথা নাড়াই।তিনি আমার কাছে থেকে হ্যা সম্মতি পেয়ে পুনরায় তার আসনে ফিরে যান।আমি বেডের উপর বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি সোফার দিকে।মনে মনে ঠিক করি তার সাথে আর কথা বলবো না।

ঠিক কত সময় বসে ছিলাম জানিনা তবে এটা জানি যে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ি আমি।কতক্ষন ঘুমিয়েছি সেটা জানিনা তবে এটা জানি আহান ভাইয়ের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গে।আধো আধো চোখ খুলে লক্ষ করি আহান ভাইয়ের হাতের মধ্যে খাবারের প্লেট।তিনি আমাকে টেনে তুলে বসিয়ে দেন।

আমি বেশ বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকালে তিনি হুতোম পেঁচার মতো মুখ করে বলেন,

–” যা,ফ্রেস হয়ে আয়! ”

আমি একবার তার দিকে একবার ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাই।অথঃপর আরো একবার মার খাওয়ার আগেই উঠে ওয়াশরুমের পথে রওনা দেয় আমার পা দুটো সাথে বয়ে নিয়ে চলে শরীরটাকে।

ফ্রেস হয়ে এসে লক্ষ করি আহান ভাই সোফায় বসে কাজে মগ্ন।তিনি আমার উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে আমার দিকে তাকিয়ে বেশ স্বাভাবিক ভাবে বলেন,

–” খাবার নে,আর আমাকে খাইয়ে দে সাথে তুইও খা ”

তার কথা শুনে আমি বলেই ফেলি,

–” পাগল নাকি?জীবনে একটা বাচ্চাকেও এখনো ভাত খাওয়াইনি আর আমি খাওয়াবো ওনাকে।আচ্ছা আপনার পাবনার সিরিয়াল নাম্বার কত ছিল?নিশ্চয় উপরের সারির দিকে আপনার নাম ছিল ”

কথাটা বলাও শেষ নেই তার আগেই আহান ভাই উঠে এসে এক পা উপরে তুলে দুহাত দিয়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেন।সাথে হাসি মুখে বলেন,

–” বাকি দিনটা এভাবেই থাকতে হবে ”

আমি কি বলবো বুঝতে পারি না।শেষমেষ হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেই।আহান ভাই আমার কান্না শুনে আমার দিকে এক লোকমা ভাত এগিয়ে দিয়ে বলেন,

–” পুঁচকো মেয়ে ”

চলবে..

{কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here