শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি #রোকসানা_আক্তার দ্বিতীয় পর্ব

0
409

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
দ্বিতীয় পর্ব

রাতে আকাশ ঘুমতে আসলে আমি খাট থেকে একটা বালিশ এবং খাটের চাদরটা টেনে নিয়ে নিচে ফ্লোরিং বিছানা করি।যেখানে আমার কোনো মূল্য নেই,স্ত্রীর অধিকার নেই সেখানে তারসাথে একই বিছানায় শুয়ে আবার স্ত্রীর অধিকার খাটানোর খোঁটা শুনবো?ফ্লোরিং বিছানার উপর জবুথবু হয়ে শুয়ে পড়লাম এবার।আকাশ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আর তাকিয়ে থাকলেও কিছু বলবে না এটা আমি জানি।এমন সময় দরজা ঠেলে কেউ ভেতরে ঢুকে।আমি শোয়া থেকে ধড়ফড় উঠে বসি।দরজার দিকে তাকিয়ে শাশুড়ী মা!রাগ উঠতাছে খুব।রুমে ঢোকার সময় দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে আসলেই তো হত!শাশুড়ী মা আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠেন,

“সে কি তুমি নিচে শুয়ে আছো?আমার ছেলের সাথে ঝগড়া করেছো বুঝি?নাকি সবসময় এখানেই ঘুমাও,ছেলেকে সাথে ঘুমতে নাও না!”

আকাশ বিব্রতকর করে বলে উঠে,
“নাহ মা তেমন কিছু না!”
“চুপ কর তুই!এই মেয়ে কোনোদিক দিয়েই শান্তি দিচ্ছে না।শখ করে এ কি নিয়ে এলাম আমি!?বাবা এ যে তোরসাথেও খারাপ ব্যবহার করে!এই মেয়ে শুনো তাহলে..কাল কল করে বলবে তোমার বাবা যেন এই বাসায় আসে।তার সাথে আমার কথা আছে!আসে যেন!”

এ বলে শাশুড়ী মা রাগ মুখে বেরিয়ে যান।আমি নিস্তব্ধ মুখে একপলক আকাশের দিকে তাকাই।আকাশ দরজা বন্ধ করতে সেদিকে এগিয়ে যায়!তারপর দরজা বন্ধ করে বলে,
“বেশি পাকনামি করতে গেলে এরকমই হয়!”

এ বলে বাতি অফ করে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়ে।আর আমার চোখের পানি টলটল করে বেয়ে পড়তে থাকে।আসলে আমি পৃথিবীর খুবই অসহায় প্রাণী–কেউই আমাকে বুঝে না!

সকাল হলে আমি খুব কাশতে থাকি।গলাটা বেঁধে গেছে।ঠান্ডা লেগে গেছে বুঝতে পারি!আমার কাশির শব্দে আকাশের ঘুম ভেঙ্গে যায়।সে চোখমুখ কুঁচকে বলে উঠে,
“আবার কি শুরু হয়েছে?!”

আমি অনেক কষ্টে হাত দিয়ে এবার কাশি চেপে রাখার চেষ্টা করি।কাশি কি সহজে কমানো যায়, তাকে চাপিয়ে রাখলে আরো বেড়ে যায়!আমি এবার উপায় না পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।আর বাইরে দাঁড়িয়ে খুব কাশতে থাকি!কাশি এবার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে দুই তিন কদম দম ফেলি।তারপর রান্নাঘরের দিকে যাই।নাস্তা বানিয়ে টেবিলে নিয়ে রাখবো শাশুড়ী মা রুম থেকে বেরুচ্ছেন উনার।আমাকে দেখে বলে উঠেন,

“তোমার বাবাকে কল করে বলেছো আসতে?!”
“নাহ,মা।বলবো!”
নিচের দিকে তাকিয়ে। শাশুড়ী মা ঝংকার গলায় বলে উঠেন,
“বলবে বলবে কখন বলবে!নাটক শুরু করেছো নাকি!?এখনই আমার সামনে কল করে বলো!”
“মোবাইল তো মা রুমে রেখে এসেছি। ”
“যাও রুম থেকে নিয়ে আসো।”

হাতে থাকা বাটিটা টেবিলের উপর রেখে রুমে আসি ফোন নিতে।তারপর শাশুড়ী মায়ের সামনে বাবাকে কল করি।
“হ্যালে,আসসালামু আলাইকুম, বাবা?”
“হ্যাঁ,মা,বল?”
“বাবা আজ একটু আসতে পারবে এই বাসায়?”
“কিছু হয়েছে? মা?”
“নাহ,কিছু না বাবা।আসতে পারবে?”
“কিন্তু হঠাৎ এভাবে যাওয়ার কথা বলতেছিস।আচ্ছা আসবো নি।আর শোন মা?কি কি নিয়ে যেতে হবে?হাতে তেমন টাকা নেই আমার।অনেককিছু তো নিতে হবে।নতুন বেয়াই বাড়ি।”
“তোমার ইচ্ছে।রাখলাম বাবা।”

কল কাঁটতে শাশুড়ী মা বলেন,
“আসবে তো?”
“জ্বী, মা।”
“ঠিক আছে।এবার নাস্তা বাড়ো।”

——————————————–
দুপুরের পর বাবা আসেন।সাথে করে ছয় কেজি মিষ্টি এবং পাঁচবক্স দই নিয়ে আসেন।আকাশ তখন বাসায় ছিল না।সে অফিসে ছিল।বাবাকে দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠে।শাশুড়ী মায়ের মুখ ভালো না!বাবাকে কি থেকে কি জানি বলেন!আল্লাহ!বাবা শাশুড়ী মায়ের দিকে মিষ্টি এবং দই এগিয়ে দিলে শাশুড়ী মা বলে উঠেন,
“আমার বাসার কেউ তে মিষ্টি পছন্দ করে না!রসমালাই এবং সন্দেশ পছন্দ সবার।ছোটবেলায় ওদের তো কম টাকার জিনিস খাওয়াই নি তাই আর কি!”

বাবা খুবই অপমাণিত বোধ করেন শাশুড়ী মায়ের এ’কথা শুনে।সাথে অবাকও হোন!বুঝতে পারলাম শাশুড়ী মায়ের বাবার আনা মিষ্টি এবং দই পছন্দ হয়নি।কম হয়ে গেছে।সাথে সন্দেশ,রসমালাই এবং অনেককিছু চেয়েছিলেন!
শাশুড়ী মা আবার বলেন,
“যাইহোক এনেছেন যেহেতু দেখি কোনো ফকির-মিসকিন পাই কি না।পেলে তাদের দান করে দিবো এতে আপনার সওয়াবও হবে!”

বাবা চুপ করে রইলাম।
“যাইহোক এবার বসুন।আপনার সাথে আমার কথা আছে!”

বাবা বসলেন।শাশুড়ী মা বলেন,
“আপনার মেয়েকে খুব শখ করে আমার ছেলের বউ করে এনেছি।আপনার মেয়ে আমার ছেলেকে পাশে ঘুমাতে দেয়।এই একটা দোষ।দ্বিতীয়ত আপনার মেয়ে কোনো কাজই জানে না!তৃতীয়ত,ম্যানারও জানে না!মানে একটা মানুষের কিছু না কিছু গুণ তো অবশ্যই থাকে।তাই না?বিয়ে দিয়েছেন ভালো করেছেন!কিন্তু বিয়ের আগে এসব শিখিয়প দেওয়া উচিত মা-বাবার।শুধু কলাগাছ পাঠিয়ে দিলে হয়না!”

বাবা বলেন,
“বেয়াইন কি বলেন!আমার মেয়েতো সবই জানে।আর ওকে আমরা যথেষ্ট আদবকায়দায় বড় করেছি!তবে,মেয়ে জামাইকে পাশে ঘুমতে দেয়না..!”

শাশুড়ী মা বাবার মুখের কথা টেনে নিয়ে বলে উঠেন,
“জিগান আপনার মেয়েকে!”

বাবা আমার দিকে তাকায়।আমার চোখে পানি।আমি কিছু বলতেও পারছি না।শাশুড়ী মা কতটা মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছেন আমার নামে।পরে শাশুড়ী মা আরো অনেক কথা বলেন।যেই কথায় বাবাকে এবং আমাকে ছোট্ট করে আনে খুব!বাবা হতভম্ব হয়ে যায় আজ এখানে এসে ।বাবা না খেয়েই এই বাসা থেকে পরে বিদেয় নেন।রুমে এসে আমার কান্না থামাতে পারি নি।জীবনটাকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করতেছে আজ!এই জীবন নিয়ে বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে না!কি ভুল করেছি জীবনে?যে আল্লাহ আমাকে এমন একটা ঘরে এনে দিলো!আমার সবথেকে বেশি কষ্ট লাগছে বাবা না খেয়ে চলে গেছেন!এটা যে আমি কিছুতলই মানতে পারছি না।কাঁদতে কাঁদতে আমার পরে আর শক্তি আসে না।আমি ফ্লোরের উপর কাঁত হয়ে পড়ে যাই।তারপর আর জ্ঞান থাকে না।

“ভাবীর তো অনেক জ্বর!”

এই বাক্যটায় আমার চোখ খুলে যায়।আমি চারপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করি এখন রাত না দিন!সুবর্ণা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,
“ভাবী?তুমি ফ্লোরের উপর শুয়ে আছো কেন?উঠো!তোমার অনেক জ্বর!
এ বলে আবার পাশ ফিরে তাকায়।পাশে হয়তো আকাশ দাঁড়ানো।বলে,
” ভাইয়া?তুমি ডাক্তার নিয়ে আসে তাড়াতাড়ি। ”
আমি সুবর্ণাকে বলি,
“এখন কয়টা বাজে সুবর্ণা?”
“ভাবী রাত দশটা ত্রিশ!”
“আমি কখন ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারি নি!”
বলে কাশতে থাকি খুব!আকাশ তখন রুম থেকে বেরিয়ে যায়।হয়তো ডাক্তার আনতে।ডাক্তার এসে আমার জ্বর মাপে।১০৩ ডিগ্রী জ্বর!তারপর কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে যায়!আকাশ ডাক্তারের সাথেই যায় ওষুধ গুলে আনতে।সুবর্ণা আমাকে বলে,
“তুমি কাল ফ্লোরে শুয়েছো কেন ভাবী?এই যে এখন জ্বর এলো!ভাইয়ার সাথে মিলে যাও।ঝগড়া করো না, প্লিজ ভাবী।”

সুবর্ণার কথায় আমার খুব হাসি চলে এলো।তবে কিছু বলতে পারলাম না।সুবর্ণা বললো,
“আচ্ছা ভাবী তুমি থাকো আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।তোমারতো ওষুধ খাওয়া লাগবে।”

সুবর্ণা পরে আমাকে ওষুধ খাইয়োইয়ে দিয়ে চলে যায়।এন্টিবায়োটিক খাওয়ার সাথে সাথে ঘামাতে শুরু করে আমাকে!এখন কিছুটা হালকা ফিল হচ্ছে। আমি বিছানায়।তখন ডাক্তার আসবে তাই সুবর্ণা আমাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।আমি এবার বিছানা থেকে উঠে পড়লাম।একটা বালিশ নিব ওমনি আকাশ এসে বাঁধা দেয়,

“এতটা জ্বর বাঁধিয়েছো এবার কি মরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?”

আমি আকাশের কথার কোনো জবাব দিলাম না।জিদ্দি মুখে বালিশটা হাতে নিয়ে সোফায় গেলাম।সোফায় ঘুমাবো।রুমে সোফা আছে একসেট।আকাশ পেছন থেকে,
“তুমি কিন্তু বেশি বেশি করতেছো!”

আমি এবার পেছনে তাকালাম।স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলাম,

“আপনি কে!যে আমি আপনার কথা শুনবো!”

সাথে সাথে আকাশ চুপ হয়ে যায়।কিছু বলার আর কথা খুঁজে পায় নি!

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here