#ভালোবাসার প্রতিদান
#রোকসানা আক্তার
#অন্তিম পর্ব
এগোরটা বাইশে বাসায় ফিরি।আকাশকে নোয়ারীপুর সেই বাসস্ট্যান্ডের কাছেই বিদেয় দিই।হ্যান্ড ব্যাগের মধ্যে মোবাইলটি রেখে রুমে ঢুকবো এমন সময় পেছন থেকে বাবার গলার আওয়াজ আসে।আওয়াজটা কাউকে ডাকার মতনই শুনাচ্ছে।আমি কানদুটো আরো তীক্ষ্ণ করে আনি বাবা কাকে ডাকছে তা শুনার জন্যে।
“প্রিয়া?”
সুস্পষ্ট,স্বচ্ছ গলার কন্ঠে বাবার ডাক শুনে আমার খানিকটা কেঁপে উঠার উপক্রম হয়ে যায়!বাবা আমাকে ডাকছেন!বাবা ত আমার সাথে কথা বলেন না তাহলে হঠাৎ কী কারণে ডাকছেন!ভেবেই কিছুটা অসংযত হয়ে যাই।তারপর পেছন ঘুরে দাঁড়াই।দেখি বাবা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছেন।বাবার পাশে মা এবং ভাবীও ছিলেন।তাদের দৃষ্টিও স্বাভাবিক!আমি টগবগ চোখে একবার সবার দিকে তাকিয়ে নিয়ে এবার বাবাকে বলি,
“বাবা,আ-মা-কে ডাকছিলে?”
বাবা মাথা নেড়ে “হ্যা” বলেন।এবার আমার বুকের ভেতরে আরেকবার “ধক” করে যায়।আগের মতনই কন্ঠদ্বার বজায় রেখে বলি,
“কেন?”
তখনই বাবা উনার স্বাভাবিক মুখটাতে অস্বাভাবিক একটা হাসি ঝুঁলিয়ে দেন।সাথে মা এবং ভাবীও।বাবা মুখে হাসি বজায় রেখেই বলেন,
“ভেতরে ভেতরে যে এতসব করে ফেললি আমাদের একবারও জানানোর প্রয়োজন বোধ করিস নি?”
আমি ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে আনি।বুঝালাম, কথা ঠিক বুঝলাম না।বাবা এবার হাসি থামিয়ে চোখমুখ খুব ইনোসেন্ট করে ফেলেন।গলার স্বর খুব নরম করে বলেন,
“রিয়াশের সাথে তোর বিয়েটা ভাঙ্গলো তিথির কারণে।আমরা তা জেনে ফেলেছি প্রিয়া।রিয়াশের বাবাই কিছুক্ষণ আগে আমাকে কল করে জানালো।”
এবার আমি কেনজানি চোখের পানি ফেলে দিই।খুব কান্না করতে ইচ্ছে এই মুহূর্তে আমার!মা আমার এহেন অবস্থা বুঝতে পেরে আমার দিকে এগিয়ে আসেন।আমাকে দুইহাতে বুকের দিলে আগলে নেন।অপরাধী কন্ঠে বলেন,
“অনেক ভুল বুঝে ফেলেছি তোকে!তুই আমাদের ফুলের থেকেও পবিত্র।তারপর কেন এতটা খারাপ কিছু ভেবে ফেললাম আমরা!”
এবার আমি আওয়াজ করে কেঁদে দিই।খুব জোরে কাঁদতো থাকি।কাঁদতে কাঁদতে যেন ফ্লোরে গড়াগড়ি খাই।তারপরপ গলা থেকে একটা আওয়াজও বের করে মাকে বলতে পারি নি,”মা গো, আমি বুঝি এতটাই খারাপ!এতটা বছর তুমি তোমার মেয়েকে ভালোভাবে চেনতে পারো নি!”
আমার কান্নার মাঝেই বাবা এগিয়ে আসেন।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,
“প্রিয়া কাদিস না।আমরা এখন আর তোকে ভুল বুঝতেছি না।আমাদের মেয়ে ভালো।খুব ভালো।
তখন আমাদের ই ভুল হয়েছিলো আমরা বোকার মতন আমাদের মেয়েকে ভুল বুঝেছি।যাইহোক,ওসব বাদ।যেটা বলতাম কাল ওই আকাশ নামের ছেলেটিকে আমাদের বাসায় আসতে বলিস।বলিস বাবা তাকে ডাকছে।ঠিক আছে?”
আমি কাঁদো ভঙ্গিতেই দু’পাশে মাথা নেড়ে বাবার কথার
জবাব দিয়ে দিই।
—————————————————————————
এখন রাত আঁটটা।বাইরে খুব সুনশান বাতাস।দিকে দিকে আকাশেও বিদ্যুৎ চমকে উঠছে।বোধহয় বৃষ্টি নামতে পারে।আমি তরহর করে জানলা দুটোর পর্দা নামিয়ে দিয়ে বিছানায় এসে বসি।এমন সময় আমার ফোনে মেসেজ টোন বেঁজে উঠে।আমি পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিই।স্ক্রিন অন করে রিয়াশের নাম্বার থেকে মেসেজ-প্লিজ,প্রিয়া?রাগ করো না!আমাকে ক্ষমা করো।আমি না বুঝে তোমাকে ভুল বুঝেছি।
রাগ উঠে যায় মেসেজটা দেখে।বিরক্তি মনে ফোনটা পাশে ছুড়ে মারতে যাবো তারপর আবারো আরেকটা মেসেজ টোন বেঁজে উঠে।পরপর আরো দুটো।আবার মেসেজ গুলো দেখি-আচ্ছা তুমিই বলো হঠাৎ ওমন একটা ছবি দেখলে যে কারোই কি মেজাজ খারাপ হবে না বলো?তুমি দেখলে তোমারও মেজাজ খারাপ হত।তখন ওতশত ভাবার চিন্তা মাথায় আসতো না।
পরের মেসেজ,
-আগের সব ভুলে নতুন করে কি শুরু করা যায় না?চলো আমরা আগের মতন সব শুরু করি?”
তার পরের মেসেজ,
-আমার কলটা রিসিভ করবে একটু।তোমার সাথে কথা আছে।রিসিভ করবে কিন্তু।কল দিলাম।
কলটাও বেঁজে উঠলো।সাথে সাথে রিয়াশকে ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিলাম।আর সিমটা চ্যান্জ করে ফেলবো তাও ভেবে ফেললাম।ভাবনার মাঝে হুট করে ভাইয়া রুমে ঢুকে।আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই।ভাইয়া চট করে হেসে ফেলেন।ভ্রু উঁচিয়ে নাচিয়ে বলেন,
“একা একা এখানে বসে কি করতেছিস।সবাই ডাইনিং এ বসে আড্ডা দিচ্ছে।তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ আয়।”
বলে ভাইয়া বেরিয়ে গেল।আর আমি হা হয়ে ভাইয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।তারমানে ভাইয়াও ভাইয়ার ভুল বুঝছে!যাক ভালোই হলো।এখন আর কারো সামনে দিয়ে হাঁটতে লজ্জা লাগবে না।।মাথা হেইট হয়ে আসবে না।মার কটু কথা শুনতে হবে না।আমি আজ থেকে স্বাধীন!পুরোদমে স্বাধন!আর আকাশকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,তারজন্যে সবার ভুল ধারণা ভাঙ্গলো!যাক এবার বাবার কথামতো আকাশকে কল করে কালই আসতে বলি।বাকি থ্যাংকসগুলো বাবাই ওকে দিবেন।কল করলাম আকাশকে।সাথে সাথে আকাশ রিসিভ করলো,
“জ্বী,বলুন?”
“আপনি কি কাল ফ্রী?”
“কেন?”
এবার বসা থেকে একটু আধশোয়া হলাম।ফোনটা কানের পাশে ভালো করে টেনে বললাম,
“বাবা বললেন আপনি আগামী কালই আমাদের বাসায় এসে বাবার সাথে দেখা করতেন!”
“সরি,মিস প্রিয়া,আমি আগামীকাল আপনার বাবার সাথে দেখা করতে পারবো না।”
“কেন?”
“আজ দুপুর দু’টার দিকে আমার ইন্টারভিউ থেকে ডাক এসেছে।কাল সকাল ছ’টাই আমাকে উদ্দেশ্যে টাঙ্গাইল ত্যাগ করতে হবে।”
মনটা খারাপ হয়ে গেল।বাবা এমন সময় ডাকলো ছেলেটার ইন্টারভিউয়ের ও ডাক চলে এলো।ডাক আসার আর সময় হলো না।তবে পরক্ষণে ভারমুখটা আবার হাসোজ্জল হয়ে উঠলো।এই আশায়, এই ছেলেটি খুব ভালো।এমন ভালো একটা ছেলের চাকরি হওয়াটা খুবই দরকার।বললাম,
” কংগ্রেটস!আশা করি চাকরিটা আপনার হয়ে যাবে।”
আকাশ হেসে উঠলো।হাসতে হাসতে বললো,
“আপনি এখুনি আমাকে কংগ্রেটস দিয়ে ফেললেন, মিস প্রিয়া?চাকরিটা যে আমার হবে তাও সিউর না।আমাদের ২০ জনকে ইন্টারভিউ থেকে সিলেক্ট করেছে।এরমধ্যে মোট পাঁচজনকে নিবে।ওই পাঁচজনের মধ্যে যদি থাকতে পারি তাহলে চাকরিটা কমফার্ম!আর না থাকলে আগের মতন ভবঘুরে অবস্থা।হা হা হা হা হা।”
” হাসবেন না। সত্যিই আপনার চাকরিটা হবে।আমি অণুমান কখনো মিথ্যা হবে না।”
“আচ্ছা?”
“জ্বী!”
“এতটা কনফিডেন্স!গুড!”
“ইনসাল্ট করবেন না।একদিন এই মুখে আমাকে একশো বার থ্যাংকস দিবেন।থ্যাংকস দিতে দিতে হাঁপিয়েও যাবেন।”
আকাশ আবারো ফিঁক করল হেঁসে দিলো।ছেলেটার হাসির শব্দ খুবই মধুর!ইশশ্ এখন যদি সরাসরি হাসিটা একটু দেখতে পেতাম!ভাবনার মাঝেই,
“মিস প্রিয়া,আমি কি এখন রাখতে পারি?জামাকাপড় গুলো গোছগাছ করতে আরো অনেক কাজ।তারপর ঘুমতে হবে।কারণ কাল আবার খুব ফার্স্ট আমাকে বাস ধরতে হবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। রাখলাম।টেক কেয়ার।যোগাযোগ রাখবেন।”
“জ্বী, আচ্ছা। ”
রেখে দিলাম।রেখে দেওয়ার পর খুবই ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ করলাম তা হলো আকাশের নাম্বারটা আমার ডায়েরী তে তরহর করে তুলে নিয়ে ফোন থেকে সিমটা খুলে ফেললাম!আর হাত দিয়ে কয়েক খন্ড করে জানলার দিয়ে ফেলে দিলাম।সাথে ফেলে দিলাম রিয়াশের সব মায়া,আবেগ,ভালেবাসার অনুভূতি!
————————————————————————–
তার পরদিন নতুন সিম আর কেনা হলো না।বাসায় একটু ব্যস্ততা ছিল সেকারণে।ভাবলাম তার পরদিন কিনবো।তাও হলো না।পাশের বাসার ভাবী সন্ধায় এসে তার মেয়ের জন্মদিনের ইনভাইট করে যান।সেখানে গেলাম।অনেকক্ষণ থাকলাম।তার আবার পরদিনও সেইম কাহিনী হলো।আমার মামী কল করে বলেন বিনথির বিয়ে।যে করেই হোক বিনথির বিয়েতে আমাদের পরিবারের সবাই যেতে।বিনথি আমার মামাতো বোন।বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে।পরিবারের সবাই তার পরদিনই যাত্রা দিলো দাউদকান্দিতে।বিনথির বিয়ে,পিঠাপুলি নিয়ে গেল জমজমাট আয়োজন।সব আয়োজন শেষ করতে করতে লাগলো ছয় দিন।আমরা আঁটদিনের মাথায় এসে টাঙ্গাইলে পৌঁছি।এতটা দিন দমবন্ধ করে যেন থাকলাম।আর দমাতে পারলাম না নিজেকে।নাহ! এবার নতুন একটা সিম কিনতেই হবে।আর দেরী ন! বিকেল চারটের দিকে মোবাইলের দোকানের ছুটলাম।সেখান থেকে একটা রবি সিম কিনলাম।বাসায় এসে প্রথমে যেটা করলাম তা হলো ফোনে সিমটা ঢুকিয়ে একটা পঞ্চাশ টাকার কার্ড রিচার্জ করলাম।তারপর ডায়েরী হাতে নিলাম।আকাশের ফোন নাম্বার টা তুললাম।কল দিলাম।দুই তিনবার রিং হবার পর ওপাশ থেকে রিসিভ হলো,
“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম,কে?”
“জ্বী,আমি প্রিয়া!এটা আমার নতুন সিমের নাম্বার! আগের নাম্বারটা অফ করে ফেলেছি।”
ওপাশ থেকে ছেলেটির খুব জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলার শব্দ শুনলাম।তারপর সে বলা শুরু করলো,
“আপনি!আমিতো ভাবলাম আমি বুঝি আপনাকে হারিয়েই ফেললাম।জানেন কতটা মন খারাপ হয়েছে!”
আমি হাসলাম।সে আবার বললো,
“সিমটা কেন অফ করেছেন?”
“ওই লম্পটার জন্যে।ও খালি আমাকে মেসেজ দেয়!কল দেয়।”
“ওহ!উনার সাথে আর যোগাযোগ করবেন না?”
“কী মনে আপনার?এতকিছুর পরও ওর সাথে আমার যোগাযোগ রাখা টা উচিত?”
“তা অবশ্যি ঠিক যে ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে না।যাইহোক যেটা বলতাম.. একটা খুশির সংবাদ আছে…!”
“কি।”
“আমার একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক পদে চাকরি হয়েছে!”
“কী!”
“জ্বী!”
“আলহামদুলিল্লাহ। এ ত অনেক বড় একটা খুশির সংবাদ!”
“শুকরিয়া।”
“তা এবার তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে ফেলুন।চাকরি তে হলোই।”
“দেখি..।মনের মতন কাউকে ত তেমন পাচ্ছি না…!হা হা হা হা।যাইহোক ইগনোর দ্যাট টপিক!আমি কাল কিন্তু আপনার বাসায় আসছি।এড্রেসটা দিন।”
বাসার এড্রেসটা দিয়ে দিলাম আকাশকে।তার পরদিন আকাশ আমাদের বাসায় এলো।বাবার সাথে কথা বললো।ভাইয়ার সাথে কথা বললো।মায়ের সাথে কথা বললো।এবং ভাবীর সাথেও।সবাই তার সম্পর্কে জানলো এবং তার ফ্যামিলি সম্পর্কেও।আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব দেখতেছিলাম।এমন সময় আকাশ হুট করে একটা কথা বলে বসে,
“আঙ্কেল,আমি একটা কথা বলবো যদি আপনারা কিছু মনে না করেন…!”
“বলো?”
“আপনাদের যদি কোনো আপত্তি না থাকে আমি প্রিয়াকে বিয়ে করতে চাই।আপনারা যদি চান কালই আমি আমার বাবা-মাকে নিয়ে আপনাদের বাড়িতে আসবো।”
”
কি বললো আকাশ!আমিতো প্রায় হতবুদ্ধিকর। সাথে ফালি ফালি লজ্জা!দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না দরজার সামনে।টপ করে রুমের ভেতরে ঢুকে গেলাম।রুমের এপাশে এবার বাবার কথা শুনতে পেলাম,
“তোমাকে আমাদের খুব ভালো লেগেছে।তোমার কথাবার্তা, আচার-আচরণ, চালচলন সত্যিই অমায়িক!তবে কথা যেটা,প্রিয়া যদি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে আমাদের তোমার এই প্রস্তাবে কোনো আপত্তি নেই।বরঞ্চ সেটা আরো খুশির সংবাদ আমাদের জন্যে তোমার মতন একটা ছেলে আমাদের ঘরের জামাই হবে।”
“আচ্ছা,আঙ্কেল তাহলে আমি কি প্রিয়ার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে পারি?”
“অবশ্যই।যাও প্রিয়া তার রুমেই আছে।গিয়ে কথা বলো।”
তার মিনিট পাঁচেক পরই আকাশ আমার রুমে আসে।আকাশের উপস্থিততে আমার ভেতরটা খুব কেঁপে উঠে।
চারপাশ অগোছালো অগোছালো হয়ে যায়।কীভাবে দাঁড়িয়ে,কোন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছি তা নিজেও জানি না।ছেলেটি যে আমার রুমে দাঁড়িয়ে তার দিকেে তাকাচ্ছি না।আশ্চর্য! ছেলেটির আগমণে এখন আমার এরকম লাগছে কেন?!এরকম ত এর আগে কখনো হয়নি!
“মিস,প্রিয়া?আমি আপনাকে একটা প্রস্তাব দিব।জানি না আমার প্রস্তাবটা আপনার ভালো লাগবে কি না!তবে যদি ভালো না লাগে সত্যিই আমার খুব মন খারাপ হবে!”
কিছু বললাম না।চুপ হয়ে থাকলাম।আকাশ বললো,
“আপনি জানেন কিনা আমি খুবই গম্ভীর টাইপ।আমি প্রয়োজন ব্যতীত বেশি কথা বলি না।আমার এই গাম্ভীর্যের জন্যে স্কুল,কলেজ,ভার্সটিতে বন্ধু মহলে খুব বকা খেতাম।এমনকি কিছু মেয়েদেরও খেয়েছি।আমি মেয়েদের সাথে বেশি কথা বলা পছন্দ করতাম না।কিন্তু আপনার সাথে কেনজানি তার উল্টোটা হয়ে গেল।আপনার সাথে প্রথমদিন কথা বলে যতটা রাগ হয়েছি দ্বিতীয়বার কথা বলে খুব বিস্মিত হয়েছি।আমি জানি না আপনার সাথে কথাবার্তা, চলাফেরা করার পর আমার মাঝে কেমন জানি একটা ফিল ফিল আসে।আপনাকে খুব আপন ভাবতে শুরু করি।কতটা আপন নিজেও জানি না।আমি ডিসিশন নিয়েছি আপনার মতন কাউকেই আমার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে ভালো হবে।আমার প্রস্তাবে জানি না আপনার অমত কি না!”
আমি এবারো চুপ থাকলাম।বলা যায় বাকরুদ্ধ প্রায়।আকাশ এভাবে হঠাৎ এসে আমাকে তার বিয়ের প্রস্তাব দিবো আমার যেন তা বিশ্বাসই হচ্ছে না।তবে একটা ব্যাপার ভাবলে রিয়াশের থেকে আকাশের প্রতি একটু বেশিই ফিল হচ্ছে।এটা মূলত তাদের দুজনের দুরকম বৈশিষ্ট্যের।রিয়াশ যেমন চঞ্চলা,রূঢ়ী,মুডি আকাশ তা নয়।আকাশের কথাবার্তা,চলাচলন,ভাবভঙ্গি আগেও যেমন সহজসরল ছিল, এখনো তাই।একটুও হেরপের হয়নি।তার সবকিছুতেই কেনজানি বিশ্বাসযোগ্য নামক একটা শব্দটা মিশে আছে।একবারের জন্যে ভাবনাতে আসছে না সে রিয়াশের মতন আমাকে অবিশ্বাস করবে।কথায় কথায় সন্দেহ করবে।ভালোবাসাটা শুধু মুখেই প্রকাশিত থাকবে, ছলনা করবে!তাহলে সে কি পারবে আমার ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারবে?হ্যাঁ পারবে।কারণ আকাশের মাঝে সেই গুণগুলো আছে।তাহলে এই মানুষটার প্রস্তাব একসেপ্ট করতে অসম্মতি কি!ভেবেই এবার আকাশের দিকে ফিরলাম।খুব ক্ষীণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।অনেকক্ষণ ধরেই তাকিয়ে থাকলাম।তাকানোর মাঝেই হুট করে বড় একটা মুঁচকি হাসি টানলাম।হাসিটা মুখে লেপেই জবাব দিলাম,
“হ্যাঁ,আমি রাজি!”
সমাপ্তি
( আকাশ প্রিয়ার জন্যেই পারফেক্ট ছিল!রিয়াশের জন্যে নয়।রিয়াশ তার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারে নি।সে এতটাদিন শুধু আবেগেই ভালো বেসে গেছে,বিবেকে বাসে নি।বিবেকে বাসলে প্রিয়াকে ঠিকই বিশ্বাস করতো! বিশ্বাস জিনিসটা প্রিয়ার প্রতি রিয়াশের পাঁচটা বছরের মধ্যেও জন্মায় নি..অথচ সে কিনা এতটা সময় প্রিয়াকে দেখেছে,বুঝেছে,শুনেছে।ওদিক দিয়ে মাত্র পাঁচদিনেই আকাশ প্রিয়াকে খুব সহজে বিশ্বাস করে ফেলেছে।।হয়তো তার এই বিশ্বাস ভবিষ্যৎ এ ও থাকবে।সো,কাউকে বিশ্বাস করতে যুগ যুগ লাগে না।ক্ষণ সময়েও মানুষকে বিশ্বাস করা যায়!আমি জানি না আমার এই মিলটা পাঠকদের কেমন লেগেছে।আশা করি আপনাদের মতামত জানাবেন।এখানেই শেষ করে দিলাম।আর বড় করলাম না।কারণ,আমি প্রথমেই বললাম গল্পটা তেমন লম্বা হবে না।গল্পটিকে অনেকেই ভালোবেসে পাশে থেকেছেন তাদের জন্যে রইলো আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা।ইনসাল্লাহ নেক্সট আবার নিউ গল্প নিয়ে হাজির হব।ততদিনে ভালো থাকবেন সবাই❤️)