#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-০৫
আকাশ মাকে সালাম করে উঠে।মা হাসিমুখে সালামের জবাব নেয়।তারপর ভেতরে আসতে বলে।দুজন ভেতরে আসে।সুবর্ণা আমাকে দেখামাত্রই আমার কাছে দৌড়ে চলে আসে।আর এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠে,
“মায়ের কথায় কিছু মনে করো না ভাবী।মা কি বলেছে নিজেও জানে না।”
আমি চুপ করে রইলাম সুবর্ণার কথায়।তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে।তার মুখের ভাবভঙ্গি যথেষ্ট শান্ত।বাবা আকাশের কাছে যেয়ে সিঙ্গেল সোফাটায় বসে।বাবা ধীর গলায় বলে,
“ঘন্টাখানেক হবে তোমার মা আমাকে কল করেছে।মানে বাবা আমরা যে তোমাদের বাসায় কম জিনিসপত্র দিয়েছি,হাতে করে কমদামী খাবার নিয়ো গিয়ছি তা আমাদের আগে যদি একটু বলতে!আমার একটা মেয়ে।তার শ্বশুরবাড়ির যত যা আবদার আমি তা পূরণ করার চেষ্টা করতাম।তাই বলে সংসার ভেঙ্গে ফেলবে?আমার মেয়েটা তোমার সাথে সংসার করেছেই বা ক’মাস হলো,বলো?”
আকাশ নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে।তারপর জোড় শ্বাস ছেড়ে এবার বাবাকে বলে,
“মায়ের ব্যাপারটা নিয়ে একদমই ভাববেন না।আসলে মা একটু অন্যরকম!আগের মানুষতো!মায়ের কথায় কিছু মনে করবেন না।সুপ্রভাকে আমি বিয়ে করেছি।”
“সুপ্রভাকে আমি বিয়ে করেছি”কথাটায় নিজের কাছে নিজেকে খুব হাস্যকর মনে হলো।রাগ চাপলো মাথায় খুব!আমিতো আর চুপ করে থাকার মতন ছিলাম না।কিছু বলবো তার আগেই মা চা-নাস্তা নিয়ে হাজির।নাস্তা খাওয়া শেষ করুক।তারপর বলা যাবে।মেহমান মানুষ।নাস্তা মুখে মন্দ কথা বলা খারাপ।কিন্তু আকাশ তেমন কিছু খেলো না।একপিস পিঠা মুখে নিয়ে পানি খেয়ে ফেললো।সম্ভবত চা টাও খাবে না।খাওয়া শেষ করে আকাশ বললো,
” আসলে আমি যেকারণে এসেছি–আমি সুপ্রভাকে নিয়ে যেতে এসেছি!”
আমি এবার এক কদম এগিয়ে গেলাম সেদিকে।চোখমুখে বৈচিত্র্যতা ফুঁটিয়ে বলে উঠলাম,
“কে যাবে আপনার সাথে!”
আকাশ চুপ করে রইলো!সুবর্ণা বলে উঠলো,
“ভাবী রাগ করো না প্লিজ।আগে যা হয়েছে সব ভুলে যাও প্লিজ ভাবী।আর আমাদের সাথে চলো।আমরা তোমাকে নিতে এসেছি।”
আমি সুবর্ণার কথায় পাত্তা দিলাম না।আকাশের দিকে রাগান্ধিত দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলাম।বললাম,
“কিছু কিছু মানুষ খুব বেহায়া থাকে,তাদের মধ্যে আপনি একজন!এই বাসায় আসার আগের রাতেই তো বললেন আমাকে স্ত্রী হিসেবে কখনোই মেনে নিবেন না।তা আজও সেই মন নিয়ে এলেন!ওহহ..আপনার তো আবার প্রাক্তন আছে, তাকে নিয়ে সংসার শুরু করেন না!?আপনার মা তো তাই ই চায়,নাহলে বাবাকে কল করে সংসার ভাঙ্গার কথা বলে!আপনাদের কাছে সংসার,স্ত্রী এসবের মূল্য নাই।ফেলনা পুতুল চিনেন?তা ভাবেন আপনারা!আপনি কি ভেবেছেন আপনি এসে বলবেন চলে যেতে, আর আমি ফেলফেল করে চলে যাবো?সুপ্রভা এতই স্বস্তা!?”
মা পাশ থেকে আমাকে থামিয়ে দেন এবার।আকাশের দিকে তাকিয়ে,
“বাবা?আসলে হয়েছে টা কি?একটু খুলে বলো তো!সুপ্রভা তোমাদের বাসায় আসার পর থেকেই আমাদের কাছে কি যেন লুকচ্ছে।কিছু বলতেছে না।কিছু কি হয়েছে?আর এখন প্রাক্তন এসব কি বলতেছে ও!আর হয়েছেটা কি আসলে?আমাদের একটু খুলে বলো তো?আমাদের মেয়ে আমাদের সবকিছু জানার দরকার আছে!”
বাবাও মায়ের কথায় সায় দেয় তাই।আকাশের ভাবভঙ্গি এমনটা দেখায় সে যেন বলতে বিব্রতবোধ করতেছে!সে আমার দিকে এবার তাকালাে।তারপর মা-বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি সুপ্রভার সাথে কথা বলবো একটু।তারপর আপনাদের সাথে কথা বলতেছি!”
আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম,
“আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই!আর আপনি ভাববেন না আপনার সাথে যাবো।দুঃখিত আমি যাচ্ছি না।যেভাবে এসেছেন সেভাবে ভালোয় ভালোয় চলে যান!দ্বিতীয়বার যেনো না বলা লাগে!”
মা বলেন,
“সুপ্রভা সুন্দর ভাবে কথা বলা যায় না?এরকমভাবে কথা সাথে কথা বলা শিখিয়েছি তোকে আমরা?”
“তোমরা কথা বলা ভালোই শিখিয়েছিলে কিন্তু তোমাদের কথাগুলোকে এরা দুর্বলতা ভেবেছে।এমন ভাষাই যদি শেখালে তাহলে ওইরকম একটা পরিবার এবং ছেলে দেখে কেন বিয়ে দিয়েছিলে আমাকে!এরা এরথেকেও মন্দ কথার যোগ্য!চলে যান আপনারা!চলে যান এখান থেকে।”
এ বলে রুমে চলে আসি আমি।দরজা বন্ধ করে দেই।আর জানলার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে টিপটিপ করে চোখের পানি ফেলতে থাকি।বাবা বার কয়েকবার এসে দরজায় করাঘাত করেন।মাও!এমনকি সুবর্ণাও দরজা খোলার জন্যে!দরজা খুলি নি।দরজা খুললেই ক্ষমা চাইবে।তারপর আমার মন গলবে।আর মন গললেই নিয়ে যেতে সহজ হবে!এতই সরল ভাবনা!
পরপর তিনঘণ্টা কেঁটে যাওয়ার পরও দরজা খুলি নি।রাত যখন বারোটা তখন দরজা খুলি।ভেবেছি মা-বাবা শুয়ে আছে।তারা কেউ শোয় নি।মা গুটুর গুটুর করছে কিচেনে।আমাকে দেখে কিছু বলেননি।আকাশ এবং সুবর্ণা আঁটটার দিকেই হয়তো চলে গেছে!আমি কিচেনে ঢুকলাম।মা তারপরও কিছু বলছেন না।চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছেন।আমিও কিছু বলিনি।পরে বাবাকে বাসার মধ্যে ঢুকতে দেখলাম।এতরাতে বাবা কোথায় গেলো।আমি এগিয়ে গেলাম বাবার দিকে,
“বাবা?কোথায় গেলে?”
বাবা ছোট কন্ঠে জবাব দিলেন,
“ছাদে।”
“এতরাতে ছাদে?”
বাবা এড়িয়ে গেলেন কথাটা!আর নিজের রুমের দিকে যেয়ে লাগলেন।আমি বাবার পেছন পেছন গেলাম!বাবাকে এবার আমাকে বলে উঠলেন,
“মা?আকাশকে তুই কখনো ভালো করে জেনেছিস একবারও?বা বুঝার চেষ্টা করেছিস একবারও কেন সে তোরসাথে একরম ব্যবহার করেছে?”
আমি অবাক হলাম বেশ বাবার কথায়।চোখমুখে প্রশ্নের ভাব ফুঁটে উঠলো।বললাম,
“বুঝলাম না বাবা।”
বাবা তার চোখ থেকে চশমা নামিয়ে ছোট একটা শ্বাস ছেড়ে বলেন,
“আজ আকাশের অতীত সব জানলান।খুবই ভয়ংকর এবং নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক ছিল!একটা মানুষ কিভাবে আবার দুই বছর কোমায় থেকে উঠে এতটা স্বাভাবিক হতে পারে!সব মেডিকেল রিপোর্টস দেখলাম তার!গাঁয়ের লোম খাঁড়া হয়ে গেল।প্রায় দুই বৎসর আগে ফেসবুকে যে একটা মেয়ের তার প্রেমিকের সামনে ট্রাক চাপায় পড়ে সাথে সাথে মারা গিয়েছিল?তুই এসে আমাকে দেখিয়েছিলি ফোনটা সামনে এনে,বলেছিলি,বাবা মেয়েটির একটি ছেলের সাথে আগামীকাল বিয়ে হওয়ার কথা।আজ তারা বিয়ের শপিং করতে গিয়েছিল কিন্তু শপিং করে মার্কেট থেকে বের হওয়ার পরপরই পেছন থেকে একটা ট্রাক এসে মেয়েটির গাঁয়ের উপর হাওয়ার মতন চলে যায়।আর মেয়টি মারা যায়!ছেলেটি অপোজিট পাশে ছিল মেয়েটির।চোখের সামনে দীর্ঘ বছরের প্রিয় মানুষটিকে মরতে দেখে ছেলেটি পাগলের মতন হয়ে যায়!…
বলে বাবা থামলেন!তারপর বার কয়েক শ্বাস ছাড়লেন।বললাম,
“হ্যাঁ,কিন্তু…!”
“ওই প্রেমিকই আজকে তোর স্বামী!মানে আকাশ!”
বাবার কথা আমার বিশ্বাস হতে চাইলো না ঘোরের ভেতর থেকে বলে উঠলাম,
“বিশ্বাস হচ্ছে না বাবা!”
বাবা চুপ করে রইলেন।তারপর খাটের উপর ধপাস করে বসলেন!বললেন,
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, সুপ্রভা!”
আমি আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলাম না!তারপর ধীরপায়ে নিজের রুমে চলে এলাম।ফ্যান ছেড়ে দিলাম।তারপরও প্রচন্ড ঘামতেছে আমাকে!চোখ থেকে অঝরে পানি বেয়ে পড়তে থাকলো! সেদিন ফেসবুক জুড়ে জুড়ে হাজার স্ট্যাটাস।ছয়মাসেও তাদের জুটি নিয়ে মানুষদের লেখা শেষ হয়নি।কতটা আবেগ,মমতা,কষ্ট ভরা ছন্দে তাদের দীর্ঘ দশ বছরের ইতিহাস উপস্থাপন করেছিলো মানুষ!আর সেই লেখাগুলোর প্রতিটি অক্ষর আমি ঠোঁটের কোণায় রেখেছিলাম!ঘটে যাওয়া সেই প্রেমের বিচ্ছিন্ন প্রেমিকের স্ত্রী আজ আমি!!
চোখের পানি থামছে না!থামছে না কিছুতে!
চলবে…
(আসসালামু আলাইকুম,আমার ইকোনমিকস রেজাল্ট দিয়েছিল।ওতটা মার্কস তুলতে পারিনি।যতটা আশা করেছিলাম।মন খুবই খারাপ ছিল।লিখার কোনো শব্দই মাথায় আসেনি।তাই দেরী হলো।দুঃখিত)