রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ১৮.১

0
407

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ১৮.১
____________________________

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত এই লেখা]

দুপুরে শ্যুট দেখতে যাবার পরিকল্পনাটা ভেস্তে গেল মাহির। মাথা ভার লাগছিল বলে দশ মিনিট বিশ্রাম নেবার কথা ভেবে বিছানায় গা ছেড়ে দিতেই বিনা পরিকল্পনায় ঘুমে তলিয়ে যায়। ছুটি নেবার পর থেকেই মাহির প্রধান কাজই অবশ্য শুধু ঘুমানো।

দ্বিপ্রহরের ঝকঝকে কমলা রঙা রোদে ছবি, ভিডিয়ো বরাবরই দারুণ আসে। আশফিক দেশে আসার পর থেকে বাংলার সামান্যতম নৈসর্গিক রূপ ক্যামেরা থেকে বাদ দেয়নি৷ সময় পেলে বসে বসে সেগুলোর ব্লগ তৈরি করে সোশ্যাল সাইটগুলোতে আপলোড করে। দেশটিকে পৃথিবীর কাছে চিত্রিত করার ক্ষুদ্রতম প্রচেষ্টাকে সে একটুও হাতছাড়া করতে চায় না।

ঐশী আর নাহিয়ান বের হবার প্রস্তুতি শেষে মাহিকে ডাকতে আসে। ঘরের ভেতর থেকে সাড়া না পেয়ে বুঝতে পারে আজ অন্তত মাহির আর যাবার আগ্রহ নেই। কলও করছিল ওরা। কিন্তু বারবার কেটে দিয়েছে মাহি।

আশফিক আশেপাশের চার-পাঁচটা ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছে মাত্র। নাহিয়ানের কল পেয়ে কটেজের দিকে এগিয়ে আসতেই পথিমধ্যে ওদের দেখা পেয়ে যায়।
-‘সবাই রেডি আমরা?’
বিরক্তি নিয়ে জবাব ঐশী দিলো আশফিককে, ‘মাহি ঘুমিয়ে গেছে রুমে ঢুকেই। চলো বেরিয়ে পড়ি আমরা। যেতেও সময় লাগবে কতটুকু কে জানে!’
নাহিয়ান বলল, ‘সময় লাগলেও কিছু হবে না। শট কতবার কাট করতে হচ্ছে! এক ভাগও ঠিকঠাক শ্যুট হয়নি। দুজনেই তো অনভিজ্ঞ।’
আশফিক নিজস্ব কায়দায় ঠোঁট কামড়ে আছে, কিছু ব্যাপারে চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে৷ তবু নাহিয়ানের কথার পর জানাল, ‘দিলিশা অনভিজ্ঞ নয়। হৃদয় মাথামোটা ধরনের একটু।’
-‘তো আমরা দাঁড়িয়ে কেন আছি আর? চলো!’ ঐশী তাড়া দিলো।
চকিতেই আশফিক বলে দিলো, ‘আমিও থেকে যাই। মাহি একা পড়ে যাবে তো এখানে। শরীর আমারও খুব একটা সায় দিচ্ছে না৷ সবাই এক সঙ্গে যাবার একটা মজা আলাদা বলে মিস দিতে চাইছিলাম না।’

আশফিকের উদ্দেশ্যপূর্ণ সরু দৃষ্টি মাহির ঘরের দরজাতে তখন। নাহিয়ান এ ব্যাপারটিতে কতটুকু সম্মতি দেবে কিংবা আদতে দেবে কি না সে ভাবনার পরোয়াই করে না সে!

ঐশী কী বলবে ভেবে পায় না। মাহির তখনকার প্রতিটি কথাগুলো আরও সাজিয়ে গুছিয়ে আশফিককে জানিয়ে দিতে মন চায় ওর। বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলেগুলো এমন বোকা হলে মানায়? মাহির প্রত্যক্ষ প্রত্যাখ্যান এই ছেলেটি টের পায় না কেন? মহা বিরক্তিকর!
-‘ঐশী, তুমি এগোও তাহলে। আমি রুমটা লক করেছি কিনা দেখে আসি৷ মনে হচ্ছে লক না করে চলে এসেছি।’

অগত্যা ঐশী এগিয়ে যেতেই নাহিয়ান আশফিকের ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে টিপ্পনী কাটল, ‘কেয়ারনেসটা সেদিন দেখালে কাজে দিতো।’ বলে আর দাঁড়াল না ও।

আশফিক নাহিয়ানের যাবার দিকে কতক্ষণ স্থির চেয়ে তারপর উদ্দেশ্যের দিকে হাঁটল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মাহিকে ডাকবে কি ডাকবে না ভাবতে ভাবতে দরজার নবের দিকে চোখ পড়ল ওর। অকারণে ওর মন জানান দিচ্ছে মাহি দরজা লক করেনি। নবটি ঘুরিয়ে দেখার আগে মাহিকে ডেকে উঠল ক’বার।

কিছুক্ষণ আগে নাহিয়ানের ডাকাডাকিতে ঘুমে বিঘ্ন ঘটলেও চোখ মেলে তাকাতে মন চাইছিল না মাহির। আধো ঘুম আধো জাগরণে এই মুহূর্তে সে। আশফিকের প্রতিটা ডাক ঝংকার তুলে কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে মাহি। সে কি বর্তমানে না পেছনে ফিরে গেল? বুজে থাকা রঙিন স্বপ্নময় চোখে উত্তরার সেই গলি, সেই লুকিয়ে থাকা ধর্ষকদু’টো, কোথাও কেউ নেই। কিন্তু আকস্মিক আশফিকের দেখা, আর….!

আবার এই বুঝি কেউ ধাক্কে বৃত্তাকার একটি গোলকে ছুঁড়ে ফেলল ওকে। সেখানে দরজা খুলে ফেলার ক্যাঁচক্যাঁচে তীব্র শব্দ শ্রবণ হচ্ছে।

_____________ _____________ _____________

স্টার সিনেপ্লেক্সের সামনে থেকে ঘুরিয়ে এনে গাড়ি হঠাৎ বাড়ির রাস্তাটি ধরলে মাহি কাঠপুতুল হয়ে থমথমে চেহারায় বসে থাকে। আশফিকের স্বভাবজাত বিখ্যাত হোঃ হোঃ শব্দের হাসিতে গাড়ির পরিবেশ তখন শব্দদূষণের শিকার। সামনে বসা ড্রাইভার মানুষটি স্রেফ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। প্রথম সাক্ষাতটি নিতান্তই চিরকাল স্মরণে রাখবার উদ্দেশ্য বইকি, তবে আতঙ্কিত করবার অন্যায় অভিসন্ধি মাহির কলুষমুক্ত মন একটুও ভেবেছিল না। পাশের ছেলেটি অতিশয় অভদ্র! ভবিষ্যতে বউ হতেও পারে এমন মেয়ের সঙ্গে প্রকাশ্য দিবালোকে রঙ্গকৌতূক করে তাকে হয়রানিতে ফেলা এ মোটেও অনায়াসে মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের মজা যে-কোনো মেয়েকেই ভীত করবে।

জ্যামজট ছাড়িয়ে মাহির ঠিকানাতে পৌঁছল ওরা প্রাতঃসন্ধ্যাতে। ড্রাইভার নেমে গাড়ির দরজা খুলতে গেলে আশফিক তাকে ইশারায় বারণ করে। সিনেপ্লেক্সে যেতে যেতে অতিরিক্ত দুষ্টুমি না করলেও কমও করা হয়নি মাহির সঙ্গে। না ছুঁয়েই অশালীন ইঙ্গিতে বারবার ওকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলছিল আশফিক। মাহির রণহুঙ্কার তোলা আওয়াজে তখন গালি ছাড়া রীতিমতো নানানরকম পরোক্ষ হুমকি বাণী ছুটছিল ওর জন্য। আশফিকের সেই ভয় আর খানিক লজ্জা ধরিয়ে দেওয়া ইঙ্গিতগুলো গোপনীয় রাখা সমীচীন।

-‘আমার কিন্তু প্রি প্ল্যান ছিল না তোমার মতো।’
ঝরঝরে হাসি আশফিকের।

মুহূর্তমধ্যে মাহির ভস্মীকরণ চাহনিতে আশফিক গাড়ির জানালার সঙ্গে সেঁটে গেল, দু’হাত তুলে সাথে কপট আত্মসমর্পণ ভঙ্গি। হাসি আটকে উপহত সুরে বলল, ‘জাওয়াদ রায়হানের পুত্র জারিফ ইসলামের কন্যার জন্য এক্কেরে সুযোগ্য পাত্র তা প্রমাণ করা আমার বিশাল দায়িত্ব এবং একান্ত কর্তব্য।’

বাকবিতণ্ডা ছাড়া মাহি উল্কাবেগে যেন গাড়ি থেকে নেমে গেল। আশফিক এবার একটু চিন্তাতে পড়ল। বিয়েটা মাহি ভেঙে দেবে কি? এমন চাওয়া সকাল অবধি থাকলেও মাহিতে নিবিষ্ট মন এখন একটুও চাইছে না। ঝাল, টক, মিষ্টিতে ঠাঁসা বউ পাবার সৌভাগ্য সবার হয় না। তাই সে পেয়ে এমন মানুষকে একদম হাতছাড়া করবে না। পাছে দেখা গেল পান্তা, নোনতা বিশেষ চরিত্রের মানুষ জুটবে নসিবে।

ঘরে ঢুকে বিছানার মাঝটা দখল করে দুই বালিশের ফাঁকে মুখ গুঁজে আশফিকের উদ্দেশ্যে এতক্ষণ দমিয়ে রাখা মহা গালিটা চিৎকার করে বলে উঠল মাহি, ‘শা/লা লু/চ্চা/র পেটের লু/চ্চা!’

ইসরাত জাহান দ্যুতি
__________________

পর্ব ছোটো। ৮০০ শব্দের এপাশে। এখন থেকে প্রতিদিন পর্ব দেবো ছোটো ছোটো পর্বে। তাতে রেগুলারিটি মেইনটেইন হবে। অনিয়মিত কোনো লেখায় পাঠকদের পছন্দ নয় জানি বলেই এ সিদ্ধান্ত।

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ১৮.২
____________________________

[শুধু প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য এই লেখা৷ এবং কপি পুরোপুরি নিষিদ্ধ]

প্রেমের মুক্ত অনুভূতির ঝড়ো হাওয়া প্রথম এলোমেলো করে মেয়েদেরই।

দুজনের একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট মনোভাব একই সঙ্গে জন্ম নিলেও ভালোবাসার অঙ্কুর মনের গহীনে খুব গোপনে বুনেছিল মাহিই আগে। আশফিক তো কেবল মাহির বাহ্যিক ঠাটঠমক, অনন্য ব্যক্তিত্ব আর লাবণ্যময় সৌন্দর্যে মুগ্ধ। ভালোবাসার জন্য ভালোবাসতে হবে, মাহির মতো এমন পরিশুদ্ধ অনুধ্যান ওর মাঝে আসেনি তখনো। অনুভূতিরা ওকে ধরা দেয় আরও পরে, ভীষণ লুকিয়ে; টেরই পায়নি ও!

সে রাতটিতে আশফিকের ঘুম উবে যায়, উদ্বেগে বুকে ধুক-ধুক আরম্ভ হয়, ঘনঘন পানিতে গলা ভিজিয়ে নেয়। বহুবার চেষ্টা করেও মাহির নম্বরে সংযোগ মেলে না। কী যে এক বাড়াবাড়ি দুশ্চিন্তা! শেষে না ‘ক্যাডিশ বয়’ নামে আখ্যায়িত হতে হয় সকলের কাছে। কলেজ সময়ে দু’চারটা সুন্দরীদের সাথে ফ্লার্ট করলেও চরিত্র সুরক্ষিত ছিল। আজ না হবু বউয়ের দ্বারা তার সেই চরিত্র কালিমালিপ্ত হয়ে যায়!

এক রাত্রির নির্ঘুম পরিণতির ফল পায় আশফিক আগামীকাল বেলা গড়ালে। অবেলা অবধি ঘুমিয়ে খিদেয় পেট চো-চো করছে অনুভব করতেই বিছানা ছাড়ে। খাবার খেতে এসে জানতে পারে মায়ের কাছে, জারিফ সাহেব নাকি ফোন করেছিলেন সকালবেলা ওর বাবাকে। বিয়ের দিনক্ষণ নিয়ে দু’পরিবার কবে কি আলোচনাতে বসবে সেই নিয়েই কথা হয়েছে। খাবারের সঙ্গে তখন আশফিক দুশ্চিন্তাগুলোও যেন গ্রসন করে নেয়। খুব বাঁচা বেঁচে গেছে এবারে। পরবর্তীতে বিনা প্রশ্রয়ে আর মজা করবে না ভুলেও মেয়েটির সঙ্গে। ভবিষ্যত বউটি তার মাশা আল্লাহ! এত উদরমনা মেয়েকে কি বিয়ে না করে পারা যায়! আজ একটাবার মাহিকে না দেখতে পেলে, কথা না বলতে পারলে পুরোটা দিন কাটাতে হবে তার বদ্ধ ঘরে। একটুও মন বসবে না বাইরে।
_______________ _______________ ________________

আরশিতে হলুদ নীল রঙা জিন্স আর কূর্তি পরিহিত নিজেকে বেশ খানিক্ষণ যাবৎ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে অবশেষে বেমানান লাগল কোমরের কাছটায়। সেখানে ঠিকঠাক করে নিয়ে নীল স্কার্ফটা পরিপাটিরুপে মাথা আর গলায় জড়িয়ে সাজগোজে তবেই ক্ষান্ত দিলো মাহি। চোখ সানগ্লাস আঁটবে সেই সময়ে প্রাইভেট নম্বরটিতে কল এলো, মিনিট পাঁচ ধরে লাগাতার কলটা আসছেই। দেওয়াল ঘড়িতে নজর দিলো ও, একটা বাজতে চলেছে৷ নাহ, আর দেরি করা ঠিক হবে না। কাজটি যতই নিজের ঠিকানার কাছাকাছিতে হোক, সময়ানুবর্তিতা সবচেয়ে আগে এবং প্রথম দায়িত্ব।

ব্লুটুথ স্কার্ফের আড়ালে কানে গুঁজল, পোলারাইজড সানগ্লাসটা চোখে এঁটে কলটা রিসিভ করে প্যান্টের পকেটে রাখল। কোনোরকম ভুল হওয়া চলবে না। যখন সিঁড়িতে পৌঁছল সব সময়ের ব্যবহৃত ফোনটিতে রিং বাজল এবার। তাড়াহুড়ো কাজেই সব সময় দেরি হয়ে যায়। ধুরঃ! যেই কল করুক তা কেটে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই এখন। কিন্তু বিশেষ মানুষ বলেও তো কথা আছে। গতকাল রাত থেকে সেই বিশেষ মানুষটিকে ভুলে থাকতেই হয়েছিল একরকম। ফোনের স্ক্রিনে আশফি নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে রিসিভ না করে পারল না মাহি। এক মিনিট গড়াল দুজনের নিস্তব্ধতায়। মাহি গেটের বাইরে চলে এসেছে তখন৷ ভেতরে ভেতরে ভীষণ উত্তেজিত সে। এ সময়ে আশফিকের কলটা এসে মনোযোগ নষ্ট করে দিচ্ছে। আপাতত অবজ্ঞা দেখিয়ে কাটিয়ে দেওয়া আবশ্যক। তাই চুপই রইল সে।

-‘তুমি কি আছ, মাহি?’
-‘হ্যাঁ আছি।’
-‘ব্যস্ত?’
-‘ব্যস্ত বলতে… হ্যাঁ তা কিছুটা। কিছু বলবে তুমি?’
-‘হ্যাঁ, খুব ব্যস্ত না কি?’
উত্তর দিলো না মাহি। কারণ, তাদের কথা আরও কেউ শুনছে। বিচ্ছিরি এক পরিস্থিতিতে পড়েছে ও। ভালো কিছু তার সঙ্গে সব সময় অসময়েই হয়।

কোনো জবাব না পেয়ে আশফিকের বিশ্বাস হলো মাহি এখনো রেগে আছে। এমন আন্দাজ আগেই করেছিল। এমনটা মেয়েদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ভাবে সে। একদম ভণিতা না করে সে জানাল, ‘আমি দেখা করতে চাই আজ। স্যরি বলতে চাই। প্লিজ!’
-‘ঠিক আছে, সন্ধ্যার পর।’ বলেই ঝটপট ফোন কেটে দিলো মাহি।
প্রতিউত্তর আশফিকের গলাতে আটকে তখন। জানাতে পারল না সে ইতোমধ্যে মাহির বাসার কাছেই। এবং স্বচোখে মাহিকে একটা স্কুটির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখছে। সাঁই করে মাহির ভাড়া করা স্কুটিটা ওর গাড়ি পার করে চলেও গেল।

এত তাড়া কীসের? কোথায় ছুটল এই দুপুরে মাহি? আশফিক অদমনীয় কৌতূহলের কারণে অন্যায় একটি কাজ করতে বাধ্য হলো৷ চলল সেও মাহির পিছু পিছু।

উত্তরার ২নং সেক্টরে ঢুকে ফুটওয়ের সামনে মাহি স্কুটি দাঁড় করাল। দু, একটা রিকশা মাঝেমধ্যে যাচ্ছে আসছে। তাছাড়া বেশ ফাঁকা লাগছে আজ এদিকটা। রাস্তার ধারের অট্টালিকাতে চোখ বুলিয়ে স্কুটি নিয়ে ছুটল আরও সামনে। ফুটওয়ের ধার ঘেঁষে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে দু’জন ডাব বিক্রেতাকে ফোন বের করে কিছু একটা দেখাল। কিন্তু ওদের থেকে আশানুরূপ কোনো জবাব পেলো না। এগিয়ে গিয়ে উত্তরা কবরস্থানের সামনে চলে এলো। আরও এগিয়ে যাবে না কি পেছোবে তা নিয়ে দ্বিধান্বিত লাগছে ওকে। আশফিক ওর থেকে ভালোই দূরে। সন্দেহ হওয়ার মতো নয়।

মাহি এবার স্কুটি নিয়ে ফিরে এসে কিডস ক্যাম্পাসের সামনে এলো। এখানে দাঁড়িয়ে তিনদিকে লক্ষ রাখতে পারবে বেশ৷

আশফিক খেয়াল করছে ওর গতিবিধি। কিন্তু বুঝতে পারছে না মাঝেমধ্যে ঠোঁট নড়ে উঠছে মাহির। বিড়বিড় করে কথা বলছে আর চারপাশে নজর বুলিয়ে চলছে।

দশ মিনিটের ব্যবধানে একটি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে গেল সেখানে। মার্সিডিজ ব্রান্ডের একটা কালো গাড়ি চলতে চলতে মাহির সামনে এসে গতি কমাল। মাহি নিমগ্ন তখন হাতের ফোনটিতে। গাড়ি থেকে রোগা পাতলা দু’টো ছেলে নেমে একজন গেল ডাব বিক্রেতার কাছে। আরেকজন ওকে দেখে দূরে দাঁড়িয়েই কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতে শুরু করল। সেটা চললও অনেকক্ষণ। কিন্তু এমন শীতল পরিবেশ যুতসই হবে না বলে মনে হলো মাহির। পরিস্থিতি আরেকটু বিগড়ানো দরকার।

ভীতিগ্রস্ত চেহারায় আশেপাশে কারও সাহায্য কামনায় রাস্তার এপাশ ওপাশ দেখতে দেখতে স্কুটিতে উঠে পড়ল মাহি। তা দেখে বখাটে ছেলেটি আরেক সঙ্গীকে দ্রুত আসতে বলে ওর স্কুটির কাছে ছুটে এলো। যথারীতি হয়রানির শিকার মাহি। স্কার্ফ ধরে টানাটানি শুরু করলে মাহি কেঁদে ফেলে। বীর পালোয়ান বখাটের একটি গাড়ির গায়ে হেলে দাঁড়িয়ে ডাবে চুমুক দেয় আর উৎসাহ দেয় আরেক বীর পালোয়ান বখাটেকে।

হাত টানাটানিতে মাহির কব্জির নিচের দিকে আঁচড় পড়ে যাচ্ছে বখাটের ধারাল নখে। আশফিক দূর থেকে স্পষ্ট ঘটনাটি বুঝে নিয়ে এগিয়ে আসার পূর্বেই মাহি ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত স্কুটি টান দিয়ে সামনে চলে যায়। আশফিক ধরেই নিয়েছে ছেলেদু’টো এবার মাহির পিছু নেবে৷ জরুরি ভিত্তিতে পুলিশের কাছে কল করতে করতে ও এগিয়ে আসে গাড়ি নিয়ে৷ উদ্দেশ্য মাহিকে গাড়িতে তুলে নেবে। কিন্তু ঘটনাটি ওর ধারণার সঙ্গে মিলল না৷ ছেলেদু’টো অশ্লীল ভাষাতে মাহিকে গালাগাল করতে করতে ডাবের ভ্যানের কাছে এসে দাঁড়াল। কয়েক বোতল ফে/ন/সি/ডি/ল খাওয়ার পর থেকে প্রচণ্ড তৃষ্ণা পাচ্ছে ওদের।

একজন চিকন, গৌড় বর্ণ আর লম্বা৷ দ্বিতীয়জন কালো, উষ্কখুষ্ক কোঁকড়াচুলো, বেঁটে ধরনের। চেহারাতেই ভীষণ উগ্রতা ওদের। বেঁটে ছেলেটির কথাগুলো এমন, ‘মা*ডারে ধরতি! রাইত পন্ত(পর্যন্ত) গাড়িতি চড়াইতাম, কাইল বুড়িগঙ্গায় ফেলাই দিতাম।’
উত্তরে লম্বা ছেলেটি জবাব দিলো, ‘তারফর বসে রড তর পা/ছা/র মদ্যি হা/ন্দা/ই/তো। নেত্রকুণায় যাওন লাগব পুরা নির্ভেজাইলে। এইবার কুনোরহম(কোনো রকম) পুলিশ চু*র ভাই ট্যার পাইলি কাইল সহালে(সকালে) বুড়িগঙ্গায় আমরা ভাসুম।’

এবার মিনিট দুইয়ের ব্যবধান। আশফিকের গাড়ি যখন ওদের কাছাকাছি তখন ও চরম বিস্ময় চোখে মাহিকে পুনরায় ফিরে আসতে দেখল। মুখটা স্কার্ফে ভালো করে বেঁধে, চোখে সানগ্লাস রেখে, ভীষণ গতিতে স্কুটি ছুটিয়ে ছেলেদু’টোর পিছে এসে দাঁড়াল ও। বেঁটে ছেলেটি শব্দ পেয়ে পিছে ফিরল আর মাহিও নিজের দানবী শক্তি হাতের রডটিতে প্রয়োগ করে একজনকে রেখে আরেকজনকে পালাক্রমে এ/লো/পা/থা/ড়ি আ/ঘা/তে মা/র/তে মা/র/তে মাটিতে শুইয়ে দিলো। নিজেদের আত্মরক্ষা করার মতো বা পালটা আ/ঘা/ত করার মতো সুযোগই মেলেনি ওদের।

দা হাতে দাঁড়িয়ে ডাব বিক্রেতা দু’জনই হতভম্ব, আতঙ্কিত, দিশেহারা। আহত, বিধ্বস্ত ছেলেদু’টির থেকে নজর তুলে বিক্রেতার দিকে অবিশ্বাস্য সরলতা নিয়ে চাইল মাহি, ঠোঁটের ওপর অনামিকা আঙুল তুলে নীরব ইশারায় নিশ্চুপের ইঙ্গিত জানিয়ে স্কুটিতে চেপে ফের চলে গেল সেক্টর নং ১ এর রাস্তাতে।

ইসরাত জাহান দ্যুতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here