রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ৯ (বাকি অংশ)

0
470

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ৯ (বাকি অংশ)
____________________________________

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]

আবছা আলোর ঘরে এই গাঢ় রাতে অনেকগুলো দিন পর আজ একসাথে তারা। পুরোনো সম্পর্কে থাকাকালীন মাহিকে যখন একটু একটু করে অনেকটা ভালো লেগে গেল আশফিকের, আপন মনকে তখনই স্থির করে ফেলেছিল সে, মাহি বিনা হবে না কেউ তার নিজের নারী। সেটা ভালোবাসারই পহেলা সোপান ছিল তা বুঝে উঠতে পারেনি তখন আশফিক। বিয়ের দিনক্ষণ তখনো আরও দূরে। অত দেরি করতে মন চাইত না ওর। শুধু ভাবত ওর নিয়ন্ত্রণ হারা মন তো পিঁপড়ার মতো। মিষ্টির ছড়াছড়িতে যেখান সেখান থেকে ছুটে আসে যেমন ওরা। তেমনই মাহির মতো চমৎকার এই আকর্ষণীয় মেয়েটিকে যখন তখন সে চাইলেও না চাইলেও কাছে পেতে পেতে সংযত হবার সাধু চিন্তাকে মনে মনে লাথিই কষত। শুধু পারত না লজ্জা ফেলে বিয়ের তারিখটা বলে কয়ে এগিয়ে আনতে। অসভ্য সেই বশহীন পুরুষ মনটা রাত নেই দিন নেই তাকে ছুটিয়ে আনত মাহির কাছে। মাহির ভাই তখনো বিয়ে করেনি। বাবা, ভাই, দুজনেই অধিকাংশ সময় থাকত কাজকর্মের অসিলায় বাড়ির বাইরে৷ ফাঁকা বাড়িতে তাই মনটাও সুযোগ সন্ধানী হয়ে পড়ত আশফিকের। কত বার দুজনের মধ্যে চূড়ান্ত ভূল হতে হতেও হয়নি, তার ইয়ত্তা নেই। সেই সময়গুলোতে মাহি কেবল আনাড়ি বৈ অভিজ্ঞসম্পন্ন ছিল না। তাই না পারত বৈধ অধিকার না পাওয়া আশফিককে কাছে টানতে, আর না দূরে ঠেলতে।

বিছানার চাদরটার এক কোণা হাতের মুঠোয় ধরে নত মুখে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা আশফিকের মুখাবয়ব কেমন প্রস্তরীভূতে পরিণত হয়ে আছে। দেওয়ালের গায়ে হেলে দাঁড়িয়ে মাহি কিছুটা আগ্রহান্বিত চাউনি ছুঁড়ে থমকে থাকা আশফিকের ব্যাপারখানা ঠিক ধরতে পারছে না। যেভাবে ডাকাতের মতো ঠেলে ঢুকে পড়ল তখন, ভেবেছিল না জানে কত হামতাম করবে! কিন্তু হলো উলটো। অমন নির্জীব হয়ে পড়ল কেন? আর কত সময় এমন নীরবতা চলবে বুঝতে পারছে না মাহি। বড়ো কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস না তো?

অথচ ওকে বিস্ময়াবিষ্ট করে তুলল আশফিকের হৃদয় ছলকে দেওয়া কাতরতা। মন্থর গলায় বলে উঠল আশফিক, ‘ইট’স হার্টস মি আ লট, মাহি!’ বলেই ঢোঁক গিলল, মনে হলো মর্মবেদনা গিলে নিলো।
-‘আমার অন্যায়টা ছিল আমার স্বার্থপরতা। কিন্তু এসব তো না। অথচ তুমি…! সহ্য করতে পারছি না আমি। কষ্ট হচ্ছে খুব।’
-‘হয় কি? নিমিষেই পালটা প্রশ্ন মাহির। স্পষ্টরূপে ভর্ৎসনা।
চাদরের কোণাটুকু তখনো আশফিকের হাতের মুঠোতে দলিত হচ্ছে৷ কষ্ট, ক্ষোভ আর ক্রোধের শিকার যেন ওই বস্তুটিই। ওই তিরস্কারে ক্ষীণপ্রভ চাহনিতে আবদ্ধ করল ও মাহিকে। সে দৃষ্টি দেখে মাহি আবারও বিদ্রুপ প্রকাশ করল, ‘আমাকে নিয়ে তোমার কষ্টও হয়? দেন হোয়াট টু সে অ্যাবাউট ইয়্যোর গার্ল?’
-‘মাই গার্ল! হু ইজ শি?’ বিস্ময় ঝড়ে পড়ল আশফিকের গলায়।
-‘সে, যে আমার চেয়েও বেশি গুরুত্ব বহন করত অথবা করে তোমার কাছে।’
-‘আমি তৃতীয় পক্ষ টেনেছি কখনো?’
-‘টানোনি?’
হতাশ গলায় বলল ও, ‘ভুল ধারণা ছিল তোমার। আর এখনো।’
-‘ভালো, আমিও টানতে চাইছি না।’ রাশভারী স্বরে সুক্ষ্ম ইঙ্গিত ছুঁড়ল আশফিককে। তা বুঝতেই তড়াক করে দাঁড়িয়ে পড়ল ও। অলস গতিতে এগোতে এগোতে জানতে চাইল, ‘আ’ম বদারিং ইয়্যু? আমাকে উটকো ঝামেলা বলছ?’
মলিন আলোয় মুখভঙ্গি দেখা না গেলেও ওর কথায় ক্ষিপ্রতা বেশ টের পেল মাহি৷ শূন্য দূরত্বে এসে দাঁড়াল ওর কাছে আশফিক, ‘বলো? আরও বলো! আর কী কী ভাবে চাও আমাকে কষ্ট দিতে, সব মঞ্জুর। তবু এসবের শেষ চাই।’
-‘ওকে, সো ইয়্যু রেডি?’ মাহির নিস্পৃহতা। তাও চাইল আশফিক যেভাবে পারুক সেভাবেই না হয় ক্ষোভ ঝাড়ুক ওর প্রতি।
-‘পুরোপুরি প্রস্তুত। বলো তুমি।’
-‘আমার থেকে দূরে থাকবে। যেমনটা অপরিচিত থেকে থাকো।’
কিয়ৎ পল মৌন থাকল আশফিক। সরল চাউনি স্থির মাহিতেই। অতটুকু সময়েই হিসাব কষাকষি করা হয়ে গেল বোধ হয়৷ নির্ঝঞ্ঝাটেই স্বীকৃত হলো সে, ‘যদি কোনো বাড়াবাড়ি না করো।’
চকিতেই দ্বিতীয় শর্ত জুড়ল মাহি, ‘তবে তুমি তোমার সীমা অতিক্রম করবে না।’
-‘আচ্ছা।’ মাহির মতো একই কায়দাতেই সেও বলল। শুধু প্রস্ফুটিত হলো ওর পুরু ঠোঁটজোড়ায় আধুত হাসি। হাসতে হাসতে আশফিক দরজা অবধি চলে এলো বেরিয়ে যাবার জন্য।

সহজ স্বীকারোক্তি আর অমন রহস্যঘন হাসি দেখেই মাহির দৃঢ়তা, পূর্ণপ্রাপ্ততা ছিটকে গেল চকিতেই। অজান্তেই কিশোরী উত্তেজনার ছাপ বেরিয়ে এলো তার ভেতর দেখে। আশফিকের পিছু পিছু দৌঁড়ে এসে এবার শর্ত দিলো, ‘কুমতলব আঁটবে না একদম।’
দরজার নব ঘুরাতেই এ কথায় দাঁড়িয়ে পড়ল আশফিক, বিগলিত হাসল তখন আবারও, ‘আঁটব না।’
বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। এত সহজেই ছেড়ে যাবে আশফিক! বিশ্বাস হচ্ছে না মাহির। দুরন্ত শিশুর মতো আবারও পিছু পিছু এসে উত্তেজিত মনোভাবের পূর্ণ প্রকাশ করল, ‘চলে যাবে তো?’
-‘সময় হলেই।’ হাসিমুখে আশফিক যেতে যেতেই উত্তর ছেড়ে গেল।
মাহি দণ্ডায়মান তখন আশফিকের দোরমুখে। এ রাতের মতো শেষবার ওর মুখটা দেখেই ওকে চমকিত, বিস্মিত করে দিয়ে মুখের ওপর সশব্দে কপাট আটকে দিলো আশফিক।

ইসরাত জাহান দ্যুতি

মূলত ধারাবাহিক মঙ্গল আর শুক্রবারেই চলবে। কিন্তু সময় পেলেই লিখতে পারলে সারপ্রাইজ দেবার মতো পর্ব দেবো যে কোনো দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here