#গল্প——
# সখি ভালোবাসা কারে কয়?
পর্ব———১১
কানিজ ফাতেমা
আজ শুভ নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করবে বলে ড্রাইভারের সিটে গিয়ে বসলো। আর ড্রাইভারকে বলল মাইক্রোতে যেতে।
মিথিলা আপু শোয়েব ভাইয়া পেছনের সিটে বসলে আমিও মিথিলা আপুর পাশে বসতে গেলাম। মিথিলা আপু মজা করে বলল-“ নিধি তুই এখানে কি করিস? যা সামনে গিয়ে বোস। আমরা সবাই পেছনে বসলে শুভ বেচারাকে ড্রাইভার মনে হবে” -বলে হাসলো মিথিলা আপু।
আমি সবার মাঝে কিছুটা জড়তা নিয়ে সামনে শুভর পাশের সিটে এসে বসে দরজাটা আটকে দিলাম।
মীরা আপু কাছে এসে মিথিলা আপুর পাশের দরজাটা আটকে দিয়ে মুখ ভেটকে বলল- “তোমাদের কি কপাল যার যার বরের সাথে ঘুরতে যাচ্ছো।আর আমি জ্ঞানের কথা শুনে শুনে মরছি”তবুও ভালো নিধির বিয়ে হয়ে গেলো না হলে আমার যে কি হতো। আইবুড়ো থেকে মরতে হতো”
“ইস এমন ভাবে বলছিস যে বললেই বিয়ে করে ফেলবি। আমি তোকে চিনি না এখন বলবি মাস্টার্স শেষ হোক । তারপর আবার বলবি একটা চাকরি পেয়ে যাই তারপর।অযথা নাকে কাঁদিস কেনো? নিজের মতের ঠিক নেই এদিকে অন্যকে দোষ দিতে থাকে”- মিথিলা আপু কথাগুলো বলতেই মীরা আপু বলে উঠলো-
“আচ্ছা বাবা ভুল হয়েছে, সব আমার দোষ হলো?”
“তুমিও আমাদের সাথে চলো মীরা”- শেয়েব ভাই হেসে কথাটা বলতেই
মীরা আপু বলল -“দুলাভাই আপনার তো সাহস মন্দ না।আমাকে যেতে বলছেন? না বাবা আমার যাওয়ার দরকার নেই, তবে আসতে বলেছেন তাতেই আমি খুশি। কথা দিচ্ছি সামনে বছর নিজের বরের সাথে আপনাদের ভ্রমন সঙ্গী হবো ইনশাআল্লাহ”-বলে হাসলো মীরা আপু।
“বা বা এতো কনফিডেন্স নিয়ে যে বললি,পাত্র কি জানে? “
“আরে পাত্রের বোনদের কানে তুলে দিলাম এখন তোরা সব ম্যানেজ করে পাত্রকে রাজি কর। সব কথা আমাকে বলতে হবে কেনো?”
ওদিকে আর সবাইকে মাইক্রোর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবাইকে বিদায় জানিয়ে মাইক্রো রওনা হলে আমাদের দিকে আসতে দেখে মীরা আপু বলে উঠলো-“এই চুপ চুপ সবাই এদিকে আসছে।”
“ব্যাস দেখেছো শোয়েব যেই সবার সামনে বলার সময় আসবে তক্ষুনি সবাইকে থামিয়ে দিবে।”
এর মধ্যে বড়চাচা কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো “কি কথা মিথিলা?”
“কিছু না আব্বু।”
“সবাই সাবধানে যাওয় আর শুভ সাবধানে গাড়ি চালিও বাবা।”
“জি চাচা।”
বড়চাচী আমার জানালার কাছে এসে বলল- “একদম মন খারাপ করবি না নিধি। আর কদিন পরেই আমরা সবাই গিয়ে তোকে নিয়ে আসবো তারপর ধুম ধাম করে তোদের বিয়ের অনুষ্ঠান করবো।”
আমি কেনো উত্তর না দিয়ে হালকা হাসি মুখ করার চেষ্টা করলাম।
শুভ মিথিলা আপু শোয়েব ভাইয়া খুব হাসিখুশি ভাবে সবার থেকে বিদায় নিলেও আমি একটি বারের জন্যও বাবা আম্মু নির্ঝর ভাইয়ার দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শুভ গাড়ি চালাতে শুরু করলো, গাড়ির গ্লাসে মধ্যে তাকিয়ে খেয়াল করলাম আম্মুর সাথে বাবাও নিজের চোখ মুছলেন।দেখে আমারও মনের অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো।কিন্তু মনের চাপা জেদ আমাকে মনে করিয়ে দিল আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাবা আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে। আমি তো কোনোদিন বাবা মার অবাধ্য সন্তান ছিলাম না তবে কেনো বাবা মা আমাকে দূরে সরিয়ে দিল? কথাগুলো ভেবেই মুহুর্তেই মনের মাঝের অভিমানগুলো প্রতিবাদী হয়ে উঠলো। ব্যাগ থেকে সাদা রঙের রুমালটা বের করে চোখ মুছে নিলাম আমি।
মিথিলা আপু ব্যপারটা খেয়াল করে আমাকে ডেকে বলল- নিধি মন খারাপ লাগছে?
“না আপু” খুব শান্ত ভাবে কাঁপা গলায় উত্তর দিলাম আমি।
খেয়াল করলাম মিথিলা আপুকে উত্তর দেওয়ার সময় শুভ একবার আমার দিকে তাকালো।
মিথিলা আপু আর শোয়েব ভাইয়া খুব খুশি মনে গল্প করেই চলেছে। আর আমি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছি এদিকে শুভ এক মনে গাড়ি চালাচ্ছে।
দেখতে দেখতে নবিনগরে এসে জ্যামে পরলো গাড়ি। মিথিলা আপু শুভকে জিজ্ঞেস করলো -পৌঁছাতে আর কত সময় লাগবে শুভ?”
“জ্যাম পার হতে পারলে বাসায় পৌঁছাতে খুব বেশি এক ঘন্টা।”
“তার মানে আমরা বারোটা একটার মধ্যেই বাসাই পৌঁছে যাচ্ছি।”
“আশা করা যায়।”
এর মধ্যে বড়খালুর ফোন আসলো।তারা সবাই মাত্র বাসায় পৌঁছেছেন।
মিথিলা আপু শোয়েব ভাইয়া শুভ সবাই জ্যামের কারণে কিছুটা বিরক্ত ।
মিথিলা আপু খুব বিরক্ত হয়ে বলল- “ফ্রেন্ডদের বলে রেখেছিলাম বিকেলে ক্যাম্পাসে দেখা করবো। এখন তো মনে হচ্ছে বাসা পেতেই দুপুর হয়ে যাবে। আবার কাল সকাল থেকে যার্নি করতে হবে। ধুত কচুর জ্যাম বাধার আর সময় পেলো না।”
শোয়েব ভাইয়া মজা করে বলল- “আসলে কেউ তো জানেনা যে ম্যডাম মিথিলা এখন এই রাস্তা দিয়ে যাবে, জানলে কি কেউ জ্যাম বাধাতো?”
“হু তাই বলো” মিথিলা আপু ভ্যাঙানোর মত করে বলল।
যাই হাক কিছুসময় পর আবার গাড়িগুলো সামনে এগোতে লাগলো আর আবার মিথিলা আপুর গল্প শুরু হলো।আমরা সবাই নিরব শ্রোতা।
কথা বলতে বলতে মিথিলা আপু হঠাৎ শুভকে বলে উঠলো – “এই শুভ এক কাজ করো, তোমরাও কাল আমাদের সাথে কক্সবাজার চলো।”
শোয়েব ভাইয়াও বলল – “হ্যাঁ তেমরাও চলো। না হলে সারাক্ষণ মিথিলার বকবকানি শুনতে শুনতে আমার মাথা ধরে যাবে।”
শোয়েব ভাইয়োর কথা শুনে মিথিলা আপু রেগে উঠলেও আমরা হেসে ফেললাম। আমাকে হাসতে দেখে শুভ আমার দিকে তাকাতেই আবার হাসি থামিয়ে চুপ হয়ে গেলাম॥
“কি নিধি যাবি? চল না যায়।”
“আপু আমার ক্লাস শুরু হবে। আর তাছাড়া কালই হলে উঠে পরবো।”
“ও মা কেনো? হলে উঠবি কেনো। নিজেদের বাড়ি থাকতে কেউ হলে থেকে কষ্ট করতে যায়?”
মিথিলা আপুর কথা শুনে শুভ গাড়ি চালানো অবস্থায় আমার দিকে তাকালো। চোখে কেমন অভিমান দেখতে পেলাম।
আমি চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললাম- “আপু আমাকে হলেই উঠতে হবে।”
“তা না হয় হলো, তুই হলে উঠে যাবি কিন্তু আমাদের ডাক্তার সাহেবের কি হবে? বেচারা এত কাঠ খরি পুড়িয়ে তোকে বিয়ে করলো। আর এখন তুই বলছিস হলে গিয়ে থাকবি। শুভ তুমি কিছু বলছো না কেনো?”
শুভ হেসে বলল- “সবাই আমার কথা শুনবে কেনো মিথিলা?
“যা বাবা দুজনের মান অভিমান চলছে না কি?”-
শোয়েব ভাইয়া হেসে জিজ্ঞেস করলে শুভ মজা করে বলল- “
আরে ভাই আমার মত মানুষের অভিমান করার কোনো অধিকার আছে না কি? আমার মত মানুষ সবার অভিযোগ শোনার জন্যই পৃথিবীতে এসেছে।”
“ওরে বাবা ,শুভ তুমি এতো কথা কবে থেকে বলতে শিখলে?”- মিথিলা আপু হেসে কথাটা বলতেই শুভ বলল-
“একটা বিয়ে করেই অনেক কিছু শিখতে হচ্ছে মিথিলা।”
শুভর মুখে কথাগুলো শুনে এতো বিরক্ত লাগলো রাগ চোখে শুভর দিকে তাকাতেই আবার আমাকে শুনিয়ে বলল – “দেখছো না এমনই বিয়ে করলাম যে বৌ আমাকে দুই চোক্ষে সহ্য করতে পারে না?”
এবার আর সহ্য হলো না রাগে রাগে বলে ফেললাম- “গাড়ি চালানোর সময় এতো কথা বলেন কেনো?”
“আমি কোথায় কথা বললাম?”- ঢং করে আমাকে কথাটা বলেই আবার শোয়েব ভাইয়াকে ডেকে বলল – “দেখেছেন ভাই আপনার শালিকা আমার বাক স্বাধীনতাটাও হরণ করতে চাইছে।”
“তাই তো দেখছি ভাইরা,তোমার কথা ভেবে খুব মায়া হচ্ছে।আহা বেচারা।”- কথাগুলো বলতে গিয়ে শেয়েব ভাইয়া হেসে উঠলে।
আমি বিরক্ত হয়ে শুভকে বলে উঠলাম- “আপনি খুব বেশি কথা বলেন।”
মিথিলা আপু আমার কথা বলার ধরণ দেখে হেসে বলল- “শুভ সত্যি তোমার খবর আছে”
মিথিলা আপুর কথা শুনে শুভ হেসে বলল- “কি আর করবে মিথিলা সবই আমার কপাল।”
“হুম তাইতো দেখছি।তবে নিধি তুই এতো কাঠখোট্টা আগে তো জানতাম না।”
“আমি যেমন ছিলাম তেমনই আছি আপু, শুধু আশে পাশের মানুষগুলো অযথা আমার জীবনে ইন্টারফেয়ার করতে আসে”
কিছুটা রাগে রাগে কথাগুলো বলতেই শুভ একদম চুপ হয়ে গেলো।
ব্যপারটা খেয়াল করে মিথিলা আপু ধমকের মত করে বলে উঠলো- “এই নিধি কি বলছিস এসব?”
“ঠিকই বলছি আপু। আমাকে নিয়ে কিছু বলার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।আর কেউ যেনো অধিকার ফলানোর চেষ্টাও না করে”
চলবে———-