রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ১৩

0
467

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ১৩
___________________________

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]

সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রাঙ্গণে পিঠা উৎসব হলো এ বছর। সাধারণ এই ছোট্টে শহরে এত দারুণ একটা আনন্দ মেলা উপভোগ না করে যেতে মন চাইল না আশফিকের। গতকাল রাতে মাহির সাথে শেষবার কথা বলে খুব ভোরেই চলে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু প্রভাতে ঘুম ভাঙতে বড্ড দেরি হয়ে গেল। তবুও চলে যাবার পরিকল্পনা বাতিল করেনি। বাবা-মা আর বন্ধুদের সঙ্গে করে শিকদার বাড়ির কাউকে বিদায় না জানিয়েই চলে আসে সে নিজের দাদাবাড়িতে। জাওয়াদ সাহেব ছেলের জোড়াজুড়িতে তখন কিছু বলতে না পারলেও বাড়িতে এসেই খুব বকাবকি করেন ছেলেকে, জানতে চান এমন অশোভন আচরণের মানে কী? এতদিন শিকদার বাড়িতে থাকতে পারল, আর একটা দিন থাকলে কী এমন অসুবিধা হতো তার?

ছেলের দীপ্ত চেহারাটায় মলিনতা বুঝতে পেরেই জাওয়াদ আরও বেশি উদ্বেগ দেখাচ্ছিলেন এমনভাবে চলে আসার কারণ জানতে। আশফিকের নির্দিষ্ট গণ্ডীর দুনিয়াটা তখন নিঝুম, হৃষ্টচিত্তে মেঘনাদের তৎপরতা তা ওর পাণ্ডুবর্ণ মুখটাই বলে দিচ্ছে। জোর দিয়ে কিছু জানতেও পারলেন না জাওয়াদ। দিলিশা ঝিনাইদহ থেকে চলে এসেছে। তাকে আর বন্ধুদের নিয়েই আবার বেরিয়ে পড়ে আশফিক মাগুরা শহরের উদ্দেশ্যে। সবাই মিলে এক সঙ্গে সারাটা দিন, রাতের অর্ধ ক্ষণ ঘুরে বেড়িয়ে কাটায়। কলেজ প্রাঙ্গণে ঢুকে হৃদয়গ্রাহী কতক ছবিও তোলে আশফিক আর দিলিশা। তার পরের দিন খুব সকালে সবাই বেরিয়ে পড়ে ঢাকার পথে।

ঢাকা ফিরে আসার পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে সকলে নিজ নিজ কর্ম জগতে ব্যস্তও হয়ে যায়। দিলিশা লন্ডন ফিরে যাবার ব্যবস্থা নেবে খু্ব জলদিই। এই এক সপ্তাহ সে আশফিকের সঙ্গ মোটেও ছাড়েনি।

গুলশানে জারিফ আর জাওয়াদের মিলিত কোম্পানির আরেকটি শাখার উদ্বোধন হলো গত দু’মাস আগেই। নতুন কিছু ইউনিক ডিজাইনের গহনার কালেকশনগুলো আজ মার্কেটে লঞ্চ করতে চলেছে ওরা। চার বছর আগে আশফিককে ব্যবসায় জড়িত করতে এবং দক্ষ করতে জাওয়াদ একবার তাকে চারজন ক্লায়েন্টকে পরিচালনা করতে পাঠিয়েছিলেন। সেটাই শেষবার ছিল। তবে এবার আশফিক স্বেচ্ছায় প্রবল আগ্রহে গুলশান এলো দিলিশাকে নিয়ে। এবং নতুন গহনার প্রথম ক্রেতাও হলো দিলিশা।

গায়ে গহনা জড়িয়ে, কোমরে বিছা পরে দিলিশা বাঙালি নৃত্যের অসাধারণ এক ভঙ্গি করে দাঁড়াতেই আশফিক অনুমতি পাবার আগেই ওর ছবি তুলে নিলো। হাসিতে মত্ত দিলিশা যখন আশফিককে বলল, ‘আমার বাঙালি বধূ সাজবার খুব শখ, অ্যাশ।’ চারপাশে দাঁড়ানো ক’জন মানুষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ল তখন ওরা৷ ম্যানেজার, অ্যাসিসট্যান্ট, স্টাফ, এতক্ষণে নিজেদের মাঝে দিলিশাকে আশফিকের পাশে দেখে চুপিচুপি গুঞ্জনে ব্যস্ত ছিল। সেই মুহূর্তেই দিলিশার পরিপূর্ণ বাক্যটা জোড়াল করল যেন ওদের সামান্য অনিশ্চিত ধারণাটা।

ভীষণ আগ্রহে আশফিকও বলল, ‘তোমার কথা শুনে আমারও খুব দেখতে ইচ্ছা করছে বাঙালি বউরূপে কেমন লাগবে তোমাকে! সাজতে চাও?’
প্রাণোচ্ছল বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে উঠল যেন দিলিশা, ‘আমি শাড়ি পরেছিলাম যেদিন, সেদিন তুমি চোখ ফেরাতে পারোনি অ্যাশ, মনে আছে? আমি সেদিনের থেকেও সুন্দর করে সাজতে চাই।’

অপ্রস্তুত হলো আশফিক। প্রচণ্ড লজ্জাকর সেই বর্ণিল সন্ধ্যার অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত যতবার মনে পড়ে ওর, ততবার নিজেকে বুভুক্ষু এক নারীভিলাষী পুরুষ মনে হয়৷ যার জন্য ভালোবাসা হয় না তাকে ছোঁয়াও যে মানা৷

বক্র দৃষ্টিতে দিলিশা আশফিকের দীপ্তিহীন মুখটা পরখ করে নিলো। আর কতভাবে নিজের এই প্রেমাতুর চক্ষুভাষা বোঝাবে ওকে?

-‘আজ তাহলে তুমি আমাদের কোম্পানির মডেল বনে যাও, দিলিশা। এবার বিলবোর্ডগুলোতে তুমি আসবে? আইডিয়াটা সুন্দর হবে না?’
শেষ প্রশ্নের উদ্দেশ্য ম্যানেজার ছিল। এ বিষয়ের সিদ্ধান্ত তো নাহিয়ান নেয় সব সময়। সে হেসে বলল, ‘আমার কাছে ইউনিকই লাগবে স্যার। বৃটিশ নারীর গায়ে যখন বাঙালি সাজ, আশা করা যায় সেটা সকলের মনোযোগ কাড়বে। নাহিয়ান স্যার আসলে তার সঙ্গে আলোচনা করা যায়।’

বলতে না বলতেই নাহিয়ান বাবার সঙ্গে এসে দাঁড়াল। সাধারণভাবেই অলঙ্কার গায়ে মোড়ানো দিলিশার দিকে দুজনের নজর গেল। এই মেয়েটিকে দুই বাপ ছেলে ভালোভাবেই চেনে। হঠাৎ করেই জারিফ সাহেবের কোমল মনটা কেমন সন্ধিগ্ধ হলো। এবং সেই সাথে আজ প্রথমবার মনে হলো, যার জন্য আশফিক তার মেয়ের গায়ে হাত তুলেছিল অবধি, যার হাত ধরেই বিনা নোটিশে লন্ডন পাড়ি জমাল, সেই আশফিককে দ্বিতীয়বার তিনি জামাই করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করছেন না তো? তার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ের বাবা হলে কী সিদ্ধান্ত নিতো? আশফিককে নিশ্চয়ই মেয়ের আশেপাশেও ভিড়তে দিতো না! কী করা উচিত এখন তার? আশফিকের স্নেহময় মুখটা দেখলে মনটা আপনা আপনিই গলে যায় যে।

-‘কী নিয়ে আলোচনা করবেন আমার সঙ্গে?’ নাহিয়ান জানতে চাইল।
ম্যানেজার এগিয়ে এসে শুভ সকাল জানিয়েই আশফিকের তরফ থেকে আসা প্রস্তাবটা উত্থাপন করলেন ওর কাছে। দিলিশাকে নিয়ে এগিয়ে এলো তখন আশফিকও।
-‘নাহিয়ান ভাই, কেমন আছ? বিয়েতে তোমার সঙ্গে দেখা হলো না যে? আঙ্কেল, আপনি কেমন আছেন?’
জারিফ সাহেব দিলিশার থেকে নজর ফিরিয়ে আশফিককে বললেন, ‘ভালো আছি। তোমার কী খবর বলো? আছ তো না কি দেশে? লন্ডন ব্যাক করবার চিন্তাভাবনা কবে আবার?’
ঠোঁট ছড়িয়ে হাসল আশফিক, নাহিয়ান এখন অবধি কোনো জবাব দেয়নি ওর কথার। দুই বাপ ছেলের মনোভাব বেশ ভালোই বুঝতে পারছে সে। আপাতত প্রসঙ্গ কিয়ৎ পলের জন্য এড়িয়ে আগে দিলিশাকে পরিচয় করিয়ে দিলো, ‘দিলিশা, গতবার এসে তো আঙ্কেল আর ভাইয়ার সঙ্গে আলাপ করতে পারোনি। মাহিয়ানের বাবা আর ভাই ওনারা।’

হাই হ্যালো অবধিই কথা হলো দিলিশার সঙ্গে ওদের। আশফিকও বেশি কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তখনকার প্রশ্নের জবাব দিলো, ‘আব্বুর ব্যবসাটার হাল ধরব আপাতত কিছুদিন। নিজের ড্রিম প্রজেক্ট তো মাঝ পথেই ফেলে এলাম৷ আর এলামই যখন ফিরে যাবার ব্যস্ততা নেই আঙ্কেল। আপনাদের সঙ্গে, আপনাদের মাঝেই থাকছি। তাছাড়া আম্মুও এবার বিয়ে না করিয়ে খুব সহজে ছাড়ছে না।’
জারিফ সাহেব বোধ হয় খুশি হলেন, ‘খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছ। এবার নিশ্চয়ই আমরা তোমার ওপর সন্তুষ্ট হবো?’

আশফিকের হাসিমুখর চেহারাটা পড়ার চেষ্টা করছে নাহিয়ান। বিয়ে প্রসঙ্গটা বলার কারণ সে যে মাহিকে ইঙ্গিত করেছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি৷ কিন্তু ওদিকে দিলিশার মুখটায় যে অমাবস্যা নেমে এলো, তবে সেটা কেন হলো? নাহিয়ান জিজ্ঞেস করল ওকে, ‘আমাদের নতুন কালেকশনের প্রথম ক্রেতা মনে হচ্ছে দিলিশাকে। তো অর্নামেন্টগুলো কেমন লাগছে তোমার?’
-‘আমি খুব ছোটোবেলা থেকেই এ দেশের ঐতিহ্যকে ভালোবাসি৷ মমকে যখন এখানে এসে শাড়ি, গহনা পরতে দেখতাম তখন থেকেই এগুলো খুব পছন্দের আমার। ড্যাড খুব প্রশংসা করত মমকে। তাই আমারও শাড়ি, গহনা পরার খুব ইচ্ছা। আজ বোধ হয় পূরণ হবে তা। অ্যাশ বলেছে।’
এ ব্যাপারে আশফিক তখনের মতামতটা জানাল ওদের, ‘আজ সন্ধ্যায় এই কালেকশনগুলো মার্কেটে তোলার সাথে সাথে ভাবছি বিজ্ঞাপন আর বিলবোর্ডে এবার নতুন মুখ আনি আমাদের স্বর্ণসুখ জুয়েলার্সের জন্য।’
বিদ্রুপত্মাক হাসিতে নাহিয়ান স্বপক্ষে যুক্তি দিলো তখন, ‘বাঙালিরা আজও যেখানে ইংরেজদের উঠতে বসতে গালাগাল করে, সেখানে দিলিশাকে আমাদের বিখ্যাত স্বর্ণসুখ জুয়েলার্স কোম্পানির ইনটেরিওর রিপ্রেজেন্টিভ হিসেবে মেনে নেবে? ওরা খেপবে না? বলবে না যে এ দেশে বাঙালি সুন্দরী মডেলের অভাব পড়েছিল না কি? মনে কষ্টে নিয়ো না দিলিশা, আমি তোমাকে মোটেও ছোটো করছি না। শুধু আশফিককে আগাম পরিস্থিতির হিন্টস দিলাম।’

দারুণভাবে অপমানবোধ করছে দিলিশা। নাহিয়ানের কথাগুলো ব্যবসায়িক স্বার্থে বলা থাকলেও ওর পূর্ণ ইঙ্গিত ছিল যে অতীতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে, তা উপস্থিত তিনজনই বুঝতে পারল।

মাহিকে পাওয়া প্রতিনিয়ত জটিল হয়ে পড়ছে আশফিকের জন্য৷ নাহিয়ানও যে মাহিয়ানেরই যোগ্য ভাই তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই৷ বোনের জিদ আর ভাইয়ের জিদ একদম একরকম৷ তার প্রতি একা জারিফ ইসলামের ইতিবাচক মনোভাব কি মাহিকে পেতে দেবে? ক্ষণে ক্ষণে আত্মবিশ্বাসের ভিতটা দুর্বল হয়ে পড়ছে ওর। নত মস্তকে ভাবনাগ্রস্ত মুখটাই গাল ফুলিয়ে হতাশার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আশফিকের৷ দিলিশার মান অপমানের দিকে একেবারেই ও উদাসীন বলে দিলিশা আজ তীব্র মাত্রায় মনোক্ষুণ্ণ হলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্যথা নেবার থেকে চলে যাওয়াই শ্রেয় হবে বরং৷

ঐশী আর মাহি ওদের কথাবার্তার মাঝেই এসে পৌঁছেছিল। আশফিককে হঠাৎ বাবার সঙ্গে উৎফুল্লতা নিয়ে কথা বলতে দেখেই মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায় মাহির, ফিরে যাবার জন্য মন স্থিরও করে ফেলে। ঠিক তখন কানে আসে ওদের মূল আলোচ্য বিষয়। আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ওরা, তবে এগিয়ে যায় না। যুক্তিবাদী ভাইয়ের চমৎকার জবাবে দিলিশা আর আশফিকের ম্লান মুখ দেখে আনন্দ হলেও আশফিকের প্রস্তাবটা ভেবে দেখার মতো মনে হয় মাহির। তবে নাহিয়ানের কথার জবাবে আশফিক কী বলে তা শোনার অপেক্ষায় ও।

ক্যামেরাটা গলা থেকে নামিয়ে কিছু মুহূর্ত আগে তোলা দিলিশার ছবিগুলো নাহিয়ানের সামনে তুলে ধরে আশফিক, ‘এই ছবিগুলো একবার দেখো তো ভাইয়া৷ আমাদের বাঙালি নারীদের চেহারায় যে লাজুকতা দেখা যায় দিলিশার মুখে তার খোঁজ পাও কি না?’

নাহিয়ান ছবিগুলো দেখার মাঝেই মাহি এগিয়ে আসলো, সবাইকে চমকে দিয়ে বলল, ‘বৃটিশ নারীকে আমাদের স্বর্ণসুখ জুয়েলার্সের নতুন মডেল হিসাবে দেখলে বাংলাদেশের মানুষ খেপে যেতেই পারে। কিন্তু তার পাশে বাঙালি পুরুষকে বর হিসাবে দেখলে তা হবে না, গ্যারান্টি দিতে পারি।’

জাওয়াদ এখনো এসে পৌঁছল না দেখে জারিফ তাকে কল করতে করতে সবাইকে অফিস রুমে এসে বসতে বলে তিনি ভেতরে চলে গেলেন। ঐশীও নাহিয়ানকে বলল, ‘আমরা বসে কথা বলি, চলো।’

জারিফ সাহেবের রুমে এসে বসল সকলে৷ মাহি না বসে বাবার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে তার পরিকল্পনার বর্ণনা দিতে শুরু করল, ‘একজন বৃটিশ রমণী যখন এক বাঙালি পুরুষের ভালোবাসার টানে সুদূর লন্ডন ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসে তখন দুজন মানুষের প্রেমময় বিয়ের মুহূর্তগুলোই থাকবে আমাদের বিজ্ঞাপনের মূল গল্পটা। এক্ষেত্রে বাঙালিরা রেগে যাবার বদলে আরও বেশি ইন্ট্রেস খুঁজে পাবে। কেমন হয় আইডিয়াটা, ভাইয়া?’
সবার আগে ঐশীই সমর্থন করল, ‘ফ্যান্টাসটিক, খুবই ইউনিক হবে এই ব্যাপারটা। আমার পছন্দ হয়েছে।’
জারিফ সাহেবও ভেবেচিন্তে বললেন, ‘বেশ ভালোই হয়। কিন্তু খুব দেরি হয়ে গেল যে। আমরা অলরেডি কমপ্লিট করে ফেলেছি বিজ্ঞাপনের কাজগুলো।’
নাহিয়ান বোনের আগ্রহ ভরা চাউনি দেখে না বলতে পারছে না। এদিকে নতুন করে বিজ্ঞাপনের কাজ করাও সম্ভব না। কী করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না সে। সেই মুহূর্তেই আশফিক সমাধান দিলো, ‘এবারে না হয় আমরা বিজ্ঞাপনের পিছে আরেকটু বেশি ইনভেস্ট করলাম। দুটোই রিলিজ করব। আমার মনে হয় তাতেই বেশি লাভজনক হবে।’
-‘বাবা, আমারও তাই মনে হচ্ছে। এই প্রথম আমার ডিজাইন করা গহনাগুলো নিয়ে এক্সপেকটেশন অনেক বেশি আমার। তাই প্রচারের ব্যাপারে একটু না হয় বাড়াবাড়ি হলোই এবার। আর এই বিজ্ঞাপনটা হবে চমক।’ ঐশী বলল।
-‘মিটিং ডাকতে হবে তাহলে। জাওয়াদ তো কল রিসিভ করল না। আজকে রাতেই না হয় মিটিংটা ডাকা যাক।’

ম্যানেজার আর অ্যাসিসট্যান্টকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হলো ওই মুহূর্তেই। দিলিশা তখন জিজ্ঞেস করল সবাইকে, ‘বাঙালি বর তাহলে খুঁজবে না তোমরা?’
মাহি হাসল, ‘তুমি খুব এক্সাইটেড, দিলিশা?’

প্রথম কথা বলল মাহিই। দিলিশার ধারণা ছিল মাহি তাকে কখনোই সহজভাবে গ্রহণ করবে না আর। কিন্তু সে ভীষণরকম অবাক হলো দেখে যে, মাহির হাসিতে কোনো মেকিভাব নেই। তাই হাসল সেও, বলল, ‘আমি সত্যিই এক্সাইটেড মাহি। আর তোমাকে খুব খুব ধন্যবাদ।’

দিলিশার টোল পড়া নির্মল, চমৎকার হাসিমুখর মুখটাই চেয়ে রইল মাহি। মেয়েটার প্রতি তার অকারণ রাগ ছিল না? নিজের মানুষটাই যদি বেঠিক হয় তবে অন্যকে দোষ দিয়ে লাভ কী? তবে দিলিশা একেবারেও নির্দোষ ছিল না হয়তো। আশফিককে দূরে নিয়ে যাবার পিছে তার প্ররোচোনা তো কম ছিল না।

-‘মোস্ট ওয়েলকাম। আমি সত্যিই চাই এবার স্বর্ণসুখ জুয়েলার্সের প্রতিনিধিত্ব নতুন কেউ করুক। আর সেটা তুমি হলে সব থেকে বেশি সুন্দর হবে৷ আর তোমার বাঙালি বরকে খুঁজতে হবে কেন? ইতোমধ্যে সে আমাদের মধ্যেই উপস্থিত।’
বলেই আশফিকের দিকে দৃষ্টি ছুঁড়ল, ঠোঁট চেপে হাসলও। কারণ, প্রস্তাবটা শুনে মুহূর্তেই আশফিকের চোখচোড়া জ্বলে উঠেছে। কিন্তু তাও কথা বলল না আশফিক ওর সঙ্গে।

মাহি ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে সরাসরি ওকেই বলল, ‘একজন সুন্দর পুরুষকেও প্রয়োজন। দিলিশার পাশে এই মুহূর্তে তোমার থেকে আর কেউ বেটার হতেই পারে না, আশফি।’
-‘মন্দ হয় না। বরং খুব বেশি ভালো হবে। অন্য কোনো মডেল থেকে আশফিকের আউটলুক নজরকাড়া।’ নাহিয়ানের থেকে এবার জবাব পেলো সবাই।
স্বামীর সমর্থন পেয়ে ঐশী বলল, ‘তাহলে তো সব কিছু রেডিই। শুধু মিটিংটা বাকি। তারপর কাল থেকেই আমরা কাজ শুরু করে দেবো। কী বলো আশফিক? তুমি রাজি তো?’

মাহি ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে দিলিশার ছবিগুলোই দেখছিল। এই সামান্য দৃশ্যটাই সবার চোখে অসামান্য লাগছে। এমনকি দিলিশারও। আশফিক শীতল চাউনিতে মাহিকে দেখতে দেখতে ভারী কণ্ঠে জবাব দিলো, ‘রাজি না হবার কী আছে, ভাবি? মাহির কথা আমি বিশ্বাস করি। নিশ্চয়ই এ মুহূর্তে দিলিশার কাপল হিসাবে আমি বেস্ট।’
মুখ তুলে চাইল মাহি, সঙ্গে প্রাণখোলা হাসিও দিলো, ‘আমি তোমার বিশ্বাসের মান রাখব। তোমাদের দুজনের নিখুঁত শুটগুলোও আমি করব।’
অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঘাড় বাঁকিয়ে, ঠোঁট উলটে আশফিক কৃত্রিম বিস্ময় প্রকাশ করল, ‘ফটোগ্রাফি করতে চাও? আমি ঠিক শুনছি, তাই না?’
-‘তুমি একদম ঠিক শুনছ।’
সবার মুখের দিকে একবার নজর ঘুরিয়ে নিলো আশফিক। ওদের দু’জনের সাধারণ কথাবার্তা আর এত কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা সবাইকে যেন বিব্রত করছে। তবু সেদিকে তোয়াক্কা করল না ও, জিজ্ঞেস করল, ‘যাকে ঘৃণা করা যায় তাকে কি আগলেও নেওয়া যায়?’
-‘তা নির্ভর করে কার্যক্রমের ওপর। আর ফটোগ্রাফিকে তো কখনো ঘৃণাই করিনি আমি। তবে তুমুল কৌতূহল ছিল। যার জন্য আমার সম্মান গেল, প্রেম বিসর্জন হলো, তাতে কী মহিমা আছে জানতে ইচ্ছা হয়।’
-‘জানলে?
-‘জানলাম তো।’
-‘কী মহিমা পেলে?’
-‘আমার কি মহিমা পাবার কথা?’
-‘এক্সাক্টলি৷ ভালোবাসা প্রয়োজন এখানে। আমার স্বপ্নতে ভালোবাসা ছিল৷ আর তোমার ছিল কৌতূহল।’
-‘যাকগে, ওদিকে বরং না যাই। আমি কিন্তু সত্যিই ফটোগ্রাফি আয়ত্ত করেছি। ভাবিকে কিংবা বাবাকে না হয় জিজ্ঞেস করো।’
-‘সে তুমি আয়ত্ত করো বা না করো, আমাদের শুট তুমিই করছ। কনফার্ম।’
বলেই দিলিশার কাছে আসলো, সুন্দর হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি খুশি তো দিলিশা? মাহিকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলবে না কিন্তু।’
-‘কখনোই না।’ মুচকি হাসল দিলিশাও৷

আরও বড়ো করে লিখতে চেয়েছিলাম। সময়ের খুব অভাব৷ তবে শুক্রবার অবধি রেগুলার দেবার চেষ্টা করব।

ইসরাত জাহান দ্যুতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here