রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ২১

0
462

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ২১
____________________________
[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]

গতকালকের জন্য অপ্রকাশিত রাগটা এখন তরতর করে পেট থেকে গলা অবধি এসে আটকে আছে যেন মাহির। শুধু মুখটা খুললেই আশফিককে আজ বাংলাদেশ বিখ্যাত কু’ৎ’সি’ত গালিগুলোর শিকার হতে হতো। কিন্তু গা’লা’গা’ল করে শুধু শুধু নিজের প্রশংসনীয় ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে দেবে না সে। হাতে কলমে শিক্ষা দেবে একদম।

আশফিকের বড়ো ভাগ্যের ব্যাপার এই যে, প্রথম আলাপের শুরু থেকেই মাহির মনের অন্তঃপুর দখল করে নিয়েছে ও। যার জন্য ওর এখনকার অপছন্দনীয় কাজগুলোকেও মুখ বুঁজে সহ্য করতে হচ্ছে মাহির।

আরও বেশি গম্ভীরতায় সমাচ্ছন্ন হয়ে গেছে মাহির মুখখানি। তা দেখে আশফিক মুখের হাসি হাসি ভাবখানাও দ্রুত বদলাল। জিজ্ঞেস করল খুবই জরুরি একটি কথা, ‘মাহি? আমি কি তোমার পছন্দ হয়েছি?’
প্রশ্নটায় মাহির মুখভঙ্গি পরিবর্তন হলো। আকস্মিক এই প্রশ্নের মুখে পড়বে এমন আগাম চিন্তা ওর ছিল না।

আশফিক প্রগাঢ় চাউনিতে পড়তে চাইল মাহির চোখের ভাষা৷ যখন বুঝতে পারল ওকে অপ্রতিভ লাগছে তখন সরলভাবে বলল ও, ‘তুমি ফ্র্যাঙ্কলি বলতে পারো। আমি তোমার স্ট্রেইট কথা শুনতেই বেশি পছন্দ করি।’

স্ট্রটা মুখ থেকে বের করে মাহি পূর্ণ নজরে তাকাল আশফিকের চোখে। সেই শুরুর দিন থেকেই ফোনের মাঝে আশফিকের মার্জিত আচরণে ও আকৃষ্ট হয়েছিল। আর গতকাল থেকে তো সাধারণ এই কালো মনির চোখদু’টোই কী যে ভালো লেগে গেছে ওর! ঢেউ খেলানো চুলগুলো দেখলেই চুলের ফাঁকে ফাঁকে আঙুলে বিলি কেটে দিতে মন চায় শুধু। নিজেকে সুদর্শন প্রমাণের কোনো আড়ম্বর নেই এই ছেলের। হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে এসেছে। অথচ আকাশ নীল রঙা একটা সাদামাটা শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পরনে শুধু। আজকে তো হাতে গতকালকের মতো দামী ঘড়িটাও নেই৷ খুব তাড়া নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল নিশ্চয়ই। এসবের দিকে কোনো হুঁশও নেই এখন। তবে সুযোগ পেলে চুল থেকে পা অবধি ব্রান্ডের কমতি রাখে না তারই মতোই।

-‘আমাদের বিয়ে নিয়ে ফাইনাল ডিসিশন নেওয়া প্রায় হয়েই গেছে।’
-‘তাতে কী হয়েছে? আমাদের ডিসিশন সব থেকে বেশি জরুরি এখানে।’
-‘হুঁ, আমার ডিসিশন আব্বুকে আমি আরও এক সপ্তাহ আগেই জানিয়ে দিয়েছি।’
-‘মানে আমার ফটো দেখেই?’
-‘নাহ, প্রথমদিন যে পঁচিশ মিনিট কথা হলো সেদিনই।’

এই সামান্য একটা কথাতেই যে গোপনে ভালোবাসা হয়ে যাবার আরও না বলা কথা আছে তা আশফিক বুঝে যায়। ওষ্ঠ কোণে মুচকি হাসি খেলে যায় ওর। এত বড়ো একটা সিদ্ধান্ত মাত্র পঁচিশ মিনিট কথা বলে কি নেওয়া সম্ভব যদি ভালো লাগা থেকেও বেশি কিছু না থাকে? তাই উচ্ছ্বাস গলায় ও নিজের স্বীকারোক্তিও দিয়ে দিলো, ‘আমি অবশ্য কথা বলে এমন বিশাল সিদ্ধান্তটা নিতে পারিনি৷ তবে আমি বলতে পারি প্রথম দেখার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে আমি ভেবে নিয়েছিলাম বিয়েটা তোমাকেই করব।’

দু’জনের মধ্যে কপটতা, মিথ্যা আড়ম্বর আর নিজেদের দাম্ভিকতার আর কোনো জায়গাই ছিল না। আশফিকের প্রতি মাহির ভালো লাগা থেকেও বেশি কিছু অনুভূতি আরও বেড়ে গিয়ে পুরোপুরি প্রণয় অনুভূতিতে পরিণত হয়। বিশ্বাস জন্মায়, ভরসা পাবার একটা হাত মিলে যায় মাহির।

কিন্তু আশফিকের মনটাই শুধু অতি বাস্তব সচেতন হতে গিয়েও হয় না। জটিল মনটা অন্যের ভালো লাগা, ভালোবাসার নির্ভুল অঙ্কটা মিলিয়ে দিতে পারলেও নিজের বেলায় হিসাবটা ভুল থেকে যায় ওর। তাই মাহির প্রতি মুগ্ধতাকে স্রেফ ভালো লাগা অবধিই বিশ্বাস করে। ভালোবাসাও সেখানে যে খুব সাবধানে লুকিয়ে আছে তা সে খুঁজে পায়নি।

_____________________ _____________________

-‘ভেবেছিলাম এবার কোনো বিশেষ স্মৃতি নিয়ে ফেরা হবে না। কিন্তু রিড, তোমার জন্য আমার সেই আফসোসটুকু ঘুচবে। শ্যুটের বাইরে তোমার সঙ্গে পুরো ল্যান্ডলর্ড’স হাউজটা খুব ইনজয় করেছি। কীভাবে থ্যাঙ্কস প্রকাশ করব বলো?’

সেলোয়ার-কামিজের সঙ্গে সামান্য সাজসজ্জায় দিলিশাকে সত্যিই অনন্য সুন্দরী লাগছে। হৃদয় সচারাচর কোনো সুন্দরী নারীতেই মুগ্ধ হতে পারে না। মনটাই চায় না তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখতে। আজ সেসব নিয়ম নীতি ভেঙেচুরে দিলিশাতে নজর দিলো। সেটা আশফিকের কথাতে হলেও তবে মুগ্ধতা নিজ থেকেই এলো ওর। ঈষৎ হাসল, ‘তাহলে আর ক’টা দিন দেশে থেকে যাও। এবার গেলে তো আর আসবে না বোধ হয়।’

আহ্হা! কী বলতে গিয়ে কী বলে ফেলল! রাখঢাক করে কথা বলা হৃদয়ের মতো চাঁচাছোলা ভাষার লোকের দ্বারা হয়তো সম্ভবই না৷ এই যে কথাটা শোনা মাত্রই দিলিশার হাসিটা উবে গেল, মুখটাও ম্লান হয়ে পড়ল। এই ক্ষতিটার পূরণ করবে এখন কী দিয়ে সে? আমতাআমতা করে জলদি বলে উঠল, ‘আ… তুমি… আসলে… মানে ওই যে গেলে সেবার আর এলে চার বছর পর। এবার গেলে কতদিন পর আসবে তার কি ঠিক আছে? তাই যে’কটা দিন সম্ভব ভালো ভালো মুহূর্তগুলো তৈরি করবে আমাদের সাথে। ক্যামেরাবন্দি করে সেই মুহূর্তগুলোকে সুন্দর স্মৃতি বানিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে তারপর ফিরে যাবে।’

ম্লান হাসিতেই জবাব দিলো দিলিশা, ‘কথাগুলো একদিক থেকে ভালোই বলেছ৷ এবার গেলে আমার আর আসাই হবে না। ড্যাড বিয়ে করে নেবার তাড়া দিচ্ছে আর মম তার বিজনেসে ইনভলবড্ হতে বলছে। যে কোনো একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো নেবই। তাই সত্যিই আর আসার সুযোগটাও হবে না। কিন্তু একটু বোকামি করে ফেলেছি। টিকেট বুকিং দেওয়া হয়ে গেছে।’

শেষের কথা শুনে হৃদয় অবহেলার ঢঙে বলল, ‘তুমি আর আশফিক টাকার চিন্তা করো না কি? বিশ্বাস করব না বললেও। তাছাড়া টিকেট ক্যান্সেল করে দিলেই তো হয়।’
-‘দেখি কী করা যায়!’
-‘আমি সত্যিই মন থেকেই চাইব তুমি যে ছুটিগুলো বরাদ্দ করেছিলে দেশে ঘুরবার জন্য তা শেষ করে তবেই ফিরে যেয়ো।’
খাঁজ পড়া গালে দিলিশা ঠোঁট মেলে হাসল, ‘আচ্ছা, বলছ যখন আজকের রাতটা ভেবে দেখব।’

কথা বলতে বলতে ওরা গাড়ি থেকে নেমে রিসোর্টে প্রবেশ করল৷ নাহিয়ান আর ঐশী আগেই ঢুকে পড়েছে। কটেজের কাছাকাছি ওরা এসে দাঁড়ালেই আশফিক আর মাহিকে এক সঙ্গে পেলো বারান্দাতে। আশফিকের মুখটা কেমন ভার যেন আর মাহিকে খুব নিষ্প্রভ লাগছে। প্রত্যেকেই আন্দাজ করে নিলো ওদের দু’জনের মাঝে কিছু একটা হয়েছে।

বোনের কাছে এগিয়ে নাহিয়ান জিজ্ঞেস করতে যাবে কিছু হয়েছে কিনা, তখনই আশফিক জিজ্ঞেস করল হৃদয়কে, ‘কাজটা কেমন ইনজয় করলি? ঠিকঠাক শ্যুটগুলো করতে পেরেছিস তো?’
দিলিশার দিকে তাকিয়ে বলল হৃদয়, ‘তোর বান্ধবীকে জিজ্ঞেস কর। তার সহকর্মী কেমন কাজ করেছে সে-ই বলুক। আমার ঢোল তো আমি পেটাবই।’
হেসে দিলো দিলিশা আর ঐশী। জবাব দিলো দিলিশা, ‘হৃদয়ের এক্সপ্রেশন খুব একটা ভালোও হয়নি। ও আমাকে ধরতেই আনইজি ফিল করছিল বোধ হয়। শেষে সবার সাহায্যে করেছে ভালোই। ভিডিয়ো ক্লিপ আর ছবিগুলো দেখলাম। দারুণ লাগছিল আমার নিজের কাছেই।’
আশফিকও কিছুটা হেসে বলল, ‘তোমাদের দুজনের কাপলটা মানাবে বেশ। দেখো অনেক সাড়া পাবে এই বিজ্ঞাপনটা।’
-‘আচ্ছা, এখন আর কথা না বাড়াই। আমরা ফ্রেশ হয়ে আজ আড্ডা দেবো খুব।’ বলল ঐশী।

সবাই সম্মতি জানিয়ে যে যার ঘরের দিকে চলল।
.
.
.
আড্ডাতে বসতে চাইলেও দিলিশা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে যাবার কারণে রাতের খাবারটা খেয়ে নিয়ে বিছানাতে গড়িয়ে পড়ে। নাহিয়ানের কাছেও অফিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ কল আসে। যার জন্য তাকে আজ রাতের মধ্যেই ঢাকা গিয়ে পৌঁছতে হবে। মাহিও খুব একটা গরজ করল না আড্ডাতে বসার৷ সব মিলিয়ে যে যার ঘরে রইল৷ তবে নাহিয়ান যাবার আগে ঐশীকে বলে গেল, সে যেন মাহির সঙ্গে গিয়ে থাকে। আর আশফিক তাদের ঘরটাতে গিয়ে থাকে। শুধু শুধু অতিরিক্ত আরেকটা রুম বুকিং করা অর্থ বাড়তি খরচা।
ঐশী তখনই সব কিছু গোছগাছ করে চলে আসে মাহির কাছে। আশফিক ছিল হৃদয়ের সঙ্গে। তাই ঘরের চাবিটা ঐশীর নিজের কাছেই রাখতে হয়৷

নৈশভোজ সাড়তে সাড়তেই রাত বেজে যায় প্রায় ন’টা। শীতের রাত বলে খুব একটা বাইরে ঘুরাঘুরি করল না মাহি। সে ঘরে বসে ল্যাপটপে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মাঝেমাঝেই দরকারি কল আসছে তার৷ তাই ঘনঘন বাইরে গিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। ঐশীও ল্যাপটপেই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু কাজে মনোনিবেশ হচ্ছিল না তার। মাহিকে বলল, ‘তুমি আর এই শীতে বাইরে গিয়ে কথা বোলো না তো। আমার ঘুমও আসছে না, কাজেও মন বসছে না। বাইরে থেকে হাঁটাহাঁটি করে আসি। ঘরে বসেই কথা বলো।’

ভীষণরকম চাপে আছে মাহি। তার মতো প্রায় সব দায়িত্ববান এজেন্টদের ওপরই চাপটা এসেছে উপরমহল থেকে। আপাতত পারিবারিক ঝামেলা, আবেগ, অনুভূতি ভুলে গিয়ে তার পূর্ণ মনোযোগ ল্যাপটপে সমস্ত জরুরি কাজগপত্রের কপিতে। তাই ঐশীর কথার কোনো দ্বিরুক্তিও করল না।

হৃদয় সিগারেটে টান দিতে দিতে আশফিককে লক্ষ করছে। নিবিড় মনোযোগে সে কিছু ছবির পোট্রেট তৈরি করছে বসে। কিন্তু কপালে তার সুক্ষ্ম ভাঁজ খেয়াল করা যায়। আপাত দৃষ্টিতে লাগছে আশফিক কাজে ব্যস্ত। কিন্তু মূলত সে কোনো কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত। তা ভুলতেই কাজে মন ডোবাতে চাইছে৷ শেষ টান দিয়ে সিগারেটটা নিচে ছুঁড়ল হৃদয়।
-‘কী হয়েছে তোদের?’
আশফিক দৃষ্টি হটাল না ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে, জবাবও দিলো না। পুকুর পাড়ের ঠান্ডা বাতাসে হৃদয়ের কাঁপা-কাঁপি অবস্থা৷ আশফিকের জন্য উঠে পড়তেও পারছে না। মহা বিরক্ত নিয়ে বলল সে, ‘ঘরে চল তো। ঘরে গিয়ে বসি।’
-‘তুই গিয়ে শুয়ে পড়।’
-‘কোন ঘরটাতে যাব সেটা তো বল।’
খেয়াল হলো এবার আশফিকের, নাহিয়ান কল করে জানিয়েছিল তাদের ঘরটা ব্যবহার করতে। ঐশী নাকি মাহির কাছে গিয়ে থাকবে৷ চাবিটা নেওয়া হয়নি। হৃদয়কে বলল, ‘নাহিয়ান ভাইদের ঘরটা। কিন্তু চাবি ঐশী ভাবির কাছে। তার থেকে গিয়ে নিতে পারবি না?’
চকিতে নাকচ করে দিলো হৃদয়, ‘না পারব না। তার সাথে আমি কখনো কথা বলিনি৷ এখন তার ঘরের চাবি চাইতে যেতে পারব না। তুই এনে দে গিয়ে।’

ঐশীকে পুরোদস্তুর এড়াতেই আশফিক হৃদয়কে যেতে বলছিল। মাহির ঘরে যাবে এখন ঐশীর কাছে চাবি চাইতে৷ না জানে এই সামান্য ব্যাপারেই মাহির চোখ রাঙানি খেতে হয়! তার থেকে বরং মাহিকেই বলবে কল করে চাবিটা দিয়ে যেতে।
-‘আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি দাঁড়া।’

কল করল মাহিকে। কিন্তু ফোনটা ব্যস্ত বলছে। কারও সাথে কথা হচ্ছে হয়তো। একটু থেমে থেমে তিনবার কল করল আশফিক৷ কিন্তু ব্যস্তই পেলো বারবার। হৃদয় শীতের কাপড় ছাড়া বোকার মতো এসে বসে পড়েছিল ওর পাশে। শীতে প্রায় জুবুথুবু অবস্থা ওর। আশফিকের মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত ওকেই যেতে হবে।

ওর ঢিলামি দেখে হৃদয় ক্যাটক্যাটে গলায় বলে উঠল, ‘চাবিটা গিয়ে তুই নিয়ে আসলেই তো পারিস, আজব!’
-‘আজবই, বোঝাতে তো আর পারছি না। আপাতত মাহমুদের ঘরে যা। ওই যে নাহিয়ান ভাইয়ের অ্যাসিসট্যান্ট। ব্যাগপ্যাক তো ওর ঘরেই রাখা। সব কিছু নিয়ে আয়৷ আমি চাবি আনছি।’
হৃদয় উঠে পড়ল, ‘আন গিয়ে। আমার দরকার নেই তোর কাছে গিয়ে ঘুমানোর। ওর সাথেই ঘুমাব৷ এখন ব্যাগপ্যাক টেনে আনার কায়দা নেই আমার। তোর লাগেজ এসে নিয়ে যা।’

অলসের ঢেঁকি একটা হৃদয়। মাহমুদের ঘর থেকে তেমন কিছু আনার মতো নেই আশফিকের। ল্যাপটপ, চার্জার, সমস্ত কিছুই কাছে তার৷ হৃদয় চলে গেল। আর ও কটেজে এলো। বারান্দাতে পৌঁছে মাহির দরজাতে গিয়ে কড়া নাড়বার পূর্বেই চোখ পড়ল নাহিয়ানের ঘরের দরজাতে। কোনো তালা নেই৷ এগিয়ে এসে গোল লকটা ঘোরাতেই দরজা খুলে গেল। চাবি আনার বিশাল একটা ঝামেলা ঘাড় থেকে নামল ওর।

ঘরটা তমসাচ্ছন্ন। জানালা দিয়ে বাইরের ল্যাম্প লাইটের মৃদু আলোতে কিছুটা পরিস্কার। সোফাতে হাতের জিনিসগুলো রেখে ও ওয়াশরুমে ছুটল আগে। কিন্তু দরজাটা বন্ধ করে যেতে ভুলে গেল।

চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতে থাকল অনর্গল৷ মাহিকে নিয়ে দুশ্চিন্তাটা ওকে অস্বাভাবিক অশান্তি দিচ্ছে। কোনোরকম পথই পাচ্ছে না সে মাহিকে মানানোর। জোর করেও কিছু সম্ভব নয়। কী করবে ও? যে কোনো একটা পথ খুঁজে পেতে মনেমনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা রাখছে খুব।

পানিতে গায়ের গেঞ্জিটা ভিজে গেল একদম। অতিরিক্ত শীত অনুভব হতেই বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে৷ গা থেকে গেঞ্জিটা খুলে সোফাতে ছুঁড়ে মেরেই প্রচণ্ড মাথা যন্ত্রণা নিয়ে বিছানার এক কোণে উপুর হয়ে শুলো। বদ্ধ চোখে মাহিকে দেখার শেষ মুহূর্তটা ছবি হয়ে ভাসছে। দেখতে পাচ্ছে মাহির ছাই বর্ণের আবেগশূন্য চোখদু’টোও। ওকে বড্ড কাছে পেতে মন চায়, একদম আপন করে। প্রতিদিন এই প্রত্যাশাগুলো বেড়েই চলেছে ওর। মাহিকে বন্ধ চোখের তারায় বন্দি রেখে ঘুমাতে চেষ্টা করল এবার। কিন্তু হঠাৎ খোলা পিঠের মধ্যখানে কোনো এক কোমল হাতের স্পর্শ অনুভূত হলো বোধ হয়। থেমে নেই সেই স্পর্শটুকু। ঝট করে চোখ খুলে বিছানার অন্যপাশটাতে তাকাল ও। অন্ধকার সেদিকটা৷ কিন্তু স্পষ্ট অনুমেয় হয় সেটা এক নারী অবয়বী।

ইসরাত জাহান দ্যুতি
(এডিট ছাড়া লেখা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here