রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ২২

0
361

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ২২
____________________________
[কঠোর প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]

সাম্প্রতিক বিবাহ বিচ্ছেদের গল্পগুলোতে প্রধান যে কারণগুলো উঠে আসে তা হলো চরিত্রের দোষ৷ পরপুরুষ আসক্ত বা পরনারী আসক্তই বিবাহ বিচ্ছেদের সমুদয় কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমনকি সমাজ বিজ্ঞানীরাও প্রথম কারণ হিসেবে তাই মনে করেন।

পাশ্চাত্য দেশগুলোর সংস্কৃতিতে একাধিক যৌ’ন সম্পর্কে লিপ্ত নারী পুরুষেরা আমাদের দেশের আঞ্চিলক ভাষায় এটাকে ভাতমাছ ভাবেন। এই বিষয়টির সঙ্গে কিন্তু বিবাহিত মানুষগুলোর চরিত্রহীনতাকে তুলনা করা যায় না। তাকে অভিহিত করা হয় গর্হিত অন্যায় হিসেবে। নারীদের দৈহিক সৌন্দর্য যদি সর্বনাশের কারণ হয়ে থাকে শ্বাপদ সমতুল্য পুরুষদের কারণে— অনুরূপ সুন্দর দৈহিক কাঠামোর যুবা পুরুষেরাও বিপদের শিকার হয় এক প্রকার বি-কৃত, হী-ন চরিত্রের নারীদের কাছে।

তেরো বছর বয়স থেকে ঐশীর ইউএস জীবনযাপন। নাহিয়ানের সঙ্গে ছ’মাসের সম্পর্কের পর ওরা বিবাহে আবদ্ধ হয়৷ সেক্ষেত্রে দু’জনের ব্যাপারে দুজনের জানাশোনার পরিমাণটা অনেকাংশে কম। ঐশী বাঙালি হলেও তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পশ্চিমাগত সভ্যতা। ওকে এ শিক্ষাদীক্ষাতেই বড়ো করা হয়েছে। ষোলো বছর বয়স থেকে খুব ত্রুটিহীনভাবে নিজের মধ্যে ও দেশের সাধারণ কৃষ্টিগুলো নিজের মধ্যে আয়ত্ত করে নেয়৷ একাধিক প্রেমের সম্পর্ক, তাদের সঙ্গে মেলামেশাতেই ওর দিনের শুরু আর শেষ হতো। বলিষ্ঠ দৈহিক গঠনের সুপুরুষের প্রতি এক প্রকার তীব্র আবেগ আর আকর্ষণ ছিল ওর বরাবরই বেশি৷ নাহিয়ানকে যখন ওকে লালিত করা এক মাত্র ফুপু ছবি দেখিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বলেছিলেন তখন নাকচ করে দিলেও বিনা পরিকল্পনায় একদিন নাহিয়ানকে মুখোমুখি দেখতে পেয়ে ওর পছন্দ হয় নাহিয়ানের সুঠাম সুন্দর শরীরখানা। বৈজ্ঞানিক ভাষাতে এটাও যে এক প্রকার মানসিক ব্যাধি তা সম্পর্কে অবগত হয়েও ঐশী এ থেকে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী হয়নি।

বাংলাদেশ আসবার পর এই চারিত্রিক দোষগুলো অপ্রকাশ্যে থাকলেও আশফিককে নজরে পড়ে যায় ওর মাগুরা থেকে। সেই দিনটাও ছিল নিজেকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার এক ভয়াবহ যুদ্ধ ওর কাছে৷ দুপুরবেলা পুকুরপাড় থেকে জবজবে খোলা দেহে আশফিককে দেখতে পাওয়াই হয় আশফিকের জন্য সর্বনাশ৷ তবু দৃঢ় সংগ্রামে নিজের হীনচেতা মনটাকে বেঁধে রেখেছিল এই জেনে— আজ বাদে কাল ননদের জামাই হবে ছেলেটি।

সেই সংগ্রাম মুক্ত হলো মাহির থেকে আশফিকের প্রত্যাখ্যাত হবার সংবাদ শুনে। দীর্ঘ চার বছর আশফিকও বৃটিশ সভ্যতার অন্তর্গত ছিল। ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ তথাকথিত সম্পর্কে জড়ানোটা নিশ্চয়ই ওর কাছেও তেমন কিছুই নয়! এ বিশ্বাস জন্মানো অবশ্য ঐশীর জন্য ভুল কিছু নয়। এমন একটি সুযোগ পাবার মনোগত আকাঙ্ক্ষা রিসোর্টে আসবার পর থেকেই। ও জানত, নাহিয়ানের মতো ব্যস্ত ছেলে কাজ ফেলে একদিনের বেশি কখনোই ঘুরবার মতো অবকাশ পাবে না। তাই নিজেদের ঘরের চাবিটা কাছে রাখাও এই বাসনা পূরণেরই একটি অংশ ছিল।

ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আশফিককে যখন বাইরে বসে থাকতে দেখতে পায় তখনই নিজের পূর্বের বরাদ্দকৃত ঘরটিতে চলে আসে ও। অপেক্ষা করতে থাকে আশফিকের জন্য। বলতে দ্বিধা হলেও ওর সব থেকে ঘৃ-ণ্যতম পরিকল্পনা হলো, হৃদয় আর আশফিক এক সঙ্গে এলে দুজনের থেকেই সন্তুষ্টির স্বাদ পাওয়া। লাস্যময়ী নারীকে হাত বাড়ালেই ছোঁয়ার সুযোগ পেলে পুরুষের মন আবার সৎ থাকে না কি?

চোখের পলকে আশফিক শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ায়। উদ্ভ্রান্তের মতো ঘরের সুইচবোর্ডটা খুঁজে বিছানার অন্যপাশে বসে থাকা ঐশীকে খোলামেলা রাতের পোশাকে বিজড়িত পরিস্থিতিতে পায় তখন। তীব্র অস্বস্তি নিয়ে ওর থেকে দৃষ্টি স্থানান্তরিত করে। আটাশ বছরের জীবনটাতে কলঙ্কের দাগ কি এভাবেই লেগে যাবে আজ?

এমন অনাচার যেন ওর সঙ্গে না হয়। মাথা তুলে এ দেশে বাঁচতেই পারবে না ও! একটু অসাবধানতা আর অন্যমনস্কতার জন্য নিজেকেই কু-রবানি করতে মন চাইছে ওর। ঘরের দরজা শুধু লক পেয়ে তখনই তো ওর বোঝা উচিত ছিল। মাহিকে নিয়ে দুর্ভাবনা আর উৎকণ্ঠা দিনেদিনে ওর বুদ্ধিভ্রংশ করে দিচ্ছে।

সোফা থেকে তড়িঘড়ি করে ফুল হাতা গেঞ্জিটা গায়ে চড়িয়ে ফোন, ল্যাপটপ, চার্জার গুছিয়ে নিতে নিতে হড়বড় করে বলে চলল, ‘আ’ম সো স্যরি, ভাবি। আমার আসলে দরজাতে নক করা উচিত ছিল। সব থেকে বড়ো ভুল ঘরে ঢুকেও চেক না করা। ক্ষমা করবেন, প্লিজ। আমি সত্যিই খুব লজ্জিত।’

ঐশী একটু ভাবনাগ্রস্ত হলো। আশফিক কি সত্যিই পরিস্থিতি এমন কিছু ভেবেছে? না কি সুকৌশলে আর ইচ্ছাকৃত এড়িয়ে যাচ্ছে? শালীন, সভ্য পুরুষ দেখাচ্ছে নিজেকে! বিছানা থেকে জলদি নেমে এগিয়ে এলো ওর কাছে, ‘আশফিক! আশফিক, ডোন্ট বি অ্যাফ্রাইড! তুমি নার্ভাস হচ্ছ কেন?’

ভেতরে ভেতরে আশফিক সত্যিই খানিকটা বিচলিত। তার হেতু একান্তই মাহি৷ নচেৎ হাওয়াই উড়িয়ে দেবার মতো সহজভাবে এমন সাময়িক অবস্থা সামলে নেওয়া খুব একটা জটিল নয় ওর জন্য। হাতের ফোনটাতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলল ঐশীকে, ‘আ’ম সিরিয়াসলি নট আ ভুলগার গায়। প্লিজ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না, ভাবি।’
-‘তুমি আমার দিকে চাও আশফিক৷ ফোনের দিকে কেন চেয়ে আছ? তুমি ফুলিশ, স্টুপিডের মতো আচরণই বা করছ কেন? আমি তোমাকে চিনেছি৷ তুমি অবশ্যই নির্বোধ নও।’
বলতে বলতেই ওর হাতটা ধরে বসল। আশফিক নিমিষেই হাতটা ছাড়িয়ে দূরে এসে দাঁড়ালে উগ্রবীর্য ঐশীর ভাষা হয় কর্কশে, অশ্রবণীয়র যোগ্য।
-‘য়্যু ব্লাডি অ্যাসহোল তুমি তোমার নাটক বন্ধ করো! পুরো দুনিয়া মাড়িয়ে বেড়াও আর এখন নিজেকে ইনোসেন্ট গায় দেখাতে চাইছ?’

আশফিক তার দুঃসাহিসক ভ্রমণ, অভিযানে নানান রকম বিপদের সম্মুখীন হলেও কোনো কাছের লোকের দ্বারা ঝুঁকিতে পড়েনি৷ এটা সত্যিই তার ভাগ্য বলা চলে। কিন্তু নিজের দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে তার মতো দৃঢ়নিষ্ঠ, তেজঃপূর্ণ, পৌরুষপূর্ণ ব্যক্তিকে কিনা এভাবে পরিচিত মানুষের দ্বারা বিপদের মুখে পড়তে হবে? কোনো অসুস্থ মস্তিষ্কের নারী নাকি তার ওপর আধিপত্য দেখাবে? অসীম অপমান আর দুঃসহ ক্রোধে হি-ংস্র বাঘের মতো সামনের ঘৃণ্য, বিষাক্ত নারীটিকে ছিঁড়েখুঁড়ে নিঃশেষ করার স্পর্ধাটুকু এই মুহূর্তেই দেখাতে মন চাইছে। পিছুটান কেবল মাহি না থাকলে অনেক কিছুই ঘটিয়ে ফেলত। চুপচাপ ঘাড়টা নত রেখে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার জন্য কদম এগোতেই ঐশী পিছু থেকে ওর কব্জি চেপে ধরল, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অধৈর্য আর বিরক্তি ভাব সংবরণ করে নরম গলায় বলল, ‘কেন তুমি আগ্রহী হচ্ছ না আমার প্রতি? অ্যাম আই নট অ্যাট্রাকটিভ? তুমি কনফিউজড নও তো?’

এবার রুক্ষভাবে ঐশীর হাতটা ধরে আবারও ছাড়িয়ে নিলো আশফিক৷ অনেকটা জ্বলে উঠল সেখানে ঐশীর। চেঁচিয়ে উঠতে গেলেই আশফিক ভীষণ চেষ্টার সাথে তার অত্যুগ্র আচরণ দমন করে শীতল গলায় বলল, ‘আমি সত্যিই ইন্ট্রেস্টেড নই আপনার প্রতি।’
-‘কেন?’ জ্বলে উঠল ঐশী।
-‘বললামই তো। আগ্রহী নই, ব্যাস।’

সে কি তবে আশফিককে যাচাই করতে ভুল করল? কিন্তু সে বহুবার মাহির প্রতি ওর আচ্ছন্ন, আকৃষ্ট চাহনি লক্ষ করেছে। গতরাতে আশফিক নিশ্চয়ই এমনি এমনি মাহির ঘরে বসে থাকেনি? নিঃসন্দেহে মাহি চমৎকার বলেই আশফিক তার আগে পিছে ঘোরে। তাহলে ওর বেলাতে কীসের এত নৈতিকতা? সে বিবাহিত বলে? না কি মাহিকে হারিয়ে ফেলবার দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে আশফিক? হ্যাঁ, তাই হবে। এ জন্যই এত দোষমুক্ত সাজা। শব্দ বিনা হেসে উঠল সে।
-‘রিল্যাক্স আশফিক। তুমি আমাকে বিশ্বাস করো আমিও তোমাকে বিশ্বাস করব৷ ইট’স নট আ বিগ ডিল৷ আমি ধারণা করছি তুমি অনভ্যস্ত নও মাত্র রাতটুকু এক সঙ্গে ঘুমাতে। এবং আমার ধারণা মিথ্যাও নয়। ওই যে দিলিশা মেয়েটা তোমার জন্য নিষ্কলঙ্ক নেই, রাইট? তাই আবার সম্ভব না কি এক সাথে অল টাইম স্পেন্ড করবার পরও? ডোন্ট ওরি, মাহির কাছে তুমি ইনোসেন্টই থাকবে৷ মাহির জন্যই তো অপেক্ষা তোমার? যদিও সেটা বৃথা আস্ফালন। তুমি কেন বুঝতে চাইছ না ও তোমার প্রতি ঝুঁকবে না? কারণ, সে অলমোস্ট ওর প্রফেশনে জড়িত কোনো ক্যাপ্টেন বা ফার্স্ট অফিসারের সাথে কমিটেড। নিশ্চিত এমন তথ্য না পেলেও বোঝা তো যায় রে বোকা! ওহহো! তুমি তো জানোই না ওর প্রফেশন! সে আকাশচারিণী। তোমার মম পুত্রবধূ করবে তো ওকে জানতে পারলে? আমার ফাদার ইন ল মেয়েকে অতি দ্রুত তোমার ঘাড়ে তুলে দেবার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ সত্যটাই জানাতে ভুলে গেছেন। শোনো আশফিক, তুমি অনেক অনেক বেটার কাউকে ডিজার্ভ করো। আঙুলের ইশারাতেই মাজেস্টিক যে কোনো ফেইরি তোমার বেডফেলো হয়ে যাবে। মাহির পেছনে কেন সময় নষ্ট করছ তুমি? তুমি কি ভেবেছ সেটা আমি জানি না? আমরা বিনা শর্তে আমাদের ডিমান্ড পূরণ করব, ওকে? মাহিকে মনে কোরো না যে ও তোমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এটা যত মনে করবে তত বেশি ওর প্রতি তোমার আকর্ষণ বাড়বে৷ তুমি এটা মন থেকে বিশ্বাস করো, ও-ই তোমার যোগ্য নয়। বুঝেছ?’

অতি সভ্য, শান্ত আর ভদ্রতার বালাই চুকিয়ে আশফিক ঐশীর চোখে চোখ রাখল। নজরে চলেই আসে অতি যত্নে ধরে রাখা সুন্দর গড়নের আধা খোলা শরীরখানা। নজরে পড়লে সেদিকে ভ্রুক্ষেপই বা করছে কে?
-‘বুঝেছি, আমার হবু সম্বন্ধী বেকায়দাভাবে দুর্গন্ধময় মলের ডোবাতে ডুবেছে। কীভাবে ওকে ফাঁসালেন? দেশে শত শত অনিন্দ্য সুন্দরী থাকতে ইউএসএ গেল কেন বুঝছি না।’
-‘ডোন্ট ট্রাই টু ইনসাল্ট মি অ্যাট অল। তুমি এখান থেকে বেরিয়ে পার পেয়ে যাবে? নির্বোধের মতো তোমার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে নেই আমি। তোমার ঘরে প্রবেশ থেকে আমার পাশে শোয়া অবধি নিখুঁত ভিডিয়ো ক্লিপ রেকর্ড হয়ে গেছে আমার ফোনে। বিছানার হার্ডবোর্ডে তাকিয়ে দেখো।’
অচঞ্চল কিন্তু সাংঘাতিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আশফিক সেই জায়গাতে। সুদক্ষ হাতে ফোনটা এঁটে রাখা সেখানে। ঐশীর দিকে তাকাতেই ঐশী সরল গলাতে বিষাক্ত বাণী ছাড়ল, ‘ভেবো না আঁধার বলে তোমাকে চেনা যাবে না৷ ভিডিয়ো ক্লিপ সেন্ড করে প্রমাণ দেবো তার। তুমি এখান থেকে নিশ্চিন্তে বেরিয়ে শুধু আজ রাতটাই শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। নাহিয়ান নিশ্চয়ই আমাকে ছেড়ে তোমাকে বিশ্বাস করবে না?’

দুর্ভাগ্য! একদম নির্ভুল যুক্তিটা এখানেই আশফিকের বিপক্ষে৷ অতীতে অনেক বড়ো একটা অপরাধ করে গেছে সে মাহির সাথে। তারপরই নিজের বউয়ের থেকে নাহিয়ান এ ধরনের অভিযোগ শুনলে এবং নাটকীয় ভিডিয়ো ক্লিপটা দেখলেই ওক সব কিছু হারাতে হবে। প্রথমে সম্মান, দ্বিতীয় এবং শেষে মাহি আর ব্যবসায়ে বাবার অংশীদারীত্ব।

-‘ফেঁসে গেছ তুমি সুক্ষ্মভাবে। আশফিক, আমি বুঝতে পারছি না মাহির মধ্যে তুমি কী পেয়েছ আসলে?’
নিশ্চুপ আশফিক এবার চরম পদক্ষেপটা নিয়েই ফেলল। ঐশীকে ধাক্কে ফেলে দিলো নিচে। হঠকারীর মতো হেঁটে গিয়ে হার্ডবোর্ড থেকে ফোনটা টেনে এনে উচ্চস্বরে আছড়ে ফেলল ফ্লোরে। আবার ফ্লোর থেকে তুলে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে কমোডে সেটা ফেলে ফ্লাশ করে দিলো মুহূর্তেই।

ঐশী হিতাহিতজ্ঞানশূন্য। মৃদু চিৎকারে বলে উঠল, ‘তুমি আনএবল, পাওয়ারলেস পুরুষ একটা! সেটা স্বীকার করলেই পারো! এত শুদ্ধ, সাধু পুরুষ দেখানোর আসল কারণটা এবার পরিষ্কার হলো। ঠিক এজন্যই মাহি তোমাকে রিফিউজড করেছে, তাই না? তবে তো তোমার দিকে মাহি জীবনেও চেয়ে দেখবে না। মাকাল ফল দেখতেই যা শোভা। এতক্ষণ ভুল বকেছি। মাহি তো নয়, তুমিই মাহির অযোগ্য। সর্বদিক থেকে। ওই ক্যামেরাটাই তোমার চিরকালের ভবিষ্যত। এ জীবনে তুমি মাহিকে পাচ্ছ না। সেই সাহায্য আমিই করব, চিন্তা কোরো না।’
উন্মাদের মতো হেসে উঠে আবার বলল, ‘হা হা! আমাকে দেখেও তোমার মাঝে যখন কোনো সে-ক্সুয়াল অ্যাট্রাকশন দেখা গেল না আমার তো তখনই বোঝা উচিত ছিল। হাও স্টুপিড মি! তুমি চুমুটুমু অন্তত খেতে পারো তো, বাই দ্য ওয়ে?’

আশফিকের অনুমতি নেই সামনের এই ঘৃণারও অযোগ্য নারীর গায়ে হাত তুলবার! কী অসহনীয় অক্ষমতা! এই দিন আর এই মুহূর্তগুলো চিরজীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে অন্তর নামক বিষাদ এক ডায়ারিতে লিপিবদ্ধ হয়ে। কোনোদিনও ভুলবে না। এমন পরিস্থিতির মুখে মহান সৃষ্টিকর্তা যেন আর কোনোদিন ওকে নাও ফেলেন। চেনা মানুষের থেকে পাওয়া কোনো ধরনের অপমান, বিশ্বাসঘাতকতার যাতনা গ্রহণ করা সহ্যসীমারও বাইরে। আজ থেকেই তবে প্রস্তুতি নিতে হবে মাহিকে আজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবার হাহাকার আর বুকের রক্তক্ষরণ সইবার।

দুর্বল পায়ে এগিয়ে ঐশীকে পার করে দরজাটা খুলতেই ফোন কানে চেপে রাখা অবস্থায় মাহিকে নির্জীব দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো আশফিক। চোখে ওর অশ্রু নেই। কিন্তু কী ভীষণ আর্তনাদ সে চোখজোড়ায় চিৎকার করে উঠছে!আর কী চায় ওর? এই মুহূর্তে নিজেকে সামলানোর জন্য শক্ত ভিত আর শেষ আশ্রয়ই তার নাগালে। ঝাপটে পড়ল মাহির ওপর। বলিষ্ঠ বাহুতে পিষে ফেলতে চাইল যেন— এতটাই দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে নিলো মাহিকে। নিস্তেজ হয়ে আসা মৃদুস্বরে বলতে থাকল, ‘একবারের জন্যও বোলো না তুমি আমাকে অবিশ্বাস করো৷ প্রথমবার অবুঝের মতো অভিমান করে চলে গেলেও এবার হারিয়ে যাব। সত্যি! দূরে সরিয়ে দিয়েছ দূরেই থাকব। তবু এই অপবাদ আমি সহ্য করতে পারি না, ভুলতেও পারি না আর পারবও না।’

ঐশীর পা জোড়া কাঁপছে, বক্ষঃস্থল আতঙ্কে ধড়ফড় ধড়ফড় করছে। আশফিকের প্রশস্ত দেহের আড়ালে মাহির শরীর ঢাকা পড়লেও ওর রুদ্র রোষের তীক্ষ্ণ চাউনি ঐশীর শরীরে বর্শার মতো এসে বিঁধছে যেন।

আশফিককে শরীরের ওপর থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করল মাহি৷ কিন্তু আশফিক যেন বোধশূন্য। আরও শক্ত করে জাপটে ধরে রইল ওকে। ও বুঝে নিয়েছে, অতীতের থেকেও আজ আরও জঘন্যভাবে দোষারোপ করবে মাহি তাকে। কিন্তু মাহির প্রাণটা বেরিয়ে আসতে চাইছে ওর শক্তিবলে। বাধ্য হয়ে ধাক্কা দিয়ে আশফিককে নিজে থেকে ছাড়াল। ব্যথাহত, স্তিমিত চোখে আশফিক চাইতেই মাহি খুব কাছে এসে ওকে আদেশ করল, ‘য়্যু উইল কিস মি রাইট অ্যাওয়ে।’
-‘কী বলছ!’
পরিস্থিতি বিচারে আশফিকের কাছে এ বাক্য অবশ্যই অপ্রত্যাশিত। বিমূঢ় মূর্তিতে চেয়ে রইল সে মাহির মুখে। মাহি আরও একবার বলল, ‘কিস মি নাও অন মাই লিপস।’
-‘য়্যু ওয়ান্ট সিরিয়াসলি!’ অপ্রতিরোধ্য বিস্ময় গলাতে শুধাল আশফিক।
চকিতে জবাব দিলো মাহি, ‘আই রিয়্যালি ওয়ান্ট।’

অবিলম্বে আশফিক দু’হাতে মাহির ডিম্বাকৃতির কোমল মুখটা তুলে নিম্ন ঠোঁটখানি ওর পাতলা দু’ঠোঁটের ফাঁকে ভেজাল।

ইসরাত জাহান দ্যুতি
(এডিট ছাড়াই দিলাম। পরে বসে বসে চেক দেবো ভুলগুলো। আজ প্রত্যেকের বিশেষ বিশেষ মন্তব্যগুলো চাই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here