রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট -২৭.১

0
465

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট -২৭.১
___________________________
[প্রাপ্তবয়স্ক ও কঠোর মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]

লোকলজ্জাকে প্রাধান্য দিয়ে মাহি ঠেলে সড়াল আশফিককে, ‘বয়সটা তো থেমে নেই। ইমম্যাচিউর মানুষের মতো করলে হয়?’

একটু দূরত্ব রাখল আশফিক তাই নিজেদের মধ্যে। মাহির পাশে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আকাশটা দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল, ‘তখন অত বারবার হাসছিলে কেন?’

প্রসঙ্গটা উঠতে আবারও মুচকি হাসল মাহি, ‘তুমি বোকার মতো দিলিশার পিছে পণ্ডশ্রম ব্যয় করছিলে দেখে।’

চট করে মাহির দিকে ফিরে তুমুল আগ্রহ নিয়ে জানাল ও, ‘দিলিশা ট্যুরে গিয়ে এভাবে জীবনেও ঘুমায় না। আজ ও ওরকম ঘাপটি মেরে চোখ বন্ধ করে ছিল বলে ডাকছিলাম। চলে যাবে এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য। মন খারাপ নিয়ে বিদায় নেবে আমার দেশ থেকে, সেটা ভালো লাগবে না আমার। আমি যখন ওর মাতৃভূমিতে ছিলাম আমার সকল প্রতিকূলতায় বন্ধুর মতো সাপোর্ট দিয়েছে। তা স্বার্থেই হোক আর নিঃস্বার্থেই হোক।’

-‘দিলিশা কেন চোখ বুঁজে ঘুমের ভান ধরে পড়েছিল তুমি তা বোঝোনি, আশফি?’

পূর্ণ চোখেই চেয়ে ছিল আশফিক ওর পানে৷ আজকে যেহেতু সেই তিক্ত প্রসঙ্গটা উত্থাপান হয়েছে, তাই আজই দিলিশাকে নিয়ে মাহির সমস্ত ভুল ভাবনার অবসান ঘটাবে সে৷

-‘আন্দাজ করেছিলাম। আমাদেরকে কাছাকাছি দেখাটা ও নিতে পারছে না এখনও।’

-‘আর আমি অ্যাশিওর করছি, ও মানতে পারছে না আমাকে স্বাভাবিকভাবে তোমার পাশে দেখে। তাও কেন ওকে নিজের সঙ্গে রাখতে চাইছিলে?’

জানত আশফিক, প্রশ্নগুলোর ধরনটা এমনই হবে। ও-ও চায়, আজ মাহি নিজের মনে পুঁজি করে রাখা সমস্ত রাগ, ক্ষোভ, অভিযোগ, অভিমান বাইরে টেনে এনে মেলে ধরুক ওর কাছে।

-‘আমার সঙ্গে ওর খোলাখুলি শেষ কথা হয় রিসোর্ট থাকতে। যে রাতে তুমি এলে। আমার তরফ থেকে ওর প্রতি কখনো যে কোনো প্রেমের অনুভূতি আসেনি সেই কথাই খুব গুছিয়ে বলে বুঝিয়েছিলাম ওকে সেদিন। ও-ও বুঝেছিল। নিজেকে নিজেই অতি শীঘ্রই মুভ অন করতে সাহায্য করবে এমনটা কথাও দিয়েছিল। সময় লাগবে জানি। কিন্তু চেষ্টা না করলে হবে কী করে বলো? আমাকে তোমাকে পাশাপাশি দেখাটা যদি এখনও ওর বুকে বিঁধে তাহলে ওর সেদিনের কথার মূল্য থাকল কী? ও কিন্তু লন্ডন ব্যাক করবার টিকেট বুকিং দিয়ে ফেলেছিল। শুধু হৃদয়ের কথাতে, বলতে গেলে ওর জন্যই যাওয়াটা ক্যান্সেল করেছে। তুমি লক্ষ করলেই টের পাবে, হৃদয় সম্পর্ক গড়তে দু’পা এগিয়ে দিয়েছে দিলিশার দিকে। যদি দিলিশা ওকে ইতিবাচক কোনো ইশারা দেয় তবে ও সরাসরি বিয়ে করবার প্রস্তাব দেবে। এদিকে দিলিশার ড্যাডও চান কোনো বাঙালি ভালো ছেলের সাথেই ওর বিয়েটা দেবেন। কিন্তু ওর মম চান তার বিজনেসটা দেখতে আর ভবিষ্যতে তার পছন্দসই কাউকে বিয়ে করে নিতে৷ দিলিশা আগাগোড়াই বাবা ভক্ত৷ সে বাবার মতোই মনেপ্রাণে একজন বাঙালি প্রেমিক পুরুষ চায়৷ তাই হৃদয়ের মনোভাব বুঝেও ও আশকারা দিচ্ছে৷ অতএব, সিদ্ধান্ত পঞ্চাশভাগ নিয়েই নিয়েছে হৃদয়কে নিয়ে। তাহলে এই ট্যুরের বাহানায় ওর তো উচিত হৃদয়ের দিকে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করা, ওর সঙ্গে সময় কাটানো, দু’জন দু’জনকে জানা বোঝা। এগুলোর বদলে ও যদি সেই আমাকে নিয়ে আগের ভাবনাতেই পড়ে থাকে তাহলে হবে কী করে? আসল কথা হলো, আমি কিন্তু হৃদয়ের জন্য কনসার্নড। দিলিশার জন্য নই। আমার কথার ওপর ভরসা রেখে হৃদয় দিলিশার দিকে এগিয়েছে। হৃদয় কিন্তু তোমার দেখা সেই চার বছর আগের মিষ্টভাষী ছেলেটা নেই। অতিরিক্ত বদমেজাজি, লাগামছাড়া আচরণ আর চরিত্রের মানুষ এখন সে। জারিন যখন বেহায়ার মতো নিজের ফিলিংস কনফেস করত তখন অনেক বেশিই হার্ট করে হৃদয় অবজ্ঞা করত ওকে৷ কিন্তু ভাগ্যের প্রহসনে জারিনের যখন হঠাৎ করেই বিয়ে ঠিক হয়, তখন ওর টনক নড়ে। মেয়ে হয়ে জারিন নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে প্রতিটা দিন ভালোবাসা জাহির করত বলে হৃদয় ওকে ছ্যাঁচড়া, সস্তা মেয়ে, কত কিছু বলেই না অপমান করত! সেই ছ্যাঁচড়া ভালোবাসায় ওর অনুভূতিকেও নাড়া দেয় খুব ভুল সময়ে৷ পরাগ, অপি, সাদিয়া, সৌরভ, ওদের সকলকে দিয়েও রাজি করাতে পারেনি জারিনকে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্য। নিজেও তো নাকি বিয়ের দিন সকাল অবধি পা ধরে পর্যন্ত বসেছিল জারিনের৷ আর মন গলেনি ওর। সেইদিন থেকেই হৃদয় ছন্নছাড়া হয়ে যায়৷ জারিনও বিয়ের পর অসুখী হয়। স্বামীটা অতিরিক্ত মা ভক্ত ছিল বলে মায়ের কথাতে ওকে বাছবিচার করত সব সময়। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেনি তা নয়৷ ওর শ্বাশুড়িই কেন যেন ওকে পছন্দ করেন না। যার জন্য ছেলেকে উষ্কে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ওকে বাড়ি ছাড়াও করেন। ডিভোর্সের ডিসিশন নিয়েও শুধু মেয়েটার ভবিষ্যত চিন্তা করে ওরা ডিভোর্সের বদলে সেপারেট থাকছে শুধু। ওরা আলাদা হবার পরই ওর স্বামী দেশের বাইরে চলে যায়৷ ছ’মাস পরপর দেশে আসে। যে ক’দিন থাকে দেশে সে ক’টা দিন মেয়েকে সঙ্গে রাখে৷ তবে এবার একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। জয় দেশে এসে প্রথম কিছুদিন মেয়েকে নিজের বাসাতে নিয়ে রাখলেও হঠাৎ করে সে জারিনের বাসায় এসে থাকতে শুরু করেছে এক সঙ্গে। আশা করা যায়, ওদের সম্পর্কটা সুস্থ স্বাভাবিক হবে। এবার হৃদয়কে গুছিয়ে দেবার পালা। ওদের কথা তো বললাম অনেক। নিজেদের কথা বলি। এতক্ষণ আসল টপিকটাই এত কথার নিচে চাপা পড়ে গেল।’

-‘চাপা পড়েনি। বরং অনেক কিছু প্রকাশ পেয়েছে, পরিষ্কারও হয়েছে। জারিন আপুর স্বামীর মগজের জঞ্জাল সাফ করার দায়িত্বটা নিলে কবে?’

আশফিক ঠোঁট একপেশে করে দুর্বোধ্য হাসল যেন, ‘যেটা বলব সেটা শুনে চমক পাবে একটু। জয়ের মাথার পোকা নিধন করার দায়িত্ব শুরুতে আমি নিলেও শেষটা হৃদয়ই করেছে।’

সত্যিই একটুখানি চমকাল মাহি, ভালোও লাগল ব্যাপারটা। হৃদয় ছেলেটার আচার আচরণ, স্বভাব, চরিত্রে জিদ্দি, অবুঝ আর মনুষ্যত্বহীনতার পরিচয় পেলেও আদতে ছেলেটা তা নয়৷ জারিনের দাম্পত্য জীবনের অসুখী তো ওকে সুখী করার কথা ছিল৷ কিন্তু কাউকে সে বলতে পারেনি, ও কখনোই চায়নি আর আজও চায় না জারিন খারাপ থাকুক। তাই আশফিকের সঙ্গে জয়কে বোঝাবার মহৎ দায়িত্বটা নিজ উদ্যোগেই পালন করেছিল সে৷

মাহি হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, ‘যে ছেলে মায়ের কথাতে নড়েচড়ে আর বউকে অবমূল্যায়ন করে৷ সেই ছেলে তোমাদের বুঝ নিয়ে ভালো হয়ে গেল?’

-‘আসলে জয় খারাপ ছিল না কখনোই। এতিম ছেলে, মায়ের আঁচলে বড়ো হয়েছে। মা কষ্ট করে বড়ো করে তুলেছে। তাই মায়ের বাধ্য মাত্রাতিরিক্ত। আমি তো দেশ ছেড়ে চলে যাবার পর এসব ঘটেছে। তাই মূলত কী কারণে জারিনের সংসারে অশান্তি হতো তা আমাকে কেউ জানায়নি৷ হৃদয়, সৌরভও না। কিন্তু জারিন অপি আর সাদিয়ার কাছে সব কিছু বলত বলে হৃদয়ও অনেক কিছুই জানত। ঝামেলাটা কেন বাঁধত, কীভাবে বাঁধত, এর পিছে কি শুধুই জারিন দায়ী, এসবের প্রতিটা কথার যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাগুলো তাই হৃদয়ই জয়কে বলে বোঝাতে পেরেছে। জয়কে খুব ম্যানিপুলেট করা হতো। তাছাড়া ওর সফ্ট কর্ণার ছিল জারিনের জন্য। এ কারণেই সেপারেট থাকার পরও বিয়ে করেনি সে মায়ের আদেশ অমান্য করে।’

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মাহি, ‘বুঝলাম৷ বিয়ে, সংসার, এগুলো এক জীবনের সিংহভাগ সুখ কব্জা করে কিঞ্চিৎ ভাগের লোভ দেখিয়ে চিরটাকাল কারারুদ্ধ করে রেখে দেয়।’

-‘আমরা এখনও সেই অবধি যাইনি। তাই লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দুঃখকে আমন্ত্রণ করার দরকার নেই৷ দিলিশার ব্যাপারটা কতটুকু বুঝলেন সেটা বলেন এখন। আমি মিথ্যা বলি না, সেটা কিন্তু তুমি জানো মাহি। আমি শুধু হৃদয়ের জীবনটা গুছিয়ে নিতে সাহায্য করবার জন্যই দিলিশাকে নিয়ে ভাবছি৷ বাকিরা আমার কলেজ জীবনের বন্ধু হলেও হৃদয় আমার শৈশবের বন্ধু। ভাইয়ের মতোই ভালোবাসি ওকে। চার বছর আগে আমার ধ্বংসকারী রাগ, জেদ, অভিমানকে প্রশ্রয় দিয়ে আমি সবার সঙ্গেই স্বার্থপরতা করেছি৷ একটা বন্ধুর বিপদে আমি পাশে থাকতে পারিনি৷’

মাহি মনেমনে বলল তখন, ‘আমার সঙ্গে শুধু স্বার্হপরতা করোনি আশফি। বেঈমানীও করেছ৷ আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা নিংড়ে নিয়ে তা যত্ন করে রাখোনি। ছুঁড়ে ফেলেছিলে। অথচ আমাকে কতখানি আশ্বাস দিয়েছিলে সেদিন বিয়েটা করে! সেই বিয়েটার মর্যাদাও রাখোনি। আমি পারব না তা কোনোদিন ভুলে যেতে। সজ্ঞানে করা অপরাধের ক্ষমা আর সুযোগ তো দিতে পারি না আমি৷ না ক্রিমিনালের বেলাতে আর না আপনজনের বেলাতে? কাছের লোকদের জন্য অভিমানটা গাঢ় হয় বলেই পারি না।’

ভোরের সূর্যদয়ের সময় ঘনিয়ে এলো কখন গল্প করতে করতে তা এক বিন্দুও টের পায়নি ওরা। দু’জনের অন্তরে অন্তরে সন্ধি না হলেও খুব কাছাকাছি থেকে এতগুলো দিন পর এক সঙ্গে লঞ্চের ছাদে দাঁড়িয়ে সূর্যদয় অবলোকন ওরা শেষদিন অবধি মনে রাখবে।

লঞ্চ হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাটে এসে পৌঁছয়। তারপর জোড় জোড় সংখ্যায় স্কুটারে করে বন্দরটিলা ঘাটে আসে ওরা। সেখান থেকে ট্রলারে করে সকলে চ্যানেল পার হয়ে আকাঙ্ক্ষিত সেই নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলাতে এসে পড়ে। আশফিক আর সৌরভ একদিনের ব্যবধানে সকলের জন্য যতটা সুব্যবস্থা করতে পেরেছিল তাতে প্রত্যেকেই সন্তুষ্ট।

এখনই জল-জঙ্গলের নিঝুম দ্বীপে চিত্রা হরিণ দেখার আশায় আশফিক রওনা হতে চাইল। তারপর জঙ্গলেই তাঁবু খাটিয়ে বিশ্রাম নেবে। কিন্তু পরাগের মেয়ে কলিগগুলো বাধ সাধল। তারা একটু সময় বিশ্রাম নিতে চায় কোনো হোটেল বা রিসোর্টে গিয়ে। এরা ভ্রমণ পিপাসু নয়, আর না প্রকৃতিকে মন থেকে উপভোগ করতে চায়৷ নিজেদের স্বামী বা প্রেমিক নিয়ে নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্যই কেবল দ্বীপে আসা। আশফিকের কড়াকড়ি মেজাজ খারাপ হয়ে গেল মেয়েগুলোর ন্যাকা ন্যাকা আচরণে। দিলিশা জানে, ভ্রমণে বের হলে আশফিক কত বেশি মরিয়া হয়ে যায় কাছ থেকে প্রকৃতির সুধা নিতে। মাহির দিকে চাইল সে, যদি মাহি আশফিককে ঠান্ডা রাখবার দায়িত্ব নেয় তবে সে দূরত্বেই থাকবে ওদের থেকে। কিন্তু মাহিকে বিকারশূন্য দেখাল৷ চোখে সানগ্লাস এঁটে, জিন্স প্যান্টের পকেটে বাঁ হাতটা পুরে ডান হাতের ওপর কালো লেদার জ্যাকেটটা রেখে অদূরে দাঁড়িয়ে চঞ্চল দৃষ্টিজোড়া চারপাশে ঘুরিয়ে যাচ্ছে।

দিলিশা দেরি না করে আশফিকের কাছে এগিয়ে এলো, ওকে আপাতত বাকিদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কোনো রিসোর্টে যেতে রাজি করাল। আশফিকের কাছে মাহির সাথে কাটানো প্রতিটা সময় মূল্যবান। এখন হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া মানেই তিন-চার ঘণ্টা নষ্ট। এ কারণেই আরও বেশি মেজাজ চড়ে যাচ্ছে ওর।

ওখান থেকে ওরা নামারবাজার এলো বাইকে করে৷ সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি নিঝুম রিসোর্টে পৌঁছে খরচ কমানোর জন্য বারো বেডের ডরমিটরি ভাড়া করল বাকিরা। কয়েকটা ঘণ্টা একটু শুয়ে বসে কাটাবে বলেই ডরমিটরি নেওয়া। আশফিক সেখানে ভাগাভাগি করে সকলের মধ্যে মাহিকে আর অন্য তিন বান্ধবীকেও রাখতে একটুও রাজি না। খরচ বেশি পড়লেও নিজেদের প্রাইভেসি নষ্ট করবে না। যার জন্য সে চার বেডের দু’টো রুম ভাড়া নিলো। এক রুমে দিলিশা, মাহি, অপি আর সাদিয়াকে পাঠিয়ে ওরা চার বন্ধু অন্য রুমে গেল। নাশতাটা তমরুদ্দি ঘাট থেকেই সেড়ে এসেছিল সবাই।

একটা ঘণ্টা বিশ্রাম নেবার পরই আশফিকের ছটফটানি শুরু হয়৷ ঘুরতে এসে শুয়ে বসে কাটাতে মন চায়? মেয়েগুলোর জন্য থাকা রাগটা পরাগের ওপর দিয়ে গেল পরের আধা ঘণ্টা৷ কোনোরকমে দু’টো ঘণ্টা কাটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে আশফিক৷ উদ্দেশ্য একাই সৈকতে গিয়ে সময় কাটাবে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সিঁড়িতে পা বাড়াতেই কয়েক ধাপ নিচে মাহিকে দেওয়ালের গায়ে হেলে দাঁড়িয়ে ফোন চাপতে দেখা গেল। ওর পায়ের আওয়াজ পেয়ে তাকাতেই মুচকি হাসল মাহি, বিস্ময়কর সত্য বলল, ‘তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’

গতকাল সকাল থেকেই মাহির পরিবর্তনীয় আচরণগুলো লক্ষ করছে আশফিক৷ আনন্দ অনুভব হলেও মনটাতে তাও খুঁতখুঁত লাগছে। যত পারছে খুঁতখুঁতানি ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছে সে৷ এখনও তাই করল৷ মিষ্টি হেসে মাহির মুখোমুখি এসে দাঁড়াল। সিঁড়ির দিকটা দু’দেয়ালের মাঝে আটকা বলে হালকা অন্ধকার লাগে জায়গাটা।

-‘আমি যদি না আসতাম তাহলে কি জানতাম তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছ?’

মাহি মিটিমিটি হেসে বলল, ‘গুড কুয়েশ্চন। জেনে রাখা উচিত, আমার জেনারেল নলেজ প্রশংসনীয়। আন্দাজটাও অধিকাংশই নির্ভুল হয়৷ তুমি রিসোর্টে আসতেই নারাজ ছিলে৷ ঘরে বসে থাকার ছেলে তুমি না সেটা আমিও জানি।’

মৃদু হাসল আশফিকও, ‘ও কেন সাথে? মানে তুমিও জানো! তুমি ছাড়া এতটা আর কে জানে আমাকে?’

-‘কেন দিলিশা?’ চকিতে বলে দিলো মাহি।

অকস্মাৎ মাহির সঙ্গে আরও নিবিড় হয়ে দাঁড়াল আশফিক। ওর মুখের ওপর ঝুঁকে খাদে নামানো কণ্ঠে কপট অভিমান জড়িয়ে বলল, ‘যখন আমি তুমি একাকী তখন কি শুধু আমার তোমার কথা বললে হয় না? বারবার তৃতীয় ব্যক্তিকে টেনে আমার অপরাধবোধ বাড়িয়ে দাও।’
বলা শেষেই মাহির নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বসল।

দু’জন নিজেদের মাঝে মত্ত থাকায় সিঁড়ির মুখে অচেনা এক দম্পতির হঠাৎ আগমন টের পেলো না কেউ। আরও আকস্মিকতা ঘটল তখন, যখন ওই দম্পতির মধ্যে থেকে মেয়েটি মাহিকে দেখে উত্তেজনাপূর্ণ গলায় মৃদু চিৎকারে ডেকে উঠল, ‘এই? তুমি কাশনির না?’

ইসরাত জাহান দ্যুতি
(এডিট নয় পর্ব)

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ২৭.২
____________________________
[প্রাপ্তবয়স্ক ও কঠোর মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]

উচ্চতাতে যেমন মানানসই তেমনই শারীরিক কাঠামো আর তেমনই চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া সুন্দর দেখতে মেয়েটা। হাতা ছাড়া, গলা বড়ো নকশার সিঁদুর রঙা ব্লাউজের সঙ্গে চকচকে সোনালী সুতায় নকশা করা সোনালী রঙা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে সে। চুলগুলো খোঁপা বাঁধা বলে পৃষ্ঠদেশ অর্ধভাগই নগ্ন৷ মুখে সাজসজ্জার আড়ম্বরও চোখে বিঁধবার মতো। গাঢ় খয়েরী রঙা ভেজা লিপস্টিকে মাখা ঠোঁটজোড়া দেখেই কা-মুক শ্রেণীর পুরুষগুলো পর্যুদস্ত হয়ে যাবে৷ মেয়েটির পাশেই লম্বা, চওড়া দেহের ভীষণ ফর্সা এক যুবক তার খোলা কোমড় জড়িয়ে ধরে দাঁড়ানো৷ তীক্ষ্ম চোখের উৎসুক দৃষ্টিজোড়া তারও মাহি আর আশফিকের দিকে৷

আশফিক একটু দূরে সরে দাঁড়াতেই মাহি ভ্রু কুঞ্চিত করে দেখল নিচে দাঁড়ানো যুগলকে৷ তারাই এগিয়ে এলো ওর কাছে। মাহিকে আপাদমস্তক জহুরী চোখে পরোখ করে সুন্দর করে আঁকা রাঙা ঠোঁটজোড়ার কোণে দুর্বোধ্য আর দাম্ভিকতার বাঁকা হাসি টানল মেয়েটা, ‘ইয়েস, আই রেকউগনাইজ য়্যু। কাশনির মাহতাব। কেমন আছ?’

মাহির চেহারাতে পুরোদস্তুর অসন্তুষ্টতা। আঁড়চোখে আশফিককে একটাবার দেখে নিলো৷ সে খুব কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনের মানুষদু’টোর দিকে। স্বাভাবিক স্বরে কথা বলতে চেয়েও পারল না মাহি নিজের মুখের ওপর থেকে গাম্ভির্যের পর্দা সড়াতে।
-‘ভালো। তোমরা এখানে?’

-‘ওহ যাক তাহলে চিনতে পেরেছ? যেভাবে তাকিয়ে ছিলে যেন আমার ডাকে তুমি প্রচণ্ড বিরক্ত। বিরক্ত হয়েছ না কি সত্যি?’

পাশ থেকে অতি ফর্সা মতোন ছেলেটা ভর্ৎসনা করল, ‘তুমি আনইনটেনশনালি ওদের কোয়ালিটি টাইমে বাগড়া দিয়েছ, অনন্যা। আমি তুমি হলে তো মাথায় ফা-টিয়ে দিতাম। হা হা!’
কথাটা বলেই যুগল তারা একে অপরের শরীরে ঢলে পড়ে হেসে উঠল।

আশফিকের দু’ঘণ্টা আগের সেই তিরিক্ষি মেজাজটা ফিরে আসছে আবার। প্রশ্নবিদ্ধ চাউনি ঘুরছে মাহির মুখটাতে। কাশনির মাহতাব সম্বোধনের কারণ জানতে ছটফট করছে সে। সামনের এই দম্পতির চোখে মুখে কেমন ধূর্ততা, ওদের এই যে এত গভীর ভালোবাসার প্রকাশ। সেটাও ওর কাছে নকল লাগছে। অনন্যা নামের মেয়েটিকে ওই দূর থেকেই খুঁটিয়ে দেখা হয়ে গেছে ওর। তাতে যতটুকু পরিষ্কার তা হলো, সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে পায়ের নখ থেকে চুলের গোড়া অবধি নারীটির টাকায় গড়া। কটিদেশ, বক্ষ, নাক আর ঠোঁটই তার দৃষ্টান্ত প্রমাণ দিচ্ছে। সবই সার্জারির কামাল। এরা যদি এখন বলে, টাকাকে টয়লেট টিস্যু বানায় তা অবিশ্বাস্য হবে না। সব থেকে জঘন্য সাদা ফর্সা মতোন ছেলেটার কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টিজোড়া। যে দৃষ্টিতে মাহি আটকে আছে।

মাহি আঁড়চোখে দেখতে পাচ্ছে আশফিকের অপ্রকাশ্য ক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি। কিন্তু এই মুহূর্তে চট করে চলে যাবার পথই নেই। অনন্যা এতক্ষণে আশফিককে অদেখাই রেখেছিল৷ মাহির হাতটা নিজের মাঝে ধরে রাখতে দেখে ওর পানে মনোযোগ দিলো। চেনা চেনা লাগছে আশফিককে তার। মাহিকে ব্যাপক কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ইনি তো মিস্টার মাহতাব না তাই না? আমি এতটা চিনতে ভুল করব না নিশ্চয়ই। আরে আমি তো এত সময় এনাকে মিস্টার মাহতাব ভাবছিলাম। তাই তো বলি তোমার মিস্টার মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে বুড়িয়ে যাবার বদলে এত ইয়াং হলো কী করে? ইনি কে কাশনির? আমি কোথায় যেন দেখেছি মনে হচ্ছে।’

অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের মুখোমুখি হয়ে যতটা না ঘাবড়েছে মাহি তার থেকেও বেশি চিন্তিত সে এই দু’জনকে দেশে তাও আবার তারই সামনে দেখে। মন মস্তিষ্কে গবেষণা করে বুঝতে দেরি হয়নি, পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই এখানে তারা। মাহির গোপন পরিচয় তো জানবার কথা নয় এদের! তাহলে এখানে কেন? অবুঝের মতো সরল সোজাভাবে যে প্রসঙ্গে কথাগুলো বলছে অনন্যা সেটা পুরোটাই উদ্দেশ্যপূর্ণ। কিন্তু কী উদ্দেশ্য?

-‘উই আর ডিভোর্সড।

-‘হোয়াট? সত্যি বলছ?’ বজ্রকণ্ঠে বিস্ময় প্রকাশ করল অনন্যা। তারপরই আফসোস করল নিজের সঙ্গীর কাছে, ‘দেখেছ অনি, এত রোমান্টিক কাপলটাও টিকল না। আজকাল ভালোবাসাগুলো এমন হয় কেন?’ মাহির দিকে করুণা চোখে তাকিয়ে আহত গলায় বলল, ‘মালদ্বীপে আমরা এক সঙ্গে হানিমুন কাটালাম। অথচ আমরা ঠিকই থাকলাম তোমাদের বিচ্ছেদ ঘটে গেল৷ কেন হলো এমনটা? তোমাদের ভালোবাসা আর রোমান্টিকতা দেখে আমরা কিন্তু ইন্সপিরেশন পেতাম। নক্ষত্র মাহতাবকে আমার ভালো লেগেছিল খুব। তার থেকে তুমি পঁচিশ বছর বয়সের ছোটো হয়েও কী দারুণ দ্বিধা ছাড়াই ভালোবাসতেন তোমাকে!’

-‘আরে ছাড়ো তো। সব ফেইক। এত বছরের ব্যবধান থাকা সম্পর্কে সবাই সুখী হয় না কি? যে কেনো একজন অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারে না। আমার মনে হয় মিসেস মাহতাব… ওপস্ নো নো নো, মিস কাশনির পারেননি। কারণ, মিস্টার মাহতাব আমাকে বলেছিলেন তিনি দারুণ খুশি। কাশনিরকে এই বয়সে পেয়ে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবেন। সারাক্ষণই… ‘

-‘এই এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড! আমি চিনতে পেরেছি অবশেষে।’ অনিকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে খুব উৎফুল্লতায় অনন্যা চেঁচিয়ে উঠে আশফিককে চিনতে পেরে।

ওর মুখোমুখি এসে দাঁড়াল, উত্তেজিত স্বরে বলল, ‘দ্য মোস্ট হ্যান্ডসাম অ্যান্ড ফেমাস ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার আশফিক জাওয়াদ আপনি, ঠিক বলেছি না?’

দক্ষিণের সাগর অ্যান্টার্কটিক সামনে বয়ে চললেও আশফিক এই মুহূর্তে জানের মায়া না করে বরঞ্চ মাথা ঠান্ডা করার অভিপ্রায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত, সম্ভব হলে চোখের সামনে থেকে সব কিছু নিশ্চিহ্ন করে কিছুক্ষণ পূর্বে ফিরে যেত। যেখানে এই মানুষগুলোর অস্তিত্ব নেই আর তাদের বলা কথাগুলোও শুনতে হয়নি।

সৌজন্যমূলক হাসিটুকুও দুর্লভ হয়ে পড়ল আশফিকের জন্য। অনাগ্রহী মুখভঙ্গিতে মাথা উপর নিচ করে স্রেফ বিভ্রান্তি দূর করল অনন্যার। মাহিকে রীতিমতো ভুলেই গেল চাকচিক্যের আবরণে ঘেরা এই মেয়েটা।
-‘আনএক্সপেক্টেড ছিল বিশ্বাস করুন! আপনি বাঙালি হয়ে এ দেশকে যেভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে রিপ্রেজেন্ট করছেন তাতে আমি সত্যিই খুব প্রাউড ফিল করি আপনাকে নিয়ে। ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফি গত ক’মাস ধরে দেখি শুধু আপনার অ্যাডভেঞ্চারজম এক্সপ্লোরেশন দেখার জন্য। আমার ছোটোবোন তো আপনি বলতে ক্রাশড। প্লিজ, আই ওয়ান্ট টু টেক আ পিকচার উইথ য়্যু।’

মাহি প্যান্ট পকেটে হাত পুরে দাঁড়িয়ে চিন্তায় অনামিকা আঙুলের সাহায্যে কপালের কোণ চুলকাচ্ছে। আশফিকের সঙ্গে ছবি তুলতে চাওয়াটাও সহজভাবে নিতে পারছে না ও। এই টাকার কুমির মানুষদু’টো উদ্দেশ্য ছাড়া মোটেও এক চুল অতিরিক্ত কাজ করে না। অনিল চৌধুরী, অতি ধূর্ত শেয়ালের মতো লোকটার অসভ্য নজর দেখতে দেখতে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে ও। দ্রুত কেটে পড়তে হবে আশফিককে নিয়ে৷ এই মুহূর্তে অনেক কাজ সামনে।

-‘স্যরি ডিয়ার! ব্যক্তিগত কিছু কারণে আপাতত কিছুদিন একটু প্রাইভেসি মেইনটেইন করার চেষ্টা করছি। আই ক্যান গিভ য়্যু অ্যান অটোগ্রাফ ইফ য়্যু ওয়ান্ট।

-‘ওহ ইট’স ওকে। নো প্রবলেম। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার কাছে পেপার নেই৷ আমার হাতে দিন প্লিজ।’

অবিলম্বে হাতের ছোটো ব্যাগ থেকে কলম বের করে আশফিককে দিলো। হাতটা মেলে ধরলে আশফিক বিনা স্পর্শে নিজের নামটা লিখল। বারবার করে ধন্যবাদ জানিয়ে অনন্যা হঠাৎ মাহিকে বলল, ‘কিন্তু কাশনির, তোমরা মাইন্ডফুলি খুব কাছাকাছি ছিলে একটু আগে। আপাত চোখে তেমনই লাগছিল আর কী!’

-‘ঠিকই দেখেছ। তবে তেমন কিছুই নয়। জাস্ট নরমাল ডেট। এই তো দিন সাতেক হলো পরিচয়।’
প্রশ্নটার সম্মুখীন হতে হবে নিশ্চিত জেনে মাহি পূর্বেই উত্তরটা মনেমনে সাজিয়ে রেখেছিল। তাই খুব অনায়াসে মিথ্যা বলে দিলো। যেটা আশফিক কখনো পারে না।

এ কথার অন্তর ছেদ করা প্রভাবটা পড়ল শুধু আশফিকের বিধ্বস্ত হৃদয় তটে৷ চোয়াল কঠিন করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল শুধু৷ মাহি অবশ্য খেয়াল করলেও তা নিয়ে ভাবনাগ্রস্ত হলো না৷ জিজ্ঞেস করল অনন্যাকে, ‘তোমরা সেকেন্ড অর থার্ড হানিমুনে মনে হচ্ছে? কিন্তু এই রিসোর্টে তোমরা? বিশ্বাসযোগ্য হবে না যদি বলো বুকিং করেছ৷ এ জায়গা তোমাদের স্ট্যাটাসের সঙ্গে যায় না, জানো নিশ্চয়ই?’

জবাব অনিল দিলো, ‘যায় না আসলেই৷ কিন্তু অনন্যার সাধ জেগেছে এবার অ্যাডভেঞ্চার করবে সে সবরকম জায়গাতে বসবাস করে। তোমাদের রুম নাম্বার কত?’

বলতে একদমই অসম্মত মাহি৷ তবু না বলে উপায় কই?
-‘ছয়।’

-‘আহা, আমাদের থেকে বেশ ক’রুম পরে। আমাদের চৌদ্দ। অবশ্যই আসবে কিন্তু তোমরা দু’জন। মিস্টার আশফিকের সঙ্গে পরিচিত হবার ইচ্ছাটা হাতছাড়া করতে চাইছি না।’

আশফিক এক দ্বন্দ দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি না আর। সাধারণভাবে ওদের দু’জনকে একটা বাক্য ‘পরে দেখা হবে’ বলে মাহিকে জানাল, ‘আমার একটু রেস্টের প্রয়োজন৷ তুমি কথা বলে এসো, ওকে?’

মহা আনন্দে মাহি এক গাল হেসে ওকে বিদায় জানাল৷ আশফিক সিঁড়ির ওপরের ধাপে পা বাড়াতেই অনিল বলল অনন্যাকে, ‘তুমি বোধ হয় গল্প করবে মাহির সঙ্গে৷ আমিও একটু ফ্রেশ হতে চাই রুমে গিয়ে।’

-‘শিওর সুইটহার্ট! তুমি যাও, আমি আসছি।’

বড়ো বড়ো কদম ফেলে অনিল দ্রুত আশফিকের কাছে চলে এলো। অবশ্য আগ্রহ নিয়ে ফিরেও তাকাল না আশফিক ওর দিকে। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে অনিল এবার মোক্ষম ঘটনাটা প্রকাশ করল৷ আশফিকের কানের কাছে এগিয়ে এসে চুপিচুপি বলল, ‘সত্য হলো কাশনির মিস্টার মাহতাবের ওয়াইফি নয় মিস্ট্রেস ছিল। আপনি ওর বর্তমান পার্টনার হবেন এটা বুঝেই আমরা সম্পর্কটাকে সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করেছি। ওরা ওপেন প্লেসেও নিজেদেরকে কন্ট্রোলে রাখত না। আই গেস, কাশনির চড়া মূল্যের পণ্যস্ত্রী। নয়তো কখনো বিখ্যাত হীরে ব্যবসায়ী নক্ষত্র মাহতাব আবার কখনো ফেমাস ফটোগ্রাফার! আমিও প্রচণ্ড আকুল আকাঙ্ক্ষী ওকে পেতে৷ মালদ্বীপে সেবার সুযোগ হয়নি। প্রথম হানিমুন ছিল তো। কিন্তু এবার চাই। মিস্টার আশফিক, প্লিজ আই রিকুয়েষ্ট য়্যু। একটু কনসিডার করুন। মাত্র দু’তিনটা রাতের জন্যই, খুব বেশি না। চাইলে আমার সো হট ওয়াইফিকে আপনি টেস্ট করে দেখতে পারেন৷ মানে সোজা কথায় উই ক্যান চেইঞ্জ।’ বলে ঠোঁট কামড়ে হাসতে থাকল।

ইসরাত জাহান দ্যুতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here