রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ৬

0
570

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ৬
_________________________

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]

মাহিয়ানের যখন বয়স বারো বছর তখন মা’টা মারা গেল ওর। হঠাৎ একদিন দুপুরে সুস্থ মানুষটি হার্ট অ্যাটাক করে বসলেন। হাসপাতালে নিতে নিতেই তিনি প্রাণ ত্যাগ করলেন। বয়সটা ছিল তার একদমই অল্প৷ ষোলো বছর বয়সে মাহির বড়ো ভাই নাহিয়ানের জন্ম দিয়েছিলেন৷ আর মৃত্যু হলো মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে। জারিফ ইসলামের সঙ্গে প্রেমের বিয়ে ছিল তার৷ অল্প বয়সী প্রণয়ীনির হঠাৎ মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্যই ছিল বটে। শোকাবেগ কাটিয়ে ওঠার বদলে তিনি সন্তানদের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। ব্যবসার বাহানায় তারপর থেকেই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতেন। সংসারটা তখন যেন কাগজের নৌকার মতো ভাসছে পানিতে। জারিফ ইসলামের পরিবারেও মাহিয়ান আর নাহিয়ানকে দেখার মতোও কেউ ছিল না। নাহিয়ানের এসএসসি পরীক্ষা তখন, মায়ের মৃত্যুর মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বোনের দেখাশোনা, নিজের পড়াশোনা কোনোটাই করতে পারছিল না সে। বাধ্য হয়ে জারিফ ইসলাম তখন মাহিকে নানুবাড়িতে মামাদের দায়িত্বে রেখে আসেন। সেখানে অবশ্য ওর অযত্ন হয়নি৷ কিন্তু মায়ের অভাবটা দারুণভাবে বুঝতে পারত। এসএসসি অবধি মাগুরাতেই পড়াশোনা চালিয়ে যায় সে। তারপর আবার ফিরে আসে ঢাকাতে।

মা ছাড়া বেড়ে ওঠা এই সন্তানগুলো বয়সের আগেই কিন্তু পরিণত হয়ে যায়। মা’কে হারানোর প্রবল ধাক্কাটা সামলে ওঠার পরপরই মাহির কাছে আর কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিকে ভয় লাগেনি, ভেঙে পড়েনি। বরং সময়ের গতিতে শক্তপোক্ত মনের মালিক হয়েছে সে। আশফিকের অপ্রত্যাশিত প্রত্যাখ্যান পরিবারের প্রতিটা মানুষকে ক্ষত করলেও একলা মাহিই অনড় ছিল। আশফিককে হয়তো ভালোবেসে ফেলেছিল সে খু্বই ক্ষীণ সময়ের ব্যবধানে, কিন্তু নিজের থেকে তো আর বেশি নয়! নিজেকে ভালো রাখা এবং নিজেকে ভালোবাসাই তার আসল বৈশিষ্ট্য। আর সেই ভালো থাকার জন্য সবরকম পন্থা অনুসরণ করতেও দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি সে। আর দিব্য ফারহান ওর জীবনে সেই ভালো থাকারই একটি পন্থা মাত্র। এই দিব্য ফারহানকে নিয়ে আশ্চর্যজনক এবং মজার একটা তথ্য হলো, আশফিক জাওয়াদের হাজার প্লাস ফেইসবুক বন্ধুতালিকার মধ্যে একজন মিউচুয়াল বন্ধু সে৷ এমন কত বন্ধুই তো জানা, অজানাই বন্ধুতালিকাতে যোগ হয়ে যায়৷ দিব্য ফারহানও ঠিক তেমনই একজন অজানা ফেইসবুক বন্ধু মাত্র ওর। আশফিককে দেখতে কত কত বার ওর প্রফাইলে ঢুঁ মারত তার হিসাব নেই৷ কিন্তু যেদিন থেকে দিব্যকে খুঁজে পেল আর কোনো এক বাহানায় দিব্যর সাথে কথা শুরু করল, সেদিন থেকে আশফিকের প্রফাইলে যাবার প্রয়োজন পড়েনি ওর।

***

-‘রাত্তিরি খাইছো?’
-‘হ, রাত্তিরি খাইছি।’
-‘হাসতেছ না কি? হাসো ক্যান?’
আর না পেরে হু হা করে হাসির ঝংকার তুলল মাহি, ‘আপনি যেই কারণে হাসেন আমিও সেই কারণেই হাসি।’

ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে হাসছে দিব্য। দিন রাতের পরিশ্রমের পর মাহির সাথে কথা বলার সামান্য সময়টুকু নিজের মতো করে কাটায় ও। সেখানে না চিন্তা থাকে নিজের আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে, না থাকে অপর পাশের মানুষটা তা শুনে কী ভাববে, আর না থাকে পারিবারিক ব্যাপারের কোনো চিন্তা। শান্তি থাকে শুধু, এই মেয়েটির কাছেই নিজের সকল শান্তি আপাতত গচ্ছিত রেখেছে।

-‘কী করতেছিলা তা এতক্ষণ?’
কোলের ওপর রাখা ল্যাপটপের পর্দা থেকে চোখজোড়া তুলল মাহি, চোখের রিমলেস চশমাটা খুলে বলল, ‘ভাবি কিছু নিউ ডিজাইন মেক করছে গহনার৷ এবারের ইদ কালেকশনের মধ্যে ভাবি তার ডিজাইনের কিছু এক্সক্লুসিভ জুয়েলার্স শো রুমে রিলিজ করবে৷ ভাইয়া সেই ডিজাইনগুলো পাঠাইছে সন্ধ্যার পরেই। দেখার সময় পাইলাম মাত্র।’
-‘ওরে বাবাহ্! তোমার ফ্যামিলির একেকটা মানুষ দেখি কাচ কাটা হীরা৷ সবারই কত গুণ। তোমার ভাবি কী নিয়ে পড়াশোনা করছে?’
-‘হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট৷ বিবিএ আমেরিকাতেই করছে। এমবিএ এখানে এসে করতে হইছে। কিন্তু এই দিকটাতেও বেশ পারদর্শী সে।’
-‘ওহ তোমার ভাবি তো প্রবাসী ছিল, না?’
-‘হুঁ, তবে দেশে থাকলেই বা কী! বছরে তিনবার যাওয়া পড়ে তার ওখানে। ভাইয়া বিজনেসের জন্য গেলেই ভাবিও পিছু নেয়। হা হা!’
-‘ফ্যামিলি ছাইড়া এত এত ক্রোশ দূরে থাকার ঠ্যালা তো বুঝবা না! এর জন্য হাসি আসতেছে।’

এ ব্যাপারে আর কথা দীর্ঘ করল না মাহি। দিব্যর ছবির প্রসঙ্গ তুলল ও, ‘আপনার পিকচার ফেস বোধহয় বেশি ভালো বাস্তব থেকে।’
-‘কী বললা?’
ক্ষণিকেই তেতে উঠল দিব্য। নিজের চেহারা নিয়ে একটা নেগেটিভ মন্তব্য শুনতে সে ভীষণ নারাজ। আজ নিশ্চিত আবারও একবার মাহির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক বিনায় বিচ্ছেদ ঘটবে৷ গত আড়াই বছরে এমন বিচ্ছেদ বেশ কয়েকবারই ঘটেছে৷ তাতে এক মাস, দু’মাস, তিন মাসও ওদের যোগাযোগ বন্ধ থেকেছে। আগ বাড়িয়ে অবশ্য কেউ না কেউ ঠিক আবার নক করেছে।
-‘আমার কাছে তো তাই মনে হলো। ভিডিয়ো কলে আপনারে অত সুন্দর লাগে না, ছবিতে যতটা লাগে।’
-‘ভিডিয়ো কলে চেহারা কি লাইভে দেখার মতো লাগে কখনো? তোমারেও তো দেখা যায় আটকপালে। কপালখান কত বড়ো লাগে। ছবিতে তো আবার কপালডা কুটিই বানাও৷ কিন্তু তোমার কপাল বাস্তবে নির্ঘাত চার আঙ্গুলে, তাই না? বড়ো কপাল মেয়ে মানুষের ভালো দেখা যায় না৷’

মুখটা যেন তমসাবৃত হয়ে পড়ল মাহির৷ কপালে ভাঁজ ফেলে, চোখজোড়া শীতল করে আর ঠোঁটটা মৃদু চেপে ধরে নিরব রইল। ওদিকে দিব্যও কথাগুলো বলা শেষে কাঁচুমাচু মুখ করে নখ কামড়াতে থাকল৷ নিজের অপমানের শোধ তুলতে গিয়ে মুখ ফসকে বাড়তি কথা বলে ফেলেছে! সে ছেলে হয়েই যদি নিজের চেহারা নিয়ে দুটো খারাপ কথা হজম না করতে পারে সেখানে মেয়ে হয়ে নিশ্চয়ই মাহি চুপচাপ মেনে নেবে না?

-‘আমার কপাল আটকপালে না হয় বারোকপালে হোক। খারাপ দেখাক বা ভালো! ও টেনশন আপনারে করতে বলি নাই আমি৷ আমার বর যে হবে সে টেনশন তার। আপনি আপনার হাইট নিয়ে কেন যে চিন্তা করেন না কে জানে! বিয়ে করার সময় বউ কিন্তু অবশ্যই পাঁচ ফিটের ওপরে যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাইখেন বুঝলেন৷ আপনার মতো আট ইঞ্চির পাশে পাঁচ ফিট কিংবা তার কম হাইট মানানসই।’
-‘পাঁচ ফিট আট ইঞ্চিরে তুমি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে পারো না। তুমি আট ইঞ্চি হয়ে দেখাও, তারপর না হয় আমি তোমার কথা মতোই পাঁচ ফিটের কম কাউকে বিয়ে করব।’
-‘ছেলে-মেয়ের উচ্চতাকে এক দাঁড়িপাল্লায় মাপা যায় না তো। আমি বেস্ট মেয়েদের গড় উচ্চতার তুলনায়।’
-‘তো আমিও বেস্ট। ছেলেদের আট ইঞ্চির কদর বাংলাদেশে প্রচ্চুর।’
-‘অথচ আমার এক্স পারফেক্ট ফাইভ’ইলেভেন”।’
-‘ওই জন্যই সে এখন এক্স তোমার। হাঃ হাঃ! ইলেভেন হয়ে কী হলো? নিশ্চয়ই তোমার আটকপালে দেখে ভাগছে!’
পূর্বের তুলনায় এবার একটু বেশিই মাহির গায়ে লাগল কথাটা। কারণ, এ কথা তো সত্যই৷ আশফিকই তাকে ছেড়ে গিয়েছিল। কাটকাট গলায় দিব্যকে বলে উঠল ও, ‘আমার এক্স যদি আমার বড়ো কপাল দেখেই ভাগে, তাহলে আপনার এক্স দুইটা কি আপনার হাত পায়ের মেয়েলি গঠন দেখে কনফিউশানে ভুগে ভাগছে? এমনিতেও তো আপনি অতিরিক্ত ফরসা। তার ওপর আপনার হাত, পা দুইটাই মেয়েদের মতো। সেটা তো আপনি নিজেও জানেন। কনফিউশানের ব্যাপার তো থেকেই যায় বেচারিদের।’
-‘তাইলে আসো ওপেনলি দেখাই৷ অন্তত তোমার কনফিউশান তো দূর করি!’
-‘উহুঁ, ডেট যাদের সাথে করছেন তাদের থেকে কারও একজনের স্বীকারোক্তি দেওয়ায়েন। তাহলে না বিশ্বাস হবে! আমি আবার নিজের বর ছাড়া পরপুরুষের কিছু ওপেনলি দেখতে চাই না৷ আমার মাইন্ড ডার্টি না। তো ঠিক আছে, ভালো থাইকেন।’
-‘হুঁ, আপনিও ভালো থাইকেন আপনার ডোবা-নালা মাইন্ড নিয়ে৷ আল্লাহ হাফেজ।’

এবার নিয়ে কত তম হলো ওদের এমন ঝগড়ার তার নির্দিষ্ট হিসাব নেই। কলটা তো ঝগড়ার পরিপ্রেক্ষিতে শুরুতে মাহির কেটে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটা উলটো হওয়ার কারণ হলো দিব্য অতিরিক্তি মুডি ছেলে। ইগো ব্যাপারটাও ওর মধ্যে বেশি। তাই ঝগড়ার কথোপকথনগুলোতে মাহির তুলনায় খেপেছে বেশি ও-ই। এ নিয়ে মাহির কোনো সময়েই আফসোস নেই৷ মা মারা যাবার পর থেকে ওর প্রতি বাবার উদাসীনতা, ভাই বিয়ে করার পর থেকে কিঞ্চিৎখানি হলেও তার পালটে যাওয়া আর সব শেষে ওকে ছেড়ে আশফিকের চলে যাওয়া, এ সব কিছু মিলিয়ে আর কারও প্রতি ও প্রয়োজনের বেশি প্রত্যাশা কখনোই রাখে না। তাই আর মন খারাপ সমস্যাটাও ইদানিং আর হয় না। নিজের জীবনের লক্ষ ছাড়া ওর ভাবনাতে আর কারও ঠায় নেই।

শুনশান, নিঃশব্দ ঘরটাতে চোখে ঘুমও আসছে না, মনটাও টিকছে না। আজও মেজো নানার বাড়িতে যাওয়া হয়নি। রাতের খাবার সেড়ে ঘরে বসে জারিনদের সাথে আড্ডা দিয়ে দিব্যর সাথে কথা আরম্ভ করেছিল দ্রুতই, যাতে আশফিকের মুখোমুখি হবার সুযোগ না থাকে। ঘর থেকেও এ কারণে সন্ধ্যার পর থেকে বের হয়নি ও। কিন্তু এই মুহূর্তে শীতের ওই কনকনে হাওয়াটাই জরুরি এলোমেলো মস্তিষ্ককে গোছানোর জন্য। দিব্যর সাথে কথা বলে মন, মস্তিষ্ককে সতেজ করতে চেয়েছিল। হলো তো বিপরীত৷

পায়ের ওপর থেকে কোমল লেপটা সরিয়ে গায়ে শ্রাগটা জড়িয়ে বারান্দাতে এলো। এ বাড়ির দো’তলার বারান্দাগুলোও বাড়ির উঠান বরাবর৷ দো’তলার বারান্দাকে ঠিক বারান্দা বলা উচিত হবে না। স্তম্ভপরিবেষ্টিত ঘুরান গলির মতো ঘরের সামনের জায়গাটুকু। আর ঘরগুলো এক সারিতে পাশাপাশি হওয়াতে অনেকটা লেডিস হোস্টেলের ঘরগুলোর মতো লাগে দেখতে। অনেক পুরোনো নকশাতে তৈরি করা বাড়ি বলে কথা! সালাম শিকদার তা পরিবর্তন করতে চান না একেবারেই। তিনি মারা যাবার পর না হয় ছেলেদু’টো নিজেদের মতো করে বানিয়ে নেবে কিছু৷

আসমানের হিংসাত্মক পূর্ণ চাঁদটার দিকে আজ আর দেখতে ইচ্ছে হলো না ওর। হিমশীতল পরিবেশে দাঁড়িয়ে চোখদু’টো বুঁজে সন্ধ্যার সময়টা মনে করল আরও একবার। তিনটা মাসে আশফিক ওকে যতটা ভালোবাসতে বাধ্য করেছিল, মাত্র একটাদিনের ওর করা চরম অপমান সেই তিন মাসের ভালোবাসাকে হার মানিয়ে দিয়েছিল। সেই ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও যে ওর মধ্যে এখন আর উপলব্ধি হয় না, তা হয়তো আশফিক বুঝতে পারেনি৷ কিন্তু সেটা যে বোঝানো দরকার ওকে৷

-‘আমাকে নিয়ে চিন্তা করার থেকে বেটার অপশন সরাসরি আমার সাথে কথা বলা।’
আশফিকের আকস্মিক উপস্থিতিতে উদ্দীপ্ত নয়নে পিছু ফিরল মাহি। বেশ রাগ হলো, বকুনি দিলো ওকে, ‘এই বদ অভ্যাসটা পালটাবে না তুমি?’
মূলত আশফিকের উদ্দেশ্যহীন চোখজোড়া চন্দ্রমার দিকে স্থির। মাহির দিকে তাকাতেও রাগ হচ্ছে ওর।
সন্ধ্যার সময়ের রাগটায় আগুনে ঘি ঢালার মতো উস্কানি দিয়েছে ওর তিন বান্ধবী। মাহির কাছে দিব্যর কল এসেছিল ওদের তিনজনের সাথে গল্প করার মুহূর্তে, সেই জ্বালাময়ী সংবাদটা ওকে জানানোর পর থেকে ততক্ষণ অবধি ও ফেইসবুকে সক্রিয় ছিল, যতক্ষণ মাহি ছিল। নিদারুণ অধৈর্য আর ক্ষিপ্ততা নিয়ে মনশ্চক্ষু ওর কল্পনা করছিল দিব্য, মাহির আনন্দঘন প্রেমালাপন। সেই থেকে বিনিদ্র রক্তচক্ষু নিয়ে সারা বাড়ি টহল দিয়ে বেরিয়েছে, বাড়ির বাইরে গিয়ে বসে থেকেছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত কাতর হয়ে ঘরে ফেরার মুখে দাঁড়িয়ে পড়ে মাহিকে ঘর থেকে বের হতে দেখে।

অস্থির চোখদুটো ঘুরিয়ে মাহির দিকে ফিরতেই মাহির শুষ্ক ঠোঁটদু’টোতে নজর আটকাল ওর। কুঁচকে ঠোঁটদু’টো শক্ত করে রয়েছে কেমন। অনুসন্ধিতসু হয়ে এগিয়ে এলো, জিজ্ঞেস করল, ‘কার ওপর চোটে আছ? কানাডিয়ান চোরটার সঙ্গে ঝগড়া করে এসেছ?’ বলতে বলতে চোখজোড়া দীপ্তাক্ষ হয়ে উঠল আশফিকের। অমনিই ধমকে উঠল মাহি, ‘তোমার এত খুশি হতে হবে না। ঝগড়া বিবাদ না হলে দুজন দুজনকে মিস করব কীভাবে?’
-‘ওহ, ওয়াও! আমার ঢিল তাহলে ঠিক জায়গায় লেগেছে। আমার মতো করে তোমার কানাডিয়ান চোরটা তোমাকে বুঝতে পারে? বলো তো কী করে টের পেলাম তুমি রেগে আছ?’
ওর মতোই মুখে অধীরতা ফুটিয়ে ব্যঙ্গ সুরে শুধাল মাহি, ‘কী করে টের পেলে শুনি?’
এই প্রশ্নটা শোনার অপেক্ষাতেই ছিল আশফিক। চোখেমুখে দুষ্টুমি হাসি খেলা করছে ওর। স্লিপওয়্যারের প্যান্ট পকেট থেকে হাতটা বের করে আচম্বিতে মাহির নিম্ন ঠোঁটটাতে ছুঁয়ে দিলো, বুঝে উঠবার মতো সময়টুকু না দিয়ে খুব কাছটাতেও চলে এলো, চুপিচুপি চাপাস্বরে বলল, ‘আমার ওপর রাগ করে থাকা এমন করে কুঁচকে রাখা ঠোঁটদু’টো কতবার ভিজিয়েছি বলো তো?’

কী বর্বর এই লোক! দুনিয়ার সব থেকে বড়ো সুবিধাবাদী একটা! সুযোগের সৎব্যবহার কী করে করতে হয় তা কি এই নিষ্ঠুর ব্যক্তিটার থেকে অধিক কেউ জানে? এই একটি বাক্যেই না চাইতেও ভালোবাসাবাসির চূড়ান্ত মুহূর্তের অনুভূতিতে লেপে গেল মাহির সারা শরীর। এমন অদৃশ্য লজ্জাজনক অনুভূতির খেলা তার মধ্যে প্রকাশ পাবার আগেই অতিদ্রুত সরে পড়া উচিত।

এক পা পিছু হটে ছুট দিলো সে, তবে দুর্ভাগ্য ছিল কিনা! আশফিক খপ করে ওর হাতটা ধরে ফেলল পালানোর পূর্বেই, টেনে ধরে কাছে আনল, ‘পালাচ্ছ কেন সোনা? এখন তো আমি তোমার না হওয়া জামাই। তাও সম্ভাবনা আছে না কি চুমুটুমু হবার?’
দুষ্টু হাসির ফুলঝুরি ছুটছে আশফিকের চোখমুখ থেকে। আরক্তিতে মাহির গাল গরম, কান লাল। পুরুষালি শক্ত, খসখসে হাতের মুঠোয় থাকা তার কোমল হাতটা ছুটাবার অক্লান্ত চেষ্টা করতে করতে হুঙ্কার দিয়ে উঠল, ‘ছাড়ো হাতটা শয়তান মানুষ! তোমাকে এক বিন্দু বিশ্বাস করি না।’
এখন আর মাহির কথাতে আশকারা না থাকলেই বা কী! যে আশকারা চার বছর আগেই পেয়েছে সে, সেই আশকারাতেই এক ঝটকায় ওকে নিজের বুকে এনে ফেলল, দু’হাতের বেষ্টনিতে ওর কোমর জাপটে ধরে ইচ্ছাকৃত কামনা – পীড়িত হাস্কি গলায় বলল, ‘আই লাভ ইয়্যোর নটি অ্যান্ড ক্যাডিশ মাইন্ড।’ বলে অপেক্ষা আর না করে দু’জোড়া ঠোঁটের মাঝের দূরত্ব কমিয়ে আনতে না আনতেই মাহি শিকদার বাড়ি কাঁপিয়ে উঠল, ‘না একদম না! শয়তান একটা তুই!’

ইসরাত জাহান দ্যুতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here