রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ৭

0
504

রোদ্দুরে ভেজা বুকপকেট – ৭
_________________________

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]

রাতের সেই কৌতুককর ঘটনাটার পর সারাটা দিনে মাহিকে আজ নজর মুখে পড়ল না। নাশতার টেবিলেও ওকে পায়নি আশফিক। ওই রাতের ব্যাপারটা নিয়ে কি মাহি বেশিই ভেবে নিয়েছে? ও তো মাত্র দুষ্টুমি করেছিল। নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান আছে ওর। বাড়াবাড়ি ও একদমই করত না। কিন্তু তার পূর্বেই মাহির ভয়াবহ চিৎকার! ও অবশ্য নিজেদের কলঙ্কমুক্ত রাখতে দ্রুত ঘরে ছুটে এসেছিল।

সালাম শিকদারের ঘরে একবার যাবার ইচ্ছা হলো আশফিকের। প্রথম দিনে দু’বার এসে দেখা করেছিল নানাজানের সঙ্গে। সেদিন সন্ধ্যাতেও তাঁর পায়ের কাছে পড়েছিল ও, যতক্ষণ না নানাজান কথা বলছিলেন ওর সঙ্গে। পুরো এক ঘণ্টার মাঝে ও ক্ষমা চাইবার বিনিময়ে মাত্র একটি বাক্য নানাজান ব্যয় করেছিলেন সেদিন ভারী গলায়, ‘এইখানেই থাইকে যাইয়ো।’

ঘরের দোরমুখে গিয়ে অস্থিরচিত্তে দু’বার পায়চারী করল, ফিরে যাবার কথা ভেবেও অন্তত নানাজানের মন পুনরায় জয় করবার জন্য দ্বিধা ঝেড়ে ঘরে ঢুকে পড়ল। শিকদার সাহেব তখন ঘুমিয়ে। হতাশ হয়ে আশফিক চলে এলো আবার। মনটা মাহির মাধুর্যময় মুখটা দেখবার জন্য কী ভীষণ যে পুড়ছে! বলতে খারাপ লাগলেও চার বছর আগে বুকের ভেতর এখনের এই জ্বালাপোড়া কখনোই হয়নি, না হয়েছে উথাল-পাতাল প্রেমের অনুভূতি। তিনটা মাসের সৃষ্ট মায়াতে সেদিন আটকা না পড়লেও আজ ভালোভাবেই সেই তিন মাসের স্মৃতিতে মাকড়শা জালের মতো জড়িয়ে পড়েছে ও, তাও গুরুতরভাবে৷ এই প্রেম আগুনে ওই চার বছর আগেই কেন দগ্ধ হলো না? সদ্য হওয়া যন্ত্রণার থেকেও কাঁদায় তো বেশি স্মৃতি। কেননা স্মৃতির আরেক নামই যে বেদনা।

***
-‘তোমাকে খুব বেশিই আপসেট লাগছে, আশফিক। কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো এখানে? দেখো, তুমি হলে খাস মেহমান শিকদার বাড়ির৷ তোমার যত্নআত্তির ত্রুটি রাখা যাবে না যে।’

রায়ানের চিন্তিত মনোভাবের আড়ালে তার জন্য ভর্ৎসনা উপলব্ধি হলেও মনে আঁচড় কাটল না আশফিকের। শুষ্ক ঠোঁটজোড়া জিভের ডগায় সিক্ত করে ওর পুরু ঠোঁটজেড়াতে হাসি টানল, সেই সাথে ওর কৃষ্ণ চোখের তারাও হাসল। রায়ান তাতে মুগ্ধ হয়। পুরুষ হয়েও আরেক পুরুষের মনোরম হাসিতে চোখ আটকে যায় ওর। একটা সময় নিজের বোনজামাইয়ের এই প্রশংসনীয় সুন্দরতা ওকে মনেমনে পুলকিত করত বেশ৷ আল্লাহকে শুকরিয়াও জানাত বোনের ভাগ্যে এই অমায়িক পুরুষটিকে লিখে রাখবার জন্য। এখনো এই লম্বা, সুন্দর মুখটা দেখলে কেমন মায়া আসে। কিন্তু তার পূর্বে ঘৃণাটাও যে ঠেলে আসে। তা তো আর চাইলেও ধরে রাখা যায় না।

নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আশফিক নিষ্প্রভ হাসিতে মেতে রইল৷ মাহির ফোন নাম্বারটা রায়ানের থেকে পেতে খুব আশা নিয়ে এসেছিল সে। চারটা ঘণ্টা মাহিকে না দেখে আজ ওর এত বেশি মাহিকে হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছে যে , ও কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিল নিজের গর্হিত সেই অন্যায়ের কথা। নিশ্চুপ রয়ে এখন নিজের প্রতি নিজেই তাই তিরস্কার জানাচ্ছে।

বাড়ির সামনের রাস্তাটার পাশে সকালের মিঠা রোদ্দুরে ওরা দাঁড়ানো। আশফিকের গোলাপী আভার মুখটা হঠাৎ পাণ্ডুবর্ণ হয়ে পড়তেই ওর প্রতি মায়াখানি রায়ানের উপচে পড়ল এবার, কাঠ গলায় জানাল, ‘কমিউনিটি সেন্টারে গিয়েছে। দু দু’টো বিয়ের অ্যারেঞ্জমেন্ট দাদা ওকেই সামলাতে বলেছে।’

বিষয়টি বোধগম্য হলো না আশফিকের। এসব তো ছেলেদের দায়িত্ব। মাহিকে কীভাবে এই দায়িত্ব দিতে পারলেন নানাজান? তিনি মুক্তমনা হলেও আদতে কি আধুনিকমনস্ক? উহুঁ, খুব একটা নয়৷ হয়তো তিনি তার পরিবারকে শিক্ষিত করেছেন, তবে তা কেবল মেজো শিকদারের সঙ্গে পাল্লা দেবার জন্যই। মেজো শিকদার ছিলেন ওই পুরোনো সময়কার হাই স্কুলের শিক্ষক। তাই নিজের ছেলে-মেয়েদের মেরেধোরে হলেও পড়াশোনাটা করিয়েছেন। তবে তিনি মানুষটা একেবারে খাঁটি ছিলেন না। সুদের ব্যবসাও করতেন তিনি। যেটা ছোটো শিকদারের খুবই জঘন্য লাগত। যার জন্য মেজো ভাইয়ের সঙ্গে প্রায়ই তার গোলমাল লাগত, আর সেই গোলমালের সময় মেজো শিকদার প্রায়শই ছোটো শিকদারকে অশিক্ষিত, মূর্খ বলে গালি দিতেন৷ এমনকি ছোটো শিকদারের ছেলে, ছেলেবউদেরকেও ছাড় দিতেন না। সেই জিদের বশে তিনি ছেলেদেরকে তো বিএ পাস তো করিয়েছেনই, ছেলেবউ দু’জনকেও ধমকে ধমকে পড়িয়ে একজনকে এসএসসি আর আরেকজনকে এইচএসসি পাস করিয়েছেন।

তো কথার আসল প্রসঙ্গ হলো তিনি হঠাৎ কেন মাহিকে এইরকম একটা দায়িত্ব দিলেন? সন্দেহ ভুল না হলে নানাজানও কি তবে ওর থেকে মাহিকে দূরে রাখতেই এমন বুদ্ধি এঁটেছেন? এই নাটকীয় পরিস্থিতিগুলোতে আশফিকের কেমন যেন মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে৷ হাসিও পায়, কান্নাও পায়!
-‘নানুভাই হঠাৎ এমন দায়িত্ব ওকে দিলেন যে? এক্সাক্ট কোনো কারণ আছে কি?’
হাসির ধমকের স্বরে রায়ান উত্তর দিলো, ‘ওকে শক্তপোক্ত করতে চাইছে দাদা।’
এরপরও ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো না। আশফিক ধরেই নিলো, শুধু ওর থেকে দূরত্বে রাখতে নানাজানের এমন আয়োজন। আশি শতাংশ মানুষগুলোই তো ওর বিপরীতে। নিজের ভুলের কি আর ক্ষমা মিলবে না কারও থেকে?

রিমন, রুমকি, বাড়ির আরও ছোটো সদস্যরা মিলে জারিন, পরাগ সবাইকে নিয়ে ভোরবেলাতে হাঁটতে বেরিয়েছিল। হেঁটে ফিরবার পথে বড়ো শিকদারের বাড়ি মুখো হতেই সে বাড়ির সদস্য রুমকিদের ডেকে এনে আতিথেয়তা করে, আপাতত ওরা সবাই ওখানেই রয়েছে। আশফিকের ঘুম থেকে উঠতে বেলা হয়েছিল বলে ওদের সঙ্গে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। মন খারাপের এই সময়টুকু ও কার সঙ্গে ভাগাভাগি করবে এখন? পরাগদের কল করে ফিরতে বলতে চেয়েছিল। কিন্তু ওর জন্য ওদের উপভোগ্য ক্ষণটুকু আর নষ্ট করতে চাইল না। দিলিশা ঝিনাইদহ যাবার পর কথা বলা হয়নি ওর সঙ্গে। তাই মন খারাপের একাকিত্ব ঘুচাতে ওকেই কল করল। রিং বাজতে না বাজতেই দিলিশা রিসিভ করে ফেলল কল, যেন ফোনটা হাতে নিয়ে বসেছিল ওর কলের অপেক্ষায়।

-‘এতক্ষণ পর মিস করলে অ্যাশ?’
অকপটে স্বীকার করল আশফিক, ‘আসলেই। অনেকের মাঝে মজাই ছিলাম তো। স্যরি অ্যাবাউট দ্যাট। কেমন আছ? কী করছিলে?’
-‘অগণিতবার মিস করছিলাম তোমায়।’
সিনেমার দৃশ্যপটের মতো মুহূর্তেই বর্তমান থেকে পেছনে ফেলে আসা চার বছরের প্রেমালাপ ক্ষণ ভেসে উঠল অন্তরের আয়নাতে। সময়টা ছিল শুধু ওর আর মাহির৷ খুব সহজ ভাষায় মাহি বলত, ‘হিসেবের বাইরে তোমাকে মিস করছি, আশফি।’

খট করে কলটা কেটে দিলো আশফিক৷ কল্পনা, স্মৃতি আর স্মৃতি, কল্পনা! উফ! এর বাইরে সে চলতেই পারছে না! হাসফাস লাগছে, যেন পানির নিচে দম ফুরিয়ে এলো। মাহির ভালোবাসাতে এক চিলতা ভালোবাসা জন্ম নিলো না! অথচ মাহির অবহেলায় এখন ভালোবাসা-বাসিতে তলিয়ে যাচ্ছে ও রীতিমতো! আহা! প্রকৃতির শোধ এত নিষ্ঠুর কেন?

বিছানা থেকে ঝপাৎ করে নেমে ওয়াল শোকেসের সাথে লাগোয়া আয়নায় নিজের সৌম্য চেহারা, পরিপুষ্ট শরীরখানায় পরিপাটি করা মহানীল রঙা শার্টটা জড়িয়ে নিলো, গাড়ির চাবিটা নিয়ে রায়ানের থেকে জানা কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেল সোজা। কিন্তু ওখানে যাবার পর মাহি কী বলবে? তা ভাবতেই মনকে জোরালভাবে শাসন করল নিজেই, ‘মাহি তো আমার আপনই৷ ওর সামনে আবার কীসের জড়তা, কীসের লাজ?’

***
তড়তড় করে মেজাজ বাড়ছে মাহির। বাড়ি ভর্তি চতুর পুরুষলোক থাকতে কোন যুক্তিতে নানাজান তাকে বিয়ে আয়োজনের দায়িত্ব দিলো বুঝে আসছে না। এখন চিন্তা বিয়ের দিন টেবিলে টেবিলে খাবার-দাবার বেড়ে দেওয়ার দায়িত্বটাও না ওকে দেওয়া হয়!

ম্যানেজমেন্টকে হাতে কলমে সব কিছু বোঝাতে হচ্ছে। ওদের বাড়তি কথাবার্তা, মাতব্বরি মাহির শীতল মস্তিষ্কে ওলট-পালট করে তবেই ওরা ক্ষান্ত হলো৷ সেন্টার থেকে বেরিয়ে তাই এই শীতেও ঠান্ডা পানীয় খাবার জরুরিবোধ করল খুব।

কিন্তু দোকানে গিয়ে একটা ঠান্ডা স্পিড ক্যান কিনে রাস্তা পারাপার হবার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেল চোখের পলকেই। বাইকার ছেলেটা বামে খেয়াল না করে রাস্তা পার হওয়া এক মহিলার গায়ের সঙ্গে ঘেঁষে চলে গেল। মহিলাটি মুহুর্তেই দড়াম করে ছিটকে এসে পড়ল ওর পায়ের কাছে। ঘটনাটা থানার একদম কাছেই ঘটেছে। তবে পুলিশের নজরে যাওয়ার পূর্বেই আমজনতার ক্ষোভে শিকার হলো বাইকার। তবে ছেলেটি ভীষণ অনুতপ্ত, ক্ষতি পূরণ দিতেও স্বীকার। চাইলে বাইক টেনে চলে যেতেই পারত। কিন্তু সে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে নিজেই ফিরে আসে। কলেজের ছেলেপুলেরা ওকে বাইক থেকে টেনে নামিয়ে হাতাহাতি শুরু করেছে সবে। সেই মুহূর্তে আশফিকের গাড়িটাও থেমেছে ওখানে, রাস্তার মাঝে ঝামেলা হতে দেখে। মাহি মহিলাটিকে ফার্মেসীর দোকানে বসিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে শুরু করেছে আরও দুজন পথচারী মহিলাকে নিয়ে। দূর থেকেই বাইকার ছেলেটির কণ্ঠ ভেসে আসছে তখন, ‘ও ভাই, বিশ্বাস করেন আমি ইচ্ছা কইরে করিনাই। আমার ভুল হয়ে গেছে খেয়াল না করা! আমারে মাফ করেন ভাই! ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে! আমি উনার যা ক্ষতিপূরণ লাগে সব দিবো। আমার কথাখান তো শোনেন ভাই!’

কথা শোনার কী প্রয়োজন! তার এই খেয়াল না করার ফল তো মহিলাটির জীবনও যেতে পারত। কোনো মাফ নেই৷ মহিলার যতটুকু রক্ত ঝরেছে, তার দ্বিগুণ রক্ত তার ঝরাতে হবে। কোনো পুলিশ, আইনের ধারও ধারা যাবে না৷ তাকে গণপিটুনি দিয়ে প্রয়োজনে মেরে ফেলা উত্তম।

কলেজের অল্প বয়সী ছেলেগুলো আর রাস্তার কিছু পথচারীদের রক্তগরম ভীষণ৷ তাদের মনের কথা বোধ হয় এমনই৷ বাইকার ছেলেটিকে লাথি, ঘুষি মেরে দুটো দাঁত ভেঙে ফেলা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। আরও ক’টা দাঁত এমন চলতে থাকলে ভেঙে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। যতটুকু তাকে শাস্তি দেওয়ার তার থেকে অতিরিক্ত হয়ে গেলে যে একই অপরাধী বনে যাবে বাকিরাও। এর থেকে শ্রেয় বোধ হয় এবার তার থেকে মহিলাটির জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রয়োজনে পুলিশের দায়িত্বে তাকে ছেড়ে দেওয়া। মারধোর যথেষ্ট হয়েছে, শিক্ষা হলে এমন বেখেয়ালি আর হবে না সে।

কেউ বাঁধা দিচ্ছে না দেখে মাহি এগিয়ে গেল ভীড়ের মধ্যে। কিন্তু আশ্চর্য হলো, ছেলেটির পিছে একটা মেয়েও ছিল যাকে ও প্রথমে খেয়াল করেনি। মেয়েটি হবে হয়তোবা বোন অথবা বউ কিংবা বান্ধবী। খুব চেষ্টা করছে সে ছেলেটিকে সকলের হাত থেকে রক্ষা করবার জন্য, বেচারি হাউমাউ করে কাঁদছেও। এই ব্যাপারটাও আশ্চর্যজনক, তবে মাহি এ দেখে আশ্চর্য হলো না। ও দেখল দু’টো ছেলে এই সুযোগে সবার চোখের অগোচরে মেয়েটির গায়ে নোংরা স্পর্শ করে নিপীড়িত করছে, সাথে অশ্লীল ভাষার গালাগাল আছে। এরই মধ্যে আরও উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটে গেল। মেয়েটিকেও চড়, থাপ্পড় দিতে শুরু করল একজন।

ছুটে এসে মাহি ওদের হাত থেকে ছেলে-মেয়ে দুজনকেই বাঁচাতে লেগে গেল। কিন্তু এর মধ্যে যে ওকেও ওই নোংরা স্পর্শের সম্মুখীন হতে হবে তা প্রচণ্ড উত্তেজনায় ও ভুলেই গিয়েছিল। এই ভীড়ের মধ্যে কার হাতের দ্বারা যেন দলিত হলো ওর বুকের স্পর্শকাতর জায়গা। সেই হাতের ছোঁয়াই ওর পশ্চাতে মাত্র পড়তেই পেছন না ফিরেই হাতখানা খপ করে ধরে ফেলল। রোষকষায়িত দৃষ্টিতে তার দিকে ফিরেই চড়াত করে তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। সেই শব্দে কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলে নিস্তব্ধ হতে বাধ্য হলো। বিপদ তখন নাকের ডগায় মাহির। ছেলেটি ছিল কলেজের। তার বাকি বন্ধুরা মুষ্টি বদ্ধ করে তেড়ে আসতেই আরও চমকে দিলো মাহি সকলকে। আত্মরক্ষার জন্য মার্শাল আর্ট, জুডো, তায়কোয়ান্দোর শারীরিক কৌশলের একটি আজ দারুণভাবে ব্যবহার করে বসল ও। লাথিটা চোখের নিমিষে ছেলেটির অণ্ডকোষে লাগিয়ে দিয়েও থামল না। খ্যাপা ষাঁড়ের মতো তেড়ে গিয়ে মধ্য আঙুলের আংটিটা আঙুলের মাঝ বরাবর এনে এলোপাথাড়ি ঘুষি মেরে গেল ওর নাক, চোয়ালে। নাক ফেটে, চোয়াল থেঁতলে রক্তে মাখামাখি ছেলেটির মুখ। মারতে মারতে রাস্তার ওপর শুইয়ে ফেলতেই ক’জন এসে আটকে ধরতে চাইল ওকে। তাণ্ডব করবার ঝোঁক চেপে গেছে মাথায়, তাই বোধ হয় কেউ এই মেয়েলী শক্তির কাছেও পেরে উঠল না। কীভাবে, কোন কায়দায় যেন কাকে কাকে লাথিতে ওদের সটকে দিয়েছে মাহি। কারও লেগেছে বুকে, কারও পাঁজরে, কারও পেটে, কারও বা হাঁটুতে।

আশফিক ভীড় ঠেলে ঢুকতেই খ্যাপা মাহিকে দেখবে তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি একদম নিশ্চিত! শিকার ছিঁড়ে খাবে সেই উত্তেজনায় উন্মাদ প্রায় সিংহের মতো দেখাচ্ছে মাহিকে। আশেপাশে কী যেন খুঁজে চলেছে আলুথালু অবস্থায়৷ মনে হয় তা পেয়েও গেল। দোকানের সামনে রাখা স্টিলের ভারী চেয়ারটা একটানে হাতে উঠিয়ে দৌঁড়ে এসে একদম অবিশ্বাস্যভাবে, পলক ফেলার পূর্বেই আর আশফিক পরিস্থিতি বুঝে ছুটে আসার আগ মুহূর্তেই উৎপীড়ন করা ছেলেটির মাথা, ঘাড় পেচিয়ে আঘাত করে বসল৷ তপ্ত মেজাজ তখনো শীতল হয়নি ওর। সময় ব্যয় না করে পুনর্বার চেয়ারটা উঁচুতে তুলে আঘাত করতে উদ্যত হতেই আশফিক পেছন থেকে চেয়ারটা হাত থেকে কেড়ে নিলো। যার খেসারত গুণতে হলো ওকেও৷ মাহির রোষানলে পড়ে এক মুষ্ট্যাঘাত ওর চেহারাতেও পড়ল। তবে আশফিক চকিতে মুখটা সরিয়ে নেবার জন্য ঘুষিটা থুঁতনিতে লাগল ওর। রাগে উন্মাদ মাহি আশফিকের মুখটাও দেখছে না। ওকে জাপটে ধরার অপরাধে আশফিককে মেরেই ফেলবে, এটাই ওর লক্ষ্য। ওইদিকে যে রক্তে বয়ে যাওয়া রাস্তাটায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ছেলেটি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, তা দেখেও এবার কোনো জনতা এগিয়ে এলো না, তবে পুলিশ ডাকতে এবার ভুলল না ওরা।

ইসরাত জাহান দ্যুতি

এডিট ছাড়া পর্ব। আজ মন্তব্য দেড়শো প্লাস হলে টানটান উত্তেজনাকর আরেকটি পর্ব ইন শা আল্লাহ আগামীকালই দেবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here