জীবনে_তুমি_সেরা_সত্যি পর্ব – ৯

0
376

#জীবনে_তুমি_সেরা_সত্যি

পর্ব – ৯

দিশান বরাবরই ভীষণ আহ্লাদী হলেও সে অনেক ম্যাচিউর তার মনের গোপন অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে । কিছু ক্ষেত্রে মন খারাপ বা কষ্ট সে কাউকে বুঝতে দেয়না। সে নেহালের এতটা সোজাসাপটা জবাবে তার অনুভূতি একদম চেপে গেলো । সে মোটামুটি সহজভাবেই ঘুরতে লাগলো। নেহাল তাকে তার বুয়েট ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে আনলো,টিএসসি থেকেও ঘুরিয়ে আনলো,টুকটাক রাস্তার ধারে খাওয়াদাওয়া করলো। নেহাল বুঝতে পারছে দিশানের খারাপ লেগেছে কিন্তু এখন দিশানের মন ভুলাতে সে তো তিনাকে ছোট করতে পারে না। এটা সত্যি যে তাদের মাঝে বন্ধুত্বের বেশি কিছু নেই কিন্তু তিনা যে তাকে নিয়ে আগানোর কথা ভাবতো সেটা নেহাল বুঝতো। নেহালের মনেও যে কয়েকবার হানা দেয় নি এই চিন্তা তা অস্বীকার করতে পারবে না। কোন একপাশ থেকে আহ্বান আসলে অন্য পক্ষ হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারতো না। কিন্তু সেই আহ্বান আসেনি বলেই মনের গোপনে ভাবনাটা এসেও মিলিয়ে গেছে। তাই তিনাকে নিয়ে দিশানকে জানানোর মতো কিছু নেহালের মনে নেই বলেই কখনো কথা উঠেনি। তবে দিশান নিজে থেকে কথা তুলে ভালো করেছে, সন্দেহের চোরা কাটা খুব খারাপ জিনিস,যতবার নেহালকে কথা বলতে দেখতো তিনার সাথে,দিশানের মনের কাঁটাটা মনের মধ্যে খোঁচাত। তারচেয়ে সাময়িক মন খারাপ হলেও স্বচ্ছতা টুকু দরকার ছিলো। এখন তারকাজ হচ্ছে দিশানের মনটা ঠিক করে দিয়ে ওকে স্বাভাবিক করে দেয়া। সেটা কিভাবে করবে এক পলকে ভেবে নিলো নেহাল। ভেবে নিয়ে বাড়ির পথে গাড়ি ঘুরালো।
দিশান বাড়ি এসে রুমে ঢুকে গেলো৷ জামা কাপড় হাতে নিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে ঢুকতে নিবে, নেহাল হাত ধরে পিছন থেকে টান দিলো দিশানকে, আস্তে করে ঘুরিয়ে নিলো তারদিকে,
– কথা ছিলো তুমি তোমার কষ্টগুলো আর লুকাবে না,আমাকে জানাবে,তো এখন এমন কি ক্ষিদে পেলো যে কান্না গিলে গিলে খাচ্ছো?
দিশান হেসে দিয়ে বললো,
– ওগুলো গিলে গুলে খেয়ে নিয়েছি। হজমে একটু অসুবিধা হচ্ছে এই যা। ভাববেন না,আমার হজমশক্তি খুব ভালো৷ একটু সময় দেন, ঠিক হয়ে যাবে।
– না,কোন সময় দেয়া হবে না তোমাকে। যা গলাধঃকরণ করেছো,এবার উদগীরণ করো দেখি।
দিশান কিছু না বলে হাত ছাড়িয়ে ঘুরে চলে যেতে চাইলো। নেহাল হাত ছেড়ে মুখটা দুই হাতে তুলে ধরলো,
– দিশান….তাকাও তো আমার দিকে। তাকিয়ে বলো তো ঐদিনের মত,তুমি আমার কি হও?
দিশান কোন উত্তর করলো না।
নেহাল ওর মুখটা আরো কাছে নিয়ে গেলো দিশানের।
– তুমি আমার কে দিশান?
নেহাল এভাবে কাছে আসাতে কেমন একটু কেঁপে উঠলো সে। জবাব দিয়ে দিলো কাটা কাটা ভাবে,
– ওয়াইফ।
– ‘ওয়াইফ’ শব্দটার অনেকগুলো সমার্থক শব্দ আছে,তার মাঝে একটা হলো অর্ধাঙ্গিনী। মানে তুমি আমি এমনিতে দুইটা স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ হলেও যেদিন থেকে ঐ রেজিস্ট্রি খাতাটাতে সাইন করেছি ঐদিন থেকে আমরা একে অন্যের পরিপূরক। আমরা একজন আরেকজনকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। তাই এই অর্ধাঙ্গ – অর্ধাঙ্গিনী শব্দটার উদ্ভব। দুইজন মিলে একঅঙ্গ। সেই একঅঙ্গের মাঝে অন্য কিছু বা অন্য কেউ কিভাবে ঢুকবে বলো? সেই কথা কেন উঠাবে তুমি? তিনা মানুষ হিসেবে, বন্ধু হিসেবে কেমন সেইসব ব্যাখ্যা তোমাকে দিতে পারবো আমি কিন্তু যেদিন থেকে তোমাকে বিয়ে করেছি সেই মূহুর্ত থেকে বউ হিসেবে সে কেমন হতো সেই ভাবনাটাও মনে আসবে না আমার,কোনদিনও আসবে না আর। ” তিনা পারফেক্ট ম্যাচ হতো” ভাবনাটা বিয়ের আগের, যেদিন থেকে বিয়ের কথা ফাইনাল হলো সেদিন থেকে আমাদের নিয়ে ভাবনা আমার সবটা জুড়ে, কিভাবে আমাদের সম্পর্কটা আগালে একটা মজবুত কিন্তু কোমনীয় ভিত গড়বে,আমি সেভাবেই নিজেকে তৈরী করেছি,নিজের ভাবনা গুলোকে সেভাবেই পাল্টে নিয়েছি। ছাব্বিশ বছরের এই নেহালের কি চাহিদা তার স্ত্রীর কাছ থেকে তা মেলাতে যাইনি,খুঁজতে চেয়েছি অষ্টাদশী দিশানের কাছে দাম্পত্যের মানে কি,সে কি চায় তার সঙ্গীর কাছে। গতবারের কয়টাদিন হাওয়ার উপর কেটে গেছে,তোমাকে বোঝার সুযোগ হয়নি। এবার প্রথমদিন বাসায় পা দিয়ে তোমাকে দেখেই মন স্থির করেছি এবার আস্তে আস্তে তোমাকে আবিষ্কার করে যাবো৷ জানো দিশান,একটা ছেলের কল্পনায় দাম্পত্য, স্ত্রী, সম্পর্ক,আদিম সেই চিরন্তন আকর্ষণ এসব নিয়ে যা ধারণা মনে থাকে আমি তার চেয়ে ব্যতিক্রম ছিলাম না। কিন্তু তুমি আমার ধারণটা পাল্টে দিয়েছো। আকর্ষণীয় দিশানের চেয়ে আদুরে দিশান আমাকে বেশি টানে। তোমাকে আবেশে জড়িয়ে ধরার চেয়ে তোমার গাল টেনে নিষ্পাপ আদর করতে আমার বেশি ভালো লাগে। রাতে আমার কাছ ঘেঁষে ঘুমালে তোমাকে আমার সাদা খরগোশের বাচ্চা বলে মনে হয়, উল্টাপাল্টা চিন্তা আসার আগে তোমার গায়ে কম্বল টেনে দেবার কথা,পা টা ঠিক করে দেবার কথা মাথায় আসে। এটা যদি স্ত্রীর প্রতি আবেগ হয় তাহলে আমি তোমার প্রতি আবেগে ভেসে গিয়েছি দিশান এই কদিনে। এবার আমার যাবার সময়ে মনে হবে আমি আরো অনেকটা শূন্যতা বহন করে নিয়ে যাচ্ছি। আমার খরগোশের বাচ্চাটাকে রেখে যাচ্ছি। আমার দিশানকে রেখে যেতে আমার এবার অনেক কষ্ট হবে দিশান৷
দিশানের দুই চোখ ছাপিয়ে জলের ধারা নামলো। কথাগুলো ওর ভিতরে তোলপাড় করে দিয়েছে। সে কোনভাবে কান্না থামাতে পারছে না। নেহাল এবার দিশানের কপালে তার কপাল ঠেকিয়ে বলল,
– মেয়েটাকে এত ছোট বয়সে এত আবেগের কথা বলতে চাইনি তো এজন্যই। কিন্তু সে তো আবার হিংসাত্মক নারী,আমার সাথে কাকে মানায়,আগে কি ভেবেছিলাম, কি বলেছিলাম এসব নিয়ে দাম্পত্য কলহ বাঁধাতে চাইছে। তাই এখন মনে কি চলেছে তা জানানোটা জরুরি হয়ে গিয়েছিলো। তাই আমার আবেগ বলে তাকে কাঁদাতে হলো। নয়তো আমার এত প্রিয় আদুরে গাল দুটোতে আমি জল নামতেই দিতাম না কখনো।
বলে চোখটা মুছিয়ে দিয়ে গাল দুটো টেনে দিলো। তারপর দুষ্টু চোখে বললো,
– কম্বল টেনে দেবার পর উল্টোপাল্টা চিন্তা কিন্তু ঠিকই আসে। মানে নিজেকে আটকে রাখি আর কি। পরে আবার নাবালিকা ধর্ষণে ফেঁসে না যাই। তাই সাত তাড়াতাড়ি আমার দেশের পাঠ চুকাতেই হবে বুঝলে। মনের উপর আর কতই জোর খাটানো যাবে কে জানে।
আবার রাঙা হয়ে উঠলো দিশান৷ লাজে রাঙা গালদুটো আবারো টেনেই দিলো নেহাল৷

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here