রোদেলা লেখা: #মাহাবুবা_মিতু পর্ব: ৩০

0
1142

#রোদেলা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ৩০

রিকশা খুঁজতে বালি ছেড়ে বাঁধা রাস্তায় উঠে রোদেলা। হেঁটে যেতে অনেক সময় লাগবে। রিসোর্ট থেকে সমুদ্র বিলাস অনেক দূরের পথ। সেখানে উঠতেই সামনে এসে দাঁড়ায় শোভন। বিরক্তির সর্বশেষ সীমানায় উঠে রোদেলার মেজাজ। না দেখার ভাব করে এড়িয়ে যেতেই ওর পাশাপাশি হাঁটা শুরু করে শোভন। রোদেলা একটা রিকশা ডাকতেই উঠে পরে ও, বলে ব্লু-মেরিন রিসোর্টে যান মামা। শোভন রিকশাটা আগলে রাখে। বলে-
প্লিজ রোদেলা সিনক্রিয়েট করো না, আমি জাস্ট পাঁচটা মিনিট সময় চাচ্ছি, প্লিজ নামো নাহলে আমি কিন্তু উঠবো রিকশায়।

কটমট করে তাকিয়ে বলে, সিনক্রিয়েট আমি করছি না আপনি করছেন…?
ছেলেমানুষ বলে, গায়ে জোর আছে বলে যা খুশি তাই করবেন আপনি…?
প্লিজ রিকশার হ্যান্ডেল ছাড়ুন বড় মামী ডাকছে, সময় নেই আমার এখন….

কোন বড় মামী ডাকছে না। আমি হাবিবকে দিয়ে কল করিয়েছিলাম তোমাকে।
মানে…!
হ্যা…
হাবিব…!
ঐ বেচারাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, ওকে অনেক অনুনয় বিনয় করে রাজি করিয়েছি।

মামা এই নেন আপনার ভাড়া, আর রোদেলা প্লিজ নামো…

কি ভেবে নিয়ে যেন রোদলা নামে রিকশা থেকে। এমন চোর পুলিশ খেললে হবে না। শোভনকে কিছু বলা দরকার শক্ত করে। এই ভেবেই নামে রিকশা থেকে….

একটু দূরের ঝোপঝাড় পরিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় আসে ওরা। জায়গাটা চেনে শোভন। একটা বড় গাছের নিচে পাশাপাশি দাঁড়ায় দুজন…

কিছুক্ষণ নিরব দুজন, শোভন কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। রোদেলা মনে মনে কথা গুছিয়ে নিচ্ছে….

নিরবতা ভেঙে শোভন বলে
: আমি খুবই দুঃখিত এ যাবতকালের সব ভুলের জন্য, প্লিজ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও…
: দুঃখিত বা ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। তবে আপনার এসব ছেলেমানুষী বন্ধ করা উচিত।

: মিথ্যা বলবোনা রোদেলা আমি জীবণে অনেক মেয়ের সাথে চলাফেরা করেছি, অবাধ মিশেছি। প্রেম-ভালোবাসাও যে করি নি তা বলবো না। তবে তোমার প্রতি আমার যে অনুভূতি তা পুরো জীবণে প্রথম আমি আবিষ্কার করেছি প্রথম যেদিন তোমাকে তোমাদের বাড়ি পৌঁছে দিলাম সেদিন। তোমাকে খেয়াল অবশ্য বিয়ের দিনই করেছিলাম আমি…

নাতাশা ভাবির বিয়ের দিন যে দায়িত্ব তোমাকে পালন করতে দেখেছি তা দেখেই তুমি যে আলাদা কেও তা বুঝেছি। তোমার বয়সী মেয়েরা ছবি তোলায় নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকে,
অথচ তুমি বড়দের মতো কোথায় কি দরকার, নাতাশা খেলো কিনা.., বরের গাড়িতে খাবার গুছিয়ে দেয়া হলো কি না তার খেয়াল রেখেছো… এসব কাজ তুমি করেছো অবলীলায়। সেদিন খুব সম্ভবত নিজে খেতেও সময় পাও নি তুমি…

এসব জিনিস আমাকে খুব টেনেছে তোমার প্রতি। আমি জানি তোমার জীবণে আমি হুট করেই কোন আয়োজন না করেই ঢুকে পরেছি, কিন্তু জানো কি আমি এসব কম বুঝি…
কোন কাজই ঠিকমতো করতে পারি না আমি। মনে যা আসে বলে ফেলি, না ভেবেচিন্তেই…

নাহলে কেও প্রথম দিনই ফোন দিয়ে বলে যে তোমার কলেজ এরিয়াতে এসেছি, একটু সময় দিতে পারবে কি না….? গাধা না হলে কেও এ কথা বলে…?

তারপরের প্রতিটি ঘটনায় আমার বোকামির ছাপ আমি রেখেছি। তোমার বাড়ি তে যাওয়া, চিরকুট আর কার্ড রেখে আসা, কল না ধরায় তোমার বাড়ি অবধি চলে আসা, এত রাত অবধি অপেক্ষা করা, এক্সিডেন্ট, আমার রুমে তোমাকে আটকে রাখা, তোমার হাত কেটে ফেলা…

সব সবকিছুই আমার এলোমেলো চিন্তার ফসল। আমি নিজেও অনেকটা এমনি এলোমেলো। গত রাতে আমার মনে হয় এসবের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত…

: ক্ষমা করে দিলাম আপনাকে…
আর কিছু বলবেন….

কটকটে স্বরে এসব বলে রোদেলা। আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু সময় বিরতি নিয়ে শোভন বলে…
: রোদেলা আমি যত তোমাকে জেনেছি তত তোমাতে ডুবে গেছি, আমি গুছিয়ে কিছু বলতে পারছিনা তবে তুমি কিন্তু বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাচ্ছি….

: হুম, বুঝতে পারছি, খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি আমি…
একটা মেয়ের অসহায়তাকে পুঁজি করে যা ইচ্ছা তাই করছেন আপনি… এসবকে আর যাই বলেন ভালোবাসা বলবেন না প্লিজ… আপনি মোহাচ্ছন্ন, কয়টা দিন যাক, দিন দুনিয়া দেখলে এসব ঘোর কেটে যাবে আপনার,

আপনি যে আমাকে কোথায় নামিয়েছেন আপনি নিজেও জানেন না। আপনর বোন আমাকে দু-চোক্ষে দেখতে পারে না। আর আপনার মা, যিনি আমাকে খুব ভালোবাসতেন তিনি আজ বিকেলে আমাকে দেখেও চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নিশ্চয়ই আপনার বোন কিছু একটা বলেছেন তাঁকে …
বলুন তো আমার অপরাধটা কি…?
কেন আমি তাদের কাছে এমন আচরন পাবো…?
আমি ব্রোকেন ফ্যামিলির নিন্মবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ে। আহামরি কিছু ও যে আমি নই তাও আমি জানি…

তারা যেটা করছে, তাদের জায়গায় আমি থাকলে আমিও হয়তো তাইই করতাম। এমন একটা বিতিকিচ্ছিরি পরিবারের কোন মেয়েকে এমন লেভেলের কেউ ভালেবাসতে পারে না।
সেটা হতে পারে দয়া কিংবা ললাস…

: আমাকে তোমার এত নীচ মনে হয়। তুমি যেই লালসার কথা বললে তা যদি সত্যিই আমার থাকতো তাহলে তোমায় যেদিন আমার ঘরে আটকে রেখছিলাম সেদিন অবশ্যই কিছু একটা ঘটতো, শক্তিতে তুমি পারতে না আমার সাথে, আর অক্ষত অবস্থায় ফিরতেও পারতে না। লালসা মিটাতে ঐ সময়টুকু অনেক সময়….

তারপর সেই রাতে যে তোমাকে আড়ালে নিয়ে গেলাম, সত্যি করে বলোতো আমার তোমাকে ধরার মাঝে কোন কামুকতা, বা লালসার ছাপ তুমি পেয়েছো….?

আমি ইচ্ছে করলেই কিন্তু তোমাকে এলোমেলোভাবে ছুঁয়ে দিতে পারতাম। পারতাম যা ইচ্ছে তাই করতে….
কিন্তু আমি তা করিনি কারন আমি তোমাকে সম্মান করি। তোমাকে সম্মান দিতে চাই।

রোদেলা কথাগুলো ভাবে। তবে ও জানে যত যাই ও বলুক, এ সম্পর্ক হওয়া সম্ভব না।

রোদেলা নিরবতা ভেঙে বলে-
: এত কিছু জানি না আমি, আমি শুধু জানি- এ সম্পর্ক হওয়া উচিত না, তাছাড়া আমি বিয়ে নিয়ে এখনো ভাবিনি, বিয়ে আদৌ করবো কি না তাও জানি না।

: কেন উচিত না…? আর বিয়ে করবে না কেন…?
তুমি মেয়ে তো…?

রেগে আগুন হয়ে যায় রোদেলা, এসব কেমন অসভ্য কথাবার্তা, মেয়ে তো মানে…? কি প্রমাণ দিবে ও শোভনকে যে ও মেয়ে… কোন উত্তর না দিয়ে অগ্নিমূর্তি হয়ে সেখান থেকে চলে আসে রোদেলা। শোভন নিজের করা প্রশ্ন নিজেই হতবাক, গাধা না হলে কেও এই কথা বলে….

পেছন থেকে হাত ধরে ও রোদেলার, ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে সরি রোদেলা। আমি তোমাকে দেখলে এলোমেলো হয়ে যাই, কি বলি তার আগামাথা ঠিক থাকে না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো।

: রোদেলা ধমকের সুরে বলে, ছাড়ুন আমাকে… ছাড়ুন বলছি….
: আগে বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো…
: আপনি একটা সাইকোপ্যাথ,
: আমার নিজেরও তাই মনে হয়, আমার চিকিৎসার প্রয়োজন, আর তুমিই একমাত্র পারো আমাকে ঠিক করতে…

বলেই ওর দুইপাশে দুই হাত ধরে একেবারে কাছে টেনে নেয় ওকে। হাত নাড়াবার শক্তি নেই রোদেলার। ওর পরনের একটা শার্ট, গলায় পাতলা স্কার্ফ ঝোলানো। চিবুক বরাবর নিচের দিকটা উন্মুক্ত হওয়ায় ছোট্ট তিলটা দেখা যাচ্ছে। এত কাছ থেকে এমন দৃশ্য দেখে যে কোন ছেলের মাথা খারাপ অবস্থা হওয়ার কথা। রোদেলা হাত দিয়ে স্কার্ফ টেনে দেয়।

কোত্থেকে বাতাস এসে মুখের কাছে এলোমেলো ভাবে আছরে পরে চুলগুলো অবিন্যস্ত করে দেয়, সাথে স্কার্ফটাও সরে গিয়ে উন্মুক্ত হয়ে যায় গলার কাছের জায়গাটা। ভয়ে রোদেলার নিশ্বাস দ্রুত পরতে থাকে, এখানে আসা টাই ভুল হয়েছে ওর। শোভন রোদেলার আরো কাছে মুখটা নিয়ে বলে

: পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কষ্ট কি জানো….?
সেটা হচ্ছে, প্রিয়তমার এত কাছে এসে ও তাকে ছুঁয়ে না দেবার কষ্ট, এ কষ্ট সহ্য করার সংযম ইশ্বর সবাইকে দেন না,
ঠিক এই মহূর্তে ইচ্ছে করলে আমি তোমাকে ছুঁয়ে দিতে পারি, জোড় করে আদায় করতে পারি আমার যা চাই তা, তুমি কিচ্ছু করতে পারবে না বিপরীতে, কি ঘটছে তা দেখা ছাড়া। কিন্তু আমি তা করবো না…. বলেই ঝাঁকি দিয়ে ছেড়ে দেয় রোদেলাকে শোভন। একটু দূরে দাড়িয়ে, নিজের শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে বলে-

আমি আবার প্রমাণ দিলাম, আমার তোমার প্রতি কোন লালসা নেই… আমি তোমাকে ভালোবাসি রোদেলা….

বলেই দূরে এসে ঘুরে দাঁড়ায় ও, রোদেলার ভিতরটা কেমন যেন ধুকপুক করছে। রোদেলাকে সময় দেয় স্বাভাবিক হতে। উল্টো দিকে মুখ করে দাড়িয়েই শোভন বলে-
: চলো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।

রোদেলা দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। সময় নেয় স্বাভাবিক হতে। একটু পর শোভনকে রেখেই দ্রুত পা বাড়ায় ও….
মনে মনে ভাবে
: এ ছেলে কবে যেন ওর আত্মাই বের করে ফেলে, কে বোঝাবে ওকে….

রুমে ফিরে সোফায় গা এলিয়ে বসে এসব ভাবতে থাকে রোদেলা। এসবের শেষ কিভাবে করবে ও। তাছাড়া ওর উপর পরিবারের অনেক দায়িত্ব, ও নিজের সুখের কথা ভেবে বিয়ে করে চলে যেতে পারবে না। ওর মা আর বোনের দায়িত্ব সহ কেওই ওকে মেনে নিবে না। এটা ও ভালো করেই জানে।
তাই এসব বিয়ে নিয়ে ভাবে না ও। আর অসভ্য ছেলেটা কি বললো – তুমি মেয়ে তো…?
অসভ্য একটা….
আমি কিভাবে প্রমাণ দিবে ওকে যে আমি মেয়ে…
ফালতু ছেলে কোথাকার….
প্রমাণ দিতে আমার বয়েই গেছে…
হুহ্

চলবে….
(পড়ে সবাই অবশ্যই কমেন্ট করবা, কেমন লাগলো তা জানাবা…)

previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1518644138596772/
next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1520207001773819/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here