#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই (২৩)
শালুক নিজের ফাইলপত্র সব শক্ত করে ধরে কোনো দিকে না তাকিয়ে হাটতে লাগলো সামনের দিকে।কিছুটা সামনে এগুতেই আদনান পিছু নিলো তার।
শালুক দ্রুত পায়ে হাটতে লাগলো কিন্তু আদনানের সাথে পেরে উঠলো না।
আদনান এগিয়ে এসে শালুকের পাশাপাশি হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছিস?”
শালুক জবাব দিলো না। আদনান আবারও জিজ্ঞেস করলো কেমন আছিস।
শালুক হাটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।আদনানের এবার রাগ উঠে গেলো। শালুকের হাত টেনে ধরে বললো, “ভাব দেখাচ্ছিস আমাকে?কথা বলছি কানে যাচ্ছে না? ”
শালুক টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, “কি সমস্যা আপনার? রাস্তাঘাটে মেয়ে দেখলে কি মাথা ঠিক থাকে না?ইভটিজিং করতে চলে আসেন?”
আদনানের ভীষণ হাসি পেলো। হেসে দিয়ে বললো, আমাকে তুই চিনতে পারছিস না মনে হয়? এরকম করছিস কেনো?আমার উপর রেগে আছিস?”
শালুক বললো, “আপনি আমার কেউ হন?আপনাকে আমি চিনি?আপনার উপর রাগ করার প্রশ্ন আসছে কেনো তাহলে? ”
আদনান শালুককে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বললো, “আমার ভুল হয়ে গেছে শালুক,এরকম কিছু হবে আমি কখনো ভাবি নি।আমি তোকে কিছুতেই হারাতে চাই নি শালুক।কেউ না জানুক আমার মন জানে আমি তোকে কতটা ভালোবাসি। ”
শালুকের ভীষণ ঘেন্না লাগলো শুনে।কেমন সারা শরীর ঘিনঘিন করে উঠেছে ওর আদনানের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে।
রাস্তার উপর একদলা থুথু ছুঁড়ে ফেলে বললো, “আপনি আর ভালোবাসা! দুটোই বিপরীতমুখী। আপনার সাথে অন্তত ভালোবাসা শব্দ যায় না।আপনি একটা মারাত্মক লেভেলের অসভ্য,ইতর স্বভাবের লোক।”
আদনান ব্যথিত চোখে তাকিয়ে বললো, “সবাই আমাকে ভুল বুঝুক আমার কোনো কষ্ট নেই তাতে কিন্তু তুই আমাকে ভুল বুঝিস না।আমার কথাটা শোন আগে।তারপর বুঝবি আমি কেনো এরকম করতে বাধ্য হয়েছি।”
শালুকের বিরক্ত লাগলো। ভেবেছে বাড়িতে গিয়ে ধ্রুবকে কল দিয়েই জানাবে তার পরীক্ষা ভীষণ ভালো হয়েছে কিন্তু এখন আদনান যা শুরু করেছে তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাবার উপায় নেই।
আদনান শালুকের হাত টেনে ধরে বললো, “তোর এই হাতটা আমার হাতে রাখতে চেয়েছি আজীবন আমি।কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় ছিলো না।তোকে আমি কতটা চাই শালুক তুই জানিস না।কেউ বুঝবে না সেটা। ”
শালুক হাটা শুরু করলো।
আদনান মন খারাপ করে শালুকের পিছু নিলো। সুযোগ খুঁজে রাস্তায় কাউকে না পেয়ে শালুকের হাত টেনে ধরে পিছনে ফিরিয়ে কোমর চেপে ধরে বললো, “একটা বার আমার কথা শোন শালুক,তারপর আমার সাথে এরকম রাগ করিস।ধ্রুবর কারণেই আমাকে এসব করতে হয়েছে। আমি বাধ্য হয়ে এরকম কাজ করেছি।”
শালুকের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে গেলো আদনানের এই অসভ্যতা দেখে।কষে একটা থা/প্পড় বসালো আদনানের বাম গালে।তারপর ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো, “আর কোনো দিন আমার সামনে আসার ও চেষ্টা করবি না তুই।আমার চরিত্রে তুই দাগ লাগানোর চেষ্টা করেছিস।আমাকে সবার কাছে চরিত্রহীনা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিস।আল্লাহ সহায় ছিলো বলে আমার আল্লাহ আমার সম্মান রক্ষা করেছে।কোনো দিন যদি আবারও আমার সাথে কথা বলার ও চেষ্টা করিস,আজ এক গালে থা/প্পড় মে/রেছি আমি,পরের বার আর আমার হাতের থাপ্পড় না।তোকে শায়েস্তা করার জন্য আমার হাজব্যান্ড ধ্রুবই যথেষ্ট। তোর মতো নর্দমার কীট কে সে খুব ভালো করে শায়েস্তা করতে জানে।আর ধ্রুবর নামে একটা কথা ও বলার চেষ্টা করবি না।ওর নাম উচ্চারণ করার যোগ্যতা ও তোর নেই।”
শালুক আর থামলো না। দৌড়ে বাড়ির দিকে গেলো। আদনান ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে হতবিহ্বল হয়ে। শালুক তাকে থাপ্পড় দিয়েছে?
তাকে তুই করে কথা বলেছে?
সব কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে আদনানের কাছে।
এই কি সেই শালুক!
নরম,কোমলপ্রাণ সেই শালুক কোথায় আজ?এ তো স্বয়ং বিধ্বংসী নারী।এই কোমল হাত কাউকে এভাবে আঘাত করতে পারে তা কখনো ভেবেছে আদনান?
ধ্রুবর জন্য আজ শালুকের হাতে থাপ্পড় ও খেতে হলো আদনানের।
মাথা ভোঁভোঁ করে ঘুরতে লাগলো আদনানের।
শালুক বাড়িতে এসে হাঁপাতে লাগলো। বাকিটা পথ আর সে দৌড় বন্ধ করে নি।আদিবা বেগম এক গ্লাস পানি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে তোর,এতো হাঁপাচ্ছিস কেনো?”
শালুক পানি খেয়ে বললো, “কিছু না চাচী।দ্রুত পায়ে হেটে এসেছি তো তাই।”
আদিবা বেগম আর কিছু না জিজ্ঞেস করে বললেন,”যা কাপড় পালটে আয় আমি ভাত বাড়ছি।”
শালুক নিজের রুমে চলে গেলো। ড্রেস চেঞ্জ করে গোসল করে নিলো।গোসল করতে গিয়ে শালুকের মনে হলো তার সারা শরীর আদনানের ছোঁয়ায় অপবিত্র হয়ে গেছে যেনো।
বাথরুমের ঝর্ণার পানির সাথে গড়িয়ে পড়লো শালুকের চোখের কয়েক ফোঁটা অশ্রুজল।
শালুক জানে সারা পৃথিবীর সাবান দিয়ে ধুয়ে ও এই ছোঁয়া মুছতে পারবে না।ধ্রুবর ভালোবাসার ছোঁয়া পেলেই এই অপবিত্র ছোঁয়া বিলীন হয়ে যাবে দেহ থেকে।
হঠাৎ করেই শালুকের মন খারাপ হয়ে গেলো। ধ্রুবকে ভীষণ মনে পড়তে লাগলো। কি করছে এখন ধ্রুব?শালুকের কথা কি তার মনে পড়ছে?
সে ও কি শালুকের মতো বিরহে পুড়ছে?
গোসল করে শালুক একটা হলুদ জামা পরে নিলো। ধ্রুব গতকাল নামাজ পড়তে বের হয়ে শালুকের জন্য অনেক কিছু কিনে দিয়েছে।শালুক এখনো সবগুলো ব্যগ খুলেও দেখে নি।জামাকাপড়ের ব্যাগ খুলতেই দেখলো উপরে এই জামাট।শালুক জানে এটাও ধ্রুব গতকাল কিনে এনেছে। ব্যাগ দুটো খুললে আরো অনেক কিছু দেখা যাবে।শালুক ঠিক করলো এগুলো এখন খুলবে না।রাতে একা একা সব খুলে দেখবে।
হলুদ সাদা জামা পরে শালুক নিচে নামতেই আদনানের মুখোমুখি হলো।পাশ কাটিয়ে শালুক চলে গেলো। আদনান পিছনে ফিরে তাকালো আবারও শালুকের দিকে।শালুক আগের চাইতে বেশ সুন্দরী হয়েছে। গায়ের রঙ আরো উজ্জ্বল হয়েছে।
ভেজা চুলগুলো বেয়ে পানি পড়ছে।কি সুন্দর সেই দৃশ্য!
ধ্রুবর কপালের কথা ভেবে আদনানের আরো ঈর্ষা হলো। প্রতিদিন ধ্রুব শালুকের এই চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য দেখে।জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায় নিশ্চয় ধ্রুব তখন।আদনান নিজেই তো এই সামান্য একটুতে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে ধ্রুব কি করে!
শালুক তো তার স্ত্রী। পরমুহূর্তে লজ্জা পেলো আদনান। নিজেকে নিজে সামলে নিজের রুমে চলে গেলো।
খেতে বসে শালুক ধ্রুবকে কল দিলো।ধ্রুব ও তখন খেতে বসেছে। শালুক জিজ্ঞেস করলো, “কি দিয়ে খাচ্ছেন আপনি? ”
ধ্রুব সামনে রাখা ডাল আর সবজির দিকে তাকিয়ে বললো, “আমার প্রিয় তরকারি দিয়েই খাচ্ছি শালুক।তুমি? ”
শালুক বললো, ” ইলিশ মাছের ডিম, কষা মাংস,ডাল।আপনার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।কষা মাংস না আপনার ভীষণ প্রিয়। এই খাবারটা আমার খেতে ইচ্ছে করছে না আপনাকে ছাড়া। ”
ধ্রুব হাসলো। ধ্রুবর হাসির শব্দ হয় না।ঠোঁট টিপে কি সুন্দর করে হাসে সে।তবুও শালুক বুঝতে পারলো ধ্রুব হাসছে।
ধ্রুব বললো, “তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী না শালুক। আমার ৫০% তুমি।তুমি খেলেই আমার মন ভরে যাবে।সব কিছুতে পেট ভরতে হয় না।মন ভরলেই মানুষ যে সুখ পায় সেই সুখ পেট ভরে খেলেও পাওয়া যায় না।এই যে তুমি আমার কথা ভাবছো,খেতে গিয়ে আমাকে মনে করছো এর চাইতে সুখের কথা আমার জন্য দ্বিতীয় কিছু নেই শালুক।”
শালুক মলিন হাসলো। তারপর বললো, “আমার পরীক্ষা ভীষণ ভালো হয়েছে জানেন।একটা ওয়ার্ড ও কারো থেকে দেখে লিখতে হয় নি।সবই কমন এসেছে। ”
ধ্রুব খুশি হয়ে গেলো শুনে।শুকরিয়া আদায় করে বললো,”আল্লাহ চায় তো,যেনো তোর সব পরীক্ষা এরকম ভালো হয়।”
শালুক বলল,”আপনি যে হঠাৎ করেই আমাকে তুমি করে বলছেন বুঝতে পারছেন?”
ধ্রুব হেসে ফেললো। সে ইচ্ছে করেই শালুককে তুমি করে বলছে।রাতে সবার সামনে শালুককে তুই করে বললে সবাই ভাবতো হয়তো ওরা এখনো কেউ কাউকে ওভাবে মেনে নেয় নি।একবার তুমি বলার পর আর তুই বলতে ইচ্ছে করছে না।
ধ্রুব কল কেটে দিলো। শালুক খেয়ে শাপলার কাছে গেলো। তারপর শাপলার কাছে আদনানের ব্যাপারটা শেয়ার করলো।
শাপলা অবাক হলো আদনানের এই বহুরূপ দেখে।এই লোকটা কি পাগল না-কি?
এই আশাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে আবার শালুককে বলছে ভালোবাসে।
মাথা কি এলোমেলো হয়ে গেলো না-কি আশাকে হারিয়ে?
শাপলা ঠিক করলো এসব ধ্রুব ভাইকে জানাবে সে শালুকের অজান্তে। নয়তো আদনান পরে যদি আরো সমস্যা করে!
চলবে….
রাজিয়া রহমান
(ছোট পর্বের জন্য সরি।)