হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ৩০

0
641

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ৩০
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
রফিক আহমেদ, রোকসানা বেগম আর ফারহান এরা তিনজন বর্তমানে আরশিদের বাসায় বসে আছে। একটু আগেই ফারহান তাদেরকে নিয়ে আরশিদের বাসায় এসেছে। তাদের সাথে নীলাও এসেছে। সবাই বাসার ড্রয়িংরুমে বসে বসে আরশির আব্বুর জন্য অপেক্ষা করছে। আরশির আব্বু এখনো অফিস থেকে বাসায় ফেরেননি। তবে প্রতিদিন ৭ টার মধ্যেই তিনি বাসায় চলে আসেন।
এরপর প্রায় আধা ঘন্টা পর আমজাদ হোসেন বাসায় ফিরলেন। বাসায় এসে ড্রয়িংরুমে উনার বোন, বোন জামাই আর ফারহানকে বসে থাকতে দেখে উনি বেশ চমকে উঠলেন। কৌতুহল নিয়ে তিনি এবার ড্রয়িংরুমে গিয়ে ঢুকলেন আর উনার বোন রোকসানা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

-“কি ব্যাপার আপা, তোমরা সবাই এইসময় আমার বাসায়!”

-“হ্যাঁ আসলে তোর সাথে একটা বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলাম।”

-“কোন বিষয়ে?”

-“তুই আগে এখানে এসে বস তারপর বলছি।”

এরপর আমজাদ হোসেন উনার বোনের কথামতো ওদের পাশের সোফায় গিয়ে বসে পরলেন।

-“এই যে বসলাম, এবার বল কি বলবা। তার আগে তোমার ছেলের ব্যাপারে তোমায় আমি একটা কথা জানিয়ে দেই। শুন তোমার ছেলে আজ কি করেছে।” এই বলে তিনি উনার বোনকে দুপুরের ঘটনাটা বললেন।

আমজাদ হোসেনের কথাগুলো শুনে রোকসানা বেগমের চেহারায় কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। এ দেখে আমজাদ হোসেন বেশ অবাক হলেন। রোকসানা বেগম এবার শান্ত গলায় বলে উঠলেন, “এইসব আমি জানি, ফারহান বলেছে আমায়। তাই আমরা এখন ফারহান আর আরশির বিয়ের ব্যাপারে তোর সাথে কথা বলতে আসলাম।”

-“ফারহান আর আরশির বিয়ের ব্যাপারে মানে!”

-“ফারহান নাকি ছোটবেলা থেকেই আরশিকে পছন্দ করে। এ কথা আমরা কেউ-ই জানতাম না। ও হচ্ছে নীলা (নীলাকে দেখিয়ে)। ওর আব্বু ফারহানের আব্বুর ছোটবেলার বন্ধু। কিছুদিন আগেই ওর আম্মু মা*রা যান। তখন থেকেই নীলাকে আমরা নিজেদের বাসায় নিয়ে এসেছি। আমরা চেয়েছিলাম নীলার সাথে ফারহানের বিয়ে দিতে। ফারহানের সাথে একবার এ বিষয়ে কথাও বলেছিলাম কিন্তু সেদিনই ফারহান আমাদেরকে জানালো যে সে নাকি আরশিকে পছন্দ করে আর বিয়ে করলে আরশিকেই করবে। এবার তুই বল তুই কি করবি।”

-“আমি কি করবো মানে? শুন আপা তোমাকে একটা সোজাসাপটা কথা বলে দেই, আমি নিজেদের মধ্যে কারও সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিব না। আর ফারহানের সাথে তো একদমই না। ওর সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিলে তো ও আমার মেয়ের জীবন থেকে ওর স্বাধীনতাই কে*ড়ে নিবে। তা ছাড়া আমি আমার একটা বন্ধুর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিব ঠিক করেছি যদি আমার মেয়ে রাজি থাকে। ছেলেটা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আমেরিকা চলে যাবে, যদি আমার মেয়ে রাজি থাকে তাহলে ছ’মাসের মধ্যেই ওদের আকদ করিয়ে দিব।”

-“আমার সাথে আরশির বিয়ে হলে আমি ওর স্বাধীনতা কে*ড়ে নিব মানে? কোন কারণে আমি ওর স্বাধীনতা কে*ড়ে নিব হে? তোমার কি আমাকে রাস্তার ছেলে মনে হয় নাকি যে এমন কথা বললে।” খানিকটা রাগ দেখিয়ে ফারহান আমজাদ হোসেনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে উঠলো।

-“সেটা কি এখন মুখে বলে বোঝাতে হবে নাকি? যেখানে আমি কখনো নিজের মেয়েকে ধমক দিয়ে কথা বলিনি সেখানে তুমি কতদিন যে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলেছ সেটা হিসাব করে প্রকাশ করা যাবে না। তা ছাড়া আমারই তোমাকে ভালো লাগে না, সেখানে আমার মেয়ের ভালো লাগা না লাগা নিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। আরশি নিজেও যদি বলে সে তোমাকে পছন্দ করে তাহলেও আমি তোমার সাথে ওর বিয়ে দিব না।” বেশ কঠোর গলায় কথাগুলো বললেন আমজাদ হোসেন।

আমজাদ হোসেনের কথাগুলো শুনে ফারহান কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই রোকসানা বেগম থাকে থামিয়ে নেন আর আমজাদ হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন, “হ্যাঁ এটা ঠিক যে ফারহান আরশির গায়ে অনেকবার না বহুবার হাত তুলেছে। তবে সে আরশিকে পছন্দ করে বলেই তাকে শাসিয়ে রাখতে গিয়ে হয়তো তার গায়ে হাত তুলেছে, খামখাই হাত তুলেনি। কিন্তু এই হাত তুলা নিয়েই কি তুই আমার ছেলেকে আরশির জন্য যোগ্য কি-না তা বিচার করছিস?”

-“দেখ আপা আমি কিন্তু প্রথমেই তোমাকে বলে দিয়েছি যে আমি নিজেদের মধ্যে কারও কাছে আমার মেয়ের বিয়ে দিব না। তাই এখন এইসব বিষয়ে আর কথা না বলাই ভালো।”

-“আচ্ছা বিয়েটা যেহেতু আরশির সাথে হবে তাহলে একবার আরশির মতামত জেনে নেই না সে কি বলে। আরশি তুই বল তো মা, আমার ছেলেকে তোর কেমন লাগে? মানে তুইও কি ফারহানকে পছন্দ করিস?” এই বলে রোকসানা বেগম সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরশির দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইলেন।

এদিকে আরশি এতক্ষণ যাবত সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কথাবার্তা শুনছিল। হঠাৎ তার ফুপির এমন কথায় আরশি এবার কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো। রোকসানা বেগমের কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই এখন আরশির মুখপানে তাকিয়ে আছে আরশি কি বলে তা শোনার জন্য। এদিকে আরশিও এখন তার ফুপির প্রতিউত্তরে কি বলবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। তাই আরশি কিছু না বলে চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

-“কি হলো আরশি, কিছু বলছিস না কেন? তুই কি ফারহানকে পছন্দ করিস নাকি না? হ্যাঁ অথবা না তে উত্তর দে।” আরশিকে চুপ করে থাকতে দেখে রোকসানা বেগম পুনরায় কথাটা বললেন।

আরশি এবার একবার ফারহানের দিকে তাকায় তো আরেকবার তার আব্বুর দিকে তাকায়। এরপর আচমকাই আরশি মাথা ডানে-বামে করে না বোধক উত্তর দিয়ে বসে। আরশির না বোধক উত্তর পেয়ে আমজাদ হোসেন এবার উনার বোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, “দেখলে তো আপা আরশিও ফারহানকে পছন্দ করে না। আমার কথা নাহয় বাদ’ই দিলাম। যার সাথে তোমরা ফারহানের বিয়ে দিতে চাচ্ছ সেই তো ফারহানকে পছন্দ করে না। তাহলে এই বিষয়ে আর কথা বলে লাভ কি?”

আমজাদ হোসেনের কথাগুলো শুনে রোকসানা বেগম আর বলার মতো কিছু পেলেন না। উনি শুধু ফারহানের মুখপানে তাকিয়ে রইলেন। এবার ফারহান বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আর ধীর পায়ে হেঁটে আরশির সামনা-সামনি এসে দাঁড়ালো। এরপর আরশির দিকে দৃষ্টি ফেলে বলে উঠলো, “তুই কি সত্যিই আমায় পছন্দ করিস না আরশি?”

ফারহানের কথার প্রতিউত্তরে আরশি কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আরশির নিরবতা দেখে ফারহান আবার বলে উঠলো, “কিছু বলছিস না কেন আরশি?”
আরশি এবারও কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আরশির নিরবতা দেখে ফারহান এবার বুঝে গেল সে সত্যিই তাকে পছন্দ করে না। এবার ফারহান পিছনে ফিরে তার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “আম্মু চল বাসায় চলে যাই।”

-“কিন্তু আ…”

-“এখানে থেকে তো আর কোনো লাভ হবে না আম্মু। তাহলে শুধু শুধু এখানে বসে থেকে কি করবো?”

এরপর রোকসানা বেগম আর বসে না থেকে ফারহানের আব্বুকে উঠতে বলে নিজেও উঠে বসলেন। তাদের সাথে নীলাও উঠে দাঁড়ালো।

-“আপা এসেছ যখন একেবারে রাতের খাবার খেয়েই…”

-“নাহ এখনো রাত নামেনি, বাসায় গিয়ে রান্না করেই খেয়ে নিব সবাই, চল ফারহানের আব্বু।”

তারপর ফারহান, ফারহানের আম্মু-আব্বু আর নীলা সবাই আরশিদের বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো। আসার সময় ফারহান একবার আরশির দিকে তাকিয়েছিল কিন্তু আরশি তার দিকে একবারের জন্যও তাকায়নি। কষ্ট ভরা মন নিয়ে ফারহান বাহিরে এসে গাড়িতে উঠে বসে। যখন তার আম্মু-আব্বু আর নীলা সবাই গাড়িতে উঠে বসলো তখন সে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তাদের বাসার চলে আসলো।
.
.
Loading…….

বিঃদ্রঃ যদি ফারহান আর আরশির মিল না দেই তাহলে কি আপনারা বাথ*রুমে গিয়ে কান্না করবেন?🥴 উপ্স তলি এইটা বলতে চাইনি, কি বলতে চাচ্ছিলাম ভুলেই গেছি 😬

~সবাই নিয়মিত নামায আদায় করবেন আর নামাযের লাভ জানিয়ে অন্যদেরকে দাওয়াত দিবেন~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here