#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই (২৫)
শালুক হাত দিয়ে খামচে ধরে রেখেছে আদনানের হাত,পা দিয়ে পেছন থেকে লাথি দিচ্ছে কিন্তু আদনান শালুকের মুখ ছাড়ছে না।
ফিসফিস করে বলতে লাগলো, “তোকে আজ শুনতেই হবে আমার কথা। নয়তো আমি শান্তি পাবো না।তুই আমার শুধু, আমার হবার কথা ছিলো।
আমি তো তোকে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দেয়ার জন্যই আশাকে বিয়ে করতে চেয়েছি। মাঝখান থেকে ধ্রুব সব ঝামেলা পাকালো। ”
শালুক খুব জোরে আদনানের হাটুতে একটা লাথি দিলো।প্রচন্ড ব্যথা পেলো আদনান। তবুও শালুকের মুখ ছাড়লো না।
শালুককে সান্ত্বনা দেয়ার ভঙ্গিতে আদনান বললো, “একটু আমার কথা শোন শালুক।আমি তোর কোনো ক্ষতি করবো না।আমি তোকে সত্যি ভালোবেসেছি। আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাবো শালুক তোর বিরহে। আমি সব শেষ করে দিবো শালুক।সবাইকে শেষ করে দিবো।সবার আগে ধ্রুবকে শেষ করে দিব।তোকে আমি একবার হারিয়েছি আর হারাতে চাই না।বিশ্বাস কর আমি তোকে অনেক সুখে রাখবো।”
ধ্রুবর ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ করেই। বুকের ভেতর কেমন কেঁপে উঠলো ঘুমের মধ্যেই। তড়াক করে ধ্রুব লাফিয়ে উঠে বসলো বিছানায়।
শীত লাগছে অথচ সে গায়ে কম্বল দেয় নি।এজন্যই কি ঘুম ভেঙে গেছে?
ভেবে পেলো না ধ্রুব।ফোন চেক করে দেখে আধা ঘণ্টা আগে শালুক কল দিয়েছে। ধ্রুব কল ব্যাক করলো শালুককে।
রিং হতে থাকলো কিন্তু শালুক রিসিভ করতে পারলো না।
ধ্রুবর কল দেখে আদনানের মাথা খারাপ হয়ে গেলো যেনো।আদনান শালুককে টেনে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে এক হাতে শালুকের মুখ চেপে ধরে ধ্রুবর কল কেটে দিলো।
কল কেটে দেয়ায় ধ্রুব দুই মিনিট অপেক্ষা করলো শালুকের কল ব্যাক করার।কল না পেয়ে আবারও কল দিলো। আদনান বিরক্ত হয়ে কল আবারও কেটে দিলো। এরপর ফোন অফ করে দিলো।
ধ্রুব হতবাক হলো শালুকের ফোন বন্ধ পেয়ে।কথা না বলে শালুক তো ফোন রেখে দেওয়ার মানুষ না।তারপর এখন কি-না ধ্রুবর কল কেটে দিয়ে সে ফোনের সুইচ অফ করে দিয়েছে।
ধ্রুবর বুকের ভেতর জ্বলতে লাগলো। কি হয়েছে শালুকের?
শাপলার ফোন নেই যে শাপলাকে কল দিবে।উপায় না পেয়ে ধ্রুব দাদাকে কল দিলো। কেনো জানি তার বুকের ভেতর খচখচ করছে একটা সন্দেহ।
নুরুল ইসলাম সাহেব এতো রাতে নাতির কল পেয়ে অবাক হলেন।ধ্রুব সোজা বললো, “দাদা,এখনই উপরে যান।শালুকের সাথে আমার এই মুহুর্তে কথা বলতেই হবে।”
চশমা চোখে দিয়ে ধ্রুবর দাদা ফোন নিয়ে উপরে গেলো। প্রথমে শাপলার রুমের দরজায় নক করলো।ঘুম থেকে জেগে শাপলা দরজা খুলে দাদাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। হাই তুলতে তুলতে বললো, “কি হয়েছে দাদা?”
দাদা জিজ্ঞেস করলেন,”শালুক কই?ধ্রুব কল দিয়েছে কথা বলতে। ”
শাপলা আড়মোড়া ভেঙে বললো, “ও তো আজকে ওর রুমে শুয়েছে।আমি ডাকছি চলেন।”
ধ্রুব লাইনে থেকে সব শুনতে লাগলো। বুকের ভেতর ধুকপুক করতে লাগলো ধ্রুবর।
শাপলা কয়েকবার শালুককে ডাকলো,কিন্তু শালুক জবাব দিতে পারলো না। আদনান শক্ত করে দুই হাতে শালুকের মুখ চেপে ধরে রেখেছে। উপায় না পেয়ে শালুক লাথি দিয়ে টুলের উপর থেকে গ্লাস ফেলে দিলো।
ঝনঝন শব্দ তুলে কিছু ভেঙে যাবার শব্দ শুনে শালুকের দাদাও এবার ডাকতে লাগলেন।
কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।আদনান ঘামতে লাগলো। সেই সাথে সমানে শালুক তাকে খামচি দিচ্ছে।
শালুকের জবাব না পেয়ে দাদা বললেন,”ও মনে হয় ঘুমাই গেছে ধ্রুব।”
ধ্রুব কঠোর স্বরে বললো, “না দাদা,ও জেগে আছে।একটু আগে আমি কল দিয়েছিলাম আমার কল ও কেটে দিয়েছে। আপনি দরজা ভাঙ্গার ব্যবস্থা করেন যদি শালুক দরজা না খোলে।এক্ষুনি দাদা।দেরি করবেন না।”
শালুকের দাদা কিছুই বুঝতে পারছেন না কি করবেন।জোরে জোরে শালুককে ডাকতে লাগলেন।বাহিরে চিৎকার শুনে সবার ঘুম ভেঙে গেলো। একে একে সবাই রুম থেকে বের হয়ে শালুকের রুমের সামনে জড়ো হলো।
শালুকের বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”কি হয়েছে আব্বা?”
নুরুল ইসলাম সাহেব বিমর্ষ বদনে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,”বুঝতেছি না রে বাবা,ধ্রুব কল দিলো শালুকের সাথে কথা বলবে ফোন দিয়ে যেতে,আমার আগে শালুককে কল দিয়েছে শালুক নাকি কল কেটে দিয়েছে। রিসিভ করে নি।ওর এজন্য চিন্তা হচ্ছে। এখনো লাইনে আছে ধ্রুব।”
নুরুল ইসলাম সাহেব ফোন কানে নিয়ে বললেন,”দরজা তো খোলে না শালুক।”
ধ্রুব বললো, “দরজা ভাঙার ব্যবস্থা করেন দাদা।বড় চাচীকে বলেন গিয়ে দেখে আসতে আদনান কোথায়।”
নুরুল ইসলাম সাহেব বড় পুত্রবধূকে তাই বললেন।আদিবা বেগম উদভ্রান্তের মতো ছেলের রুমে ছুটে গেলেন।মনে মনে আল্লাহকে বলতে লাগলেন ছেলে যাতে রুমে থাকে।আর যাতে কোনো কেলেংকারী না ঘটে।
তার আশা বৃথা হলো। গিয়ে দেখেন রুমে কেউ নেই।তিনি পাগলের মতো হয়ে গেলেন।বাহিরে এসে বললেন আদনান তো ওর রুমে নেই।সেলিম সাহেব সাথে সাথে ছেলের ফোনে কল দিলেন।শালুকের রুমের ভেতর ফোন বেজে উঠলো।
আদনান নিজেও দিশেহারা হয়ে গেছে এই অবস্থায়। সবাই যে এভাবে এসে পড়বে তা তার ভাবনাতেও ছিলো না। সে তো এসেছিলো শুধুমাত্র শালুকের ভুল ভাঙ্গাতে।ভয়ে আদনান দরজা খুলতে গেলো না, শালুকের মুখ ও ছাড়লো না।
এতোক্ষণ ধরে দস্তাদস্তি করে শালুকের শরীরের সব শক্তি যেনো ফুরিয়ে গেলো। নিস্তেজ হয়ে গেলো শালুক।তার উপর মনে ভয় কাজ করছে ধ্রুবকে নিয়ে, ধ্রুব যদি তাকে ভুল বুঝে তাহলে শালুক কি করবে।এমনিতেও তো ধ্রুব জানে শালুক আগে আদনানকে পছন্দ করতো।
ধ্রুব যদি এখনো ভাবে শালুকের মানসিকতা এখনো আগের মতো আছে!
বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা করতে লাগলো শালুকের। ইচ্ছে করলো এক ছুটে পালিয়ে যায় ধ্রুবর কাছে।ধ্রুবর বুকে আছড়ে পড়ে।
বাহিরে দরজা ভাঙ্গার শব্দ শোনা যাচ্ছে। আদনান স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে শালুকের মুখ চেপে ধরে, শালুক ও তেমনই দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের মনেই দুই রকম ভয়।
শালুকের মনে হচ্ছে এসব স্বপ্ন দেখছে সে,একটু পরেই তার ঘুম ভেঙে যাবে।ঘুম থেকে উঠলে দেখবে সব ঠিকঠাক। কিন্তু শালুকের ভুল ভেঙে গেলো যখন দরজা খুলে সবাই শালুকের রুমে প্রবেশ করলো। দুজনকে এই অবস্থায় দেখে সেলিম সাহেব ছুটে এসে আদনানের হাত থেকে শালুককে ছাড়িয়ে দিলেন।শালুকের বাবা মা এসে শালুককে জড়িয়ে ধরলো। সারা শরীর টলছে শালুকের। নিজেকে ভীষণ দুর্বল মনে হচ্ছে। বাবা মায়ের গায়ের উপরেই শালুক ঢলে পড়লো।
আদিবা বেগমের মাথা হেট হয়ে গেলো ছেলের এই অসভ্যতা দেখে। সেলিম সাহেব আদনানের গালে কয়েকটা থাপ্পড় বসালেন।আদনান নিরবে সব সহ্য করে গেলো। তবুও তার মনে একটাই কষ্ট রয়ে গেলো সে শালুককে কিছুই বুঝিয়ে বলতে পারে নি,শালুকের ভুল ভাঙ্গাতে পারে নি।
ওপাশ থেকে ধ্রুবর বেদনার্ত গলার স্বর শোনা গেলো,ধ্রুব দাদাকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার শালুক কই দাদা?ও কেমন আছে?”
কাঁপা কাঁপা গলায় তিনি উত্তর দিলেন,”শালুক অজ্ঞান হয়ে গেছে ধ্রুব।”
ধ্রুব ফোন রেখে দিলো।নুরুল ইসলাম সাহেবের চোখে জল চলে এলো। এই বয়সে এসে নিজের নাতির এতো বেহায়াপনা দেখবেন কখনো ভেবেছেন তিনি?
আদনান তার বড় নাতি,সবার বড় আদনান। কতো আদরের ছিলো এই নাতি।দাদার হাত ধরে ঘুরে বেড়াতো। দাদার কাঁধে চড়ে বাজারে চলে যেতো। প্রথম নাতি হিসেবে,পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে আদনান সবার অনেক ভালোবাসা, স্নেহ পেয়েছে।
সেই স্নেহ এখনো আছে বলেই তো সেদিন এতো বড় ঘটনা ঘটানোর পরেও কেউ আদনানকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে দেয় নি।
সকাল বেলা শালুক নিজেকে মায়ের পাশে শুয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো। ঘড়িতে তখন সাড়ে সাতটা বাজে। হাসনা বেগম তো এতোক্ষণ বিছানায় থাকার মানুষ না।
তবে এখনো শুয়ে আছে যে এখানে?
শাপলা বসে আছে মায়ের পায়ের পাশে।
শালুক বের হতে গেলে হাসনা বেগম ডেকে বললেন, “আগে ধ্রুবর সাথে কথা বল কল দিয়ে। ”
শালুকের অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেলো শুনে।ধ্রুবর সাথে কথা বলবে কিভাবে সে?ধ্রুব কি তাকে বিশ্বাস করবে?যদি তাকে মিথ্যাবাদী ভাবে ধ্রুব?
শালুক সেই আঘাত কিভাবে সহ্য করবে?
ভয়ে শালুক ধ্রুবকে কল দিলো না। চুপচাপ বসে রইলো জানালার পাশে।
কিছুক্ষণ পরেই শালুকের বাবা এলেন রুমে শান্তকে নিয়ে। শান্ত আজ সকাল সকাল উঠে গেছে ঘুম থেকে। পাশে মা’কে না দেখে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো।
স্ত্রীকে শুয়ে থাকতে দেখে ফয়েজ আহমেদ জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে তোমার? আজ রান্নাঘরে গেলে না যে?”
হাসনা বেগম বিছানায় উঠে বসলেন।কড়া স্বরে বললেন, “কেনো একদিন বান্দিগিরি করছি না বলে কি বুকের ভেতর খচখচ করছে না-কি? বিয়ে করে তো বউ আনো নি,বান্দি এনেছো।২৪ ঘন্টা, ৭ দিন যে চরকির মতো ঘুরে।আত্মসম্মানহীন এক নারী আমি।নিজেকে নিজের ঘেন্না হয় আজ।”
ফয়েজ আহমেদ কিছুই বুঝতে পারলেন না।শান্ত কান্না করে বললো, “নাশতা দাও, খাবো।”
হাসনা বেগম এক অপ্রত্যাশিত কাজ করে ফেললেন।ছেলের গালে একটা চড় মারলেন।শাপলা, শালুক,তার বাবা হতভম্ব হয়ে গেলো হাসনা বেগমের এই ব্যবহার দেখে।শান্ত দিঘির জলের মতো নিরব থাকা এই মানুষটা আজ এতো রেগে আছে কেনো!
হাসনা বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,”কোনোদিন এই চিন্তা মাথায় ও আনি নি।কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি।তুমি এই মুহূর্তে আব্বাকে গিয়ে বলবে আমরা আলাদা হয়ে যেতে চাই।এই এক ছাদের নিচে আমি আমার মেয়েদের নিয়ে কিছুতেই থাকবো না আর।আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে গেছে, আমার আরেকটা মেয়ের জীবন এখানে থেকে কোনো বিপদে পড়ুক আমি তা চাই না।এই বাড়িতে আমি আর থাকবো না।যতোক্ষণ না তুমি আমাদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বের হবে আমি এবং আমার সন্তানেরা কেউই এক গ্লাস পানি ও মুখে দিব না এই বাড়ির।”
ফয়েজ আহমেদের মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো। কি বলছে হাসনা এসব?উঠে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “পাগল হয়ে গেছো তুমি?কি বলছো বুঝতে পারছো?তুমি নিজে থাকতে পারবে কখনো?
সংসার,শ্বশুর শাশুড়ী, ননদ,জা’দের ছেড়ে বাবার বাড়ি গিয়ে তুমি ২ দিনের বেশি ৩ দিন কখনো থাকতে পারো নি।সবসময় বলতে এদের ছাড়া তোমার দম বন্ধ লাগে।সেই মানুষ কিভাবে এসব বলছো? ”
হাসনা বেগম শান্ত স্বরে বললেন, “তখন আমি জানতাম না, আদর যত্ন করে কালসাপ পুষছি,যে কি-না আমার মেয়েদের উপর ছোবল দিবে।একবারে সে আমার মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগাতে পারে নি, এজন্য আবারও চেষ্টা করেছে। আজ ও যখন পারে নি আবারও চেষ্টা করবে সে।আমি আর এরকম কিছু চাই না আমার মেয়েদের জীবনে।তোমার যদি মেয়েদের জন্য কোনো চিন্তা না থাকে তবে তুমি থাকো এখানে,আমি ওদের তিন জনকে নিয়ে বের হয়ে যাবো এক কাপড়ে।”
ফয়েজ আহমেদ দিশেহারা হয়ে গেলেন।তার মাথায় কিছু আসছে না।স্ত্রী যা বলছেন তা কোনো দিক থেকে ভুল না।কিন্তু এভাবে যৌথ পরিবার থেকে চলে যাওয়া তাও তার মন মানছে না।
ফয়েজ আহমেদ বের হয়ে যেতেই হাসনা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন।
শালুক মায়ের সামনে গিয়ে বললো, “কেনো এরকম করছো মা?তুমি কি পারবে থাকতে? ”
হাসনা বেগম কান্নার জন্য কথা বলতে পারলেন না। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,”আমার ২০ বছর ধরে সাজানো সংসার। মায়া,মমতা, ভালোবাসা দিয়ে সাজিয়েছি তিন জন মিলে।কখনো ওনাদের জা ভাবি নি, বোন ভেবেছি। ছেলেমেয়েদের নিজের সন্তানের মতো ভেবেছি। আজ সব ছেড়ে যাবার কথা বলছি কি অল্প কষ্টে!
আমার মেয়েদের এরকম একটা পরিবেশে আমি আর রাখতে চাই না।এখানে থাকলে ধ্রুব কিছুতেই আর শালুককে আসতে দিবে না এই বাড়িতে।আমি চিনি ধ্রুবকে।যেখানে একবার তার অসম্মান হবে সেখানে সে দ্বিতীয় বার আসবে না।আজকে এই ঘটনার পর ধ্রুব কিছুতেই আর আসবে না বাড়িতে,শালুককে ও আসতে দিবে না।
বাকিটা জীবন আমার মেয়েকে এভাবে থাকতে হবে। আজ শালুকের সাথে এরকম করেছে,পরের বার যে শাপলার সাথে এরকম হবে না কে নিশ্চয়তা দিবে? ”
ফয়েজ আহমেদ নিচে গিয়ে বাবাকে ডাকলেন।তিনি নিজেও বুঝেছেন এটা,এই বাড়িতে থাকলে শালুককে আর এই জীবনের জন্য দেখবে না।ধ্রুব কখনোই শালুককে এখানে পাঠাবে না।
সব ভেবে ফয়েজ আহমেদ বাবাকে বললেন আজকে,এই মুহুর্তেই তিনি স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যেতে চান।
নুরুল ইসলাম সাহেব নরম স্বরে বললেন, “বেশ,যা তোমাদের ভালো মনে হয় তাই করো।যদি মনে হয় আমার নাতনিদের জন্য এতেই ভালো হবে তবে আমি তোমাদের কিছুতেই বাঁধা দিবো না।”
আদিবা বেগম কাপে চা ঢালতে ঢালতে সব শুনলেন।তার হাত পা কাঁপতে থাকলো। কিন্তু বাঁধা দেওয়ার মতো সাহস পেলেন না।
কিভাবে বাঁধা দিবেন তিনি?
একটা হাসিখুশি যৌথ পরিবার ভেঙে যেতে বেশি দেরি হলো না। কেউ কাউকে দোষারোপ করতে পারলো না। অভিযোগ করতে পারলো না।
ধ্রুব কল দিলো কিছুক্ষণ পর। শালুকের সারা শরীর কেঁপে উঠলো। কোনো মতে উঠে ফোন রিসিভ করলো।
ধ্রুব নরম স্বরে বললো, “শরীর কেমন এখন তোমার? ”
শালুক কোনোমতে জবাব দিলো, “ভালো আছি এখন।”
ধ্রুব কোমল গলায় বললো, “আমাকে বলতে বলেছি না শালুক কোনো সমস্যা হলে?গতকাল আদনান তোমাকে রাস্তায় যখন বিরক্ত করেছে কেনো আমার কাছে লুকিয়ে গেলে তখন?আমি বলেছি না আমার কাছে বলতে কোনো সমস্যা হলে।
আজ যদি কোনো বিপদ হতো শালুক? আমি কিভাবে বাঁচতাম?কাকে নিয়ে বাঁচতাম আমি শালুক?তোমাকে আমি বলেছি না আমার আর কেউ নেই তুমি ছাড়া। আমার এই পৃথিবী অন্ধকার তোমাকে ছাড়া। তবে কেনো আমার কাছে লুকিয়ে গেলে?
আমাকে কথা দাও শালুক, আর কখনো আমার কাছে এরকম কিছু লুকাবে না যা তোমার ক্ষতির কারণ হতে পারে। ”
শালুক কেঁদে ফেললো। ভেবেছিলো ধ্রুব তাকে ভুল বুঝবে,এখন ধ্রুবর কথা শুনে শালুকের সব ভয় কেটে গেলো। ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো শালুক। জীবনে এরকম বুঝার মতো একটা মানুষ থাকলে আর কি লাগে সুখী হতে?
শালুক কথা দিলো আর কখনো কোনো কথা সে লুকিয়ে যাবে না যা তার বিপদের কারণ হতে পারে।
চলবে…….
রাজিয়া রহমান