অনুভূতিরা মৃত ষোল পর্ব

0
209

গল্প- অনুভূতিরা মৃত
ষোল পর্ব
.
সেদিন বৃহস্পতিবার বনলতাকে ছেড়ে আসার পর অফুরন্ত ভালোবাসা জমাচ্ছি তার জন্য। বুকে একটাই চাওয়া। মনে একটাই ভাবনা দুই বছর পর বনলতার সামনে দাঁড়াবো। অপেক্ষার সময় ফুরিয়ে দুই বছর পর হাজির হবাে বনলতার সামনে কিন্তু বনলতা কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে? নাকি আমাকে দূরে পাঠাতেই তার এই কৌশল? এতটুকু বলেই রুয়েল থামল। মিহি নড়েচড়ে বসল। পুনরায় বলল, এরপর? ক্লান্ত রুয়েল চেহারায় বেদনার ছাপ। মুখে ঠান্ডা পানি ছিটালো
মিহি নড়েচড়ে বসল। পুনরায় বললাে এরপর কী হয়েছিল? মুখে এক গ্লাস জল ঢেলে নিশ্চুপ। ছোট একটি দীর্ঘশ্বাস নিলো। করুণ এই দ্বীর্ঘশ্বাসে মিশে আছে বেদনার পাহাড়। মিহি ভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে ছেলেটা কত ইমোশনাল। দীর্ঘদিনের চাপা কষ্ট থাকে বানিয়েছে পাথর। পাথর মনের অধিকারী ছেলেটার অনুভূতিরা মৃত। মৃত অনুভূতির গল্প শুনাচ্ছে রুয়েল তার একমাত্র পাঠক মিহি।
.
চাপা স্বরে আবারো বলতে শুরু করল। চট্টগ্রামের জীবনটা সহজ ছিল না। কঠিন এই পথচলায় সঙ্গী ছিল আরজু ও নিশি আপু। অন্ধকারে অতল গহ্বরের চোরাবালিতে যখন ডুবতে বসেছিলাম সেখান থেকে টেনে তুলে নিশি আপু এবং আরজু ভাইয়া। আমি কৃতজ্ঞ। অামি থাকতে চাই সেসব মানুষের দলে যারা কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যারা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না বাংলা ব্যকরণে তাদের বলা হয় অকৃতজ্ঞ। প্রতিটি মানুষের উচিত কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা। ধন্যবাদ জানিয়ে আন্তরিকতা বজায় রাখা। উপকার করা ব্যক্তির সাথে সদাচরণ করা। কিন্তু আমরা অনেক সময় কারো দ্বারা উপকৃত হলে সে যাতে বিষয়টি বড় করে না দেখে বা আমরা যেন তার কাছে ছোট না হয়ে যাই, এ জন্য তার সঙ্গে অদ্ভুত সব আচরণ করতে থাকি। তার মন ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করি। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। আমার উপকার করতে পারা তোমার ভাগ্য। যে ভাগ্য সবার হয় না। তোমার হয়েছে তোমাকে সেই সুযোগটি দিয়ে দয়া করেছি। আমি সেসব অকৃতজ্ঞদের দলে থাকতে চাই না। সত্যিকার অর্থে ধন্যবাদ তাদের প্রতি।
.
বনলতাকে নিয়ে কতাে যে গল্প লিখেছি, প্রতিটা গল্পের কল্পনায় ছিল বনলতা। একদিন রাতে খুব কেঁদেছিলাম। সেই কি কান্না। চোখের জলে বিছানার বালিশ ভিজিয়েছি। লুকিয়ে কান্না করেছি, আবার মুছে ফেলেছি, নিজেকে তখন ভেঙে পড়া মানুষ মনে হয়। নিজেকে তখন মারাত্মকভাবে নিঃস্ব মনে হয়। ছেলেদের কাঁদতে নেই, ছেলেদের চোখে জল মানাইনা। ছেলেরা সহজেই কাঁদেনা, কিন্তু যখন কাঁদে সেটাকে শুধু অশ্রুজল ভাবলে ভুল হবে কেননা সেই অশ্রুগুলো তাদের অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ। ভাঙা মনকে আবার শক্ত করি হু হু করে হেসে উঠি। সিগারেটে আগুন ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে থাকি। এই ধোঁয়াকে বেশ আপন মনে হতো। আমার একাকীত্বের বেদনা সঙ্গী। দিন যায়, মাস যায়, বছর পেরিয়ে যায়। আমার অপেক্ষার পালা কমতে থাকে, রোমাঞ্চিত আমি। আমার সামনে দাড়িয়ে থাকবে বনলতা। লাল শাড়ি, নীল চুড়ি, মাথায় কালাে খােপা বেঁধে অপরূপা এক তরুণী যে আমার কল্পনার বনলতা সেনকেও হার মানাবে।
.
দীর্ঘ দুই বছর পর উপস্থিত হলাম। সেদিন বৃহস্পতিবার বনলতাকে ছেড়ে আসার আগে কথা দিযেছিলাম। আমি আমার কথা রেখেছি। ভালোবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। মনের ভিতর বিরিয়ানির স্বাদ পাচ্ছি। ক্ষুধার্ত বালক যখন বিরিয়ানি সামনে পায় মনের গভীরে উড়ে যায় সে। যেমনটি আমার হচ্ছে। আনন্দে আত্মহারা আমার মন চারদিকে খুঁজছে বনলতার ছায়া। আশেপাশে বনলতার দেখা মিলছে না। যেখানে দাঁড়িয়ে বনলতা কথা দিয়েছিল। চারদিক তাকিয়ে বনলতাকে খুঁজছি কিন্তু বনলতাকে দেখতে পাইনি। বনলতা কী সেদিনের কথা ভুলে গেছে? মনে রাখার মতো কিছু তো হয়নি। বনলতা তার দেওয়া কথা ভুল গেছে৷ দুইটি বছর জীবন থেকে হারিয়ে গেলো। নিজের অজান্তে চোখ কেঁদে উঠছে। চোখ ছলছল করছে। মন ছটফট করছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের অভিযোগ তুলে ধরলাম। আমি তো বনলতাকে সত্যিকার অর্থে ভালবাসতাম। সে প্রমাণ দিতে বলেছিল, প্রমাণ দিয়েছি। এখন সে কোথায়? ভালোবাসা গ্রহণ করতে বলতাম না।। আমার হাত ধরে হাঁটতে বলতাম না। শুধু হেসে বলতাম প্রমাণ পেয়েছো? ভালোবাসার পরীক্ষায় আমার জিপিএ কত ছিল? আবদার করে বলতাম। হে মানবী ক্ষমা করে দিয়ো আমায়। ভালো থেকো তোমার ভালোবাসায় আমি ভালো থাকব তোমার ভালো থাকায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে ঢিল ছুড়ে মারলাম। মনের যতাে কষ্ট, রাগ আর অভিমান এই ঢিলে উড়িয়ে দিলাম। আমার কোন অভিযোগ নেই। নেই কোন অভিমান। যা আছে সবটা ভালোবাসা।
.
পিনপিন নিরবতা। নিরব চাহনি আমার ব্যকুল মন৷ মূহুতেই গালে থাপ্পর আবিষ্কার করলাম। রক্তাক্ত মেয়েটি সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কপালে রক্ত ঝরছে। কিছু বলার ভাষা নেই আমার। একটু আগে মারা ঢিলটা তার কপালে রক্ত ঝরিয়েছে। লজ্জায় ডুবে যাচ্ছি সাথে অপরাধবোধে ভুগছি। এই কী করলাম আমি? নিজের ভালোবাসার মানুষকে রক্ত ঝরালাম। যার জন্য এতদিনের অপেক্ষা। অপেক্ষার অবসান বুঝি এভাবেই হয়?
.
চলবে…………….
— সাকিব হাসান রুয়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here