#জীবনে_তুমি_সেরা_সত্যি
পর্ব – ২
রুম থেকে বেরুতেই নেহাল দেখলো নায়রা আর দিশান ডিভানে বসে মোবাইলে কালকের তোলা ছবিগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ চালাচ্ছে। খুব স্বাভাবিক পোশাকে যেমনটি আগে আসতে এ বাসায়। নেহালকে দেখে একটু নড়েচড়ে বসলো। নায়রা গলা চড়ালো,”মা,ভাইয়া উঠেছে, নাস্তা বেড়ে দাও।” নেহাল সোজা ডাইনিং এ গিয়েই বসলো। ওদের ড্রয়িং কাম ডাইনিং, মা নেহালকে খিচুড়ি দিতে দিতে বললো,”এক গাদা খাবার পাঠিয়েছে দিশানের বাসা থেকে,তাই আজ খিচুড়িই খা,রোজই তো অখাদ্য ওটস্ খাস। আর দিশান, তোকে কি এখন বকে পাঠাতে হবে আমাকে,ছবি পরে দেখবি,গেস্ট চলে আসবে তো,শাড়ি পড়ে নে মা।”
-আন্টি, বললাম তো তুমি শাড়ি বেছে দাও কোনটা পড়বো,তুমিই তো কিছু বললা না।
-আবার আন্টি বলে, সকাল থেকে তিনবার ঠিক করে দিলাম কিন্তু, আর তুই শাড়ি বের কর রুমে গিয়ে, আমি পরে গিয়ে পছন্দ করে দিয়ে আসবো ।
-শাড়ি আর কি বের করবো,সুটকেসের ডালাটা মেলে দিবো,ব্যস!
-তোর শাড়ি আলমারিতে তুলে রাখিসনি?
-কোন আলমারি?
-তুই তোর রুমের আলমারিতে তুলবি।
-তো সেটার জন্য তো আমাকে নিচে যেতে হবে নাকি?আজ তো নাকি আমি অনুষ্ঠানের আগে যেতে পারবো না বললা তখন।
-আরে তুই নেহালের আলমারিতে রাখবি,তোর বাবার বাড়ির আলমারিতে রাখবি কেন?ওখানে যা আছে থাকুক,এখানে নতুনগুলো গুছিয়ে রাখ।
এবার কথায় ঢুকতে হলো নেহালকে,
-মা,আপাতত আলমারিতে স্পেস বের করা টাফ,যাবার জন্য যখন লাগেজ রেডি করবো তখন কতটুকু কি নিয়ে যাবো, এবার মাস দুয়েকের উপযোগী ক্যারি করবো ভাবছি,কারণ এর পর কদিনের জন্য দেশে আসতে হবে,তখন আবার গুছিয়ে বাড়তি নিয়ে যাবো,বা হয়তো ওখানের ওয়েদার বুঝে তেমন কিছু নিতেই হলো না, তাই আমারটা আলাদাই থাকুক,তুমি তোমার সেই পরিচিত শোরুম থেকে একটা আলমারি নিয়ে নাও,কত দাম হয় বলো,ওখানের অ্যাকাউন্ট নম্বর সেইভ আছে আমার কাছে,আমি টাকা পাঠিয়ে দিবো। আর আমি রুমটা রি-অ্যারেন্ঞ্জ করে জায়গা করে দিচ্ছি রাখার।
এবার নেহালের দিকে তাকিয়ে দিশান বলল,
-তাহলে আরেকটু বেশি জায়গা বের করে নিচের তালা থেকে আমার ড্রেসিং টেবিলটাও উপরে নিয়ে আসি।
-না,ওইটা ওখানেই থাকুক, ওখান থেকে কিছু আনার দরকার নেই। আর এত জায়গা বেরও হবে না।
-তাহলে আলমারি ড্রেসিং টেবিল একসাথে কাস্টমাইজড করে বানিয়ে নিই,দুইটার কাজ এক জায়গাতে হয়ে যাবে।
– ওকে ফাইন,মা তুমি তাহলে দিশানকে দেখিয়ে সিলেক্ট করে নিও।
আবারো খাওয়া শুরু করলে মাথায় ঘুরতে থাকলো দিশান তো বিয়েটা খুব স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে, অধিকারবোধ দিয়েই তার প্রয়োজনগুলো বুঝিয়ে দিয়েছে,আমি কেন পারছি না,এমন না যে আমার মনে অন্য কেউ,তাও কেন পারছি না ওকে বউ হিসেবে মানতে?এরই মাঝে ওদের দুজনের ফুসুরফুসুর কানে এলো,
-আন্টি থেকে না মা ডাকে আসছো,ভাইয়াকে কি নাম ধরে ডাকা শুরু করছো নাকি?
-পাগল!!কোন কথাই হয়নি আমার সাথে।
-মানে কি!!শুধু ভাইয়া একাই বলে গেছে,তুই কোন উত্তর করিস নাই?
-আরে না,আন্টি মানে মা-র রুমে গহনাগুলো দিয়ে রুমে এসে দেখি সে ঘুম। আমিও হাঁপ ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
-তারমানে কোন কথা হয়নি?
-দেখা অবধি হয়নি!
-তাইলে ভাইয়া তোকে নাকফুল দেয়নি?
-কিসের নাকফুল?আমার কি নাক ফোঁড়ানো আছে নাকি?
-ভাইয়ার বউয়ের জন্য একটা নাকফুল কেনা আছে, ভাইয়া নিজে টাকা জমিয়ে মা কে একটা ডায়মন্ড সেট গিফট করেছিলো,তো মা সেটা ভাগ করে মা নিজে লকেটটা পড়ে,আমাকে দিয়েছে কানের টপ দুটো,আর ভাইয়ার বউ এর জন্য নাকফুল তুলে রাখছে৷ ওইটা তো ভাইয়ার কাছেই আছে মনে হয়।
-থাক ভাই,ঐ নাকফুলের জন্য আমার নাক ফোঁড়ানোর কোন ইচ্ছা নাই। এখন আমি যাই, ভাইয়া এখানে আছে,তার মুখোমুখি হওয়ার আগেই শাড়ির সুটকেস নিয়ে তোর রুমে চলে আসি।
সবটা শুনে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো নেহাল, এই নাকফুল সে দিশান কে এখন দিবে না, ওদের সম্পর্কটার একটা সময় প্রয়োজন, সেই সময়টাই পরিণতি দিবে ওদের, নিজের মন থেকে যখন নেহাল আগানোর সাড়া পাবে অথবা দিশান নিজেই ততটা এগিয়ে আসার মতো পরিণত হবে, কোন রেজিষ্ট্রি কাগজের জোরে নয়,একে অপরকে ভালোবাসতে পারবে মন থেকে, তখন এই নাকফুল সে দিশানকে দিবে। আর এই মাঝের সময়টাতে দিশানের দায়িত্বে সে কোন অবহেলা করবে না,ওর সকল রকমের রেসপন্সিবিলিটি তার,কাগজে-কলমে ধর্মীয়মতে সকলভাবে তার -ই স্ত্রী ,দিশানের মা-বাবা,এমনকি নিজের মা-বাবাকেও সে কোন ভরন-পোষন নিতে দেবে না,তারা যেটা দিবে সেটা শখ করে কোন গিফট হয়তো দিবে এর বাইরে কিছু না। তবে তাদেরকে দিশানকে আগলে রাখার দায়িত্ব দিয়ে যেতে হবে, সে তো দূরেই থাকবে,দূর থেকে যেটুকু স্বামী হিসেবে করার সবটাই ও করবে। দিশান ছোট হলেও সে নিজে তো তার স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ববোধ সম্পর্কে অবগত,সেখানে কোন ত্রুটি হবে না। তবে অধিকারবোধ নিয়ে সে আগাবে না এখন,সে দায়িত্বটুকু নিয়ে আগাবে আর দিশানকেই এই সম্পর্কের অধিকার খাটানোর জায়গাটুকু করে দিতে হবে,যতটাই সময় লাগুক দিশানের এই বোধটুকু আসতে ততটা সময় সে অপেক্ষা করবে। বিয়েটা দ্রুত হয়ে গেছে, বন্ধনের বাকিটা ধীরে ধীরেই ভীত মজবুত করে গড়ে উঠুক।
সময়গুলো খুব দ্রুতই কেটে গেলো এরপর। বাইরে যাবার সকল ফর্মালিটিস আর গোছানোতেই সময় কেটে গেলো নেহালের। তারউপর খালা আর মামীরাও দাওয়াত না খাইয়ে ছাড়বে না। বলা যায় ঐ দাওয়াতের সময়টুকুতেই তার দিশানের সাথে দেখা হতো। বেশিরভাগই দিশান ওদের বাড়িতেই থেকেছে। তার বইপত্র সব দুইখানে বারবার টানাটানি করা ঝামেলা আসলে,টেস্ট পরীক্ষা সামনেই। তাই দেখা যেতো মায়ের বারবার ফোনে দাওয়াতের কথা মনে করিয়ে দেয়ার তাড়ায় বাসায় ফিরলে দেখতো একদম শাড়ি পড়ে সাজগোজ করে নায়রার সাথে ছবি তোলাতে ব্যস্ত দিশান। পারতপক্ষে নেহাল রুমে থাকলে আর রুমে ঢুকতো না। নেহালও নিজে থেকে কখনো ডাকেনি দিশানকে,কাগুজে বিয়েটা ছাপ ফেলেনি তারমনেও। যাবার আগের দিনটা ফ্রী রেখেছিলো বাসার মানুষের সাথে কাটাবে বলে, দিশানকেও সকালেই ডেকে নেয় নেহালের মা। ওদের দূরত্বটা ঠিকই আঁচ পায় উনি। সদ্য বিয়ে হওয়া কাপলের মুখে যে আলাদা লালচে আভা থাকে তা এই দুটিতে নেই। হয়তো এটাই ভালো,আলাদা হয়ে দুটিতেই কষ্ট পেতো। সময়ের হাতে ছেড়ে দেয়া ছাড়া কিছুই আর করার নেই। নেহালের পছন্দের সব খাবার নিজ হাতে রান্না করছেন শারমীন আক্তার ,আবার ছেলেটাকে কবে খাওয়াতে পারবেন কে জানে?চোখ বারবার পানিতে ভিজে যাচ্ছে। নেহাল রান্নাঘরে ঢুকে দেখেন তার আম্মু হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুচ্ছেন
-আম্মু আবার কান্না, মাত্র তো তিনটা মাস। দেখতে দেখতে কেটে যাবে।
– তারপর কোথায় তুই আমার কাছে এসে থাকবি,আবার তো চলেই যাবি। আমার ছেলেটার সবসময় কাছে থাকার দিন তো শেষই। ঐ বছরে একবার করে ঘুরতে আসবি আর একবার একদম মৃত্যু সংবাদ শুনে আসবি।
-আম্মু…. এসব কি ধরনের কথা। আমি কিন্তু ঐখানে পোস্টিং এ যাবার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তোমাদের সাথে কথা বলেই নিয়েছি।
-হ্যাঁ রে বাবু,তোর উপরে উঠার সিঁড়িতে আমরা কেন মানা করবো?আমিও গর্ব করে বলবো আমার ছেলে UK তে জব করছে।
-হইছে এত গর্ব করা লাগবে না, আম্মু,একটা কথা ছিলো। দিশান…
-দিশানকে নিয়ে তুই কিচ্ছু ভাবিস না,দিশানকে আগেও আমি নায়রা থেকে কম আদর করিনি আর এখন সে আমার নেহালের বউ, আমার কাছে রেখে যাওয়া তোর আমানত, ওকে আগলে রাখবো আমি বাবু।
-সে তুমি রাখবে, কিন্তু কথাটা হলো আমার তো কোম্পানির একটা ইনভেস্টমেন্ট থেকে মাসে মাসে একটা টাকা আসে, সেই টাকাটা তোমার অ্যাকাউন্টে আসবে এখন থেকে, সেখান থেকে তুমি দিশানের যা খরচ লাগে দিও। ওর যাতায়াত, টিউশন ফি,কলেজের খরচ যা লাগে। ও ছোট মানুষ, এত টাকার দায়িত্ব আমি ওকে দিয়ে যাবো না,তুমি তো জানোই নায়রার কোথায় কি লাগে,সেই হিসেবে তুমি ঐ টাকা থেকে দিশানেরটাও দিয়ে দিও।
-এটা তুই কি বলিস বাবু?নায়রা আর দিশান কি আমাদের কাছে আলাদা? দিশানের টাকাও আমিই দিতে পারবো,ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
-না আম্মু,দিশান আর নায়রা এক্ষেত্রে আলাদা। দিশানের সব রকম দায়িত্ব নিয়েই আমি ওকে বিয়ে করেছি,দিশান আমারই মানে দিশানের দায়িত্ব আমারই । সেটা আমি তোমাদের কাউকে দিতে দিবো না। তোমার ছেলে তার বউ এর হাত খরচ চালানোর মতো রোজগার করে।
-হইছে হইছে, দিশান তোরই।
-আম্মু…..মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে, তুমি প্লিজ লজ্জা দিও না।
-যা এখন টেবিলে গিয়ে বস, লুচি আর মুরগীর কষা মাংস করেছি,সাথে পায়েস। আরও কিছু লাগবে স্যারের?
-ইয়েস,মায়ের হাতে খাওয়ানো লাগবে।
-পাগল একটা,যা আসতেছি। ঐ দুইটাকেও ডাক।
দিনটা চোখের পলকেই কেটে গেলো, অনেক রাত অবধি গল্প চললো ড্রইং রুমে। মা বারবার তাড়া দিলো শুতে যাবার,কাল সাড়ে নয়টায় বের হতে হবে নেহালকে। এবার যে যার রুমের দিকে পা বাড়ালো। এই প্রথম দিশান আর নেহাল একবারে রুমে ঢুকলো। এর আগেও আরো দুই-তিন রাত দিশান এই রুমে কাটালেও প্রতিবারই নেহাল কাজ সেরে রুমে ঢুকার আগেই দিশান ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। আজ দিশানের প্রচন্ড অস্বস্তি চেপে ধরেছে। সে তাড়াতাড়ি কাভার্ড খুলে রাতে ঘুমানোর গেঞ্জি-প্যান্ট বের করে ওয়াসরুমে চলে গেলো। বের হয়ে দেখো নেহাল তার আলমারি খুলে টুকটাক জিনিস ভরছে ব্যাগে। দিশান বিছানায় শুতে চলে গেলো সরাসরি। ও গা এলিয়ে দিতেই নেহাল ডাকলো ওকে,
-দিশান একটু এদিকে আসো
দিশান লাফ মেরে উঠে বসে।
-রিলাক্স, আস্তে ধীরে উঠে আসো।
দিশান পায়ে পায়ে নেহালের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। নেহাল আলমারির চাবির গোছাটা দিশানের হাতে দিয়ে বললো,
-এই আলমারির চাবিটা তোমার আলমারিতে তুলে রাখো। আর দেখো এই ড্রয়ারে টাকা রাখা আছে,তোমার পকেট মানি। তোমার প্রয়োজনের খরচের টাকা আম্মুর হাতে দেয়া আছে, তোমার টিউশন, কলেজ, যাতায়াত,কেনাকাটা এসব আম্মুই দিবে নিজ থেকে। আর এই টাকাটা রেখে গেলাম প্রয়োজনের বাইরে তোমার শখ মেটানোর জন্য। নিজের মতো কিছু কেনা, বাইরে খাওয়া,গল্পের বই অথবা অন্য যা কিছুর টাকা যেটা মুখ ফুটে আম্মুর কাছে চেয়ে নিতে পারবে না এখান থেকে নিয়ে নিও। বেহিসাবি যে তুমি না সেটা আমি জানি।
– দরকার পড়বে না মনে হয় । আর দরকার লাগলেও আম্মু আছে,মা আছে, আমার নিজের গিয়ে তেমন কিছু কেনা হয় না আসলে। ওরাই যদি এনে দেয় টাকা দিয়ে আমি কি করবো?আপনি আপনার টাকা নিজের মতো গুছিয়ে রেখে যান।
-না দিশান, ওরা গিফট করলে,নিজে থেকে কিনে এনে দিলে সেটা অন্য কথা। তুমি চাইবে না কিছু ওদের কাছে। আম্মুকে বা মাকে নিয়ে যাও শপিং এ, কিন্তু নিজেই পে করবে। তুমি নিশ্চয় আমাকে ছোট করতে চাও না। আর এই স্বাধীনতাটুকু তো আমিই তোমাকে দিয়ে যাচ্ছি। সংকোচ কেন করছো?
দিশান ঘাড় কাত করে সায় দিলো।
-ওকে, তুমি শুয়ে পড়ো, আমি লাগেজে একটা ফাইনাল টাচ দেই।
– আপনার কোন হেল্প লাগবে?
হেসে দিলো নেহাল।
-তুমি তো জানোই না আমার কোথায় কি থাকে। আর আমার তেমন কোন কাজ নেই। জাস্ট একটু শেষবারের মতো চেক করে নেয়া। শুয়ে পড়ো তুমি।
মন্টুমিয়াকে মাঝে রেখে শুয়ে পড়লো দিশান। আর আজও নেহাল পাশে এসে শোয়ার আগেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
সকালটা আজ তাড়াতাড়ি আসলো এবাড়িতে। নেহাল ভোরে উঠে নামাজ পড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে রাখলো অনেকক্ষণ। তারপর নাস্তা করে তৈরি হয়ে নিলো। দুই খালামনি চলে এলো,নিচ থেকে দিশানের আম্মু-আব্বুও উঠে এলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলো এখান থেকেই, এয়ারপোর্টে শুধু নেহালের বাবা,দিশানের বাবা আর ছোট মামা যাবে। মাকে অনেক বুঝিয়ে শান্ত করলো। দিশান আর নায়রার কাছে গিয়ে নায়রার মাথায় হাত রেখে বললো,
-আম্মুকে দেখে রাখিস। আর হুটোপুটি কম করবি,আমার বদলে তোর দায়িত্ব কিন্তু অনেক, নিজেও সাবধানে থাকবি। দিশান তুমিও সাবধানে থেকো। আর পরীক্ষার কিন্তু বেশি সময় নাই, মাঝের কয়টাদিন নষ্ট হয়েছে, এখন তোরা দুজন ভালোমতো শুধু পড়াশোনায় ফোকাস কর।
নায়রা তার ভাইয়াকে ধরে কাঁদতে থাকলো। সবার কান্নায় দিশানের চোখেও জল চলে এসেছে। চোখ তুলে আস্তে করে বলল,
-আপনিও সাবধানে থাকবেন।
নেহাল তাকিয়ে দেখলো জলে ভরা দুটো চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। একটু ছুঁয়ে দিলেই জলটা টুপ করে গড়িয়ে পড়বে। কি এক আকর্ষণে চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করছে না নেহালের । তার খুব ইচ্ছে করছে দিশানকেও একবার জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু স্বামী – স্ত্রী সম্পর্কটাই এমন, এই সম্পর্ক যতই পবিত্র আর বৈধতা নিয়েই হোক না কেন, এক ঘর মানুষের সামনে সেই সম্পর্কের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ করা যাবে না। আবার এই কাজটা অসম্পূর্ণ রেখে যেতেও মন চাইছে না নেহালের। সুযোগটা ছোট মামা এসে করে দিলো। এসে বলল,
-ব্যাগগুলো কোথায় নেহাল?ড্রাইভার নামিয়ে নিয়ে যাক।
-দাঁড়াও মামা,আমার রুম থেকে বের করা হয়নি। আমি বের করে দিচ্ছি।
-তুই থাক,বুয়া বের করে দিক।
-না, আমাকেই করতে হবে, আনছি আমি।
বলে খুব অস্ফুট স্বরে দিশানের কান ছুঁয়ে বলল,
-একটু রুমে আসো দিশান।
দিশানের মনে হলো ইলেকট্রিক শক খেলে গেলো সমস্ত শরীরে । সে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। নেহাল এগিয়ে গিয়েছিলো। পিছনে ফিরে আবার দিশানের দিকে তাকাতেই ওর সম্বিৎ ফিরে এলো। সেও এগিয়ে গেলো রুমের দিকে। নেহাল তার লাগেজগুলো বের করে দিয়ে ড্রাইভারকে বুঝিয়ে দিলো কোনটা কিভাবে নিয়ে গাড়িতে ঢুকাবে। দিশান টেবিলের কোণায় দাঁড়িয়ে রইলো। ড্রাইভার বেরিয়ে যেতেই নেহাল তার হাতের ছোট ব্যাগে পাসপোর্ট আর অন্যান্য কাগজপত্র চেক করতে থাকলো । হঠাৎ জুড়ে বসা আবেগে দিশানকে রুমে আসতে বললেও আড়ষ্টতা কাটিয়ে উঠতে পারলো না। সামনে এসে টেবিলের উপর রাখা দিশানের হাতটার উপর তার হাতটা রেখে শুধু বলল,
-ভালো থেকো।
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। দিশান দাঁড়িয়েই রইলো ওখানে। খানিক বাদে মেইন ডোরের শব্দে বুঝতে পারলো বেরিয়ে যাচ্ছে নেহাল। এবার ওর ঘরের জানালায় এসে দাঁড়ালো। মিনিট পাঁচেক বাদে দেখলো গাড়িটা নেহালদের নিয়ে বেরিয়ে গেলো। চোখে জমে থাকা জলটা এবার টুপ করে গড়িয়ে পড়লো দিশানের।