#প্রেমরোগ-২০,২১
#তাসনিম_তামান্না
২০
সময় আর স্রোত কখনো কারোর জন্য থেমে থাকে না। তারা নিজের আপন গতিতে চলে। দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন কেটে গেলো। রোজার প্রায় শেষের দিকে চারিদিকে ঈদের রং লেগেছে। হইহই করছে। ধুমছে শপিং চলছে। সারা মার্কেট জুড়ে। কুয়াশা এবার ঈদে শপিং করে নি। কুশান তবুও সকলের জন্য যা পেরেছে কিনে এনেছে। চারজনের মৃ ত্যু তে সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেছিল। একটু একটু করে সকলে স্বাভাবিক হলেও মনে ক্ষ ত রয়ে গেছে। আগের মতো জমজমাট নেই বাড়িটা। তুষার কুয়াশার তেমন একটা দেখা বা কথা হয় না। কুয়াশার সামনে এক্সাম ঈদের একমাস পরেই ও মন দিয়ে পড়ছে। মনে মনে অনেক কিছু ভেবে রেখেছে। তুষারদের আজ কুয়াশাদের বাসায় ইফতারে দাওয়াত ছিল।
ইফতারে সব আয়োজন তুতুল, মেঘা, কুয়াশা মিলে করেছে। এই ক দিনে ওরা অনেক রান্নায় শিখে গেছে। এটা শুনে তিশা অনেক অবাক হলেন। মেয়েগুলো হুট করে বড় হয়ে গেছে।
” এতো কিছু তোরা করেছিস? আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না। ”
তুতুল প্লেট ইফতারি দিতে দিতে বলল
” বিশ্বাস না করার কি আছে আম্মু। আমরা তো এখন আর ছোট নেই বড় হয়ে গেছি ”
” কিন্তু মা-বাবার কাছে তোরা সবসময় ছোট-ই থাকবি ”
কুয়াশা পানিতে চিনি দিয়ে ট্যাক মিক্স করছে। মেঘা বেগুনি ভাজছে। একটু পর একে একে সকলে এসে টেবিলে বসলো। ইফতারি শেষে নামাজ পরতে গেলো সকলে। কুয়াশা নামাজ শেষ করে ছাদে গেলো। আকাশে চাঁদ নেই। চারিদিকে কৃত্রিম আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। তুষার নামাজ পরে এসে বাসার সমানে দাড়িয়ে দেখলো ছাদে কালো আবয়ব দেখে বুঝে গেলো এটা কুয়াশা। দৌড়ে ছাদে আসলো কুয়াশা তখন দোলনায় বসেছে। কারোর ধুপধাপ পায়ে আসায় একটু চমাকলো তুষারকে দেখে কিছু বলল না। তুষার কুয়াশার পাশে বসে বলল
” এখনো মন খারাপ করে আছো? এবার তো একটু নরমাল হও ”
কুয়াশা তুষারের কথার উত্তর না দিয়ে বলল
” আপনি না-কি চলে যাবেন? ”
” হ্যাঁ ঈদের ১ সপ্তাহ পর… ”
” ওহ। কেনো আরও যে একমাস ছুটি ছিল ”
” ইম্পর্টেন্ট একটা কাজ পড়ে গেছে অফিস থেকে ফোন দিচ্ছে আমাকে ছাড়া কাজটা হবে না ”
” ও ”
” তোমার তো সামনে এক্সাম প্রিপারেশন কেমন? ”
” মোটামোটি ভালোই ”
” ঈদের দিন রেডি থেকো ”
” কেনো? ”
” তোমাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসবো। তুমি তো তেমন বাসা থেকে বের হও না ”
” আমি কোথাও যাবো না। ”
” কাম ওন কুয়াশা ভাগ্য কে মেনে নিতে শিখ। মুভ অন করো ঘুরাঘুরি করলে ভালো লাগবে ”
” বললাম না যাবো না ”
” এক সপ্তাহ পর চলে যাবো তখন আমাকে চাইলেও পাবে না ”
কুয়াশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল ” কোথায় যাবেন?
” গেলেই দেখতে পাবে”
ঈদের দিন চৌধুরী বাড়িতে কোনো আনন্দ নেই তবুও আজ ঈদ। লাচ্চা, সেমাই, নবাবি সেমায়, পাস্তা, নুডলস, ফালুদা, পুডিং…. রান্না করেছে ওরা তিনজন মিলে পাখিকে কোনো কাজে হাত দিতে দেয় এখন আর ওরা। আজ রিদ এসেছে সকলে শাওয়ার নিচ্ছে কুশান, মেঘ এখনো ঈদের নামাজ পড়ে ফিরে নি বাবা-মায়ের ক ব রের জিয়ারত করতে গেছে। মেঘা আগেই শাওয়ার নিয়ে ছিল। কালিংবেল বাঝতেই দরজা খুলে রিদ কে দেখে অবাক হলো না রিদ প্রতি ঈদেই ওদের বাসায় আসে। বাবা-মায়ের মৃ”ত্যু দিন রিদ ছিল কিন্তু কথা হয় নি। তারপর আরো কয়েকবার রিদ এসেছিলো সকলের সামনে কথা বলে নি না সুযোগ পাই নি মেঘা ই সুযোগ দেই নি বলতে গেলে।
রিদ হাসি মুখে বলল ” কেমন আছো? ”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি? ”
” হুম ভালোই। ”
” বসুন ভাইয়ারা এখনো ফিরে নি। ”
” ওহ। তুমি কেমন শুকিয়ে গেছো! ”
” হয়ত! ”
” ফোন দাও নি কেনো আর? ”
” আপনি বিরক্ত হন যে… ”
” আমি দিয়েছিলাম ধরো নি কেনো? ”
” ইচ্ছে হয় নি ”
মেঘার কথার পিঠে কি করবে রিদ আর খুঁজে পেলো না। মেঘা চলে গেলো। ট্রে-তে করে খাবার আনলো। রিদ বলল
” ঈদের কোনো প্লান নেই? ”
” নাহ্ ”
” কেনো? ”
” ইচ্ছে করে নি ”
” তুমি ঠিক আছো মেঘা তোমাকে কেমন অচেনা লাগছে ”
” বদলেছি যে তাই ”
” হুম দেখছি বড্ড বদলে গেছো। ভালোবাসা রং ও কি বদলে ফিকে হয়ে গেছে ”
” যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে রং কোথা থেকে আসবে? ”
” সত্যি কি নেই? ”
” আপনিই ভালো জানেন ”
” বাহ! কথা শিখে গেছো দেখছি ”
” তা তো বটেই ”
কুশান মেঘ চলে আসলো। রিদের সাথে গল্প জুড়ে দিলো। বিকাল বেলা তুষার আসলো কুয়াশা কে নিয়ে বের হবে বলে। তুতুল, মেঘা কেও ওদের সাথে যেতে বলল গেলো না। কুয়াশা তুষার রিকশা করে আসেপাশে ঘুড়লো। ফুচকা খেলো। দুজনে নির্জন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে মাঝেমধ্যে দুই একটা গাড়ি সাই-সাই করে চলে যাচ্ছে। কুয়াশার নিজেকে হালকা অনুভব করলো। মাথার ওপর থেকে যেনো ভারি বস্তু নেমে গেলো। তুষার কুয়াশার হাত আঙ্গুলে ফাঁকে হাত গলিয়ে আকরে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল
” কেমন ফিল হচ্ছে? ”
” নিজেকে হালকা লাগছে ”
” বলেছিলাম না ঘুরাঘুরি করলে ভালে লাগবে। মন খারাপ হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে। ঘুরাঘুরি করবে ”
” হুম ফ্রেন্ডরা অনেকবার বলেছিল যেতে ইচ্ছে করেনি ”
তারপর চোখের পলকে একসপ্তাহ কেটে গেলো তুষার চলে গেলো। কুয়াশা মেঘা ফুল দমে পড়াশোনা শুরু করলো এক্সামের জন্য। দিন যায় দিন আসে…
দেখতে দেখতে কুয়াশা মেঘার পরিক্ষা শেষ। কুয়াশা তুষারের ফোন আলাপ হয় খুব কম দুজনেই দুই দিক থেকে ব্যস্ত। রিদ এখন মাঝেমধ্যে মেঘার কাছে ফোন দেয় টুকটাক দুজনের কথা হয়। মাঝেমধ্যে আবার কথা বলতে বলতে রাত পেরিয়ে যায়। ঈশান নতুন ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। ঈশান উমার বাড়ির থেকে কেউ ওদের বিয়ে মেনে নেয় নি। ওরা দুজনের সংসার পেতেছে সুখেই আছে। কুরবানির ঈদ চলে গেলো তুষার ১৫ দিনের জন্য এসেছিল কিন্ত ব্যস্ত থাকার কারণে কুয়াশার সাথে তেমন কথা হয় নি। পাখির ডেলিভারি ডেট এগিয়ে আসছে। পাখিকে হসপিটালে ভর্তি করা হলো। পাখির মা এসেছে। তিনি যে কুয়াশাকে পছন্দ করে না কুয়াশা বেশ বুঝতে পেরে পাখির মার থেকে দূরে দূরে থাকে। আগে তিনি এমন ছিল না কি মিষ্টি করে কথা বলত আর এখন কথায় বলে না যখন তাকাই কেমন কঠোর সে চাহনি।
” ভাবিপু রিলাক্স থাকো কিছু হবে না। আমাদের চ্যাম্পরা সুস্থ ভাবে আসবে আর তুমিও ”
পাখি হাসার চেষ্টা করলো তবুও মনে মনে ভয় করছে। কুশান পাখিকে চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলেও মনে মনে তার ও ভয় করছে।
পাখি কুশানের দুইটা জমজ ছেলে হয়েছে। মা বেবিরা সুস্থ আছে। অনেক দিন পর বাড়িতে আনন্দ বন্যা বয়ে গেলো খুশি যেনো ধরে না। ওদের আকিকা দিয়ে নাম রাখা হলো কুশ আর শান। দুজনই বাবা-মার মিক্স কার্বনকপি হয়েছে।
তার আরও একমাস পর কুয়াশা নিজে নিজে একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তার কার্যক্রম ও শেষ। কুয়াশা কুশান কে বলল
” ভাইয়া আমি তুষারের কাছে যেতে চাই ”
কুশান স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে কি বলছে তার বোন।
” কি বলছিস তুই? ”
” আমি ঠিকি বলছি। আমার পার্টসপোট ভিসা করা সব শেষ আমি কাল ই যেতে চাই ”
কুশান হতভম্ব হয়ে বলল
” তুই কবে এতো বড় হয়ে গেলি বোন? কিভাবে এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলি? ”
পাখি রুমে ছিলো না। রুমে ডুকার আছে কুয়াশার কথা শুনে আঁতকে ওঠে বলল
” কি বলছিস কুয়াশা এগুলো? তুই আমাদের ছাড়া থাকতে পারবি? না আমরা পারবো? ”
” মানুষ অভ্যসের দাস তাই অভ্যস হয়ে যাবে। তাই এসব নিয়ে ভেবো না? ”
” হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেনো নিলি? ”
” আমার বিয়ে হয়ে গেছে ভাইয়া বাপের বাড়ি থাকাটা শোভা পায় না। ”
চলবে ইনশাআল্লাহ
#প্রেমরোগ-২১
#তাসনিম_তামান্না
~সুইজারল্যান্ড~
কুয়াশা এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ তুষারের দেখা নেই। তুষার জানতো না কুয়াশা আসবে। কুয়াশাই সবাইকে বলে দিয়েছিল প্লেন ফ্লাই করলে তুষারকে তখন জানিয়ে দিতে যদি তার আগে জানাত তাহলে তুষার কখনো কুয়াশাকে একা আসার পারমিশন দিতো না। সেই ভেবেই কুয়াশা তুষারকে জানাতে বারন করেছিল। কুয়াশা এখানকার কিছুই চিনে না চিনলে এতোক্ষণে চলে যেত তুষারের বাসায়। ফোনও করতে পারছে না এদেশের সিম না-ই।
সেপ্টম্বর মাসের মাঝামাঝি দিকে বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ভিজে রাত গভীর হচ্ছে। চারিদিকে রূপকথার মতো সব গোছানো। কৃত্রিম আলোয় চারিদিকে আলোকিত। লোকজনের সমাগম কম নেই মোটামটি আছে। কেউ তার প্রিয়জনকে বিদায় দিচ্ছে আবার কেউ বা প্রিয়জনকে কাছে পেয়ে আনন্দ উল্লাশে মেতে আছে। কুয়াশা প্রথমে সবটা মুগ্ধ চোখে দেখলেও এখন আর ওদিকে মন নেই। কুয়াশার মনে ভয়ের দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এদিকে শীত ও লাগছে অনেক। তুষার কি আসবে না? কুয়াশা ওখানকার বেঞ্চে বসে পড়লো। এখান থেকে বের হলে যদি কোনো বি প দ হয়।
তুষার কাল সারারাত আর আজ সারাদিন কাজ করে টাইয়াড হয়ে ছিল তাই লান্স করে ঘুমিয়েছে। ঘুম ভাঙ্গলো সাড়ে নয়টার দিকে। ফ্রেশ হয়ে কফি বানিয়ে ফোন অন করলো ফোনের চার্জ ছিল না বিধায় ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। ফোন অন করতেই WiFi কানেক্টেড হয়ে যেতেই WhatsApp, messenger এ বাড়ি থেকে আসা অসংখ্য কল মেসেজের নোটিফিকেশন আসলো। তুষার অবাক হলো। এতোগুলো কল কেনো? কারোর কিছু হলো না-কি আবার? ভাবতে ভাবতে আবারও কল আসলো। তুতুল ফোন দিয়েছে তুষার ধরতে সময় নিলো না।
” কি হয়েছে? এতোগুলো ফোন দিচ্ছিস কেনো? সব ঠিক আছে তো? ”
তুতুল রেগে বলল ” এতোক্ষণ কোথায় ছিলে ভাইয়া? টেনশনে হচ্ছে কত যানো? ”
” ফোনে চার্জ ছিলো না টায়ার্ড হয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ”
” ভাইয়া তুমি তারাতাড়ি এয়ারপোর্টে যাও কুয়াশা অপেক্ষা করছে প্লেন অনেকক্ষণ হয়েছে ন্যান্ড করেছে ”
তুষার বিস্ময় হয়ে চিল্লিয়ে উঠলো ” হোয়াট? কুয়াশা এয়ারপোর্টে মানে? ”
” কুয়াশা তোমার ওখানে গেছে ”
” তুই আমাকে এখন বলছিস কেনো? আগে কেনো জানাস নি? আর তোরা ওকে একা আসতে দিলিই বা কেনো? ”
তুতুল মিনমিন করে বলল
” কুয়াশা জানাতে বারণ করেছিল। আর ও ওখানে নিজের ইচ্ছেতেই গিয়েছে ”
তুষার ধমক দিয়ে বলল ” ফোন রাখ ”
তুষার টি-শার্টের ওপরে জ্যাক্টে গায়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। বেশ স্প্রিডেই গাড়ি চালাতে লাগলো মনে হাজারো কু চিন্তা ঘুরাঘুরি করছে।
কুয়াশা ভয়ে এবার কেঁদেই দিলো এক বয়স্ক মহিলা কুয়াশা কাছে এসে আদুরে কন্ঠে বলল ” হোয়াট হ্যাপেন বেবি? হোয়ার আর ইউ ক্রাইং? ”
কুয়াশার কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছে না। বয়স্ক মহিলাটি কুয়াশাকে শান্তনা দিতে লাগলো।
৩০ মিনিটের রাস্তা ২০ মিনিটে এসে পৌছালো। তুষার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো টেনশনে ঘাম বের হয়ে গেছে। তুষার কুয়াশাকে বসে কাঁদতে দেখে থমকায়। কুয়াশা তুষারকে দেখে দৌড়ে এসে তুষারকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেটে বলল
” আপনি আসতে এতো দেরি করলেন কেনো হ্যা? জানেন আমি কত ভয় পেয়েছি? ”
তুষার যেনো প্রাণ ফিরে পেলো এতোক্ষণে। বয়স্কমহিলাটি হেসে চলে গেলেন। কুয়াশার কান্নার গতি কমে এলো। তুষার কুয়াশাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল
” পা গ ল তুমি? এভাবে আমাকে না জানিয়ে এসেছো কেনো একা? আজ আমি ফোন অন না করলে তোমার বি প দ হতে পারতো। জাস্ট কিছুক্ষণ আগে জানলাম তুমি এখানে আসছো আর তখনই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। আর তুমি? ”
কুয়াশা অপরাধী ন্যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। তুষারের রাগে মাথা দপদপ করছে। একহাতে লাগেজ আর কুয়াশার হাত ধরে পার্কিংলটে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল
” বসো ”
কুয়াশা চুপচাপ বসে পড়লো। রাস্তায় কেউ কারোর সাথে কথা বলল না। বাসায় এনে কুয়াশাকে রুম দেখিয়ে দিলো তুষার বলল
” এই রুমে থাকবে তুমি ”
” এটাতে আপনি থাকেন? ”
” নাহ তোমার পাশের রুমেই আমি আছি ভয় পাওয়ার কারণ নেই ”
কুয়াশা তুষারের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
” আমি তো আপনার বউ আমি আপনার রুমেই আপনার সাথেই থাকবো ”
তুষার নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলো না। হতভম্ব! দৃষ্টি শূন্যে মিলিয়ে তাকিয়ে রইলো কুয়াশার দিকে যে মেয়ে কি-না তুষারের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকে সেই মেয়ে তুষারের সাথে এক রুমে থাকতে চাইছে এটা অর্চয্য ঘটনা। কেউই বিশ্বাস করতে চাইবে না। কুয়াশারে রুমে চলে গেলো। তুষারের বিস্ময় যেনো কাটছেই না। নতুন এক কুয়াশাকে আবিষ্কার করছে যার চোখে ভয়, সংকোচ দেখতে পাচ্ছে না। অদ্ভুত সে চোখে চাহনি। তুষার সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ডিনার রেডি করতে লাগলো। কাজের ফাঁকে বিরবির করে বলতে লাগলো
” মেয়েটা কি পা গ ল হলো না-কি? হুট করে চলে আসলো বউ বর বলে চিল্লাচিল্লি করছে কেনো? কিছু কি হয়েছে ওর? ”
কুয়াশা ভিজে চুলে ড্রাইনিংটেবিলে এসে বসে বলল
” আপনি রান্না করেছেন? ”
” হুম এখানে নিজের রান্না নিজেকে করতে হয় ”
” এখানে অনেক ঠান্ডা ”
” নতুন এসেছ সয়ে যাবে ”
তুষার পাস্তা আর স্যান্ডুইস করেছে এতোটুকু সময়ের মধ্যে যা করতে পেরেছে। কুয়াশা খেয়ে নিলো। বড্ড খুদা লেগেছিলো ওর। কুয়াশার খাওয়া শেষ হতেই তুষার বলল
” এখানে কেনো এসেছ ”
” কেনো এসেছি মানে? বরের কাছে বউ আসবে না তো কোথায় যাবে? ”
” কুয়াশা আমি তোমাকে যথেষ্ট পরিমান চিনি হয়ত তোমার থেকেও বেশি তোমাকে চিনি। তুমি কোনো কারণ ছাড়া এভাবে চলে আসার মেয়ে নও ”
কুয়াশার মুখে আধার করে বলল
” আমি এসেছি আপনি খুশি হন নি? ঝামেলায় ফেললাম? আ… ”
” স্টপ কুয়াশা কথা ঘুরাচ্ছ তুমি কি হয়েছে বলো আমাকে ”
” কিছু হয় নি। আমি কি আপনার কাছে আসতে পারি না? আপনার সাথে থাকতে পারি না? ”
” অবশ্যই পারো তোমার সম্পূর্ন রাইট আছে। তাই বলে তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে নয় ”
” আমি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেই নিজের স্বজ্ঞানে এখানে এসেছি। বিয়ে টাও মেনে নিয়েছি। ”
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল ” সত্যি বলছ তুমি? ”
” মিথ্যা কেনো বলবো? ”
” তোমার চোখ মুখ অন্য কথা বলছে। তুমি আমাকে মেনে নাও নি। আর তুমি আর আমি একরুমে থাকলে তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ কিছু হয়ে যাবে যা আমি চাইছি না একবার আমি রাগের মাথায় তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তোমাকে স্প র্শ করেছি আমি তখন নিজেকে কন্ট্রোল করে নিয়েছিলাম। আমি মহাপুরুষ নই যে সবসময় নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখবো ”
তুষার উঠে গেলো। কুয়াশা লজ্জায় মাটি ফাঁকে ডুকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কুয়াশা উঠে রুমে চলে গেলো। বিছানায় শুয়ে তুষারের পারফিউমের ঘ্রাণ পেলো। তুষারের কথা ভাবতে ভাবতে কুয়াশা ঘুমিয়ে গেলো। তুষার ঘুমাতে পারছে না হাসফাস করছে। কুয়াশা কেনো এসেছে এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরঘুর করতে লাগলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ