হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ৩১

0
607

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ৩১
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
ফারহান বাসায় এসে দরজা লাগিয়ে তার রুমে গিয়ে বসে আছে। তার আম্মু রোকসানা বেগম তাকে অনেকবার রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে গেছেন কিন্তু সে দরজা খুলেনি। ফারহান উনাকে সোজাসাপটা বলে দিয়েছে সে খাবে না। রোকসানা বেগমও আর ফারহানকে খাওয়ার জন্য জোর করলেন না। কেননা তিনি বুঝতে পেরেছেন সে কেন খাবে না। এরপর তারা তারাই ফারহানকে রেখে রাতের খাবার খেয়ে নিলেন। খাওয়া দাওয়া শেষে সবকিছু গোছগাছ করে সবাই যার যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

.
-“এতো রাতে আপনি ছাদে কি করছেন স্যার?”

আচমকা কারও গলার আওয়াজ পেয়ে ফারহান পিছনে ফিরে তাকালো। দেখলো তার ঠিক পিছন বরাবর নীলা দাঁড়িয়ে আছে। নীলাকে দেখে ফারহান কিছুটা অবাক হলো বটে। কেননা ঘড়িতে এখন ১২ টা ছুঁই ছুঁই। এইসময়ে নীলাকে ছাদে দেখেই মূলত সে একটু অবাক হলো। তবে মূহুর্তের মধ্যেই সে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল আর নীলার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন? ঘুমাননি এখনো?”

-“ঘুমিয়ে ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় এরপর অনেক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করি কিন্তু আর ঘুম আসেনি। তাই ভাবলাম একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি।”

-“আমারও ঘুম আসছিল না তাই ছাদে এসেছি। আর আমাকে আর স্যার বলে ডাকা লাগবে না, আপনি আমার বয়সে কয়েক বছরের ছোট হবেন। তাই ভাইয়া বলে ডাকতে পারেন কোনো সমস্যা নেই।”

-“ঠিক আছে, বাসায় নাহয় আপনাকে ভাইয়া বলে ডাকবো। কিন্তু অফিসে গেলে আবার আপনাকে স্যার বলে ডাকবো। আর আপনিও তাহলে এখন থেকে আমাকে আপনি না বলে তুমি করে বলিয়েন।”

নীলার কথাগুলোর প্রতিউত্তরে ফারহান কিছু বললো। ফারহানকে চুপ করে থাকতে দেখে নীলা এবার কিছুটা এগিয়ে এসে বলে উঠলো, “আজ রাতের খাবার খাননি কেন?”

-“এমনিই ভালো লাগেনি তাই।”

-“আরশি আপুর ওমন ব্যবহারের জন্য মন খারাপ তাইনা?” ফারহানের দিকে দৃষ্টি ফেলে জিজ্ঞেস করলো নীলা।

-“মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে আমাদের এই ভালোবাসাটা একতরফা। একতরফা ভালোবাসা গুলো এতো সহজে পূর্ণতা পায় না। কেননা একজন মানুষকে আমার ভালো লাগে, এখন ওই মানুষের আমাকে ভালো নাও লাগতে পারে। তাই বলে হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যদি এতে ওই মানুষটার মনে আমার প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসার জন্ম নেয়।”

-“তাহলে এখন আপনি কি করতে চাচ্ছেন? মানে আপনি কি আগের মতোই আরশি আপুর সাথে লেগে থাকবেন ভালোবাসা পাওয়ার জন্য?”

-“নাহ এখন থেকে ভিন্ন কিছু করবো যাতে আরশির মনে আমার প্রতি একটু হলেও ভালোবাসার জন্ম নেয়। যাতে করে সে বুঝে আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। যাতে সে বুঝে আমি তাকে কতটা চাই।”

-“আরশি আপু খুব ভাগ্যবতী হবেন যদি উনি আপনাকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করেন।”

ফারহান এবারও নীলার প্রতিউত্তরে কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

-“রাত তো অনেক হলো, ঘুমাবেন না?” জিজ্ঞেস করলো নীলা।

-“আপনি যান আমি একটু পরে চলে যাব।”

-“চা বা কফি কিছু খাবেন? খেলে বলেন আমি বানিয়ে নিয়ে আসবো।”

-“নাহ কিছু খাওয়ার মোড নেই এখন।”

-“আচ্ছা তাহলে আমি গেলাম।” এই বলে নীলা ছাদ থেকে নেমে তার রুমে চলে গেল।

এরপর ফারহান আরও বেশ কিছুক্ষণ ছাদে থেকে একসময় তার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

.
-“আরশি, আমি চাচ্ছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমার আর সাকিবের আকদ করিয়ে দিতে। এতে তোমার কি মত?”

সকালবেলা নাস্তার টেবিলে বসে আরশি তার আম্মু-আব্বুর সাথে নাস্তা করছিল। এমন সময় আমজাদ হোসেন আরশিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে উঠলেন। আমজাদ হোসেনের কথাটা শুনে আরশি একটু অবাক হলো আর বিস্ময় নিয়ে তার আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “হঠাৎ তুমি আমাদের আকদ করিয়ে দিতে চাচ্ছ এর কারণ কি আব্বু?”

-“আরে গতকাল রাতে সাজ্জাদ মানে সাকিবের আব্বু আমায় ফোন করেছিল। বললো সাকিব নাকি গতকাল আমেরিকা যাওয়ার জন্য তার সকল কাগজপত্র জমা দিয়ে ফেলেছে। এখন শুধু তার ভিসা আসার পালা, ভিসা আসলেই সে আমেরিকায় পাড়ি জমাবে। এখন কবে না কবে হুট করে তার ভিসা চলে আসে এটা তো কারও জানা নেই। তাই সে আমায় জিজ্ঞেস করলো দু-এক মাসের মধ্যে তোমার আর সাকিবের আকদ করিয়ে দেওয়া যায় কি-না। তখন আমি তাকে বললাম আমি আগে আরশির সাথে বোঝা পাড়া করে নেই তারপর তোকে জানাব।”

-“কিন্তু গতকালই তো সাকিবের সাথে আমার দেখা হলো, কই উনি তো আমায় কিছু বললেন না এ ব্যাপারে।”

-“হয়তো তার মনে নেই। এখন এইসব বাদ দাও আর বল তোমাদের দুজনের আকদ করিয়ে দেওয়াতে তোমার কি মত?”

-“আব্বু, এখন হুট করে কিছু না ভেবেই কি বলবো? আমি একটু ভেবে তোমাকে জানাব নে।”

-“আচ্ছা তাহলে তুমি কালকের মধ্যে ভেবে আমায় তোমার মতামত বলিও।”

-“আচ্ছা আব্বু।”

এরপর আরশি নিজের নাস্তা শেষ করে উঠে রুমে চলে আসলো। রুমে এসে আরশি রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে গেল। ভার্সিটিতে গিয়েই আরশি রুহির দেখা পেয়ে গেল।

-“কিরে তুই আজ আমার জন্য চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়ালি না কেন?”

-“এখন আর আমায় দিয়ে তোর কাজ কি? তোর জন্য তো ফারহান ভাইয়া আছেনই।”

-“আমার জন্য ফারহান ভাইয়া আছেন মানে? বুঝলাম না!”

-“তুই কিছু না বুঝলেও আমার যা বোঝার তা বুঝা হয়ে গেছে। ফারহান ভাইয়া তোকে ভালোবাসেন এটা তুই আমায় এক বছর আগে বললি না কেন? যদি তুই এক বছর আগে আমায় কথাটা বলতি তাহলে ওইদিন না আমি ফারহান ভাইয়াকে গিয়ে প্রপোজ করতাম আর না উনার হাতে চ*ড় খেতাম।”

-“আরে তখন তো আমি নিজেও জানতাম না যে উনি আমাকে ভালোবাসেন।”

-“মানে?”

-“আরে যেদিন উনি শুনেছেন আব্বু সাকিবের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছেন সেদিনের পরেরদিনই উনি আমাকে জানান যে উনি আমায় ভালোবাসেন। তুই হয়তো সেদিন ভাইয়ার কথাটা শুনে অনেক অবাক হয়েছিলি। হ্যাঁ আমিও ওইদিন ভাইয়ার কথাটা শুনে অবাক হয়েছিলাম যেদিন তিনি আমায় ভালোবাসেন এই কথাটা বলেন। কিন্তু বিশ্বাস কর রুহি আমার মনে উনার প্রতি কোনো ফিলিংস নেই। ছোট থেকেই উনাকে আমি বড় ভাইয়ের চোখে দেখে এসেছি। এখন আমি উনাকে কীভাবে প্রেমিকের চোখে দেখি তুই’ই বল?”

-“তার মানে ফারহান ভাইয়া তোকে ভালোবাসেন তুই বাসিস না?”

-“এটাই তো বোঝালাম তোকে এতক্ষণ।”

-“তাহলে এখন তুই কি করবি?”

-“কি করবো আবার? কিছুই নাহ।”

-“মানে উনাকে তুই কিছু বলিস নি যে তুই উনাকে…”

-“হ্যাঁ আমি উনাকে অনেকবার বলেছি যে আমি উনাকে ভালোবাসতে পারবো না। কারণ উনাকে আমি সবসময় বড় ভাইয়ের মতোই দেখে এসেছি। কিন্তু উনি আমার কথা বুঝতেই চান না। আর গতকাল তো…” বলেই আরশি থেমে গেল।

-“গতকাল তো কি? বল থেমে গেলি কেন?”

-“না মানে গতকাল তো উনি আবার সাকিবের সামনেও আমায় ভালোবাসার কথাটা বলে উঠেছেন এটাই আরকি।”

এরপর রুহি আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাদের বাকি বান্ধবীরা সেখানে এসে উপস্থিত হলো এরপর আরশি আর রুহি রানিং টপিক বাদ দিয়ে বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় যোগ দিল। তার কিছুক্ষণ পর বেল বেজে উঠলে সবাই ক্লাসে চলে গেল।

.
ভার্সিটি ছুটির পর আরশি আর রুহি তাদের বান্ধবীদেরকে বিদায় জানিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসার দিকে ফিরছিল। এমন সময় হঠাৎ আরশি মাঝরাস্তায় ফারহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা চমকে উঠলো। আরশিকে দেখা মাত্রই ফারহান দ্রুত পায়ে হেঁটে তার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো আর বললো, “আরশি তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

-“কি কথা আছে তা আমি ভালো করেই জানি। আর তুমি যা বলবে তার উত্তর ‘না’ এর মধ্যেই হবে।”

-“আমার কথাটা তো আগে শুনবি নাকি।”

-“আচ্ছা বল কি বলবা।”

-“সত্যি করে বল তো আরশি তুই কি আমায় পছন্দ করিস না?”

-“না।”

-“আমার চোখে চোখ রেখে বল তুই আমাকে পছন্দ করিস না।”

-“হ্যাঁ আমি তোমাকে পছন্দ করি না। বললাম তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে, এবার হয়েছে? খুশি? এবার যেতে পারি আমি?” খানিকটা রাগ দেখিয়ে কথাগুলো বললো আরশি।”

-“তুই মিথ্যা বলছিস আমি জানি।”

-“একদমই না। তোমাকে আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি, তোমাকে আমি সবসময় বড় ভাইয়ের নজরেই দেখে এসেছি আর সারাজীবন দেখে যাব। আমার পক্ষে তোমাকে অন্য নজরে দেখা সম্ভব না। এবার তো আমাকে এইসব কথা বলা বন্ধ কর প্লিজ।”

-“আরশি আমি জানি তুই রাগের মাথায় কথাগুলো বলছিস। তুই…”

-“আমি একদমই রাগের মাথায় কথাগুলো বলছি না। তুমিই আমার কথাগুলো বুঝতে চাচ্ছ না।” কথাটা বলে আরশি কিছুটা থেমে আবার বলতে লাগলো, “বুঝেছি এবার আমায় কি করতে হবে। আব্বু আমার আর সাকিবের আকদ করিয়ে দিতে চাচ্ছেন কিন্তু আমি রাজি হচ্ছি না দেখে আব্বুও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কিন্তু আজকে আমি বাসায় গিয়ে আব্বুকে জানিয়ে দিব যে আমি শুধু সাকিবকে আকদ করতেই রাজি নয় তাকে বিয়ে করতেও রাজি। আর তারা যেন আমাদের আকদ না করিয়ে সোজা বিয়ে করিয়ে দেন। হ্যাঁ আমি আজকে বাসায় গিয়ে আব্বুকে এটাই বলবো। শুনেছ তুমি? আমি বাসায় গিয়ে আব্বুকে বলবো উনি যেন আমার আর সাকিবের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। তখন দেখবো তুমি কি কর। চল রুহি।” খানিকটা রাগ দেখিয়ে বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে কথাগুলো বললো আরশি। এরপর রুহির হাত ধরে তাকে নিয়ে মূহুর্তের মধ্যেই সেই জায়গা ত্যাগ করলো। আর এদিকে ফারহান আরশির কথাগুলো শুনে বুকভরা কষ্ট নিয়ে পাথরের ন্যায় সেখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরশির চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
.
.
Loading…….

বিঃদ্রঃ আজকের পর্বটা পড়ে কেউ আবার সত্যি সত্যি বাথ*রুমে গিয়ে কান্না করিয়েন না কিন্তু 😬

~সবাই নিয়মিত নামায আদায় করবেন আর নামাযের লাভ জানিয়ে অন্যদেরকে দাওয়াত দিবেন~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here