#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ৩২
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
-“সামনের সপ্তাহে আরশির বিয়ে ফারহান।”
রাতেরবেলা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে সবে সবার সাথে রাতের খাবার খেতে বসেছিল ফারহান। সে তার মতো করে খাবার বেড়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করলেও বাকিরা না খেয়ে শুধু তার দিকে আছে। এ দেখে ফারহান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, “কি হলো তোমরা আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন?” তখনই ফারহানের প্রতিউত্তরে রোকসানা বেগম উপরোক্ত কথাটা বলে উঠেন। রোকসানা বেগমের কথাটা শুনে ফারহান বেশ অবাক হলো আর জিজ্ঞেস করলো, “আরশির বিয়ে মানে!”
-“তোর মামা একটু আগে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। আরশি নাকি এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে করতে চাচ্ছে। তোর মামারও এতে কোনো আপত্তি নেই। কেননা সে অনেক আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল আরশি যেন ওর পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়। তাই সে আমাদের বাসায় এসে আরশির বিয়ের দাওয়াত দিয়ে গেল। আর যাওয়ার সময় এটাও বলে গেছে তুই যেন আরশির বিয়ের আগে বা বিয়ের মধ্যে কোনো ভেজাল না করিস।”
রোকসানা বেগমের কথাগুলো শুনে ফারহান কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। তার পর মূহুর্তেই সে বলে উঠলো, “বিয়ে তাহলে এক সপ্তাহ পর তাইনা?”
-“হ্যাঁ, সামনের শুক্রবারে।”
-“ভালোই হলো তাহলে, ওইদিন অফিস বন্ধ আরামসে বিয়ে খাওয়া যাবে।”
ফারহানের উক্ত কথাটা শুনে রোকসানা বেগম সহ সবাই বেশ অবাক হলো। কেননা যেই ছেলে দু’দিন আগে আরশিকে বিয়ে করার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তাদের বাসায় গিয়েছিল সে কি-না এখন আরশির বিয়ের কথা শুনেও নরমাল রিয়েক্ট করছে! শুধু এতেই শেষ না। সে তার নিজের মতো করে আরামসে খাবার খাচ্ছে। একসময় তার খাওয়া শেষ হলে সে উঠে তার রুমে চলে গেল। বাকিরা ফারহানের এমন কাজে অবাক হলেও কয়েক মূহুর্ত পরেই সবাই স্বাভাবিকভাবে নিজেদের মতো করে খাবার খাওয়াতে মন দিল।
সেদিন ফারহানের সাথে রাগ দেখিয়ে আরশি বাসায় এসে তার আব্বুকে জানায় সে সাকিবের সাথে আকদ না করে তাকে বিয়ে করতে চায়। এতে আমজাদ হোসেন কিছুটা অবাক হয়ে এর কারণ চাইলে আরশি বলে কয়েক বছর পর বিয়ে করা যেই কথা এখন বিয়ে করাও একই কথা। এরপর আমজাদ হোসেন আর কিছু না বলে বিষয়টা উনার বন্ধু সাজ্জাদকে জানান। উনার বন্ধু যখন শুনলেন আরশি সাকিবকে এখনই বিয়ে করতে চায় তখন উনিও কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। তারপর যখন আমজাদ হোসেন আরশির কথাগুলো উনার বন্ধু সাজ্জাদকে জানান তখন উনিও তেমন কিছু না বলে আরশির কথানুযায়ী রাজি হয়ে যান। তারপর দু’জন ফোনের মধ্যেই আলাপ আলোচনা করে সামনের শুক্রবারে আরশি আর সাকিবের বিয়ের তারিখ ঠিক করেন।
.
পরেরদিন ভার্সিটি যাওয়ার পথে চার রাস্তার মোড়ে এসে আরশি আর রুহি মিলিত হয়। তখন রুহি আরশিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, “তুই যে গতকাল ফারহান ভাইয়াকে রাগ দেখিয়ে বললি আজকেই আমি আব্বুকে গিয়ে বলবো উনি যেন আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন তা বাসায় গিয়ে আংকেলকে কিছু বলেছিলি?”
-“হ্যাঁ বলেছি তো। এরপর আব্বু আর উনার বন্ধু মিলে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করে আগামী শুক্রবার দিনটায় আমাদের বিয়ের তারিখ বরাদ্দ করেন।”
-“কিহহ! তার মানে সামনের শুক্রবারে তোর বিয়ে?”
-“হ্যাঁ, দাওয়াত রইলো চলে আসিস।”
-“এই তুই ফাজলামি করছিস না তো আমার সাথে? মানে সামনের শুক্রবারে তোর বিয়ে আর তুই এখন এমন ভাবে কথা বলছিস যেন তোর বিয়ের এখনো অনেক দিন বাকি।”
-“ফাজলামি করবো কেন? যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম। আর কিছুদিন পর আমার বিয়ে বলে কি আমি এখন থেকেই শুধু শুধু মনমরা হয়ে থাকবো নাকি?”
-“সেটা না, কিন্তু তোর রিয়েকশন দেখে মনে হয়না যে আগামী শুক্রবারে তোর বিয়ে।”
রুহির কথার প্রতিউত্তরে আরশি আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা ভার্সিটিতে চলে আসলো। ভার্সিটিতে এসে আরশি তাদের বাকি বান্ধবীদের দেখা পেয়ে গেল। এরপর সে তাদেরকেও তার বিয়ের দাওয়াত দিল। হুট করে আরশির বিয়ের দাওয়াত পেয়ে তার বান্ধবীরা বেশ চমকে উঠলো আর সবাই আরশিকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো হুট করে তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কেন। তখন আরশি সবাইকে একটা কথা বলে বুঝ দিয়ে দেয় এই যে পরিবার থেকে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। এরপর কেউ আর এই বিষয়ে তেমন কথা না বলে আরশির বিয়েতে কে কি করবে এই নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু করে দিল।
.
বর্তমানে আরশি আর সাকিব একটা কফিশপে বসে আছে। আরশির ভার্সিটি শেষে সাকিব তাকে সেখান থেকে একটা কফিশপে নিয়ে আসে একটা বিষয়ে কথা বলার জন্য। কিন্তু এখানে আসার পর থেকে সাকিব কোনো কথাই বলছে না। এ দেখে আরশি বলে উঠলো, “তা আপনি কি যেন বলবেন বলে আমায় এখানে এনেছেন। কিন্তু আপনি তো কিছুই বলছেন না।”
-“হ্যাঁ আসলে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল যে আপনি হুট করেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলেন কীভাবে যেখানে কেউ আমাদের বিয়ে নিয়ে কথাই বলেনি।”
-“তাহলে কি আমি বিয়ে থেকে নিজের মত উঠিয়ে নিব?” কিছুটা রাগ দেখিয়ে কথাটা বলে উঠলো আরশি।
-“আরে আপনি রাগ করছেন কেন? আমি তো জাস্ট জানতে চাচ্ছি আপনার হঠাৎ কি এমন হলো যে আপনি ডায়রেক্ট আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে পরলেন। এতদিন ধরে তো আপনি আমার সাথে আকদ’ই করতে চাচ্ছিলেন না বলতেন আগে আপনার ব্যাপারে সবকিছু জানি তারপর দেখা যাবে।”
-“হ্যাঁ তা ঠিক। কিন্তু এখন আপনার ব্যাপারে আমার সবকিছু জানা হয়ে গেছে তাই আপনাকে আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। কেননা এখন আকদ করে কয়েক বছর পর বিয়ে করা যেই কথা এখন বিয়ে করাও একই কথা।”
-“আচ্ছা এসব নাহয় বুঝলাম। কিন্তু সেদিন যে রেস্টুরেন্টে একটা ছেলে এসে আপনাকে ভালোবাসার কথা বলে আপনাকে সাথে নিয়ে চলে গিয়েছিল সেই ছেলেটা আপনার কাজিন না?”
-“হ্যাঁ।”
-“উনি কি আসলেই আপনাকে ভালোবাসে নাকি সেদিন উনি আমাদের সাথে ফ্রাংক করেছিলেন।”
-“উনার বিষয়ে আপনার এতো জানতে হবে কেন? উনি আমার কাজিন, উনার বিষয়ে আমি বুঝবো। আপনার এইসব না জানলেও চলবে। আর প্রশ্ন যেহেতু করেছেন এর উত্তরও নিয়ে যান। হ্যাঁ উনি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু আমি বাসি না। কারণ উনি আমার থেকে কয়েক বছরের বড় আর উনাকে আমি সবসময় ভাইয়ের নজরেই দেখে এসেছি। আমার পক্ষে এখন উনাকে অন্য নজরে দেখা পসিবল না।”
-“ওহ আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার। তা আমাদের বিয়ের মধ্যে যদি উনি কোনোপ্রকার ঝামেলা করেন?”
-“আমার মনে হয়না উনি আমাদের বিয়ের মধ্যে কোনোপ্রকার ঝামেলা করবেন।”
-“যদি করেন তাহলে?”
-“আপনার কি এখন এই টপিক ছাড়া অন্য কোনো টপিকে কথা বলার ইচ্ছা আছে? থাকলে বলেন নাহলে আমি বাসায় গেলাম।” কথাটা বলেই আরশি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
-“আরে আরে উঠে পরলেন কেন? আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি আপনার এই বিষয়ের উপর কথা শুনতে ভালো লাগছে না। ওকে আমি আর এই বিষয়ে কোনো কথা বলবো না। আপনি বসেন প্লিজ।”
এরপর আরশি আর কিছু না বলে তার সিটে বসে পরলো। এরপর সাকিব বললো, “আচ্ছা বলেন কি খাবেন?”
-“কিছু খাব না, ভালো লাগছে না।”
-“আরে কিছু একটা তো বলেন। চা না কফি কিছু একটার অর্ডার দিয়ে খেয়ে খেয়ে নাহয় আপনার সাথে একটু গল্প করি।”
-“আমার এখন কিছুই খেতে ভালো লাগছে না। আমি এখন বাসায় যাব।”
-“কিন্তু আমরা তো মাত্রই…”
-“আপনি উঠবেন নাকি আমি একাই বেরিয়ে যাব?” খানিকটা রাগ দেখিয়ে বললো কথাটা।
-“আরে আপনি, আচ্ছা ঠিক আছে চলেন।” এরপর সাকিব বাধ্য হয়ে আরশির কথামতো উঠে দাঁড়ালো।
তারপর আরশি দ্রুত পা চালিয়ে কফিশপ থেকে বেরিয়ে পরলো। আরশির পিছু পিছু সাকিবও কফিশপ থেকে বেরিয়ে গেল। এরপর সাকিব আরশির জন্য একটা রিক্সা ডেকে তাকে রিক্সায় উঠিয়ে দিল। আরশি চলে গেলে সেও সেখান থেকে তার বাসায় চলে গেল।
.
.
Loading……