#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক- এ রহমান
পর্ব ২ + ৩
সূর্যের প্রখরতা হঠাৎ করেই নরম হয়ে গেলো। রোদ্রজ্জল ঝলমলে দিন কেমন বিষাদময় হয়ে উঠলো। আকাশে এক পাশে কালো মেঘ জমেছে। আর এক পাশে শুভ্র মেঘের আনাগোনা। সেই শুভ্রর বুকে নীল মাথা গুঁজে লুকিয়ে আছে। আবছা দর্শন পাওয়া যাচ্ছে তার। এ যেন শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর চলছে। এতক্ষন তপ্ত গরমে ক্লান্তির রেশে অশান্তি লাগছিল ঈশার। এখন বাতাসের উত্তপ্ত ভাবটা কমে গিয়ে শিতলতা ছড়াচ্ছে কিছুটা। গরমে ঘেমে থাকা শরীরে হালকা বাতাস বেশ শীতল অনুভুতি দিচ্ছে। রিকশা থেকে নেমে দাড়িয়ে আছে সেই চিরচেনা রেস্টুরেন্টের সামনে। এখানে বেশ কয়েকবার এসেছে সে। ইভানের সাথেই এসেছে। কখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি। কিন্তু তার মনে হয়েছে ইভানের এই জায়গাটা খুব পছন্দ। ইভান দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে ফোনে কি যেন করছে। ঈশা এক পাশে দাড়িয়ে অপেক্ষমাণ দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে তার শাড়ির আচল আঙ্গুলে পেচিয়ে আবার খুলছে। বাকি সবার জন্য অপেক্ষা। একটু আগেই চলে এসেছে দুজন। ঈশা বিরক্ত হয়ে হাত থেকে আচলটা ছেড়ে দিতেই দেখল সবাই এক এক করে রাস্তা পার হয়ে আসছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। ব্যস্ত ইভান এবার নিজের কাজ ছেড়ে লিফটের সামনে দাড়িয়ে বাটন প্রেস করলো। কিন্তু ঠিক সেই সময় তার ফোনে একটা রিং বাজল। খানিক দূরে দাড়িয়ে সে ফোনটা রিসিভ করলো। লিফটের দরজা খুলতেই সবাই ধিরে ধিরে লিফটে উঠছে। কিন্তু ঈশা ঠায় দাড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ছে তার। লিফটে মারাত্মক রকমের ফোবিয়া আছে তার। উঠলেই মাথা ঘুরে যায়। আর প্রচণ্ড রকমের ভয় পায়। কেউ হাত না ধরলে নিজে থেকে লিফটে উঠার সাহস সে কখনই পাবে না। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার আগেই সায়ান আরেকবার বাটন প্রেস করে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–চলে আসো ঈশা।
পা বাড়িয়েও আবার পিছিয়ে গেলো সে। চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফুলিয়ে নিজেকে শক্ত করে নেয়ার চেষ্টা করে আবার পা বাড়ানোর আগেই একটা শক্ত পোক্ত হাত তার হাতের ভাজে স্পর্শ করলো। বন্ধ চোখেই গভির ভাবে অনুভব করলো সে। এ যেন এক ভরসার হাত। কোমলভাবে চোখ মেলে পাশে তাকাতেই দেখল ইভান খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে এক হাতে ফোন ধরে টাইপ করছে আর এক হাত ঈশার হাতের ভাজে। ঈশাকে এক প্রকার টেনে নিয়েই ভিতরে ঢুকল। একদম পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো দুজনে। লিফটের দরজা বন্ধ হতেই ঈশা চোখ মুখ খিচে ইভানের বাহু দুই হাতে শক্ত করে চেপে ধরল। ইভান মুচকি হেসে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ঈশাকে দেখছে। চোখ মুখ খিচে ভীত হরিণীর মতো তাকে আঁকড়ে ধরে আছে। এই ভীত চেহারাটাই তাকে ভীষণ করে আকর্ষণ করে। এক অন্য রকম মায়া কাজ করে। লিফট এসে থামল। দরজা খুলতেই ঈশা ইভান কে ছেড়ে দিলো। সরে দাঁড়ালো। লিফট থেকে নেমে কয়েক কদম যেতেই রেস্টুরেন্ট। সবাই ভিতরে ঢুকে পাশাপাশি দুইটা টেবিলে বসে পড়ল। ঈশার বাম পাশে ইরিনা বসেছে কিন্তু ডান পাশের চেয়ারটা ফাকা। সামনে তাকিয়ে দেখল সেই সুন্দরি মেয়েটা সায়ানের পাশে বসেছে। ইরিনার দিকে চেপে গিয়ে মৃদু গলায় বলল
–ওই মেয়েটা কে?
–সায়ান ভাইয়ার বোন।
ইরিনা ফিসফিস করে বলতেই ঈশা খেয়াল করলো সবাই আছে কিন্তু ইভান নেই। সায়ান সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো
–কি খাবে অর্ডার করো।
সবাই নিজ নিজ পছন্দের খাবারের অর্ডার করলো। কিন্তু ঈশা এখনো বসে আছে। সায়ান শান্ত কণ্ঠে বলল
–ঈশা তুমি কি খাবে?
ঈশা একটু নড়েচড়ে বসে বলল
–আমি আইস্ক্রিম খাব।
ঈশার জন্য তার পছন্দের আইস্ক্রিম অর্ডার করা হল। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি। খাওয়া কপালে না থাকলে চাইলেই কি আর পাওয়া যায়। আইস্ক্রিমের চামুচটা মুখে তুলতেই কেউ একজন পাশ থেকে হাত ধরে ফেলল। ঈশা মুখ হা করে তার হাতের আইস্ক্রিমের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকি সবার দৃষ্টি সেই মানুষটার দিকে স্থির। ইভান মাথাটা ঝুকিয়ে ঈশার হাতে ধরা চামুচটা নিজের মুখে ঢুকিয়ে দিলো। তারপর হাত থেকে চামুচটা নিয়ে পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লো। আইস্ক্রিমের বাটিটা নিজের সামনে নিয়ে খেতে শুরু করে দিলো আনমনে। ইভানের এমন আচরনে সবাই স্বাভাবিক থাকলেও সায়ান খুব বিরক্ত হল। মুখে বিরক্তিকর ভঙ্গি রেখেই বলল
–এটা কি ইভান? ওটা ঈশার জন্য ছিল। তুই খেতে চাইলে তোর জন্য আলাদা অর্ডার করতে পারতিস। অযথা মেয়েটার আইস্ক্রিম নিয়ে নিলি। দেখ মন খারাপ করে বসে আছে।
ইভান কোন উত্তর দিলো না। এক হাতে আইস্ক্রিম খেয়েই যাচ্ছে আর আরেক হাতে ফোনে মনোযোগ দিয়ে দেখছে। মনে হচ্ছে কারও কথা তার কানেই যাচ্ছে না। সায়ান ইভানের আচরন সম্পর্কে বেশ অবগত। তার যদি মনে হয় যে উত্তর দিবে না তাহলে সেটার উত্তর আশা করা বোকামি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ঈশার দিকে তাকাল। আশস্তের সুরে বলল
–তোমার জন্য আমি আবার আইস্ক্রিম দিতে বলছি ঈশা। মন খারাপ করনা।
–ঈশা আইস্ক্রিম খাবে না।
ইভানের কথা শুনে সায়ান বিরক্ত হয়ে আবারো বলল
–কেন খাবে না? ঈশা নিজেই আইস্ক্রিম খেতে চেয়েছে। আমি আবার দিতে বলছি।
ইভান এবার সায়ানের দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলল
–ঈশার টনসিলের ইনফেকশন আছে। ঠাণ্ডা কিছু খেলেই গলায় প্রবলেম হয়। ও তো কোন কিছু না ভেবেই সামনে যা পায় মুখে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু আমিও তো আর ওর মতো নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিতে পারিনা। মেজ মা তার মেয়েকে ভরসা করে আমার হাতে তুলে দিয়েছে। আমি সেই ভরসা নষ্ট করে তাকে কিভাবে অসুস্থ বানায়ে বাসায় নিয়ে যাই?
ইভানের কথা শেষ হতেই সবাই আবারো ইভানের দিকে তাকাল। ইভান কঠিন চোখে একবার তাকাতেই সবাই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। এমন ভাব যেন এখানে কিছুই হয়নি। মুখ কালো করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ঈশা। মাঝে মাঝে আড় চোখে ইভানের দিকে তাকাচ্ছে। সে কোনদিকে না তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে। ঈশার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল তার উপরে। এক রাশ অভিমান চোখে মুখে নিয়ে নত দৃষ্টিতে বসে আছে সে। খানিকবাদে ওয়েটার স্যন্ডুইচ এনে ঈশার সামনে দিয়ে গেলো। কিন্তু অভিমানি ঈশা সেদিকে ফিরেও তাকাল না। সে যে আইসক্রিমই খাবে। জেদ! সায়ান স্যান্ডুইচের দিকে তাকিয়ে ইভানের উদ্দেশ্যে শান্ত ভাবে বলল
–আইস্ক্রিম ছাড়া আর কি খাবে সেটা জানতে চাইলিনা একবারও? ঈশা কি এটা খাবে?
–খাবে।
ইভানের আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে সায়ান বেশ অবাক হল। সোজা হয়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো শেষটা দেখার জন্য। ঈশা আদৌ এই জিনিসটা খাবে কিনা। সবাই নিজ নিজ খাওয়ায় ব্যস্ত। কেউ আর ঈশার দিকে তাকাবেনা। কারন ঈশার নখরা সম্পর্কে সবার জানা। বেশী সাধলে অযথা চোখের পানি ছেড়ে ভাসিয়ে দিতেও দুই মিনিট ভাববে না। ওকে একমাত্র ইভানই ঠিক ঠাক চালাতে পারে। তা ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব না। ফোনটা পাশে রেখে ঈশার দিকে মনোযোগ দিলো ইভান। প্লেটটা ঈশার দিকে এগিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল
–এটা তো তোর অনেক পছন্দ। তবুও খাবি না?
ঈশার কোন উত্তর আসলো না। ইভান আশাও করেনি। সে জানে ঈশা কোন কথাই বলবে না। ইভান এবার আইস্ক্রিম খেতে খেতে বলল
–খাস না। এভাবেই বসে থাক। কিন্তু এভাবে অভিমান করে থাকলে যখন নিজের পছন্দের জিনিস গুলা অন্য কেউ নিয়ে নিবে। অন্য কেউ যখন অধিকার দেখাবে তখন মানতে পারবি তো?
ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। ইভান তার দিকে তাকাতেই দাতে দাত চেপে বলল
–সবাই তো আর তোমার মতো না। পছন্দের জিনিস গুলা কেড়ে নেয়।
ইভানের হাতে ধরে রাখা আইস্ক্রিমের চামুচ টার দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মতো বলল
–তুমি দুনিয়ার সব থেকে নিষ্ঠুর মানুষ ইভান ভাইয়া। মানুষের পছন্দের জিনিস কেড়ে নিয়ে কষ্ট দাও। তোমার একটুও মায়া হয়না?
ইভান সাভাবিকভাবেই বলল
–আমার মতো কেউ না হলেই ভালো। আমার মতো হোক সেটা আমি চাইনা। আর মনের মধ্যে এতো মায়া রাখলেই সমস্যা। সবার প্রতি মায়া দেখাতে গেলে তখন আবার আরেক প্রবলেম। কাছের মানুষটার কম পড়ে যাবে। তার কষ্ট হবে। সেটা আবার আমি সহ্য করতে পারব না।
বলেই হাতের চামুচটা ঈশার মুখের সামনে ধরে আদুরে কণ্ঠে বলল
–আর কেড়ে নিলেও সেটা তো আমিই তাই না? যতটা কেড়ে নিবো তার থেকে অনেক গুন ফেরত দিবো। ভরসা করতে পারিস।
এমন কথা ঈশার হৃদয় ছুয়ে গেলো। পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। ইভান ঈশাকে একটু লজ্জায় ফেলতেই মৃদু হেসে বলল
–রাস্তার মেয়েরা আমাকে কেন হা করে দেখে সেটার কারণটা নাহয় বুঝলাম। অনেকদিন পর দেখে তাই মন ভরে দেখে নেয়। কিন্তু তুই তো নিয়ম করে আমাকে দুই বেলা দেখিস। তবুও জখন দেখিস মনে হয় প্রথমবার দেখছিস।
লজ্জার চেয়ে রাগটাই বেশী প্রাধান্য পেলো। মুখে রক্তিম আভা নিয়ে অভিমানি কন্যা নাক ফুলিয়ে বসে থাকলো। এখন সে কিছুতেই খাবে না আর। সবার সামনে এভাবে বলার কোন মানেই হয়না। বারবার এই একটা বিষয়ে লজ্জায় ফেলতে সব সময় প্রস্তুত থাকে ইভান। ঈশাও কেমন নির্লজ্জ। এভাবে তাকানোর কোন প্রয়োজন আছে কি? ঠিকই তো বলেছে নিয়ম করে তাদের প্রায় দুইবেলা দেখা হয়। আবার বাসায় যখন ছোট খাট আড্ডা হয় তখন তো কথাই নাই। ঈশার ভাবনার মাঝেই ইভান আবার তার মুখের সামনে আইসক্রিমটা ধরল। ঈশা মুখ ফিরিয়ে নিতেই ইভান বলল
–আদর করে দিচ্ছি। নিবিনা আদর?
ঈশা আবারো অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কি ভেবে মুখে নিয়ে নিলো। বুঝতে পারছে ইভান তাকিয়ে আছে। তারও একবার ইচ্ছা করছে ইভানের দিকে তাকাতে। কিন্তু আবার যদি সেরকম কিছু বলে সেটা ভেবেই আর তাকাল না। চোখ ফিরিয়ে একবার ফোনটা হাতে নিয়ে আবার সেটা রেখে দুই হাতে নিজের চুল ঠিক করতে করতে সামনে তাকাল ইভান। সায়ানের দৃষ্টি ভঙ্গি দেখে আটকে গেলো। সায়ান ঠোঁটে বাকা হাসি নিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো। ইভান প্রথমে একটু বিরক্ত হলেও পরে বুঝল এতক্ষন সবাই নিজের মতো ব্যস্ত থাকলেও সায়ান তাদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ইভান চোখ নামিয়ে হালকা হাসল। সায়ান নিজের হাসিটা প্রশস্ত করে নিয়ে খাবারের দিকে মন দিলো। ইভানের মৃদু হাসি যেন তার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে।
—————-
গোধূলি বেলার আকাশটা নানান রঙ্গে ছেয়ে গেছে। মাথার উপরে কোথাও সাদা কোথাও নীল। আবার সেই দূর দিগন্তে লালচে আভা। সাথে লাল সূর্যটা হেলে পড়েছে দিগন্তের শেষ প্রান্তে ছোট ছোট গাছের পিছনে নিজেকে বিলিন করার উদ্দেশ্যে। রিকশা থামতেই ঈশা হকচকিয়ে নেমে গেলো। মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। সুন্দর মুহূর্ত গুলো এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় কেন? মন যে সৌন্দর্যের কাঙ্গাল! সবাই রিকশা থেকে নেমে এক জায়গায় দাড়িয়ে গেলো। পরপর চার ভাইয়ের চারটা বাড়ি দাড়িয়ে আছে। সবগুলো একই ডিজাইনে বানানো। আগে সবাই একসাথে একই বাড়িতে থাকতো। কিন্তু পরিবার বড় হয়ে জাওয়ায় সেই বাড়ি ছোট হয়ে যায়। তাই আলাদা করে নিজেদের বাড়ি করে সবাই। প্রথম বাড়িটা ঈশাদের। তার বাবা মেজ। পরেরটা ইভানদের। তার বাবা সবার থেকে বড়। বাকি দুটো বাড়ি পর পর সেজ আর ছোটর। কিন্তু একসাথে থাকার ফলে একান্নবর্তী পরিবারের রেশটা তাদের মধ্যে থেকেই গেছে। আলাদা বাড়িতে থাকলেও সারাদিনে একবার হলেও একসাথে হয় তারা। বড়রা ছোটরা আড্ডা খুনসুটিতে মেতে উঠে নিজেদের মতো। মনেই হয়না যে তারা আলাদা পরিবার। সবাই বিদায় নিয়ে নিজেদের বাড়ির দিকে চলে গেলো। ইভান শুধু দাড়িয়ে থাকলো। সে ঈশাকে বাসায় দিয়ে তারপর যাবে। সিঁড়ি বেয়ে দুজন দোতলায় উঠলো। কলিং বেল চাপতেই ঈশার মা দরজা খুলে ইভান কে দেখে এক গাল হেসে বলল
–তোরা এসেছিস?
ইভান ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল
–এই নাও তোমার মেয়েকে দিয়ে গেলাম। আমার আর দায় ভার নাই।
ঈশার মা ভ্রু কুচকে বললেন
–দিয়ে গেলাম কি রে ভিতরে আয়।
–না মেজ মা। একটু কাজ আছে। বাসায় যাবো।
ঈশার মা আর কথা বললেন না। বলেও লাভ নাই। ইভান এখন কোনভাবেই শুনবে না। তাই তিনি ভিতরে চলে গেলেন। ইভান যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই ঈশা নিচু গলায় ডাকল
–ইভান ভাইয়া।
ইভান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। ঈশা একটু হেসে বলল
–অনেক ধন্যবাদ!
বিষয়টাতে ইভান একটু আশ্চর্য হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে পুরোটা ঘুরে দাড়িয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল
–বিশেষ কিছু উপহার পেলে ধন্যবাদ হিসেবেও বিশেষ কিছু জিনিস দিতে হয় যে।
–কি বিশেষ জিনিস?
কৌতূহলী কণ্ঠে ঈশা প্রশ্ন করতেই ইভান হেসে ফেলল। ঠোঁটে হাসি রেখেই বলল
–আজ না! বিশেষ জিনিসটা বিশেষ কোন মুহূর্তের জন্য তোলা থাকলো। তখন বিশেষ মানুষটার কাছ থেকে বিশেষ ভাবে বিশেষ দিনে নিয়ে নিবো।
‘বিশেষ! বিশেষ! বিশেষ!’ এতো বিশেষের মাঝে ঈশার গোছানো চিন্তা ধারা এলোমেলো হয়ে গেলো। তার বোকা বোকা চাহুনির মানে বুঝতে পেরে ইভান শব্দ করে হেসে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলো। ঈশা দরজায় হেলানি দিয়ে দাড়িয়ে মুগ্ধ চোখে দেখছে। হঠাৎ সজাগ মস্তিষ্ক অচেতন মনকে প্রশ্ন করে বসলো ‘এই কি তাহলে জীবনের সেই বিশেষ মানুষ?’
চলবে……।
(এতদিনে এই কপোলের যত সিরিজ এসেছে সবই প্রায় বিয়ের পরের প্রেম। সবখানে একটা অতিত ছিল যেখানে ইভান ঈশার প্রতি তার অনুভুতি প্রকাশ করতো আর ঈশা বরাবরই অবুঝ ছিল। কিন্তু আমি জানতে পেরেছি আগের গল্প গুলোতে পাঠকরা অনেক ব্যথিত হয়েছেন। মান অভিমানের সম্পর্ক আর দেখতে চান না। স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক তারা দেখতে চান। তাই এই সিরিজটা সেই অতীতের দুষ্টু মিষ্টি প্রেম কাহিনী নিয়ে। কোন সাসপেন্স নেই। সোজা সরল কিছু বিশেষ মুহূর্ত তুলে ধরা হবে আপনাদের কাছে। যদি ভালো না লাগে তাহলে অবশ্যই আমাকে বলে দিবেন। আমি বেশিদুর এগিয়ে যাবনা। গত পর্বে অনেক সুন্দর সুন্দর কমেন্ট এসেছে। আমি খুবই আনন্দিত। সবাইকে মন থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। )
#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৩
‘রাতের শহর’ কথাটা বইতেই পড়েছে ঈশা। এসব সাহিত্যিক কথা বার্তা ঠিক কতো খানি সত্য সেটা সম্পর্কে সিকি খানিও ধারনা নেই তার। রক্ষণশীল পরিবারে সন্ধ্যার আগেই মেয়েদের বাড়িতে ফেরা কঠিন নিয়মের মধ্যেই পড়ে। সব মেনে নেয়া যায় কিন্তু সন্ধ্যার পরে মেয়েদের বাইরে থাকাটা যেন ঘোরতর অপরাধ। এটা কোন ভাবেই মাফ করা যায়না। তাই রাতে শহর দেখার ভাগ্যটা এতো বছরেও কখনও হয়নি ঈশার। দোতলার বারান্দায় বসে আলো আধারের খেলা দেখছে সে। রাস্তার হলদেটে নিয়ন বাতির আলোয় সারা শহর এক মহনীয়ও বর্ণ ধারন করেছে। দোতলা থেকে খুব একটা বেশী দূর পর্যন্ত দেখা না গেলেও যা দেখা যায় তাতেই ঈশা বেশ সন্তুষ্ট। কারন এটাই দেখার ভাগ্য হয় না তার। এখন নেহাত পড়ালেখা নেই তাই এতো সময়। নাহলে তার নিস্তার কই। মাথাটা আর একটু গ্রিলের দিকে বাড়িয়ে নিচের দিকে তাকাতেই দেখল এক প্রেমিক যুগলের রিকশা ভ্রমন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা সাদা জামদানি শাড়ি পরেছে আর ছেলেটা নীল পাঞ্জাবী। তাদের এই শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর হলদেটে নিয়ন আলোয় সম্পূর্ণ বিপরীত বর্ণ ধারন করেছে। যার তুলনা কোনভাবেই করা সম্ভব না। সাদা শাড়ীটা ঈষৎ কালচে হলুদ লাগছে। আর নীল পাঞ্জাবী এক গাড় কালচে রঙ ধরেছে। সামনের শপিংমলের বিলবোর্ডের ছবির মেয়েটা মাঝে মাঝে উজ্জ্বল শুভ্র আলোয় হেসে উঠছে। সম্ভবত কোন ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন হবে। গালে হাত দিয়ে সেদিকে কিছুক্ষন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকলো। রিকশাটা পার হয়ে যেতেই ঘোর কেটে গেলো তার। স্বাভাবিক জীবনের অভ্যাসেই ডাইরি আর কলমটা হাতে তুলে নিলো। কিছুক্ষন আগেই দেখা দৃশ্যের পটটাতে নিজেকে আর পাশে তার বিশেষ মানুষকে কল্পনা করে লিখে ফেলল কিছু কল্পনাময় প্রহর। নিজের মনের ইচ্ছাটার গতিবিধি ঠিক কতদুর। আদৌ সে গুটি গুটি পায়ে তার গন্তব্য মানে বাস্তবতায় পৌছাতে পারবে কিনা সেটা জানা নেই তার। তবুও ভাবতে তো মানা নেই। মন সে তো দিগ্বিদিক ভুলে ছুটে বেড়ায় এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। অসীম সাহস তার। আর সেটা যদি কিশোরী মন হয় তাহলে তো কথাই নেই। তার যে এক অন্য জগত আছে। সেই জগতের রানি শুধু সেই। নীল রঙের কালি দিয়ে শুভ্র রঙের পাতায় ফুটিয়ে তুলল নিজের কল্পনার কিছু প্রেমপ্রহর।
“এই যে শুনছো?
‘এই ঘনায়মান রাতের অন্ধকার রুপের অপার সৌন্দর্য দেখে যেখানে মন ভালো হওয়ার কথা ছিল সেখানে আমি আজ বড্ড উদাসীন। কারণটা আমার অজানা। কিন্তু জানো কোথাও একটা সুপ্ত আশা জমে আছে যেখানে বেহায়া মন চিৎকার করে বলছে,
তুমি আসবেই। আর এই রাতের শহরের মোহনীয় সৌন্দর্য, শরীরে হলদেটে আলোর ছোঁয়া, মাথার উপরের আকাশে হাজার তারার পসরা সাজিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমাকে ডাকবে। আর আমি কোনদিকে না তাকিয়েই ছুটে চলে যাবো। তোমার হাত ধরে খালি পায়ে হাঁটবো পিচ ঢালা রাস্তায়। সময়টা থমকে দাঁড়াবে। প্রেমিক যুগলের পাগলামো দেখে সময় নিজের গতি ভুলে মুগ্ধতায় ভরে উঠবে। আর সেই সুযোগে অনন্তকাল চলবে তোমার আমার এই প্রেমপ্রহর।’
ইতি
তোমার মায়াজালে আবদ্ধ এক কিশোরী ”
–এখানে এভাবে বসে কাকে দেখছিস?
পাশের বারান্দা থেকে ভারি গলার আওয়াজ পেয়েই চমকে উঠল ইশা। হাত থেকে ডাইরি কলম দুইটাই মেঝেতে পড়ে গেলো। চোখ তুলে পাশের বারান্দায় তাকাল। ইভান ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মাত্র গোসল করেছে মনে হয়। ভেজা চুলগুলো খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখা। চিরুনি না করলেও হাত দিয়েই চুল গুছিয়ে রাখাতে ইভান বেশ পটু। আর মনে হয় তার চুল গুলাও এই হাত দিয়ে গোছানটা উপভোগ করে। অবশ্য ঈশাও কম উপভোগ করেনা।
–দেখা শেষ হলে আমার উত্তরটা দিয়ে ধন্য করুন ম্যাডাম।
আবারো ইভানের কথায় এবার ঘোর কাটল ঈশার। একটু ঝাঝাল কণ্ঠে বলল
–তোমার সব সময় কেন মনে হয় আমি কাউকে দেখি?
ইভান তোয়ালেটা মেলে দিল। দেয়ালে হেলানি দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল। সামনে তাকিয়েই বলল
–না দেখলে বারান্দায় বসার কি কোন কারন আছে? কাউকে না কাউকে তো অবশ্যই দেখিস। অবশ্য তোর……।
কথা শেষ করতে দিলনা ঈশা। মাঝেই থামিয়ে দিয়ে বলল
–তুমিও কি কাউকে দেখ?
ইভান বিস্ময় নিয়ে ঘুরে তাকাল ইশার দিকে। কিছুক্ষন শান্ত চাহুনিতে তাকিয়ে থেকে বলল
–দেখি তো। এত দেখি তবুও মন ভরেনা। দেখতেই ইচ্ছা হয় বারবার। একেক সময় একেক রুপ তার। ভীষণ মায়া তার মাঝে। ঐ এক সমুদ্র সম্মোহনী দৃষ্টির গভিরে হারিয়ে যাই আমি।
বলেই থামল। ঈশা এতক্ষন নিস্পলক তাকিয়ে ইভানের কথা শুনছিল। থেমে যেতেই আবেগি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল
–কাকে দেখ এতো এভাবে?
ইভানের কপালে ভাজ পড়ে গেল। ভালবাসায় ভরা চোখ দুটো হঠাৎ করেই অভিমানী হয়ে উঠল। তীব্র অভিমান আর এক বুক জ্বালার বহিপ্রকাশ ঘটাতেই সামনে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করল। ঈশা চোখের ইশারা অনুসরন করে সামনে তাকিয়েই দেখতে পেল ঠিক রাস্তার ওপাশের বারান্দা ওয়ালা ঘরের মেয়েটা জানালার পাশে বসে মনের সুখে নেইল পলিশ পরছে। সেদিকে সরু চোখে তাকিয়েই অস্ফুট সরে উচ্চারন করল
–সোনিয়া আপু।
ইভান কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল। ঈশা সেই মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইভানের দৃষ্টির মানে হয়ত ঈশা দেখলেও বুঝতে পারত না। কঠিন দৃষ্টি হুট করেই অসহায় হয়ে উঠল। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে শান্ত সরে বলল
–ঈশা।
ঈশা ঘুরে তাকাল। ইভান কে সামনে তাকাতে দেখে ধরেই নিল সে সোনিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাই কোন কথা বলল না। ইভান সবটা বুঝেও না বোঝার ভান করে বলল
–ঘরে যা। শুয়ে পড়।
ঈশা দিরুক্তি করল না। উঠে চলে গেলো ঘরে। ইভান সামনেই তাকিয়ে আছে। পাশের বারান্দার দরজা লাগানোর আওয়াজে বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। কিন্তু চোখ ফেরালনা। ইচ্ছা করছে না কিছুতেই। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মন যে অন্য জায়গায় আটকে আছে। আকাশের ঝলমলে তারা গুলর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। তারপর উঠে চলে গেলো একদম নিচে। একাকীত্ব কাটাতে কিছুক্ষন একা একা রাস্তায় হাঁটলে খারাপ লাগবে না। বাসা থেকে বের হয়ে একা একা সোজা রাস্তা ধরে হাঁটছে সে।
ঈশা এতক্ষন নিজের সব কাজ গুছিয়ে নিয়ে জানালার পাশে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়ল। তারও মনটা বেশ খারাপ। জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই চোখ পড়ল ইভানের দিকে। বাসার সামনে দাড়িয়ে ফোনে মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে ফোনের আলোটা ইভানের মুখে পড়ছে সরাসরি। কি সুন্দর লাগছে দেখতে। ইভান সামনের দিকে চোখ তুলে তাকাল। সেই জানালায় বসে থাকা মেয়েটির দিকে চোখ পড়ল। মেয়েটি ইভান কে দেখেই মিষ্টি হাসি দিয়ে হাত উচিয়ে ইশারা করল। ইভান বেশ বিরক্ত হয়ে চোখ ফিরিয়ে বাসার ভিতরে চলে গেলো। সবটা দেখে ঈশা নিজের অজান্তেই হেসে ফেলল। জানালা বন্ধ করে ঘুমাতে গেলো।
—————-
পাইপ দিয়ে আনমনে নিজের ছাদ বাগানে পানি দিচ্ছে ইরিনা। সূর্যের তেজটা বেশী। বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাচ্ছে। ঈশা পিছনে গিয়ে দাঁড়াল। মৃদু সরে বলল
–আপুউ।
ইরিনা চমকে ফিরে তাকাল। কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুকে থুথু দিয়ে বলল
–আস্তে ডাকতে পারিস না। এতো জোরে চিল্লাস কেন? হায় আল্লাহ! এই মেয়ে শশুর বাড়িতে গিয়ে যে কিভাবে সংসার করবে?
ঈশা বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকাল। অবাক হয়ে বলল
–আমি আবার কখন জোরে কথা বললাম?
ইরিনা পানি দিতে দিতেই সাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
–কি বলবি বল?
–কাল ইশান ভাইয়ার জন্মদিন।
ইরিনার হাত থেকে পাইপটা পড়ে গেলো। লাফ দিয়ে ঘুরে দারিয়ে ইশার কাধে হাত দিয়ে বলল
–একদম ভুলে গেছিলাম রে। ভাল কথা মনে করেছিস। আজ রাতে অন্তত একটা সারপ্রাইজ পার্টি এরেঞ্জ করা দরকার। ইভান ভাইয়াকে বলতে হবে এখন। চল তাড়াতাড়ি।
ইরিনা পা বারাতেই পিছন থেকে গম্ভির গলার আওয়াজ আসলো
–কোথায় যাচ্ছিস?
তখনি ইরিনার ডাক আসলো নিচ থেকে। ঈশা পিছনে ঘুরে সাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
–তোমার কাছে।
ইভান কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। ইরিনা নিচে চলে গেলো। ইভান ধির পায়ে এগিয়ে যেতে যেতে কঠিন ভাবে বলল
–বেলা শেষে আমার কাছেই তোকে আসতে হবে। এটাই তোর জিবনের বড় সত্য।
ঈশা ইভানের চোখের দিকে দৃষ্টি স্থির করল। দুজনের দৃষ্টি দুজনের চোখে। অজানা এক নিরব অনুভুতির আদান প্রদান। মস্তিষ্ক সেই ভাষা না বুঝলেও মন অক্ষরে অক্ষরে বুঝে গেলো। ঝনঝন আওয়াজে দুজনেই চোখ নামিয়ে নিলো। ইরিনার হাত থেকে কাচের প্লেট পড়ে গিয়েছে। পুরো ছাদে বিছিয়ে পড়েছে কাচের টুকরো। সবাই সেদিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। ইরিনা ভিত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়েই কাদকাদ সরে বলল
–মা জানলে আমাকে মেরে ফেলবে।
ঈশা হতাশ শ্বাস ছেড়ে বলল
–সেটা পরের কথা। আগে এগুলো তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে পায়ে লেগে যাবে।
–দাড়া আমি ঝাড়ু আনি।
ইভান একটু বিরক্ত হয়ে ধমকের সুরে বলল
–পুরো ছাদে যে বন্যা বয়ে ফেলেছিস সেটা কি মাথায় আছে? পানিটা আগে বন্ধ কর।
ইরিনা জিভ কেটে পার হয়ে আসতে নিলেই ঈশা হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে
–এদিকে আসিওনা। পায়ে কাচ লাগবে। তুমি ঝাড়ু আনো। আমি পানি বন্ধ করছি।
ইরিনা সিঁড়ির ঘরে গেলো ঝাড়ু আনতে। ঈশা পা টিপে টিপে এদিক সেদিক দেখে সামনে এগুতে লাগল। ইভান গম্ভির ভাবে বলল
–পা খালি কেন? স্যান্ডেল কই?
ঈশা পায়ের দিকে তাকিয়েই মৃদু কণ্ঠে বলল
–সিঁড়ির নিচে খুলে রেখেছি।
ইভান নিজের পায়ের স্যান্ডেল খুলে বলল
–এগুলা পরে যা। পায়ে কাচ ঢুকবে।
ঈশা মিনমিনে কণ্ঠে বলল
–ঢুকবে না।
বলেই পা বাড়াতেই ইভান হাত টেনে ধরল। ঈশার পুরো শরিরে কাটা দিয়ে উঠল। পিছনে ঘুরে কিছু বলার আগেই ইভানের মুখ দেখে থেমে গেলো। রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। কঠিন গলায় বলল
–মতামত জানতে চাইনি। সিদ্ধান্ত জানায়ে দিছি।
ঈশা আর কিছু বলতে পারল না। কথা বললেই ইভান রেগে যাবে। তাই মাথা নামিয়ে জুতো জোড়া পায়ে ঢুকিয়ে এগিয়ে গিয়ে পানির ট্যাপ বন্ধ করে দিল। বড় জুতো পরায় হাটতে অসুবিধা হচ্ছে। আর পুরো ছাদ ভেজা তাই আরও বেশী অসুবিধা হচ্ছে। পা পিছলে যাচ্ছে। ঈশা সাবধানে পা টিপে টিপে হাঁটছে। কিন্তু একটা ছোট ইটের টুকরো জুতোর নিচে পড়তেই পা পিছলে গেলো। ঈশা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। কিন্তু খেয়াল করল কেউ একজন পরম জত্নে তাকে নিজের সাথে জরিয়ে রেখেছে। তার বুকের ঢিপঢিপ আওয়াজ মাদকতা ছড়াচ্ছে চারিদিকে। মিষ্টি ঘ্রাণটা ঘোর লাগিয়ে দিচ্ছে মস্তিস্কে। কিছুক্ষন থাকার পরেই ঈশার অসস্তি হচ্ছে। সে একটু নড়েচড় উঠতেই ইভান তাকে ছেড়ে দিল। ঈশার দিকে তাকিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলল
–তুই ঠিক আছিস তো?
ঈশা কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। এর মধ্যেই ইরা গুটি গুটি পায়ে এসে দরজা থেকে বলল
–ইভান ভাইয়া।
ইভান তার দিকে ঘুরেই চিৎকার করে বলল
–ওখানেই থাক টুনটুনি। এদিকে আসিস না পায়ে কাচ ঢুকবে। দাড়া আমি আসছি।
বলেই পা বাড়াতেই ঈশা হাত ধরে ফেলল। ইভান থেমে গেলো। বিস্ময়ে ঘুরে তাকাল। প্রথমে হাতের দিকে তারপর ঈশার দিকে। ঈশা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইভান বিশ্বাস করতে পারছে না ঈশা তার হাত ধরেছে।
–মাথায় কি কিছু নেই নাকি? তুমি খালি পায়ে যাচ্ছ কেন?
বলেই স্যান্ডেল খুলে সামনে দিল। ইভান মুচকি হাসল। ইরিনা ঝাড়ু নিয়ে অবশেষে বের হল। তার চুলে মাকড়শার জাল আটকে আছে। চেহারা দেখার মতো। দেখে মনে হচ্ছে বহু জুদ্ধের পর ঝাড়ু খুজে পেয়েছে। ঈশা তাকে দেখেই হেসে দিল। ইভান স্যান্ডেল পায়ে ইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে কোলে নিয়ে আসলো। পাশে শুকনো জায়গায় দাড়ায়ে রাখল। ঈশা আর ইরিনা ততক্ষনে কাচ পরিস্কার করতে শুরু করেছে। ঈশার পায়ের কাছে একটা কাচ পড়ে আছে। ইভানের চোখে সেটা লাগতেই সে এগিয়ে কাচটা ধরতেই তার হাতে ফুটে যায়। ‘আহ’ শব্দ উচ্চারন করতেই ঈশা ঘুরে তাকায়। ইভানের হাত কেটে গেছে। ঈশা সব কিছু ফেলে ইভানের হাত ধরে ফেলে। পাশে সিমেন্টের বসার জায়গাটায় বসিয়ে দিয়ে হাতটা চেপে ধরে ধরে বলে
–ইশ! কেটে গেছে।
ইভান স্থির হয়ে দেখছে ঈশাকে। ঈশা বেশ বিচলিত হয়ে বলল
–রক্ত বের হচ্ছে।
ইভান হাতের দিকে একবার তাকাল। ভ্রু কুচকে ফেলল। ঈশা যেরকম আচরন করছে সেরকম কিছুই হয়নি। সামান্য কেটেছে। একটু চেপে ধরলেই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–রিলাক্স! তেমন কিছুই হয়নি। একটু কেটেছে।
বলেই আঙ্গুলটা মুখে ঢুকিয়ে দিল। ঈশা ঝাঝাল কণ্ঠে বলল
–একটু হোক। কেটেছে তো!
ইভান বাকা হাসল। সাবাভিকভাবেই বলল
–কেটেছে তো আমার। তোর কোথায় লেগেছে যে এভাবে কষ্ট পাচ্ছিস?
ইভানের কথা শুনে ঈশা নিজেকে সংযত করে নিলো। একটু বেশিই করে ফেলেছে সেটা বুঝতে পেরেই লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে নিলো। ইভান মুচকি হেসে মাথাটা একটু ঝুকে বলল
–এতো কেয়ার পাওয়া যাবে জানলে আরও আগেই নিজে নিজে হাত পা কেটে ফেলতাম। ফ্রিতে কেয়ার কার না পেতে ইচ্ছা করে।
চলবে……
(আপনাদের কি মনে হয় আমি থিম কপি করছি? যদি তাই মনে হয় তাহলে গল্পটা লেখা বন্ধ করে দিব। পর্ব গুলো ডিলিট করে দিবো। একটু জানাবেন প্লিজ।)