শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর লেখক – এ রহমান পর্ব ২৭

0
678

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক – এ রহমান
পর্ব ২৭

জমজমাট আড্ডা আর এক রাশ উচ্ছাসের মাঝে হঠাৎ করেই ভাটা পড়লো তীব্র কলিং বেলের শব্দে। ঈশা এক গাল হেসে দৌড় দিল দরজা খুলতে। দরজা খুলেই ইভান কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অকৃত্রিম হাসিটা আরো প্রশস্ত হলো। ইভান ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিল। চোখ তুলে ঈশার দিকে তাকাতেই তার অমায়িক হাসিতে চোখ আটকে গেলো। এলোমেলো অনুভূতি গুছিয়ে উঠলো। সমস্ত ক্লান্তি, মন খারাপ দূরে চলে গেলো। অভিমান অভিযোগ সব কেমন ভালোবাসায় রূপ নিলো। মনটা ভরে উঠলো খুশীতে। ইভান কে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকতে দেখে ঈশা একটু দুষ্টুমি করে বলল
— শ্বশুর বাড়িতে ভিতরে আসতে লজ্জা পাচ্ছো বুঝি?

ইভান সরু চোখে তাকিয়ে বলল
— আমার লজ্জা বরাবরই কম সেটা তুমি ভালো করেই জানো। দেখাবো?

ইভান এর কথা বুঝতে পেরেও ঈশা তেমন গুরুত্ব দিলনা। কারণ তারা এই মুহূর্তে ঈশাদের বাড়ির দরজায় দাড়িয়ে আছে। আর এখানে যে ইভান সেরকম কিছুই করবে না সেটা নিয়ে ঈশা নিশ্চিন্ত। তাই সাহস নিয়ে বলল
— খুব সাহস তাই না? সাহস থাকলেই শুধু হয়না। যেখানে সেখানে দেখানোর ক্ষমতাও থাকতে হয়।

ঈশার কথাটা শেষ হতেই ইভান তার আচলটা ধরে ফেললো। হাতে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বলল
— চ্যালেঞ্জটা করে ভুল করে ফেলেছ। এখন এটা যে তোমার উপরে ভারী পড়ে যাবে।

ঈশা ভ্রু কুচকে তাকাল। ইভান সপূর্ণ আচল টা পেঁচিয়ে ঈশা কে টেনে আনলো নিজের কাছে। এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল
— বাকিটা এবার দেখাই?

ঈশা পিছনে ঘুরে তাকাল। এই মুহূর্তে ডাইনিংয়ে কেউ নাই। কিন্তু যে কেনো সময় এসে যেতে পারে। ইভান কে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চেষ্টা করে বলল
— এতো অসভ্য কেনো তুমি? এখন যদি কেউ চলে আসে তাহলে কি হবে?

ইভান আর একটু কাছে টেনে বলল
— আমার কোন দোষ নেই। তুমি দেখতে চেয়েছো। আর আমার সাহস নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আমি খুব উত্তেজিত হয়ে যাই। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না সাহস দেখাতে পারি।

ইভান এর কথা শেষ হওয়ার সাথেই ইরা দৌড়ে এলো। ইভান এর পায়ের কাছে দাড়িয়ে বলল
— ইভান ভাইয়া তুমি কখন এসেছ?

ইভান তাকে কোলে তুলে নিলো। পকেট থেকে দুই টা চকলেট বের করে একটা ইরার হাতে দিলো আর একটা ঈশার হাতে দিলো। ইরা চকলেট টা হতে নিয়ে বলল
— থ্যাংক ইউ।

বলেই ইভানের গালে একটা চুমু দিল। ইভান ও তার গালে একটা চুমু দিলো। ঈশা এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। ইরা ঈশার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
— এই আপু ভাইয়া তোমাকে চকোলেট দিলো তুমি থ্যাংক ইউ দিলে না কেনো?

ইরার কথা শুনে ঈশা হেসে ফেললো। হেসে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
— থ্যাংক ইউ!

বলেই চলে যাবার জন্য ঘুরতেই ইভান ইরাকে বলল
— তুই কি শুধু থ্যাংক ইউ বলেছিলি টুনটুনি?

ইরা মাথা নাড়িয়ে বলল
— না আদর করেছিলাম।

ইভান হেসে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
— তাহলে তোর আপু যে শুধু থ্যাংক ইউ বলল?

ঈশা বড়ো বড় চোখে তাকাল। বুঝতে পারলো ইভান ঠিক কি বলতে চাইল। মৃদু সরে বলল
— কি হচ্ছে?

বলেই ঘরে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই ইভান হাত ধরে ফেললো। ঈশা গোল গোল চোখে পিছনে ঘুরে তাকাল। ইরা আদেশ সূচক কণ্ঠে বলল
— ভাইয়াকে আদর করো আপু।

ঈশা বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। ইভান হেসে ফেললো। ইরাকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। বলল
— ঘরে দেখতো টুনটুনি সবাই কি করছে?

ইরা ঘরের দিকে দৌড় দিলো। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল
— তো?

ঈশা একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— তো কি?

ইভান এক টানে কাছে এনে বলল
— বুঝেও অযথা নাটক করার কি মানে? সবার সামনে যদি এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তাহলে কি সেটা ভালো হবে? অবশ্য এখন না শুনলে সেটাও হতে পারে। আমি গ্যারান্টি দিতে পারবো না।

ঈশা সরু চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। বুঝতে পারলো সে এখন পরিস্থিতির শিকার। নাহলে এখন যা বলল ইভান ঠিক তাই করবে। ইভান তাকে কাছে এনে বলল
— কি ভাবলে?

ঈশা কোন কথা বলল না। একটু এগিয়ে ইভানের গালে চুমু দিয়েই চলে যেতে নিলে ইভান আবার ধরে ফেলে। ভিতরে ঢুকে দরজা পা দিয়ে লাগিয়ে দিলো। ঈশা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল
— নাউ ইটস মাইন্টার্ন! বলেছিলাম না আমাকে কিছু দিলে আমি তার অনেক গুণ ফেরত দিবো। এখন সেটার পালা।

ঈশা অসহায়ের মত করে বলল
— প্লিজ ছেড়ে দাও।

ঈশার কথা শেষ হতেই ইভান তার ঠোটে গভীর ভাবে চুমু খেল। তারপর ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ালো। শান্ত ভাবে বলল
— যাও।

ঈশা চলে গেলো। ইভান বেসিনের সামনে গিয়ে দাড়ালো। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ঘরে গেলো। সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে। আজ ঈশাদের বাড়িতে সবার দাওয়াত। ইভান কাজে বাইরে গিয়েছিল। তাই আসতে দেরি করে ফেলেছে। তাকে দেখে সবাই খুশী হয়ে গেলো। ইভান এসে ঈশার পাশে বসে তার আচল দিয়ে মুখ মুছে নিলো। সবাই সেদিকেই তাকিয়ে আছে। ইভান মুখ মুছে চোখ তুলে তাকাল। সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল
— আমাকে কোন এলিয়েন মনে হচ্ছে? এভাবে তাকানোর মানে কি?

ইলু দাত কেলিয়ে বলল
— তুমি আসার পরে ঈশা কেমন লাল নীল হয়ে যাচ্ছে। তাই দেখছিলাম।

ইভান ভ্রু কুচকে তাকাল। তারপর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলল
— আমাকে দেখে কেউ যদি লাল নিল হয়ে যায় তাহলে সেটা আমার সমস্যা না তার সমস্যা। এভাবে আমার দিকে তাকানোর কোন মানে হয় না।

হাতা গুটিয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
— কই দেখি।

ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান ভ্রু কুচকে তাকিয়েই আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল
— সত্যিই তো! কিন্তু এরকম হওয়ার কারণ কি? কোনভাবে কি তুমি লজ্জা পাচ্ছো? কিন্তু সেটা তো আমার পাওয়ার কথা ছিল। কারণ এই মহুর্তে আমি শ্বশুর বাড়িতে বসে আছি।

সবাই হেসে ফেললো। ঈশা আরো অসস্তিতে পড়ে গেলো। ইভান এর দিকে তাকাতেই ঠোটে সেই জ্বালাময়ী হাসি দেখে আরো রেগে গেলো। ইভান বুঝতে পেরে ঈশার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
— বলেছিলাম না সাহসের চ্যালেঞ্জটা ভারী পড়বে। হয়েছে তো?

ঈশা বিস্ফোরিত চোখে তাকাল। উঠে বাইরে চলে গেলো। ইভান তার দিকে তাকিয়ে হাসলো। অনেকদিন পর এরকম সবাই মিলে একসাথে সময় কাটাল তারা। ইভান এখন বেশ ব্যস্ত থাকায় সময় দিতে পারেনা। কিন্তু আজ সে সময় বের করে এসেছে সবার সাথে আড্ডা দিতে। সব কিছুর চাপে মোটামুটি হাপিয়ে উঠেছিলো। এখন অনেক টা ভালো লাগছে। রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে তারা। ইভান দের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে সবাই বিদায় দিয়ে চলে গেলো নিজ নিজ বাড়িতে। ঈশা আর ইভান বাড়ির ভিতরে ঢুকার মুহূর্তেই ইভানের ফোন বেজে উঠলো। ইভান ফোন বের করে নাম্বার দেখে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
— তুমি যাও আমি কথা শেষ করে আসছি।

ঈশা কোন কথা না বলে উপরে চলে গেলো। ইভান তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশার ছায়ামূর্তি শেষ অবধি মিলিয়ে যাওয়ার পর ইভান ফোন ধরে বলল
— হ্যা বলো।

ওপাশ থেকে কিছু একটা বলতেই বলল
— আমি খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত জানাবো।

——————-

মধ্য রাত। আকাশে বিশাল একটা চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। তারাদের আলোর সমাহার বসেছে। কোথা থেকে এক উষ্ণ হাওয়া এসে শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছে। ঈশার হঠাৎ ঘুম ভেংগে গেলো। চোখ খুলেই দেখলো ইভান নেই। উঠে বসে চারিদিকে দেখলো। ওয়াশ রুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। উঠে এলোমেলো পায়ে হেঁটে যেতেই দেখলো বারান্দায় ছায়ামূর্তি। সেদিকে গেলো। ইভান এক টুলের উপর বসে আর এক টুলে পা তুলে আছে। মাথাটা টুলের উপরে এলিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশার উপস্থিতি বুঝতে পারেনি। কিছু একটা নিয়ে ভাবছে হয়তো। ঈশা একটু এগিয়ে মাথায় হাত দিতেই চমকে ঘুরে তাকাল। ঈশা কে কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে বলল
— উঠে গেলে যে? ঘুম ভেংগে গেল কেনো?

ঈশা মৃদু সরে বলল
— এমনি।

ইভান হাসলো। সাভাবিক ভাবেই বলল
— আমাকে ছাড়া ঘুম আসেনা? আমার বুকে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে তাই না।

ঈশা উত্তর দিলো না। ইভান ঈশার নিরবতা বুঝে আবারও হাসলো। ঈশা মৃদু সরে বলল
— তুমি ঘুমাওনি কেনো?

ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
— ঘুম আসছে না।

ঈশা ভ্রু কুচকে বলল
— কেনো?
ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
— বসো।

ঈশা সামনের টুলে বসে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলো উত্তরের অপেক্ষায়। ইভান একটু ঝুঁকে ঈশার হাত ধরে নিজের মুঠোয় নিয়ে নিলো। হাতে একটা চুমু দিয়ে এক হাত দিয়ে ঈশার এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে বলল
— ঈশা আমি কিছু বলতে চাই।

ঈশার ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ইভান এর গলার সর ভিন্ন। কেমন জানি খাপছাড়া শোনাচ্ছে। ঈশা জোরে জোরে শ্বাস টেনে বলল
— বলো।

ইভান ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল
— আমাকে ঠিক কতটা বিশ্বাস করো? মানে আমার উপরে কি চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়?

চলবে…….

(অনেক ব্যস্ত আছি। আজ গল্প দিতে চেয়েছিলাম না তবুও দিলাম। রিকাক করা হয়নি। ভুল থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here