এসো শব্দহীন পায়ে
পর্ব ৪ ও ৫
মিশু মনি
.
৪
ছোট মামা তিতাসকে ডেকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে প্রশ্ন করলেন, পাত্রী পছন্দ হয়েছে কি না?
তিতাস এদিক সেদিক তাকিয়ে উত্তর দিলো, ‘মামা। মেয়েটা ভালোই কিন্তু আমরা একজন আরেকজনের জন্য না।’
– সেটা আমিও আন্দাজ করছিলাম। বিয়ে তো আর হচ্ছে না, তখন আর এদের বাড়িতে থেকে লাভ কি?
– আমার আরেকজনকে ভালো লেগে গেছে মামা।
– ওই শিউলি ফুলের মেয়েটা?
– হুমম।
– ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছিস?
– না। আমার ফোনটাই দিয়ে এসেছি।
– কিহ?
মামা যেন ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেলেন। প্রথম দর্শনেই সে তার আইফোন একটা মেয়েকে দিয়ে এসেছে, এ আবার কেমন তাজ্জব কথা! অবিশ্বাসের সুরে বললেন, ‘পাগলে কামড়িয়েছে? তুই জানিস তুই কি বলছিস?’
– জ্বি মামা।
– তুই দিলি আর মেয়েটা ফোনটা নিলো?
– হুম। কারণ আমি ইচ্ছেকৃতভাবে ওটা ফেলে এসেছি। মেয়েটাকে দেইনি।
তিতাস হাসলো। কায়েস পুকুরে সমানে ঢিল ছুঁড়ছে। পানিতে গোল তরঙ্গ খেলা করতে করতে মিলিয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পানি অতিরিক্ত সবুজ। চারিদিকে গাছগাছালি থাকায় গাছের পাতা পড়ে গাছরঙা পুকুর হয়ে গেছে। কোনো ঘাট নেই। সাধারণত কেউ এখানে গোসল করে না তাই ঘাট বাঁধানো হয় নি। কায়েস পানিতে ঢিল ছুঁড়ছে আর পা নাচাচ্ছে। তিতাস এসে পাশে বসলো। কায়েস বললো, ‘ওয়ামিয়া নাহার, কি অবস্থা?’
– এ আবার কি ডাক কায়েস মিয়া?
– ওয়ামিয়া আর কায়েস মিয়া, দারুণ মিল না?
– হ্যাঁ। এক কাজ কর, তুই বিয়ে করে ফ্যাল।
– করা যায়। যেহেতু পাত্রী আমাকেই পছন্দ করে ফেলেছে।
– শিওর?
– প্রথমে আমাকে পাত্র ভেবেছিল। ওর ছোটবোন আমাকে হাসতে হাসতে বললো সে কথা।
– দোস্ত, প্লিজ তাহলে তুইও ওকে পছন্দ করে ফেল। আমাকে দিয়ে হবে না।
কায়েস জোকারের ভঙ্গিতে হাসতে লাগলো। বন্ধুর মাথাটা বোধহয় গেছে। হাসির তালে তালে পানিতে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো ও। তিতাস বলল, আমার এই গ্রামের আরেকজনকে ভালো লেগেছে রে।
এতক্ষণে ঢিল বন্ধ করে তিতাসের দিকে তাকালো কায়েস। অবাক হয়ে জানতে চাইলো, কি বলিস? কে সে?
– নাম রূপসা। তোর চোখে হয়তো ওয়ামিয়াকেই ওর চেয়ে বেশি সুন্দর মনে হবে। কারণ ওয়ামিয়া বেশি ফর্সা। তুই আবার ফর্সা মেয়েদের ভক্ত।
কায়েস তিতাসের বুকে একটা ছোট্ট ঘুষি বসিয়ে দিয়ে বললো, ফাজলামো রাখ। কাহিনিটা কি বল?
তিতাস সবিস্তারে বর্ণনা করলো রূপসার ব্যাপারটা। কথাগুলো শোনার পর কায়েস কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আবার অনবরত পুকুরের পানিতে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো। কায়েসের সামনে অসংখ্য ছোট বড় ইটের টুকরা। ঢিলের অভাব হচ্ছে না। তিতাসও উত্তরের অপেক্ষা না করে উঠে পুকুরের চারদিকে পায়চারি করতে করতে ভাবতে লাগলো। রূপসার সাথে আরো কিছু কথা বলা দরকার। অন্তত এমন কিছু করতে হবে যাতে রূপসার মনে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলা সম্ভব হয়। যা করার আজকেই করতে হবে। আগামীকাল আবার চলে যেতে হবে।
রূপসা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে বরাবরের মতই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। তিতাস অনুমতি দিয়েছে। ওর ফোনের গ্যালারিতে প্রবেশের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সে অনুমতি না দিলেও নির্ঘাত প্রবেশ করতো রূপসা।
গ্যালারিতে অসংখ্য এলবাম। বেশিরভাগই ‘ন্যাচার ফটোগ্রাফি’। হাজার হাজার ছবি রয়েছে ফোনটাতে। এলবামের নামগুলোও ভারি সুন্দর। “জংগল কাব্য”, “অরণ্যে একদিন”, “গাছপাখালির বাড়ি”, “আমার চোখে আকাশ”, “সুনীলের কবিতা বাড়ি” এরকম অসংখ্য এলবাম। একেকটা ছবি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কি ভালোবাসা নিয়ে যত্ন করে তোলা হয়েছে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। ছেলেটা যে ফটোগ্রাফির পাগল প্রেমিক তা স্পষ্ট। সে সকালে রূপসার ছবি নয়, শিউলী গাছের ছবিটাই তুলতে চেয়েছিলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবার চিৎ হয়ে শুয়ে ছবিগুলো দেখতে লাগলো রূপসা। ফটোগ্রাফি এলবাম থেকে বেরিয়ে এসে অন্যান্য ছবি দেখা আরম্ভ করলো। একজন মহিলার সাথে তিতাসের বেশ কিছু ছবি। মহিলার চেহারা সুন্দর, খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তারচেয়েও আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ওনার জামাকাপড় গুলো এত বেশি সুন্দর যে স্বাভাবিক ভাবেই যেকোনো মেয়েই তার কাপড় দেখে একবার মুগ্ধ হবে। অতি রুচিশীল মহিলা। নিশ্চয়ই তিতাসের কাছের কেউ হবেন। মা, খালা কিংবা অন্যকেউ। তবে ওনার চেহারার সাথে তিতাসের চেহারার কোনো মিল নেই। তিতাসের ঝাঁকড়া চুল, চিকন ঠোঁট, শ্যামলা গাত্রবর্ণ। আর ওনাকে দেখেই মনে হচ্ছে, রূপকথা থেকে উঠে আসা কোনো মেয়ে যে দূর্ঘটনাবশত বুড়ি হয়ে গেছে।
৫
ছোটমামার আত্মসম্মান বোধ অনেক প্রখর। যেহেতু এ বাড়ির মেয়েকে তার ভাগ্নে বিয়ে করবে না, সেহেতু এই বাড়িতে বিনা ওজরে থাকার পক্ষপাতী তিনি নন। অন্য কাউকে ভালো লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু যখন মন্তাজ মাস্টার জানতে পারবেন তিতাস তার মেয়েকে দেখতে এসে অন্য কারো মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে গেছে, তখন সব’চে বেশি আঘাতটা তিনিই পাবেন। কাজেই এখানে আরো একটা দিন কাটিয়ে তার আঘাতকে তীব্র করার মানেই হয় না। তিতাসের অনুরোধকে পাত্তা না দিয়ে মামা রীতিমতো জোরপূর্বক বাসায় ফেরার জন্য উদ্যত হলেন। বিদায়ের ক্ষণে প্রবেশদ্বার থেকে ওয়ামিয়ার করুণ দৃষ্টিটা চোখে পড়লো তিতাসের। নিশ্চয় ভাবছে, কে জানে এই মানুষটাই আমার স্বামী হয়ে যেতে পারে! মেয়েদের মনের ভাবনা সম্পর্কে ধারণা নেই তিতাসের।
কিছুদূর আসার পর ছোটমামা বললেন, এবার তোর মোবাইলটা কোন বাড়িতে আছে বল। সেটা উদ্ধার করতে হবে।
– ওটা রেখে গেলে কি আমার পেট খারাপ হবে? হবে না। ওটা থাক। রূপসার সাথে যোগাযোগ করতে হবে তো।
মামা হাসতে হাসতে বললো, ‘তুই শুধু লম্বাই হয়েছিস ভাগ্নে। বুদ্ধিটা তোর হাঁটু পর্যন্তই থেকে গেছে। যখন গ্রামে ছড়িয়ে যাবে যে মন্তাজ মাস্টারের মেহমান অমুকের বাড়িতে মোবাইল ফেলে গেছে। সেই মোবাইল নিশ্চয় আর রূপসার কাছে থাকবে না? ওটাকে তার বাপ চাচা দখল করে নেবে। তখন আর উদ্ধার করতে পারবি কিনা নিশ্চিত নই আমি।’
তিতাস মামার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো, ‘ওহ মামা। এই জন্যই তোমাকে আমি এত্ত ভালোবাসি। কি দারুণ মাথা তোমার! এই কথাটা একবারও আমার মাথায় আসে নি কেন?’
– কারণ আমি তোর মামা। মামার ব্রেইন ভাগ্নের থেকে বেশি শার্প থাকে। এবার বল বাড়িটা কোথায়? ভাগ্নে বউকে দেখে আসি।
তিতাস মামা ও কায়েসকে নিয়ে রূপসাদের বাড়িতে চলে এলো। বাড়ির প্রবেশ দ্বারে ঢোকার সাথে সাথেই সেই চমৎকার জানালা ও শিউলী গাছটা কারো নজর এড়াতে পারলো না। মামা ঠোঁট বাঁকা করে হাসলো।
তিতাস যথারীতি বারান্দায় এসে জিজ্ঞেস করলো, কেউ আছেন?
রূপসা ছুটে বেরিয়ে এলো। মাথায় ওড়না, বেণী করা চুলে আদর্শ রমণী। ছোটমামা তিতাসের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালেন। তিতাস বললো, ‘আমার ফোনটা ফেলে গিয়েছিলাম। আসলে চাচার সাথে কথা বলতে এতই ভালো লাগছিলো যে আমি কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম।’
মামা কায়েসের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। মাঝেমাঝে তিতাস বড়সড় আকারের ঢপ মারতে পারে। বিশ্বাসযোগ্য স্টাইলে। মেয়েরা শুনলে তো বিশ্বাস না করে উপায়ই নেই। আহারে সরলা কন্যা!
রূপসা বললো, আপনারা ভেতরে এসে বসুন। আমি চাচাকে ডাকছি।
এমন সময় রূপসার মা বেরিয়ে এলেন। তিতাস সালাম দিয়ে বললো, ‘চাচী, আমার মোবাইলটা ফেলে গিয়েছিলাম তাই খোঁজে এসেছি। আমরা বাসায় চলে যাচ্ছি। উনি আমার মামা আর ও আমার বন্ধু।’
রূপসার মা ওনাদেরকে বারান্দায় চেয়ারে বসতে দিলেন। রূপসার বাবা চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, ‘আপনাদেরকে তো চিনলাম না।’
লোকটার ভয়ংকর রাগী চেহারা। কোনো কোনো মানুষকে দেখেই মন বলে দেয় সে কতটা রাগী। কপালের উপরে কালো দাগ, মনে হয় নামাজ পড়তে পড়তে দাগ বসে গিয়েছে। চুল আঁধাপাকা। গায়ে একটা সাদা গেঞ্জি ও পড়নে লুঙ্গী। চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলেন।
চেয়ারগুলো কাঠের। অনেক পুরনো। বসার সিটে দু এক জায়গায় ঘুণে খেয়ে ফেলেছে। সাদা রঙের পাউডার দেখা যায়। সামনে অতিথি আপ্যায়ন কিংবা নিজেদের খাওয়ার জন্য একটা টেবিল রাখা। টেবিলের উপর কোনো ম্যাট নেই। টেবিলেও দু এক জায়গায় ঘুণে ধরেছে। কায়েস এতক্ষণ এসবই মন দিয়ে হিসেব করছিলো। ওদিকে মামা কথা বলা আরম্ভ করায় শান্ত হয়ে বসে আছে তিতাস।
রূপসা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা কথা বলছেন তাই সামনে আসার সাহস পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রূপসা মায়ের কাছে গিয়ে বললো, ওনাদেরকে কি খাইতে দিবা মা?
– নারিকেল পিঠা আর মুড়ি চানাচুর দে।
রূপসা আমতা আমতা করে বললো, লোকটা সকালেও নারিকেল পিঠা খাই গেছে। আবার নারিকেল পিঠা দিবা?
– খাইছে তো কি হইছে? আবার দে।
– মা, তুমি ভালো কইরা চা বানাও। চা দেই সাথে। শহরের মেহমান।
– আচ্ছা চা বানাইতাছি। তোর বাপরে একটু আসতে ক তো। নাহয় বিস্কুট টিস্কুট কিছু কিইনা আনুক দোকান থিকা।
রূপসা উৎফুল্ল হয়ে বললো, মা, সেমাই চিনি আনতে কও। সেমাই রাইন্ধা দেও।
মা এমনভাবে মেয়ের দিকে তাকালেন যে ভয়েই আর কথা না বাড়িয়ে চোখ নামিয়ে নিলো রূপসা। যেভাবে উৎফুল্ল হয়ে সেমাইয়ের কথা বলেছিলো, ঠিক সেভাবেই ওর ভেতরটা দমে গেলো। এই বাড়ি থেকে কবে মুক্তি মিলবে কে জানে! আর ভালো লাগে না।
রূপসা ঘরে গিয়ে দরজা ঠেলে দিয়ে শেষ বারের মত তিতাসের ফোনের গ্যালারিতে ঢুকলো। বাকি ছবিগুলোও দেখে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এত সুন্দর ছবি এর আগে কখনো দেখেনি ও। তিতাস ছেলেটাকে এখন ওর একজন বড় শিল্পী মনে হচ্ছে। ছবি তো সবাই তোলে, সবাই তো শিল্প ধরতে পারে না। কি মনোমুগ্ধকর একেকটা ছবি! আর কিছু বুঝুক বা না বুঝুক, শিল্প জিনিসটা ভালো বোঝে রূপসা। মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে ওর।
প্রায় আধা ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। মা বাবা কেউই ডাকছে না বলে আর বারান্দায় উঁকি দেয় নি রূপসা। বাবা ও চাচার সাথে মেহমানরা গল্প গুজব করছেন। হঠাৎ মায়ের ডাক পড়ল। পানির জগ ও গ্লাস নিয়ে বারান্দায় যেতে বললেন।
নাস্তা দেখে রূপসার দমে যাওয়া মনটা ভালো হয়ে গেলো। সেমাই, দই- চিড়া, মুড়ি চানাচুর আর চা দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয় চাচা কিনে এনেছে। অচেনা কোনো অতিথিকে আপ্যায়নের আয়োজন দেখে কেনই বা আজ এত আনন্দ হচ্ছে কে জানে। হয়তো লোকটার প্রতি শ্রদ্ধা জন্মেছে বলেই।
রূপসাকে দেখে চাচা বললেন, মা রূপু। ওনার মোবাইলটা নাকি..
– আমি নিয়ে আসছি।
রূপসা এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে গেলো। ফোনের স্ক্রিণের ছবিটার দিকে একবার তাকিয়ে মনেমনে বললো, ‘আপনি একদিন অনেক বড় হবেন। ধুর কি বলি, আপনি হয়তো অনেক বড়। আমিই জানিনা কিছু আপনার সম্পর্কে। ভালো থাকবেন।’
তারপর ফোনটা নিয়ে এসে চাচার হাতে দিয়ে দিলো। এই সুযোগে তিতাস মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকালো রূপসার দিকে। রূপসা মুহুর্তেই খেই হারিয়ে ফেললো। মুখ শুকিয়ে গেলো ওর। চোখ নামিয়ে মৃদু পায়ে চলে গেলো ঘরের দিকে।
তিতাস রূপসার বাবা ও চাচার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার মুহুর্তে বললো, চাচীকে একবার বিদায় জানিয়ে যাই। এতকিছুর আয়োজন করলেন উনি।
কিন্তু চাচী ঘর থেকে বের হলেন না। তিতাস ভেবেছিলো রূপসা হয়তো একবার বের হয়ে আসবে। কিন্তু না, রূপসাও এলো না। মামা রূপসার বাবার সাথে রীতিমতো বন্ধুত্ব বানিয়ে ফেলেছেন। রূপসার চাচা মিশুক মানুষ। তিতাসের সাথেও যেমন সহজে মিশে গিয়েছিলেন, মামারও সাথেও তাই। তিনি মামার কাছে বাসার ঠিকানা নিয়ে রাখলেন। বললেন শহরে গেলে আপনাদের বাসায় যাবো। সমস্যা নাই তো? বলেই হাসতে লাগলেন। মামাও বললেন, ‘আমি তো চাই আপনি আসুন। অনেকবার আসুন।’ কথাটা বলে মামাও হাসতে লাগলেন।
তিতাসের চোখ পাগলের মত রূপসাকে খুঁজছে। আর কি দেখা হবে না! শুধু একবার যদি দেখা মিলতো!
আচমকা রাস্তায় রূপসাকে দেখে চমকে উঠলো তিতাস। যেন তিতাসের জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলো ও। ওরা কাছাকাছি গেলে রূপসা হাত কচলাতে লাগলো। তিতাস বুঝতে পারলো ও কিছু বলতে চায়। নিজে থেকেই তিতাস বললো, বাসায় যাচ্ছি।
রূপসা হন্তদন্ত হয়ে বলতে শুরু করলো, আমি আপনার ফোনের ছবিগুলো দেখে ফেলেছি। মাফ করে দেবেন তো?
– ছি ছি এভাবে কেন বলছেন? আমি তো আপনাকে দেখতেই বলেছিলাম।
– আপনি খুব সুন্দর ছবি তোলেন। খুব যত্ন করে। আমি কারো সাথে তেমন কথা বলি না। আপনার সাথে অনেক কথা বলে ফেলছি। দয়া করে কিছু মনে করবেন না।
এত দ্রুত বললো যে হাসি পেয়ে গেলো তিতাসের। ও বলল, কিছু মনে করিনি।
– ভালো থাকবেন। আর একটা কথা, আপনাকে ভুল বোঝার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
তিতাস একবার চোখ বন্ধ করে লাজুক হেসে ফেললো। বললো, ‘ আপনি ভুল বোঝেননি। সঠিক টাই বুঝেছেন। আমি সত্যিই আপনাকে দেখার জন্যই এসেছিলাম। আর ইচ্ছে করেই মোবাইলটা ফেলে গেছি যাতে আবার আসতে পারি।’
রূপসার বুকটা ধক্ করে উঠলো। চোখ বড়বড় করে ফেললো সে। তাকিয়ে থাকতে পারলো না। একটা অচেনা অনুভূতির আলিঙ্গনে মিশে যেতে লাগলো। তিতাস হাসতে হাসতে দূরে চলে যাচ্ছে। ছোটমামা ও কায়েস অনেক দূর চলে গেছে। তিতাস পিছনে। তিতাসের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতর উথলে আসা ঢেউয়ের শব্দটা বেশ ভালোভাবেই অনুভব করতে পারলো রূপসা।
চলবে..