গল্প: ঠিকানা
লেখা : মিশু মনি
পর্ব:০৭
.
আমি লজ্জায় নীল হতে হতে বেগুনী হতে শুরু করেছি।ধুকপুকুনি টা বেড়ে যাচ্ছে।খুব দ্রুত হার্টবিট হচ্ছে।এত জোড়ে লাফাচ্ছে যে আরেকটু জোরে হলেই বুঝি হার্ট ফেটে যাবে।আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
এমন সময় কে যেন দরজায় কড়া নাড়লো।আমি চেঁচিয়ে বললাম,কে?
ওপাশ থেকে আম্মুর গলা ভেসে আসলো, মিশু বাইরে আয়।দেখে যা কে এসেছে?
ইফতি রেগে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,যা ভাগ।দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।তুই আসলেই একটা শনি।
আমি হেসে বললাম,একটু দাড়া।কে এসেছে দেখেই চলে আসছি।
.
বসার ঘরে এসে দেখি কাজী মৈত্রী ভাই!
মৈত্রী সাহেব আমার ‘তো’ ভাই।অর্থাৎ মামাতো, চাচাতো, খালাতো, ফুফাতো কিংবা নানাতো,এইসব ভাইয়ের মধ্যে যেকোনো একটা ভাই।দূর সম্পর্কের আত্মীয়।কিন্তু আমার ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাসায় অনেক আসতেন।তাই আমার সাথে সম্পর্ক টা অনেক টাই ভালো।
আমি হেসে বললাম,আপনি!
– হু,কেমন আছো মিশু?
– সদ্য বিবাহিত বউরা যেমন থাকে।আপনার কি অবস্থা বলুন?
– হ্যা ভালো।তোমার শরীর কেমন এখন?
– আমিতো ভালোই ফিল করছি।তা আমার বিয়েতে আসেন নি কেন?
– ওই তো চেন্নাই,
– আপনার চেন নাই বলে আসেন নি? লুঙী পড়ে আসতেন।
– আরে বাবা চেন্নাই তে ছিলাম।তাই আসতে পারিনি।গতকাল ফিরেছি, শুনলাম তুমি কারেন্ট শক খেয়েছ।তাই দেখতে আসলাম।
আমি হেসে বললাম,খুব ভালো করেছেন।ইফতির সাথে দেখা করবেন না? আপনি বসুন,ওকে ডেকে আনছি।
– করবো, আগে তোমার সাথে একটু গল্প করি।
আমি মনে মনে বললাম,গল্প করার মত মুড নাই।যত তাড়াতাড়ি পারেন ঘুমান গিয়া।বিরক্ত হচ্ছি।
কিন্তু মুখে বললাম,আচ্ছা ঠিকাছে।কাল অনেক কথা হবে।আজ ঘুমাবো।
– ওহ আচ্ছা।তাহলে ইফতির সাথেও কাল কথা বলবো। তুমি গিয়ে ঘুমাও।
– ওকে।গুড নাইট।
আমি রুমের দিকে পা বাড়ালাম। মৈত্রী পিছন থেকে ডেকে বলল,মিশু একটু দাড়াও।
আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। মৈত্রী এগিয়ে এসে আমার হাতে একটা ঘড়ি পড়িয়ে দিতে দিতে বলল,বিদেশ থেকে এনেছি তোমার জন্য।
আমি মনে মনে বললাম,ভালো করেছেন। এবার হাত টা ছেড়ে দিয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।
কিন্তু মুখে বললাম,থ্যাংকস। খুউউউব সুন্দর!
– আচ্ছা এবার ঘুমাও গিয়ে।বেস্ট উইশেস ফর ইউর ম্যারেড লাইফ।
– থ্যাংকস।
মুখে হাসি ফুটিয়ে রুমের দিকে আসলাম।ইফতি রাগী রাগী মুখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম,কি রে এখানে কেন?
– তোর প্রেম করা দেখলাম।
– কি বললি?
– ভালো তো।হাতে ঘড়ি পড়িয়ে দিলো।তোর বিয়ের পরেও পুরনো টাকে ছাড়তে পারলি না? অবশ্য পুরনো প্রেম, অত সহজে কি ভোলা যায়?
আমি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলাম।মিথ্যে অপবাদ কিছুতেই সহ্য করা যায়না।
বললাম,মুখে লাগাম দে।
– আমার মুখটা ঘোড়ার চামড়া নয়।
আমি রুমে এসে ঘড়িটা খুলে রাখলাম। ইফতি এসে সেটা হাতে নিয়ে বলল,অনেক দামী মনে হচ্ছে।গুড..
– শোন ইফু,তুই ভালো করেই জানিস মৈত্রীর সাথে আমার ভাইবোনের মত সম্পর্ক।অযথা অপবাদ দিবিনা।
– সেটা তো দেখলাম ই।অনেক গল্পেই মৈত্রী তোর নায়কের নাম ছিলো।ভাবতাম গল্প তো গল্পই।বাস্তবে যে উনি সত্যিই তোর নায়ক সেটা জানতাম না।আজ নিজ চোখে দেখলাম।
আমি রেগে গেলাম।আমি জানি ইফতি অযথা ঝগড়া লাগানোর জন্য এসব বলছে।কিন্তু তবুও রাগ হচ্ছে।প্রথমত, এভাবে অযথা ঝগড়া করার জন্য। আর দ্বিতীয়ত,এত সুন্দর মুহুর্তটা নষ্ট হয়ে গেলো বলে।ইফতি একবার ঝগড়া শুরু করা মানে আজ আর থামছে না।ধুর,আমি বোধহয় আসলেই একটা শনি।
.
ইফতি বলল,মৈত্রীকে তুই মামা বলে ডাকবি।
আমি অবাক হয়ে বললাম,উনি আমার ভাই।
– তো ভাই,নিজের ভাই নয়।মামা বলে ডাকবি।
– আশ্চর্য!
– তা তো মনে হবেই।বয় ফ্রেন্ড কে কি আর মামা বলা যায়?
– ইফতি,মুখ সামলে কথা বল।
– আমার মুখ সামলানোই আছে।তোর ‘তো ‘ভাই হাত সামলাতে পারেনা আর আমি মুখ সামলাতে না পারলেই দোষ?
এবার আমি ভয়াবহ রেগে গিয়ে ইফতির সামনে এসে বললাম,খবরদার ইফু।চুপ করে থাক নয়ত ভালো হবেনা।
– আমার রুমে থাকিস না,ওই ভাইয়ের রুমে গিয়ে ঘুমা যা।
এবার আর রাগ সামলাতে পারলাম না।হনহন করে হেটে বাইরে আসলাম।
মৈত্রীকে খুজে বের করে বললাম,এই যে কাজী ভাই।
– কি হইছে মিশু?
– আমাদের মাঝে আপনাকে ভিলেন হতে কে বলেছিল? কি সুন্দর রোমান্টিক সিন চলছিল,সেই মুহুর্তে উনি এসে ট্রাজেডি ফিল্ম বানিয়ে দিলেন।
– আমি আবার কি করলাম?
– আপনাকে কে বলেছিল আসতে?
– বাপ রে,তোমাদের বাসায় আসতে আমার দাওয়াত লাগবে?
– চুপ থাকুন তো।গল্পের মোড় টা ঘুরিয়ে দিলেন এসে।
– কিসের গল্প?
– আমার আর ইফতির ভালোবাসার গল্প।কত সুন্দর হাটি হাটি পা পা করে আমাদের প্রেম টা এগোচ্ছিল,আপনি এসে সব নষ্ট করে দিলেন।
– আমি ভিলেন হয়ে গেলাম? কিন্তু আমার অপরাধ টা কি বুঝতে পারছি না।
– বুঝতে হবেনা।আপনার সাথে ভবিষ্যতে অনেক খাতির ছিল।এখন আর থাকবে না।
– ওটা ভবিষ্যৎ নয়।ওটা হবে অতীত।
– ওই একই হলো।
– একই হলোনা।তুমি যদি বলো,বাবা শাড়ি পড়ে আছেন তাহলে বাক্যটা ভুল হবে।একটি সার্থক বাক্যের তিনটি গুন থাকে,জানোনা?
আমি আরো রেগে গেলাম।আমাদের রোমান্টিক সিনের মাঝে ঢুকে আবার ব্যাকরণ শেখাচ্ছে।
মৈত্রী বলল,এত উত্তেজিত হবেনা মিশু।
– হুম।আপনি আজ সকালে উঠে চলে যাবেন।
– আজ নয়,বলো কাল সকালে উঠে চলে যাবেন।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।বারবার ভুলভাল কথা বলছি।ইফতির সাথে ঝগড়া শুরু হওয়ায় বুঝি মাথাটা গেছে।
কিছু না বলে আবার রুমে চলে আসলাম।
ইফতি বিছানায় শুয়ে ভিডিও কলে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।এসব কি হচ্ছে!!
কোথায় এখন দুজনে মিলে বিছানা টাকে স্বর্গ বানিয়ে ফেলতাম।তা নয়,এখন দুজন দুদিকে জ্বলছি।
আমি এসে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললাম,তুই কি শুরু করলি এসব?
– বারে,নিজে আমার সামনে প্রেম করতে পারো আর আমি ভিডিও কল দিতে পারিনা?
– ইফু,অযথা এমন করবি না।
– একশবার করবো। আয়াতের সাথে কথা বললাম।এবার নূড়ির সাথে বলবো।
– এরা কারা?
– আমার গার্ল ফ্রেন্ড।
– ইফু,ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
– খারাপ টাই হোক।
এ কথা বলে ইফতি ফোন টা নিয়ে কথা বলতে বলতে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়ালো।
.
আমি একা সোফায় চুপটি মেরে বসে আছি।প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে ইফতি ফোনে কথা বলছে।এগুলো ওর ফাজলামো ছাড়া কিছুই নয়।আমাকে জব্দ করার জন্য এসব করছে।কিন্তু এত সুন্দর মুহুর্তটা নষ্ট হয়ে গেলো ভেবেই আমার মন খারাপ লাগছে।
অনেক্ষন বসে থাকার পরেও ইফতি আসলো না।কথা বলেই চলেছে।
আমি সোজা আম্মুর রুমে চলে আসলাম।
আম্মু বলল,কি হইছে মিশু?
– হানিমুনে যাবো। ব্যবস্থা করে দাও।
– আচ্ছা।কয়েকটা দিন যাক।
– আমি কালই যাবো।
– এত বড় এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো। তোর শরীর ভালোনা।এখন তোকে যেতে দিবো না।কয়েকদিন পর যাস।
– ঠিকাছে, আমি কারেন্টে হাত দিয়ে মরে যাবো। তখন বুঝবা সবাই।মিশুকে ছাড়া কিভাবে থাকো তাই দেখবো।
আম্মুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেখান থেকে চলে আসলাম। কিছুই ভালো লাগছে না।জব্দ করার একটা সীমা থাকে,ইফতি আমার সাথে এবার একটু বেশি বেশি ই করছে।
এবার আমিও দেখাবো মজা!