#ফুপু_শ্বাশুড়ি
#পর্ব:৩
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
নিশুর বাবা নিজামদ্দীন আহু আর রেশমীকে দেখে ভিতরে স্বাগতম জানালেন। তিনি যে রেশমীকে দেখে একটু অবাক হয়েছেন তা তো বোঝাই যাচ্ছে। তারপর মুখটা হাসি হাসি করে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করল। রেশমী তার প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলল,
_নিশু কোথায়?
নিজামদ্দীন কী বলবে? সে তো নিজেই জানে না নিশু কোথায়! মেয়েটা কোথায় কখন যায় তা কাউকে বলে না। ইদানিং নিশুকে নিয়ে তিনি বেশ ভয়েই থাকে। তিনি তাদের প্রশ্নের জবাব এড়াতে নিশুর মা সুমিকে ডাক দিয়ে বলল,
_নিশাদ এর মা ও নিশাদের মা দেখো কারা এসেছে।
(নিশাদ নিশুর বড় ভাই। নিশুর থেকে ছয় বছরের বড়। আর নিশুর এমন গুন্ডী হবার পিছনে পুরো কৃতিত্ব তার। ছোট বেলা থেকেই নিশাদ নিশুকে শিখিয়েছে অন্যায় করলে সহ্য না করতে। মেয়ে বলে কেউ পুলিং করলে তাকে মেয়েদের পাওয়ার দেখিয়ে দিতে। সাধারনত বাঙালী পরিবারের সবাই নিজেদের ঘরের মেয়েকে গান, নাচ, কবিতা লেখা শিখায় কিন্তু নিশাদ নিশুকে মার্শাল আর্ট শিখিয়েছে। নিশাদ চেয়েছিল নিশুকে বক্সিং চ্যাম্পিয়ান বানাবে কিন্তু উন্নত ব্যবস্থা না থাকায় সেটা হলো না। নিশু যখন কাউকে মেরে আসে নিশাদ তখন বোনকে আদর করে বলে আমার বাঘিনী। কেউ নিশুর নামে নালিশ করলে নিশাদ বিচার না করে উল্টা তাকে শাসিয়ে দেয়। নিশাদের কারণে বাড়ির কেউ নিশুকে কিছু বলতে পারে না। নিশাদ নিশুকে এতটা ভালোবাসে যে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলে মেয়েকে সরাসরি বলে, আমার বোনের দুষ্টুমি যদি সহ্য করতে না পারো তবে বিয়ে হবে না। বা বিয়ের পর যেদিন আমার বোনকে কটু কথা বলবে সেদিন আমার বাড়িতে শেষ দিন হবে। এই জেদের কারণে বিয়ে পর্যন্ত হচ্ছিল না নিশাদের। কিন্তু বর্তমানে নিশু নিজে মেয়ে দেখার দায়িত্ব নিয়েছে। সবার ধারণা এবার নিশাদ বিয়ের পিঁড়িতে বসবে।)
নিজামদ্দীনের ডাক শুনে সুমি ভিতর থেকে বের হলো। রেশমীকে দেখে তিনিও খানিকটা অবাক হলেও কুশল বিনিময় করলেন। রেশমী তাকেও জিজ্ঞেস করল,
_নিশু কোথায়?
_সুমি বলল, নিজে রুমে।
আহু মনে মনে বলল, নিশু এর মধ্যে রুমে এসে পড়ছে। বাহ্। অবশ্য ও তো নিশু। ওর দ্বারা কিছু অসম্ভব নয়! রেশমী সুমির দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমি কী নিশুর রুমে যেতে পারি?
_হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।
রেশমী আহুকে সাথে নিয়ে নিশুর রুমের সামনে গিয়ে দেখল দরজা ভেজানো। তিনি দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। নিশু ঘুমাচ্ছে। রেশমী কিছুক্ষন নিশুর দিকে তাকিয়ে থেকে আহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমার বোধয় দেখার ভুল হয়েছে। যাই হোক আমি নিচে বেয়ানের সাথে কথা বলি। তুই ওর সাথে কথা বল।
আহু মনে মনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। রেশমী রুম থেকে যেতেই আহু নিশুর দিকে তাকাল। মেয়েটা ঘুমের ভান ধরে থাকলেও কি সুন্দর লাগছে! আহুর নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_নিশু তুমি তো আমার মনটা চুরি করে নিছো। নিশু তখনও চোখ পিটপিট করে ঘুমের ভান ধরে রইল।
আহুর মাথায় একটু দুষ্টমি বুদ্ধি আসল। নিশুর রুমের দরজাটা বন্ধ করে, টুপ করে নিশুর চাদরের ভিতর ঢুকে নিশুকে গভীর ভাবে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমো খেলো।
নিশু লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আহু নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_এই প্রথম তোমাকে এত লজ্জা পেতে দেখলাম। কিউট লাগছে।
নিশু চোখ মেলে আহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_তোমার দেখছি বেশ সাহস হয়েছে।
আহু নিশুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
_সাহস সবসময় ছিলো নিশু। শুধু দেখায়নি। আর সাহস না থাকলে তোমার মত বাঘিনীকে নিজের ভালোবাসার জালে কী করে আটকাতাম। তোমার মত বাঘিনীকে বদ করতে বাঘ হওয়া দরকার।
_আসছে আমার বাঘরে। গায়ে শক্তি আছে নাকি। ছাড়ো উঠব।
আহু নিশুকে এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, নিশু নড়তেও পারছে না। আহু হাসি দিয়ে বলল,
_নিশু আরো শক্তি দেখবে?
নিশু নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে বলল,
_ছাড়ো কেউ এসে পড়লে কী বলবে?
_কী বলবে? আমার হবু বৌ। তার রুমে আসলে কে কী বলবে?
_হবু বৌ পুরোপুরি বৌ নয়। ইডিয়েট ছাড়ো।
_ওহো। বাঘিনী আজ বাঘের জালে পরাস্ত তবে।
নিশু হাসি দিলো। আহু আবার নিশুর মাথায় চুমো খেয়ে বলল,
_সকাল সকাল ছেলে গুলোকে মারলে কেন?
_হারামিগুলায় মেয়েদের সাথে ইতরামি করছিল। ওদের ছেড়ে দিবো নাকি?
_একটুর জন্য ফুপির হাত থেকে বেঁচে গেছো।
_হ্যাঁ আমি তোমাদের দেখেই সাইলেই নিয়ে ফুড়ুৎ হয়েছি।
_হা হা হা। নিশু
_হু।
_তোমাকে এভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে মনে হচ্ছে কোন রেশমের পুতুল জড়িয়ে ধরেছি। এই রেশমের মত নরম হাত দিয়ে ছেলেদের কেন পিটাও।
_ছেলেদের না পিটালে আমার হাত নিসপিস করে।
_পাগলী কোথাকার! চলো ফুপি নিচে বসে আসে।
_তুমি যাও আমি চেইঞ্জ করে আসছি। পরনের ড্রেস দেখলে ফুপি পাক্কা বুঝে যাবে ওটা আমি ছিলাম।
_আচ্ছা।
৬!!
আহু নিশুর রুম থেকে বের হতেই নিশাদের সামনে পড়ল। নিশাদকে আহু কিছুটা ভয় পায়। আহু মাথা নিচু করে সালাম দিলো।
_আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
_কেমন আছেন?
_ভালো তুমি।
_জি ভালো।
_নিশুর রুমে কী করছিলে?
_শুয়ে——
_কী? আমার বোনের সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করলে খবর আছে।
_না না কিছু করিনি। আমি তো দেখা করতে আসছিলাম। আপনার কী মনে হয় নিশুর মত মেয়ের সাথে উল্টা পাল্টা করা সহজ নাকি!
_না করলেই ভালো। বিয়ের আগে বা পড়ে আমার বোনকে কোন রকম কষ্ট দিলে মনে রেখো। তা তোমার কাজ কেমন চলছে?
আহু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, এই দুই ভাই বোনের কারণে আমার হার্টে সমস্যা হবেই হবে। তারপর হাসি দিয়ে বলল,
_আপনাদের দোয়ায় বেশ ভালো।
নিশাদ আহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_আহু।
_জি ভাইয়া।
_তোমার কাজিন অনু কেমন আছে?
_আপনি অনু কথা কেন জিজ্ঞেস করছেন?
_না এমনি। তেমন কিছু না। চলো নিচে।
আহু মনে মনে বলল,
_ওরে শালা তবে নিশু ঠিক বলছিল তুমি মনে মনে আমার বোনের সাথে ইংকু পিংকু করতে চাও। ব্যপার না। নিশুর কাছ থেকে পুরোটা জানতে হবে।
নিশু সুন্দর হালকা রঙের থ্রি পিচ পরে ভদ্র মেয়ে সেজে নিচে গিয়ে, রেশমির সাথে কথা বলল।
_রেশমী বলল, নিশু তুমি মারামারি করতে পারো!
_নিশু খানিকটা থতামতা খেয়ে বলল, মারামারি কিভাবে করে? আমি তো একটা বিড়ালকেও ধমক দিয়ে তাড়াতে পারি না।
পাশে দাড়িয়ে নিশুর চাচি মনে মনে ভাবছে,
_কেমন সহজ সরল সেজে মিথ্যা বলছে দেখো। অথচ সেদিন পাশের পাশার কালো বিড়ালটাকে হাত পা বেঁধে ঘন্টা খানিক রোদে শুয়ে রাখছিল। কারণ বিড়ালটা ওর কেক খেয়েছিল। সেদিনের পর পাশের বাড়ির বিড়ালটা আমাদের বাড়ির এ মুখো হয় না।
গত সপ্তাহে মিনাল কাকার টাকের যে কটা চুল ছিলো সবকটা কেটে ফেলছে। কারণ মিনাল কাকার নাকি চরিত্রে গন্ডোগোল। বেচারা আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে পর্যন্ত যায় না। ওর বিয়ের জন্য এক ঘটক সমন্ধ এনেছিল তাকে চুলকানির এমন ঔষধ দিছে যে সে আমাদের বাড়ির নাম শুনলেও ভয়ে কাঁপে। নিশু চাচিকে ধাক্কা দিতেই তার ধ্যান ভাঙল।
রেশমী আরো কিছুক্ষন কথা বলে চলে গেলো। আহু মৃদু হেসে মনে মনে বলল,
_পাগলী একটা।
৭!!
রাতে আহু নিশুর সাথে ফোনে কথা বলছে। তখন নিশু বলছে,
_আহু তুমি আমাকে যেদিন প্রপোজ করছিলা সেদিনের কথা মনে আছে?
_বাংলা সিনেমায় যেমন মাথায় আঘাত লেগে সব ভুলে যায়। আমার মাথায় তেমন আঘাত লাগলেও আমি ঐ ভয়াবহ দিন ভুলব না।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
চলবে______