#ফুপু_শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
#পর্ব:৫
আহু দরজায় কান পেতে শোনার অনেক চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুই শুনতে পেলো না। কিছুক্ষন পর রেশমী আর নিশু দুজন হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হলো। আহু চোখ বন্ধ করে মাথা ঝারা দিচ্ছে। আবার চোখে ভালো আঙুল দিয়ে কচলে সামনে তাকিয়ে দৃশ্য দেখে পুরো হা হয়ে গেলো। আহু বিরবির করে বলছে,
_দুই বাঘিনী এক সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। ভয়ানক দৃশ্য। ছোট বেলা থেকে তো জানতাম দুই বাঘিনী এক বনের এক এলাকায় থাকা দুষ্কর এরা দেখছি হেসে হেসে কথা বলছে।
রেশমী সবার সাথে বসে কথা বলার সময় আহু নিশুকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলল,
_কী ব্যাপার?
_কী ব্যাপার কী?
_ফুপি তোমাকে রুমে নিয়ে গেলো রাগ করে আর বের হলো হেসে। ব্যাপার খানা কী?
_ব্যাপার হলো তোমার ফুপি জেনে গেছে আমি সেই মেয়ে যে ব্যাংকে তাকে টিজ করেছিল। আর ছেলেদের পিটানী দিতে আমার জুড়ি মেলা ভাড়।
_সর্বনাশ। আমার বোধয় আর বিয়ে হবে না। ও নিশু আমি যে অন্য কাউকে তোমার জায়গায় বসাতে পারব না।
_চুপ। নিশু আহুর কলার টেনে কাছে এনে বলল, আমার জায়গায় অন্য কাউকে বসানোর চিন্তা করলে তুমি জীবনে বাবা হতে পারবে না আহু। পাগলা কুত্তাকে দেয়া ইনজেকশন তোমার বাম্পে দিয়ে দিবো।
_উহু নিশু এসব কী বলো। ভয়ংকর সব কথাবার্তা। তা ফুপি যখন সব জেনে গেলো তখন সে তোমার সাথে হাসতে হাসতে কেন বের হলো?
_তোমার ফুপি পুলিশে থাকাকালীন সবাইকে থার্ডডিগ্রী টর্চার দিতো। আর আমি তাকে অন্যরকম টর্চার করার ভয় দেখিয়েছি।
_অন্যরকম টর্চার! সেটা আবার কী?
_কাম জানু! কাছে আসো! তোমাকে ফ্ল্যাসব্যাক দেখাচ্ছি। আহুর গালে গাল লাগিয়ে নিশু বসল।
রেশমী নিশুকে রুমে নিয়ে গিয়ে বলল।
রেশমী: তুমিই সেই মেয়ে যে ব্যাংকে আমার সাথে বেয়াদপি করেছিলে। সেদিন রাস্তার মোড়েও তুমিই মারামারি করছিলে। তুমি কী ভেবেছিলে, আমাদের আগে জলদি ঘরে গিয়ে ঘুমানোর নাটক করলে পার পেয়ে যাবে। তুমি নিজেকে তো চাদড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিলে কিন্তু তোমার কাঁদা মাখা সুজ কিভাবে ঢেকে রাখবে! তোমার ব্যাট, হকিস্টিক। মেয়েদের রুমে সাজার প্রসাধনী থাকে, অথচ তোমার রুমে আমি ব্যাট, হকিস্টিক, চেইন, বক্সিং গ্লাভস থাকে। আর এসব দেখে কী তোমার মনে হয় আমি কিছু বুঝতে পারিনি! তোমাদের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জেনেছি এলাকার সবাই তোমাকে খুব ভয় করে। তুমি দেখতে মেয়েদের মত সুন্দরী হলে কী হবে, তোমার ভিতরের চার পাঁচটা গুন্ড ছেলে লুকিয়ে আছে।
নিশু নিজের জামার ভিতরে তাকিয়ে বলল,
নিশু: কোথায় অামার ভিতরে চারপাশটা গুন্ডা? আমি তো আমার ভিতরে সেটা দেখতে পাচ্ছি যা আপনার ভিতরে আছে।
রেশমী নড়ে চড়ে বসে বলল,
রেশমী: ইডিয়েট আমি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা বলছি।
নিশু: অহ।
রেশমী: এখন বলো তোমার মত গুন্ডী মেয়ে যে কিনা রোজ ছেলেদের না পিটালে পেটের ভাত হজম হয় না, যাকে কিনা এলাকার বাচ্চা থেকে বুড়ো লোক গুন্ডী ডাকে তার সাথে আমাদের ছেলের বিয়ে দেয়া ঠিক হবে?
নিশু: অবশ্যই ঠিক হবে।
রেশমী: তোমার একটা পজেটিভ দিক দেখাও।
নিশু: আপনার আহু আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে।
রেশমী: এটা তো আহুর পজেটিভ দিক হলো। তোমার পজেটিভ দিক বলো?
নিশু: এটাই আমার পজেটিভ দিক। যদি বলি আমি আহুকে আমার পুরোটা দিয়ে ভালোবাসি, তবে হয়ত আপনার সেটা বিশ্বাস হবে না। বা বিশ্বাস হলেও আমার ভালোবাসার মূল্যায়ন হয়ত করবেন না। কিন্তু যেখাবে আহু আমার জন্য পাগল সেখানে আপনি আমাকে আহুর বৌ হিসাবে মানতে বাধ্য।
রেশমী: স্মার্ট গার্ল। চালাকি করে সঠিক জায়গায় হাত দিয়েছো।
নিশু: আই নো আই অ্যাম স্মার্ট!
রেশমী: তবুও যদি না মানি তবে?
নিশু: হুম। ফুপু আম্মা আপনি আমাকে বোধয় এখনও চিনতে পারেননি। আই অ্যাম নিশু। কারো কোন কিছু, মানা না মানার পরোয়া আমি করি না। আমি সেটা করি যেটা নিজের মন চায়।
রেশমী: আহু কিন্তু পরিবারকে কষ্ট দিয়ে তোমাকে বিয়ে করবে না।
নিশু: জানি। আমি চাইও না আহু তেমন করুক। যে ছেলে একটা মেয়ের জন্য নিজের অত সুন্দর পরিবার ছাড়তে পারবে তারমানে আমার থেকে ভালো কাউকে পেলে সে আমাকে ছাড়তেও দুবার ভাববে না। আর আমার আহু তেমন নয়।
রেশমী: গুড থিংকিং। আই অ্যাম ইমপ্রেসড।
নিশু: জি ধন্যবাদ।
রেশমী: তবুও তোমার গুন্ডামীর জন্য যদি না মানি? তবে?
নিশু: তাহলে আপনাকে গুন্ডামী দেখবো।
রেশমী: মানে?
নিশু: ফুপু শ্বাশুড়ি আম্মা মনে আছে গত পরশু আপনাকে একটা পাগল কুকুর তারা করছিল। আমি এসে আপনাকে আমার স্কুটারে তুলে নিয়েছিলাম বলে বেঁচে গেছিলেন। নয়ত চৌদ্দটা ইনজেশন লাগত।
রেশমী: তো?
নিশু: তো ভাবুন রোজ যদি কয়েকটা পাগল কুকুর আপনাকে তাড়া করে তবে কেমন হবে?
আপনার নামে বড় বড় বাক্সের কিছু পার্সেল আসল। পার্সেল খোলার সাথে সাথে বাক্সের ভিতর থেকে একশ ইদুর আর একশ ব্যাঙ লাফিয়ে আপনার গায়ে পড়ে সারা ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে তবে কেমন হবে? আরো কিছু বাক্স থেকে তেলাপোকা, টিকটিকি কিংবা কেচো বের হলো তবে কেমন হবে?
রেশমীর গা গুলিয়ে উঠল। নাক মুখ বোচা করে বলল,
রেশমী: নিশু তুমি কী নোংড়া আর ভয়ানক।
নিশু: এর চেয়ে ভয়ানক আরেকটা কথা বলি। তা হলো ফুপু শ্বাশুড়ি আম্মা আপনি দাদি হতে যাচ্ছেন। আহুর সন্তান আমার পেটে।
রেশমী বিছানা লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলল,
রেশমী: হোয়াট?
নিশু: আরে ফুপু শ্বাশুড়ি হাইপার হবেন না, আপনার প্রেশার বেড়ে যাবে। বিশ্বাস না হলে আহুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন আমার পিঠের ডান পাশে আর নাভির ঠিক নিচে দুটো তিল আছে কিনা। দেখবেন আহু লজ্জায় লাল হয়ে যাবে।
রেশমী কিছুক্ষন নিশুর দিকে তাকিয়ে থেকে নিশুর গালে হাত দিয়ে বলল,
রেশমী: নিশু তুমি ভয়ানক পাগল মেয়ে। আহু সত্যি ভুল কাউকে বাছাই করেনি। যে মেয়ে নিজের কাছের মানুষকে আগলে রাখার চেষ্টা করতে পারে সে নিঃসন্দেহে ভালো স্ত্রী হতে পারে। দোয়া করি তোমরা সুখী হও।
নিশু: আপনি কী বাচ্চার কথা শুনে মেনে নিলেন নাকি!
রেশমী হেসে বলল,
রেশমী: আই নো ইউ আর নট প্রেগনেন্ট। ইউ আর স্টিল ভার্জিন!
নিশু লজ্জা পেয়ে বলল,
নিশু: কী করে বুঝলেন?
রেশমী: তোমার মত মেয়েরা শুধু মুখে মুখে দুষ্টুমি করতে পারে। কাজের বেলায় তেমন নয়। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আহু তোমাকে কাছে টানতে ভয় না পেলেও, তুমি আহুর কাছে যেতে ভয়ানক ভয় পাও। অ্যাম আই রাইট?
নিশু মাথা নিচু করে বলল,
নিশু: বিয়ের আগে ওসব ঠিক না।
রেশমী হেসে বলল, চলো সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
আহু হা হয়ে আছে। নিশু আহুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
_ঐ পাগল ফ্ল্যাসব্যাক শেষ। তুমি কেন ঘোরে আছো?
_নিশু তোমাদের কথা শুনে মাথা ঘোরাচ্ছে।
_কেন?
_তুুমি তো দেখি সাংঘাতিক মেয়ে!
_সেটা কী তুমি নতুন জানো নাকি?
_হ্যাঁ জানি। নিশু—-
_হু। সত্যি কী তোমার পিঠের ডান পাশে আর নাভির নিচে দুটো তিল আছে?
_কেন?
_একটু দেখি!
_আহু একদম অসভ্যতামি করবা না। চলো বড়দের কাছে।
আহু মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
_থাক দেখান লাগবে না।
নিশু মৃদু হেসে আহুর চুল এলোমেলে করে আহুর গালে একটা চুমো খেয়েই রুম থেকে পালিয়ে গেলো। আহু হাসতে হাসতে বলল,
_পাগলী একটা।
৯!!
সামনের মাসের ২৬ তারিখ আহু আর নিশুর বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হলো। আর তার ঠিক একমাস পর অনু আর নিশাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হলো।
নিশাদ অনুকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করত। কিন্তু বলার সাহস ছিলো না। অনুকে ভালো লাগার সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো অনু নিশুকে নিজের ছোট বোনের মত স্নেহ করে। যদিও অনু জানত না নিশাদের বিয়ে নিয়ে এমন উদ্ভট শর্ত আছে। কিন্তু যখন থেকে নিশুর সাথে অনুর পরিচয় তখন থেকেই নিশুর দুষ্টুমিগুলো অনুর খুব ভালো লাগত। সে জন্যই অনু নিশুকে খুব ভালোবাসত। আর সে ভালোবাসা দেখেই নিশাদের মনে অনুর প্রতি ভালোলাগা তৈরী। আর ভালো লাগা ভালোবাসায় রূপ নেয়। কিন্তু বলার মত সাহস নিশাদ বা অনু কেউই করতে পারেনি। যে সমস্যার সমাধান নিশু করে দিয়েছিল। নিশু বুঝতে পারছিল এ অর্কমার ঢেঁকি দুটো কোন কাজে না। তাই বড়দের বলে দুজনার চার হাত এক করে দিলো।
বাড়ির পরিবেশে খুব হাসি খুশিময়। হাসি খুশি যেনো গরম জিলাপী ভাজার গন্ধের মত সারা বাড়িতে মো মো করছিল। কিন্তু কথা আছে অতি হাসি কান্না কারণ হয়!
১০!!
গত পাঁচ ঘন্টা যাবত আহুর বাড়ি থেকে শুরু করে নিশুদের বাড়ির সবাই হন্যে হয়ে নিশুকে খুঁজছে। সকালে নিশুদের রাস্তার মোড় থেকে নাকি কিছু ছেলে নিশুকে কিডনাপ করছে। সে থেকে বাড়ির সবাই পাগলের মত সব জায়হায় নিশুকে খুঁজছে।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
চলবে______