কলঙ্কের বোঝা শেষ পর্ব

0
426

#ধারাবাহিকগল্প
#কলঙ্কের বোঝা
শেষ পর্ব
মাহবুবা বিথী

শায়লার মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে ওর মামারা শায়লার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। শায়লা দেখা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। এই পৃথিবীতে ওর একটাই পিছুটান ছিলো। সেটা ছিলো ওর মা। সেই মা যখন দুনিয়া থেকে চলে গেলো আজ আর কারো কাছে ওর কোন দায়বদ্ধতা নেই। ও শুধু এখন থেকে নিজেকে ভালো রাখবে। শায়লা আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করছে ওর অ্যামিরেটসের চাকরিটা যেন হয়। ওর তখন দুবাই পোস্টিং হবে। মুখোশধারী আত্মীয়স্বজনের স্মৃতি, বাবার ভালো স্মৃতি, খারাপ স্মৃতি, মায়ের রোগ শোকের স্মৃতি সব ভুলতে পারবে। এ বাসায় ওর দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়।
শায়লা কোথায় যেন শুনেছে এক পুরুষ পুন্য করলে তিনপুরুষ এই পুন্যের ফল ভোগ করে তেমনি একপুরুষের পাপের কলঙ্ক কয় পুরুষ ধরে শোধ করতে হবে ও জানে না। এটা একান্তই শায়লার নিজস্ব ধারণা। ওদের এতো সুন্দর সাজানো গোছানো সংসারটা মূহুর্তে এলোমেলাে হয়ে গেলো। কাজের মহিলার সাথে ওর বাবার ঐ ঘটনার পর যেন ওদের সংসারটা টালমাটাল হয়ে গেলো। ওর বাবার আচরনে ওর মাতো নিশ্চয় কষ্ট পেয়েছিলো। হয়ত সেই কারনে ও সেজানের সাথে সুখী হতে পারেনি। মায়ের তো আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিলো না। মামারাও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। লেখাপড়ার দৌড় খুব একটা ছিলো না। সেই কারনে চাকরি পাবার সম্ভাবনাও নেই। অগত্যা বুকের কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে ওর বাবার সাথে ওর মা সংসার করে গেছে। আর সেই দীর্ঘশ্বাসের বোঝা ওর বাবার সন্তান হিসাবে ওকেই হয়ত বয়ে বেড়াতে হলো। এর মাঝে অনলাইনে ওর ইন্টারভিউ হয়ে গেলাে। ওরা মেইলে ওর রেজাল্ট জানিয়ে দিবে।
মা মারা যাওয়ার পর এতোদিন ওর রান্না করতে হয়নি। চাচাদের বাসা থেকে তিন বেলায় খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে। আজ থেকে ও বলে দিয়েছে আর খাবার পাঠানো দরকার নেই। এই ফ্লাটটা ওর বাবার নামে আছে। যেহেতু ওর বাবার ছেলে সন্তান নাই তাই এই সম্পত্তিতে নাকি ওর চাচাতো ভাইদের ভাগ আছে। যদিও এসব কথা হাওয়া থেকে শোনা তবুও এই ফ্লাটটা নিয়ে ওরও টেনশন হচ্ছে। কিভাবে এটা শায়লা ওর নামে করে নিবে সেসব বিষয় নিয়ে মনে হয় উকিলের সাথে কথা বলা দরকার। এমনসময় একটা ফোন কলে ও ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে। মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখে শিলা ফোন দিয়েছে। মায়ের অসুস্থতার কারনে শিলার কোনো খবর ও রাখতে পারেনি। এমনকি মায়ের মৃত্যুর খবরটা ওকে দেওয়া হয়নি।
—–হ্যালো, শিলা কেমন আছিস?
—–আমি খুব একটা ভাল না। আমার পরশুদিন একটা অপারেশন আছে। তোকে তো বলেছিলাম, আমার হার্টের বাল্বে সমস্যা ধরা পড়েছে। খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছি। জানিনা ভাগ্যে কি লেখা আছে। খালাম্মা কেমন আছে?
—-তোকে বলা হয়নি শিলা।আম্মু তো নেই। পনেরোদিন আগে আম্মু মারা গিয়েছে।
—-খালাম্মার শরীর এতোটা খারাপ হয়েছিলো তুই আমাকে জানাতে পারতি?আমি খালাম্মাকে দেখে আসতাম।
—-আমার মাথা ঠিক ছিলো না। কিভাবে যে আমার রাত আর দিনগুলো পার হয়েছে তা একমাত্র আল্লাহপাক জানে। যাক আল্লাহপাকের কাছে শোকরিয়া আল্লাহ আমাকে সামলে উঠার তওফিক দান করেছে।
—-সেজান ভাই কেমন আছে?
—-হয়ত ভালই আছে। শুনেছি ওর বাবা অনেক অসুস্থ। একদম বিছানা থেকে উঠতে পারে না। নল দিয়ে খাওয়াতে হয়। ও হয়ত এখন আমার অবস্থাটা বুঝতে পারবে।
—-শায়লা এভাবে বলছিস কেন? তোর সাথে কি এখন সেজান ভাইয়ের সম্পর্ক নেই?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে শায়লা বললো,
—-না, নেই। আম্মুর অসুস্থার সময় ও কোনো সাহায্য করেনি তারপরও হাঁপিয়ে উঠেছিলো। ওর মা সারাক্ষণ আমার ভুল ধরতো। সেটা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। ওনার যা ব্যাকগ্রাউন্ড সেই হিসাবে এই আচরণ উনার ক্ষেত্রে শোভা পায়। কিন্তু সেজান তো পারতো ওর মায়ের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে উনাকে শুধরে নিতে। কিন্তু সেজান সেটা করেনি। যার ফলে আমার জীবনটাও দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আমি নিজে যেখানে ভাল নেই সেখানে আর একজনকে কিভাবে ভাল রাখবো। তাই সম্পর্কটা টিকলো না। বাদ দে আমার কথা। তোর তো বেবি হওয়ার কথা ছিলো। ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে আমার তো জানা হয়নি।
—-আমার মেয়ে হয়েছে। সেটা নিয়েও শ্বশুর বাড়িতে অনেক অশান্তি। অথচ একটা সুস্থ বাচ্চা পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। মানুষ ছেলে হলো না মেয়ে হলো এই নিয়ে মত্ত থাকে। এখানে মানুষের যে কোন হাত নেই এটাই বুঝতে চায় না। এর জন্য তারা মাকেই দায়ী করে। ছেলে হলো না বলে মাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়। জানিস মাঝে মাঝে মানুষের নিবুর্দ্ধিতা দেখে আমার প্রচন্ড হাসি পায়। যাক তুই নিজের পায়ে ভালমতো দাঁড়িয়েছিস বলে প্রতিবাদ করতে পারিস। নিজের আত্মসম্মান রক্ষা করে চলতে পারিস। আল্লাহপাক তোকে অনেক ভালরাখুক এই দোয়া করি।
—-তুই হাসপাতালে ভর্তি হবি কবে?
—-কালকে ভর্তি হবো। আমি তোকে দেখতে কাল হাসপাতালে আসবো। রাখছি শিলা, ভাল থাকিস।

ফোনটা রেখে শায়লা ওর মেইলটা চেক করলো।
আলহামদুলিল্লাহ, ওর চাকরিটা হয়ে গেছে। ওরা কোয়ার্টার থেকে শুরু করে গাড়ি সব সুযোগ সুবিধা দিবে। আল্লাহপাকের কাছে অনেক শোকরিয়া। আল্লাহ যেমন মানুষকে পরীক্ষা করেন তেমনি তিনিই পাশ করে দেন। কি ঝড়টাই না ওর উপর বয়ে গেলো। শায়লা জীবনের সব রকম পরিস্থিতিতে আল্লাহপাকের উপর ভরসা করে। সেই কোন ছোটোবেলা থেকে জীবনের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। ওর এই লড়াই করে টিকে থাকার সাহসটা আল্লাহপাক ওকে দিয়েছে। আল্লাহপাক তার প্রিয়বান্দাদের সবচেয়ে বেশী পরীক্ষা করেন। আবার তিনিই সামলে উঠার সুযোগ করে দেন।

পরদিন শায়লা শিলাকে দেখতে হাসপাতালে চলে যায়। হাসপাতালে শিলাকে দেখে শায়লার মন খারাপ হয়। মুখটা খুব পাংশুটে। শায়লাকে দেখে শিলা অনেক খুশী হয়। শায়লা শিলাকে জিজ্ঞাসা করে,
—-তোর মেয়েটা কোথায়?
—–ও আম্মুর কাছে আছে। হাসপাতালে আনা হয়নি। ছোটো মানুষ চারিদিকে এতো রোগের ছড়াছড়ি কি থেকে কি হয়। এদিকে আমিও তো অসুস্থ।
—-জানিস শিলা,দুবাইতে আমার চাকরি হয়েছে। অ্যামিরেটসে। ওখানে ওরা আমাকে থাকার জন্য কোয়ার্টার যাতায়াতের জন্য একটা গাড়িও দিবে। পনেরো দিনের মধ্যে আমাকে জয়েন করতে বলেছে।
—-শায়লা তোর জীবনটাতো পড়েই আছে। সারাটাজীবন কি একাই থাকবি? আমার মনে হয় তোর জীবন নিয়ে আর একবার ভাবা উচিত।
—-ভেবেছিতো। একা থাকবো না।
—-মানে, শায়লা এতো খুশীর খবরটা তুই আমাক এখনও বলিসনি? ছেলেটা কে? কি নাম কি করে?
—-আচ্ছা শিলা বিয়েটা কি সব? বিয়ে তো আমার হয়েছিলো। আপাতত আর করার ইচ্ছে নেই। তবে একটা বাচ্চা দত্তক নিবো। মেয়ে বাচ্চা। ওকে আমি খুব ভালভাবে বড় করার চেষ্টা করবো। যেন ওর পায়ের তলার মাটিটা অনেক শক্ত হয়। পৃথিবীতে কত বাচ্চা অসহায় থাকে। ঠিক মতো যত্ন পায় না। আর মেয়ে বাচ্চাদের তো জন্ম থেকেই শুরু হয় অবহেলা। কপাল ভাল হলে কারো কারো ক্ষেত্রে হয়ত অন্যরকম হয়। তবে বেশীরভাগ মেয়েই জন্ম থেকেই বৈষম্যের শিকার হয়। প্রথমে বাবার বাড়িতে ভাইদের কাছে তারপর স্বামীর বাড়িতে এভাবেই অনাদর আর অবহেলায় মেয়েদের জীবনের সময় পার হয়ে যায়।
শায়লা শিলার সাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে আসলো। এমনিও শায়লার অনেক ব্যস্ততা আছে। পাসপোর্টের মেয়াদ আছে কিনা দেখতে হবে?কিছু হালকা কেনাকাটা আছে।

শায়লার জীবনে আর একটা দুঃসংবাদ ধেয়ে আসলো। শিলা না ফেরার দেশে চলে গেলো। শায়লা শোক সামলে নিয়ে শিলার দেওয়া দায়িত্বটুকু সানন্দে বরণ করে দুবাইতে চলে গেলো।

দশ বছর পর ______
আজ দশ বছর পর শায়লা সাতদিনের ছুটিতে ওদের ডিপার্টমেন্টের পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য দেশে এসেছে। চারিদিকে পরির্তনের ছোঁয়া লেগেছে। ফ্লাইওভার হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। কিন্তু ঢাকা সিটির জ্যামের সমাপ্তি হলো না। কোনো কেনাে জায়গায় এখনও ময়লার ভাগাড় রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে রাতেই সব ময়লা ফেলে দেয়। আর আমাদের দেশে দিনে ময়লা ফেলার তাগিদ শুরু হয়। শার্লিন ওর মাকে বললো,
—Mom,is this my country?
—-Yes,our country is very beautiful.
—–Beauful.Why is there so much traffic?
শায়লা শার্লিনকে কি বলবে জ্যাম আসলেই সেই আগের মতই আছে। শায়লা শার্লিনকে বললো,
—-তুমি তো বাংলা বলতে পারো। এতোদিন পর নিজের দেশে এসেছো প্রাণখুলে বাংলায় কথা বলো। এখনতো ডিসেম্বর মাস। আমাদের বিজয়ের মাস। তোমাকেতো আমাদের স্বাধীনতার গল্প শুনিয়েছি। হ্যা মা,
—-It is very tragic story.
শায়লারা কল্যাণপুরে ওদের বাসায় চলে আসলো। মাঝে মাঝে ঘর পরিস্কার করে রাখতে ওর কাজিন রিফাতকে শায়লা দায়িত্ব দিয়েছিলো। শায়লা ঘরে এসে ওর ভালই লাগলো। বেশ সুন্দর করে ঘর পরিস্কার করে গুছিয়ে রেখেছে। শার্লিনেরো বেশ ভাল লেগেছে। কলিংবেলটা বেজে উঠলো। শায়লা দরজা খুলে দেখলো,রিফাত দাঁড়িয়ে আছে।
—-আপু বারোটা বাজে লাঞ্চ কি এখন করবে? এখানে পাঠিয়ে দিবো না তুমি নিচে আসবে?
—-আমি আসছি।খাওয়াও হবে আর সবার সাথে দেখা সাক্ষাতও হবে।
সবার আতিথিয়তা শায়লার ভীষণ ভাল লাগলো। দূরে থাকাতে মনে হয় ভালই হয়েছে। এতে সবাই সবাইকে অনুভব করতে পারছে। চাচাকে দেখে শায়লা বললো,
—-চাচা কেমন আছেন?
—-ভালো আছি মা। তোমার বাবার অংশটুকু এবার নিজের নামে করে নাও।
—-এবার মনে হয় সম্ভব হবে না চাচা। সময় হাতে কম আছে। তবে আমি আবার আসবো। তখন কাজগুলো করে ফেলবো।
চাচীও শায়লার সাথে খুব মায়া করে কথা বললো। সিফাতের বউ আর রিফাতের বউয়ের সাথে শায়লার এই প্রথম দেখা হলো। ওদের যেহেতু ননদ নেই শায়লাকে নিজের ননদের মতো আপন করে নিলো।
আজ শায়লা সুপ্রতিষ্ঠিত। দুবাইতে নিজস্ব বাড়ি কিনেছে। প্রচুর প্রপার্টির মালিক এখন শায়লা। শায়লার জীবনে এখন দুধের মাছির অভাব নেই। শায়লাও জানে কেন সবাই এখন তার আপনজন। সম্পদ যার আছে দুনিয়া তার কাছে। শায়লা এই জীবনটাকেও এনজয় করছে।
কাল ওদের পূনর্মিলনী অনুষ্ঠান। সেজান নিশ্চয় আসবে। শায়লার খুব দেখার ইচ্ছে শায়লার জীবনের দামে সেজান ওর জীবনে কতটা সুখ কিনতে পেরেছে। শায়লা বন্ধুদের কাছে শুনেছে, সেজান বিয়ে করেছে। তবে খুব সাধারণ পরিবারে। সেজানের মায়েরও ক্যান্সার ধরা পড়েছে। সব খবরই শায়লা পায়। সেজানের বাবা মারা গিয়েছে সে খবরও শায়লা বন্ধুদের কাছে পেয়েছে। ওর মার সেবা যত্ন সবই এখন ওকে সামলাতে হয়। ওর যাতে মায়ের সেবায় একটু সাহায্য হয় সেজন্য সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিয়ে করে বউ এনেছে। এখন সেজান বুঝতে পারবে সেদিন শায়লা কি ভাবে পরিস্থিতি সামলিয়েছে।
যথাসময়ে শায়লা অনুষ্ঠানে হাজির হলো। রিমা লুনা শায়লাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরেছে। শায়লার চোখ সেজানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। না কোন ভালবাসার টানে নয়। জীবনের মাঝপথে যে সুখের জন্য সেজান শায়লার হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলো সেই সুখ কি সেজান পেয়েছে? আজ বড় জানতে ইচ্ছে হয়। শায়লা খুব শক্ত টাইপের মেয়ে তারপরও সেজানের পাগল করা ভালবাসার কাছে হার মেনে ওকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলো। ও যদি চলেই যাবে তাহলে ওর হাতটা কেন ধরেছিলো?
শায়লা অর্থ বিত্ত শার্লিনের মতো একটা কিউট মেয়ের মা হতে পেরেছে। শায়লার কোন অতৃপ্তি নাই।
শায়লা আজকে সাকসেসফুল ওম্যান। বন্ধুবান্ধবীরা সবাই শায়লাকে ঘিরে ধরে বসে আছে। ও যেন আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমনি। লুনা বলছে বন্ধু এতো ব্যস্ততার মাঝে তুই আমাদের সবাইকে সময় দিলি এর জন্য আমরা সবাই খুব খুশী। এমন সময় শার্লিন বলে উঠলো,
—–Mom,when will you go?
—–I am feeling unwell.
শায়লা বললো,
—-কেন মা?
শার্লিন বাংলা ভাল বলতে পারে না। কোন রকমে বললো,
—-অনেক মানুষজন।
শার্লিনের কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
—শায়লা তোর মেয়ে বুঝি? ভারী মিষ্টি হয়েছে দেখতে। মনে হয় ওর বাবার মতো হয়েছে।
সবাই ভাবছে শায়লা বিয়ে করে আবার সংসারী হয়েছে। ওদের ভাবনা ওদের কাছেই থাক। শায়লার কোন দায় নেই ব্যখ্যা করার।
শায়লা একটু মুচকি হাসলো।হঠাৎ সেজানের দিকে নজর পড়লো। সেজান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়াতে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। সেজানের পাশে একটা অল্পবয়সী মেয়ে। ও মনে হয় সেজানের বউ। শায়লাও খুব খুঁটিয়ে সেজানকে লক্ষ্য করছিলো। একদিন পরম নির্ভরতায় যার হাত ধরেছিলো জীবনের কঠিনতম মূহুর্তে সেই শায়লাকে সব চেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছিলো। আজও সেদিনের কথা মনে হলে চোখের কোনটা নোনা জলে ভরে উঠে। বন্ধুবান্ধব সবাই জানে শায়লা আর সেজানের বিষয়টা। ওরাও কৌশলে এড়িয়ে গেলো। খুব সুন্দর একটা সময় শায়লা সবার সাথে কাটালো। এমন সময় শায়লার একটা ফোন আসলো। শায়লা আড়ালে গিয়ে কথা সেরে আসলো। রিমি জিজ্ঞাসা করলো,
—-শায়লা কে ফোন দিয়েছে?
—-আমার মেয়ের বাবা।
সেজান শায়লার দিকে আবার ফিরে তাকালো। ও হয়ত ভাবছে শায়লা স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক সুখে আছে। সেই তুলনায় সেজানের জীবন খুব সাদামাটা। শায়লার সেজানকে দেখে ভালই লাগলো। আজ আর কারো উপরে শায়লার কোন অভিমান নেই। সবার কাছে বিদায় নিয়ে শার্লিনের বাবার সাথে দেখা করার জন্য অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে আসলো।
শার্লিনের বাবা অনেক ভালমানুষ। যদিও শিলা মারা যাবার পর উনি বিয়ে করে আবার সংসারী হয়েছেন। তবে বাচ্চার খোঁজ নিয়মিত রাখেন। দশ বছরে দু,বার দুবাই গিয়ে মেয়েকে দেখে এসেছেন। শার্লিনও বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। শায়লা ভদ্রলোককে খুব সম্মান করে। শার্লিনের জন্য ওর জীবনটা আজ অনেকটাই পরিপূর্ন। উনি শিলার কথার মর্যাদা দিয়েছেন। শিলা শায়লাকে বলেছিলো,ওর মেয়েকে যেন শায়লার মতো করে বড় করে তুলে। কতটা পারবে শায়লা জানে না। তবে শায়লা চেষ্টার ত্রুটি করে না।
সবাই বাইরে থেকে যা দেখে ঠিক দেখে না। যেমন সবাই ভাবে শায়লা স্বামী সংসার নিয়ে পরিপূর্ণ জীবন। বাস্তবে তা নয়।অনেক দেখার মাঝে ভুল থেকে যায়। জীবনে খারাপ কিছু যা ঘটেছে সেটা নিয়ে আজ আর শায়লা আফসোস করে না। আল্লাহপাক ওকে ওর মতো করে পূর্ণতা দিয়েছে।

বিঃদঃ(শায়লার মতো একজনের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো। তার সাথে আরও কিছু ছায়া চরিত্রের মিশেলে গল্পটা আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন। ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে আমার লেখাকে আরও এগিয়ে নিবেন। অনেক শুভ কামনা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here