#ফুপু_শ্বাশুড়ি
#পর্ব:৪
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
নিশু ওর এক খ্রিষ্টান বান্ধবীর বিয়েতে র্গিজায় গিয়েছিল। বিয়ের সকল এরেঞ্জমেন্ট শেষ হওয়ার পর। ক্যাথলিক চার্চের সামনে দাড়িয়ে সব বান্ধবীরা ছবি তুলছিলো। নিশুও বান্ধবীদের সাথে ছবি তুলছিল আর কথা বলছিল। নিশু এই প্রথম ক্যাথলিক চার্চে আসে। হিমির বিয়েতে এটেন্ড করার সবচেয়ে বড় কারণ ওদের ধর্মে বিয়ে কিভাবে হয় সেটা সরাসরি দেখবে। টিভিতে নিশু বহুবার গির্জায় কিভাবে বিয়ে হয় দেখেছে। কিন্তু সরাসরি দেখার লোভটা সামলাতে পারল না।
বান্ধবীদের সাথে কথা বলার সময় পিছন থেকে কেউ একজন নিশুর ওড়না ধরে হালকা টান দিলো। নিশু পিছনে ফিরতেই আহু হাঁটু গেড়ে বসে সাদা রঙের এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল নিশুর দিকে বাড়িয়ে বলল,
_নিশু আমরা দুজন র্গিজার মত একটা পবিত্র স্থানে দাড়িয়ে আছি। আমাদের ধর্মে যেমন মসজিদ পবিত্র, খ্রিষ্টান ধর্মে তেমন গির্জা পবিত্র। এই পবিত্র স্থানে দাড়িয়ে সত্যি মনে বলছি আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। খুব ভালোবাসি তোমায়। তুমি চাইলে এখনই তোমার পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি।
নিশু কিছুক্ষন আহুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
_কে আপনি? আমাকে কীভাবে চিনেন?
আহুর হাত থেকে গোলাপের গুচ্ছটা পড়ে গেলো। আহু মুখ ভার করে বলল,
_তুমি সত্যি আমাকে চিনতে পারোনি?
_জি না।
_মাস খানিক আগে তোমার খালামনির বিয়ে আমার ছোট চাচার সাথে হয়েছিল। তখন পরিচয় হলো। তারপর তো তিন চারবার তোমার বাড়িতে গেলাম। আর গতসপ্তাহে তো তোমার সাথে কথাও বলছিলাম। তুমি ভুলে গেলে?
_আমি তো কত লোকের সাথেই কথা বলি সবাইকে কী মনে রাখব নাকি!
_ওহ।
আহুর খুব অভিমান হলো। আহু বিরবির করে বলছে,
_সব লোকের সাথে আমার তুলনা দেয়া কেন লাগবে? সবাই তো তোমাকে ভালোবাসে না। আমি ভালোবাসি। সেদিন তোমার চোখের প্রশংসা করলাম তাও ভুলে গেলা। তোমার খালামনি আর আমার কাকুর বিয়েতে দুজন কত দুষ্টুমি করলাম তাও ভুলে গেলা। আহু দাড়িয়ে নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল, দুঃখীত আমি বুঝতে পারিনি তুমি আমাকে চিনো না। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে খুব ভালোভাবে চিনো। সবার সাথে আমাকে মিলাবে ভাবিনি। যাই হোক দুঃখীত।
আহু সেখানে এক মুহূর্তও দাড়াল না। রাগ করে চলে গেলো।
সেদিন বিকালে আহু কিছু কাজে নিশুদের এলাকায় গিয়েছিল। তখন রাস্তার মোড়ে জটলা বাঁধা দেখে সেখানে গেলো। গিয়ে দেখল নিশু একটা ছেলেকে ভয়ানক পেটাচ্ছে। নিশু সাধারনত জিন্স প্যান্ট আর শর্ট কামিজ পরে প্রায়ই। হয়ত জিন্স পরে মারামারি করতে সুবিধা হয়। ছেলেটা কোনমতে পালিয়ে তো গেলো কিন্তু যাবার আগে চাকু দিয়ে নিশুর হাতে আঘাত করে গেলো। আহু তাড়াতাড়ি নিশুর কাছে গিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে হাতটা বেঁধে দিলো। নিশু আহুর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে গেলে আহু একটা ধমক দিয়ে বলল,
_বেশি নড়লে তুলে একটা আছাড় দিবো। মেয়ে হয়ে ছেলেদের মত থাকো কেন? ঐ মেয়ে সবসময় নাকে ডগায় রাগ নিয়ে ঘোর কেন? নিজের ভিতর একটু মেয়েলীপনা থাকলে তোমার জাত যাবে না।
এই প্রথম বোধয় নিশুকে কেউ ধমক দিয়ে কিছু বলল। অন্য কেউ বললে নিশু তাকে দেখিয়ে দিতো। কিন্তু এ ছেলেকে কী বলবে! ভালোবাসে যে ছেলেটাকে। নিশু মনে মনে বলল, ভাগ্যিস মনের কথা কেউ শুনতে পায় না। নয়ত এ ছেলে শুনে ফেলত আমি ওকে ভালোবাসি। আহু নিশুকে নিয়ে হসপিটালে গেলো। ডাক্তাররা ভালো করে ড্রেসিং করে দিলো। আহু নিশুকে বাসায় নিয়ে এসে সবার সাথে আলাপ করল। নিশুকে বলল,
_ডাক্তার বলছে রাতে জ্বর আসতে পারে। ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।
নিশু মাথা নেড়ে শুধু হ্যাঁ বলল।
রাত বারোটা,
নিশু আহুর নাম্বারে ফোন দিবে কি দিবে না ভাবছে। বহু কষ্টে খালামনিকে ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে ম্যানেজ করে আহুর নাম্বার নিয়েছে। কিন্তু এখন ফোন দিতে ভয় করছে। নিশু মনে মনে ভাবল, আমি নিশু হয়ে ভয় পাচ্ছি তাও ঐ গাঁধাটাকে!
আজ ওকে চার্চে বসে বোকা বানিয়ে একদম ঠিক করেছি। ইডিয়েটা এতদিন আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে অথচ প্রপোজ করার সাহস করেনি। আজ প্রপোজ করল তো করল তাও এত এত মানুষের ভিতর চার্চে বসে। এত মানুষের মধ্যে হ্যাঁ কীভাবে বলি! আমার বুঝি লজ্জা করে না! তাছাড়া নিশাদ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস না করে হ্যাঁ বলি কী করে!
নিশু বিরবির করে আবার বলছে, আমি লজ্জা পেয়েছি এ কথা ওর ঘরের লোক শুনলে নিশ্চিত কিডনী স্টোক মানে কিডনী এ্যাটাক করবে। হার্ট এ্যাটাক বা স্টোক তো কত লোকই করে কিডনী এ্যাটাক কজন করে।
নিশু অনেকক্ষন ভেবে ভেবে ফোনটা হাতে নিয়ে আহুকে কল দিয়েই ফেলল।
এত রাতে ঘুম ঘুম চোখে নিশুর নাম্বার দেখে আহুর সব ঘুম উড়ে গেলো। ফোন রিসিভ করতেই হ্যালো বলার পর দুজনেই খানিক সময় চুপ রইল। আহুকে চুপ দেখে নিশু আহুকে ধমক দিয়ে বলল,
_কী হয়েছে কী? বাদুরের মত চুপ করে আছেন কেন? কথা বলেন না কেন?
_না মানে তুমি এত রাতে আমাকে ফোন দিছো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। তুমি আমার নাম্বার কোথা থেকে পেলে?
_খালামনির কাছ থেকে নিয়েছি। আমাকে অসুস্থ রেখে সেই যে গেলেন, কই একবারও তো ফোন দিয়ে খোঁজ নিলেন না!
_না মানে! যদি কিছু মনে করো!
_এই আপনার ভালোবাসা!
_কী?
_আমি আমার বড় ভাইয়াকে আপনার প্রপোজের কথা বলছি।
আহু ভয় পেয়ে তুতলাতে তুতলাত বলল,
_কী? কেন?
_বাহ,রে ভাইয়াকে না বললে বিয়ে কীভাবে হবে!
_মানে?
_ভাইয়া বলছে আমি কেবল অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি। অনার্স শেষ না হলে বিয়ে দিবে না।
_হ্যাঁ তো।
_দূর কলাগাছের বাদুর জানি কোথাকার! সেই কখন থেকে কী, কেন, হ্যাঁ তো হ্যাঁ তো করে যাচ্ছে। গাঁধার খালতো ভাই বোঝেও না। ভাইয়া আমাদের সম্পর্কে রাজি।
_আঁ। আমাদের আবার কিসের সম্পর্ক! তুমি তো আমায় চিনোই না।
_শালা বাদুর বেশি কথা প্যাচালে ঠ্যাং ভেঙে কলা গাছে ঝুলিয়ে দিবো। তখন মজা বুঝবি।
_নিশু মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ।
_তোর ল্যাংগুয়েজের গুষ্টির টুট টুট টুট। কতক্ষন যাবত এটা বোঝাতে চাইছি আই লাভ ইউ টু। কিন্তু সাহেব কথা প্যাচাচ্ছে। বেশি কথা প্যাচালে আমার মাথা হেব্বি গরম হয়ে যায়।
_মুচকি হেসে আহু বলল, সরি।
_ইট’স ওকে।
_কবে থেকে আমার মত বাদুরকে ভালোবাসেন?
_প্রথম থেকেই।
_তো তখন নাটক কেন করলা?
_তো কী করব? ভাইয়াকে না বলে আমি কোন সিদ্ধান্ত নি না।
_ওহ। তো এখন কী করব!
_আচ্ছা গাঁধার পাল্লায় পড়লাম তো। বলি তোমাকে কী এখন প্রেম করাও শিখাবো!
আহু অট্টহাসি দিয়ে বলল,
_তোমার প্রেম তো মারামারি করা। প্রেম তো আমি তোমায় শিখাবো নিশু। রোজ প্রেমের নতুন নতুন অধ্যায় পড়াবো, শিখাবো। শিখবে?
নিশু লজ্জা পেলেও আহুকে বুঝকে দিলো না। বুঝতে দিলে নিশু আরো লজ্জা পাবে।
সেই থেকে আহুর উপর নিশুর গুন্ডামি শুরু।
৮!!
নিশু চুপচাপ ভদ্র মেয়েদের মত রেশমীর সামনে বসে আছে। রেশমীকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে বেশ রেগে আছে। কিন্তু নিশু রেশমীর রাগের কারণ বুঝতে পারছে না। নিশু মনে মনে বলছে,
_আজ তো কাউকে মারিনি। মানে তিনি আমাকে মারতে দেখেনি তবে কেন রেগে আছে? তাছাড়া আজ আহুদের বাসায় আমাদের বাসার সবাই দাওয়াতে আসছে। তাছাড়া আজকে আমাদের বিয়ের তারিখ ফিক্সট হবে। তবে এ মাল্টিকালার মালটা রেগে আছে কেন? আর রাগছে তো রাগছে আমার দিকে ফুলন দেবীর মত ওমন করে তাকিয়ে আছে কেন? ডাল মে কুচ কালা হে নিশু।
আহু দুবার রুমে ঢুকতে গেছিল রেশমী ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আহু দরজায় কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করছে ভিতরে কী হচ্ছে!
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
চলবে______