#ফুপু_শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
#পর্ব:৯
!!১৬!!
বাড়ি এসেই নিশু ফ্রিজ খুলে পুডিং খুঁজছে। না পেয়ে চাচিকে বলল,
_চাচি পুডিং নেই!
_ছিলো কিন্তু সকালে টেবিলে রেখেছিলাম তখন পাশের বাসার বিড়ালটা এসে মুখ দিয়েছে বলে ফেলে দিছি।
_পাশের বাসার ঐ কাইল্লা বিলাইডা!
_হুম
_ওরে তো আমি। সেদিন কেক খাইছে আজ পুডিং। কেমন লাগে বলো তো চাচি। আগেরবার তো ওকে পা বেঁধে রোদে রেখেছিলাম এবার গাছে ঝুলিয়ে ট্রিমার দিয়ে গায়ের সব পশম ফেলে ন্যাংটা করে দিবো। লুচ্চা বিড়াল।
_নিশুর চাচি বলল, নিশু ও তোর খাবার খেয়েছে, তাই ছোঁচা বিড়াল হবে। লুচ্চা বিড়াল কী করে হলো?
_না ও শুধু ছোঁচা বিড়াল না লুচ্চা বিড়ালও বটে। ওর চরিত্র খারাপ।
_কেন?
_জানো মন্টি আন্টিদের বিড়াল মিনির সাথে কমাস আগে অশ্লীল অকাজ করছে। যার ফলে মন্টি আন্টিদের অমন সাদা বিড়ালটার পেটে ওর মত কালা কালা বিড়ালে বাচ্চা হইছে। ঐ শালা মন্টি আন্টিগো বিড়ালরে রেপ করছে। ওর নামে রেপ কেস করা দরকার।
_আঁ। মা তুই থাম। শেষ মেশ বিড়ালটার পিছনে পড়লি।
_তো পড়ব না। আমার পুডিং খেয়েছে লুচ্চাটায়। ভাবছি ওর সাথে মন্টি আন্টিদের বিড়ালের বিয়ে দিবো।
_বিড়ালের বিয়ে পরে দিস। আগে নিজের বিয়ে ঠিক কর। আহু আসছে অনেক্ষন। তোর রুমে বসে আছে।
_কখন আসছে!
_আধাঘন্টার মত। তুই যা আমি তোর জন্য পুডিং বানাচ্ছি।
_ওক্কে। ক্যারামেল পুডিং বানাবা কিন্তু।
_আচ্ছা।
নিশু রুমে ঢুকে দেখল, আহু ওর টেবিলে বসে একটা বই পড়ছে। নিশু একটা লম্বা শ্বাস নিলো। তারপর আহুর কাঁধে হাত রেখে বলল,
_কখন এলে?
আহু নিশুর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল,
_কোথায় ছিলে এতক্ষন?
_তোমার রেশমী ফুুপির সাথে!
_কেন?
_আন্টি ডেকেছিল কিছু কথা বলার জন্য।
_ওহ।
তারপর দুজনেই চুপ।
নিশু এসিটা অন করে বিছানায় বসতে বসতে বলল,
_গরম লাগছে খুব আজ। তোমার গরম লাগছে না।
আসলে নিশু ভেবে পাচ্ছে না কী বলবে, তাই এদিক ওদিকের কথা বলছে।
_কিন্তু আহু নিশ্চুপ।
নিশু তা দেখে বলল,
_আচ্ছা তুমি বসো আমি বরং ড্রেস বদলে আসি।
নিশু দাড়াতেই আহুও দাড়িয়ে বলল,
_শোন নিশু!
_হুম।
আহু নিশুকে পুরোপুরিভাবে নিজের মাঝে আবদ্ধ করল। প্রথমে নিশু একটু চকিত হলেও পরোক্ষনে নিজেও মিশে গেলো আহুর মাঝে।
দুজনার হৃদযন্ত্রের গতি বোধহয় আগের থেকে হাজারগুন বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে অস্থিরতা। ভালোবাসাহীনতা পাচ্ছে মধুরতা। আহু বেশ খানিক সময় বাদে নিশুর মুখ নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
_সেদিন কী বললে, অন্য একজন তোমায় নোংড়া ভাবে স্পর্শ করছে, আমি তোমায় মেনে নিতে পারব কিনা! নিশু তুমি ভুলে গেলে আমি গত চার বছরের বেশি সময়ে অগনিতবার তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি, স্পর্শ করছি। হ্যাঁ সেই ব্যক্তির স্পর্শ নোংড়া ছিলো, কিন্তু প্রথম স্পর্শ আমার ছিলো আর আমার স্পর্শে তো তোমার প্রতি শুধু পবিত্র ভালোবাসা নিশু। দেখো আজ আবার তোমাকে নিজের মাঝে আবদ্ধ করে তোমার পুরোটায় স্পর্শ করলাম। আজ সে নোংড়া স্পর্শ তোমার শরীর থেকে আমি নিয়ে নিলাম। দিয়ে দিলাম আমার পবিত্র ভালোবাসার প্রলেপ। তোমার পুরোটায় এখন শুধু তোমার আহুর ভালোবাসার প্রচ্ছদ। তুমি এখন আমাতে আচ্ছন্ন।
আহু নিশুর কপালে, গালে, চোখে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল, আমার ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে সেই নোংড়ামি শুষে নিলাম। তুমি এখন আমার ভালোবাসায় ভালোবাসাময়ী। আরো কারো স্পর্শ নেই তোমার শরীরে। তোমার শরীর, মন, আত্মায় এখন আমার বসবাস। তোমার শরীরের প্রতি বিন্দুতে এখন আমার বিচরন। সারা জীবন আমার ছোঁয়াতে আচ্ছাদিত থাকবে তুমি।
নিশুর গাল বেয়ে টুপটাপ জলধারা বর্ষিত হচ্ছে। নিশু চোখ মেলে আহুর দিকে তাকিয়ে নিজের আঙুল দিয়ে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,
_গত চার বছরে এখানে কখনো তোমার ছোঁয়া পাইনি।
_এটা কী জরুরি এখন?
_তুমিই তো বললে আমার পুরোটা জুড়ে তোমার বিচরন! আমি এ মুহূর্ত থেকে আমার পুরোটায় তোমার বিচরন চাই, তোমার অস্তিত্ব অনুভব করতে চাই।
_তুমি পাগলী নিশু।
_হ্যাঁ তোমার ভালোবাসায়। দাওনা ছুঁয়ে আজ। আজ থেকে নাহয় আমার পুরো নিশ্বাসে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমার অস্তিত্ব, তোমার বিচরন অনুভব করি।
নিশু আহুর গলা জড়িয়ে খানিকটা উঁচু হয়ে আহুর চোখে ভালোবাসার স্পর্শ দিলো। নিশুর চোখ থেকে তখনো অশ্রু নামক নোনা তরল ঝরছে। আহু নিশুর গালে হাত দিয়ে প্রবল আবেগ, মায়া আর ভালোবাসায় নিশুর ঠোঁটকে ভালোবাসায় জড়ালো।
!!১৭!!
নিশু সাকিকে হকিস্টিক দিয়ে পিটাচ্ছে। নিশাদ আহু তা দেখে হাত তালি দিচ্ছে। গতকাল বিকালে সাকিকে জামিনে বের করা হয়েছিল। আর আজ সকালে সে তার দূর্ভাগ্যক্রমে নিশুর সামনে পড়ে। ব্যস কাজ খতম। বাকি কাজ নিশু করছে। মারতে মারতে ভর্তা বানাচ্ছে। সাকি আ আ করে চিল্লাচ্ছে। আসে পাশে কেউ কিছু বলার সাহস করছে না। কারণ সবাই জানে, যে বলতে যাবে সে নিশুর হকিস্টিকের স্বীকার হবে। তাই চুপচাপ তামাশা দেখাকেই শ্রেয় মনে করল সবাই।
নিশাদ আহু দাড়িয়ে দাড়িয়ে চুপচাপ দেখছে আর হাত তালি দিচ্ছে। পাশ থেকে একজন ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
_আপনারা দুজন ঐ গুন্ডী মেয়েটাকে চিনেন?
নিশাদ গর্ব করে বলল,
_আমার ছোট বোন।
আহু হাত তালি ছেড়ে শিশ বাজিয়ে বলল,
_আমার হবু স্ত্রী।
লোকটা চোখ বড় বড় করে বলল,
_আপনার ছোট বোন, আর আপনার হবু স্ত্রী ছেলেদের পেটাচ্ছে, গুন্ডামী করছে, সেটা দেখে আপনাদের মজা লাগছে।
_আহু বলল, আরে আঙ্কেল ওর এই গুন্ডামী দেখেই তো ওকে ভালোবেসেছি।
_নিশাদ বলল, ওকে মারামারি করা আমি শিখিয়েছি।
লোকটা কিছুক্ষন মাথায় হাত দিয়ে থেকে বলল,
_ভাবছি ডাঃ ইউনুস এর নোবেলটা চুরি করে আপনাদের দুজনকে দিবো।
_আহু বলল, কেন?
_আপনাদের কার্যালাপই তেমন।
_নিশাদ বলল, ধন্যবাদ। যান নোবেলটা নিয়ে আসুন।
লোকটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে গেলো।
আহু নিশাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
_ভাইয়া আওয়ার নিশু ইজ ব্যাক।
_ইয়েস ব্রো।
বেশ খানিক সময় যাবত নিশু শুধু সাকির পিছনে হকিস্টিক দিয়ে মারল। পুলিশ এসে ওকে থামাল। নিশুকে গ্রেফতার করতে পারল না রেশমীর কারণে। রাস্তায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে সাকি। আহু সাকির পাশে বসে বলল,
_কিরে বাচ্চা হারামি কেমন লাগছে! কিডন্যাপ করার আর লোক পেলি না! বেঁছে বেঁছে আমার নিশুকে কিডন্যাপ করলি! এখন মজা বোঝ!
আহু গন্ধ নেয়ার ভঙ্গিতে নাক টেনে বলল,
এই গন্ধ আসছে কিসের রে! শালা মার খেয়ে হিসু করে দিলি নাকি! আসতাগফিরুল্লাহ্ । ছি ছি ছি, কমিশনারের ছেলে হয়ে রাস্তায় মেয়েদের হাতে মার খেয়ে হিসু করে দিলি! মান সম্মান সব মফিজদের বাড়ির বাথরুমে ফেলে এলি।
সাকি ব্যথায় কাতরাতে কারতে বলল,
_সব কটাকে দেখে নিবো। আর নিশুকে ছাড়বো না।
ওকে———, বাকিটা বলার আগে আহু সাকির নাক বরাবর ঘুষি মেরে বলল,
_নিশুকে কিছু করার জন্য তুই ঠিক থাকবি কিনা তার গ্যারান্টি কী? আজ রাতটা সুস্থভাবে কাটিয়ে দেখা! আমি নিশুর সামনে সবসময় সরল সেজে থাকি কারণ নিশু আমাকে তেমন পছন্দ করে। বাকি আমাকে ভালো ছেলে ভাবার কোন কারণ নেই! নিশুর থেকে দূরে থাকা তোর জন্য ফরজ। মনে রাখিস।
আহু যাবার সময় সাকির পাছায় আরেকটা লাত্থি দিয়ে গেলো। বেচারা ব্যথায় চিৎকার দিতে লাগল।
!!১৮!!
নিশাদ অনুকে নিজের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
_অনু আমি বাবা কবে হবো!
অনু কপোট রাগ দেখিয়ে বলল,
_বিয়ের পনেরো দিন পর কোন গাঁধায় বাবা হতে পারে!
_তুমি কী আমাকে গাঁধা বললা?
_তো কী বলব! বিয়ে হলো মাত্র পনেরো দিন, এর মধ্যে বাবা কে হয়? আর আজ তোমার ছোট বোনের বিয়ে। কোথায় তাকে নিয়ে ভাববে তা না করে নিজের বৌকে রুম বন্দী করে বলছে, আমি বাবা কবে হবো।
_তো কী করব? বয়স তো কম হলো না। আমার বন্ধুরা প্রায় সবাই বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে। শুধু আমিই কেবল বিয়ে করলাম। তাও ভালো নিশুটা বুদ্ধি করে আমাদের বিয়ে আগে দিলো। নয়ত আবার কোন কুফা লাগত কে জানে!
_ওরে বুইড়া ব্যাটা এক বছর তো সময় দাও। এক বছরের আগে তো বাবা হওয়া সম্ভব না।
_তুমি আমাকে বুইড়া বললা কেন? বয়স তো মাত্র ৩০+।
_বেশি কথা না বলে চলো। বরযাত্রী আসার সময় হয়েছে। আমি নিশুর কাছে যাচ্ছি।
_হু।
চলবে____
আগামী কাল আহু নিশুর বিয়ে সবাই আমন্ত্রিত। আসার সময় গিফ্ট আনতে ভুলবেন না। ইয়ে মানে গিফ্ট এর কথা আমি না, আহু আর নিশু বলছে। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন।