#ফুফু_শ্বাশুড়ি
লেখা : শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:১
১!!
_আন্টি আপনার কাঁধের ওখানের থার্ড পেপার দেখা যাচ্ছে।
আন্টি বোধ হয় নিশুর কথার আগা মাথা তেমন কিছু বুঝতে পারেনি। তাই কিছুটা উৎসুক চোখে নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_কী বললে?
_আন্টি আপনার কাঁধে মাল্টি কালারের থার্ডপেপারের ফিতা দেখা যাচ্ছে।
আন্টি আড় চোখে কাঁধের দিকে তাকিয়ে কাঁধের কাছ থেকে জামাটা ঠিক করে নিশুর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
_থার্ড পেপার মানে কী?
_ঐ যেটা ঢাকলে ওটাকেও আমরা থার্ড পেপার বলি। মর্ডান ইউনিকোড ল্যাংগুয়েজ।
_ওহ!
_আন্টি একটা কথা জানার ছিল!
_হুম বলো। তার আগে আন্টি আন্টি বলা বন্ধ করো। আই এ্যাম নট ইউর আন্টি। আমার বয়সও আন্টিদের মত না। আই এ্যাম স্টিল ইয়াং।
নিশু তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে মনে মনে বলল,
_কপাল ভালো যে আপনাকে দাদি ডাকি নি। বয়স তো আমার দাদির চেয়ে বেশি ছাড়া কম হবে না। আবার কথায় কথায় ইংলিশ মারাচ্ছে! হুহ, বুড়ি!
অবশ্য আন্টি নিশুর ভেংচি দেখল না। কারণ নিশু বোরকা পরা, হিজাব দিয়ে নাম মুখ ঢাকা খালি চোখ দেখা যায়। নিশু আন্টির দিকে খানিকটা ঝুকে বলল,
_ঠিক আছে আন্টি ডাকব না। তবে আগে বলুন মাল্টিকালারের থার্ড পেপার কোথায় পেলেন? আমরা তো পাইনা। কোন ব্রান্ড? দেখতে কিন্তু হেব্বি। তারপর চোখ মেরে, ঠোঁট গোল করে শিশ বাজালো নিশু।
আন্টি নাড়েচড়ে দাড়ালেন। জীবনে প্রথম তার মনে হচ্ছে তাকে কেউ ইফটিজিং করছে তাও কোন ছেলে নয় বরং একটা মেয়ে। আন্টি গম্ভীর গলায় বলল,
_তুমি তো ভারী বেয়াদপ মেয়ে। এমন করে ছেলেদের মত চোখ মেরে শিশ দিয়ে কেউ কথা বলে?
_যাহ্ বাবা আপনি এখানে বেয়াদপের কী দেখলেন? এমন ভাবে কথা বলছেন যেনো ব্রান্ড না আপনার সাইজ জিজ্ঞেস করছি। অবশ্য আপনার সাইজ তো পুরো বাচ্চা হাতির সাইজ।
এবার আন্টি যে ভয়ানক ক্ষেপে গেলো তা নিশু ভালো করে বুঝতে পারছে। তাই কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ একটু দূরে গিয়ে বলল,
_ব্রান্ডের নামটা বললে ভালো হতো আন্টি!
তারপর আন্টির অগ্নি চোখ উপেক্ষা করে হাসতে হাসতে ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেলো।
মাসিক (Deposit Premium Scheme ) মানে সহজ ভাষায় DPS লেখাতে ব্যাংকে এসেছিল। সেখানে কতক্ষন লাইনে দাড়িতে থাকতে থাকতে চরম বিরক্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। ভাবল বোরিংনেস কাটাতে কিছু করবে। তাই চারদিক খেয়াল করতে আন্টির দিকে তাকাতেই মনেহল আন্টি একটু বেশিই ন্যাকা টাইপ আন্টি। কেমন কেমন ভাব করে চারদিকে তাকাচ্ছে। পরনে দামি স্লিকের কামিজ, আর প্লাজু, ওড়নাটাও স্টাইল করে, পিন দিয়ে সেট করা। কতক্ষন পর উফ গরম বলে হাত দিয়ে মুখে ঢঙ্গি ভঙ্গিতে বাতাস করছে। অথচ ব্যাংকে মাথার উপর বড় বড় দুটো ফ্যান ফুল স্পিডে ঘুরছে। নিশু ভাবল ঢঙি আন্টিকে একটু টিজিং করা যাক। যেই ভাবা সেই কাজ।
২!!
ব্যাংকের বাইরে এসে বলল,
_এখন পার্লারে গিয়ে ঝাক্কাস একটা ফেসিয়াল দিতে হবে। নয়ত বিকেলে পেত্মির মত দেখাবে।
বিকালে নিশুকে দেখতে আসবে। অন্য কেউ দেখতে আসলে নিশুর রনচন্ডীর রূপ নিতে দুবার ভাবত না। কিন্তু আজ ওর প্রেমিক আহসানের ওরফে আহুর বাবা মা আর পরিবারের সবাই দেখতে আসবে। সাথে এনগেজমেন্টও হবে। দীর্ঘ চার বছর আহুর সাথে প্রেম করার পর আজ ওদের সম্পর্ক নতুন মোড় নিবে। তাই সুন্দর করে সাজা দরকার। পার্লারে যাবার জন্যই নিশু মূলত বোরকা পরছে। কারণ ফেসিয়াল করে বাড়ি ফেরার সময় স্কিনে রোদ লাগলে প্রবলেম হতে পারে।
পার্লারে গিয়ে মুখে ফেইস মাক্স লাগিয়ে এক্সিকিউটিভ চেয়ারে আরামদায়ক ভঙ্গিতে শুয়ে নিশু ভাবছে, আহুর সাথে বিয়ে করতে ওকে কম ঝামেলা পোহাতে হলো না। আহুকে নিশুর পরিবার মোটেও মানতে চাইল না। নিশুর বাবা যখন বলল এ ছেলে আমার পছন্দ না। তখন নিশু বাবার সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
_আহুর মধ্যে সমস্যা কী? দেখতে সুন্দর, স্মার্ট, উচ্চ শিক্ষিত, ভালো জব করে, বাবার বিশাল সম্পত্তি আছে। এক কথায় সর্বগুণ সম্পন্ন। তবে আহুকে পছন্দ নয় কেন?
_নিশুর বাবা বলল, ছেলের রুচি খারাপ। আর যে ছেলের রুচি খারাপ তার সাথে মেয়ে বিয়ে দিবো না।
_কেন কিভাবে বুঝলে আহুর রুচি খারাপ?
_তোর মত বাজখাঁই, গুন্ডী মেয়েকে যে ছেলে ভালোবাসতে পারে তার রুচি নিশ্চয়ই খারাপ। যে মেয়ে উঠতে বসতে ছেলেদের টিজিং করে, ধরে ধরে ব্যাট দিয়ে পেটায়। সে মেয়েকে কোন ছেলে পছন্দ করছে মানে সে ছেলের রুচি ১০০% খারাপ। তাছাড়া ছেলেটা অতিমাত্রায় ভদ্র। তোর জন্য এমন ছেলে খুঁজবো যে, তোর মত চালাক মেয়েকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে পারে। উঠতে বসতে যে তোকে শিক্ষা দিয়ে দমিয়ে রাখতে পারবে এমন ছেলের কাছে তোকে আমি বিয়ে দিবো। কিন্তু এ ছেলে তো পুরাই ভদ্রের বাপ। তুই ওকে উঠতে বসতে মারলেও বিড়ালের মত বসে থাকবে কোন টু টা শব্দ করবে না। আমি বাপ হয়ে জেনে শুনে আমার বাজখাঁই বজ্জাত মেয়ের সাথে ওমন ভালো ছেলের বিয়ে দিয়ে ছেলেটার জীবন কী করে নষ্ট করি বল!
বাবার কথা শুনে নিশু এমন ভাবে হা করল যে, মনে হয় ওর আলজিব্বাহ্ পর্যন্ত দেখা যায়। নিশু রাগে হুংকার দিয়ে বলল,
_তুমি আমার বাবা হয়ে আমাকে এমন বলতে পারলে?
_বাবা বলেই বলতে পারলাম। নয়ত বাহিরের লোক বললে তুই এতক্ষনে তাকে নাকানি চুবানি খাওয়াতি।
_তুমি আমার বাবা নামের শত্রু।
_সে যাই বলিস আহুর সাথে আমি তোর বিয়ে দিবো না।
_বিয়ে দিবা না।
_নাহ্।
_তবে শোন বিয়ে না দিলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে আহুকে বিয়ে করব। তারপর তিনমাস পর এসে বলব বাবা তুমি নানা হবে। তখন মজা বুঝবে!
মেয়ের কথা শুনে নিশুর বাবা নিজামউদ্দীনের প্রেশার হাই হয়ে গেলো। উনি জানে নিশু যা বলে তা করে দেখায় তাই কোন উপায় না পেয়ে বিয়েতে মত দিলেন।
নিশু পার্লার থেকে বের হয়ে টুকটাক কিছু শপিং করে বাসায় চলে গেলো।
৩!!
সন্ধ্যার পর নিশু শাড়ি পরে লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে সেজে পাত্র পক্ষের সামনে গেলো। আহু হা করে তাকিয়ে থাকল কতক্ষন। নিশুর দুলাভাই আহুকে নিশুর পাশে বসালো ছবি তোলার জন্য। সবাই দুজনার জুটির বেশ প্রশংসা করল। আহু মৃদু স্বরে বলল,
_নিশু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
_তাহলে গালে একটা চুমো খাও।
_কী বলছো এসব! বড়রা শুনলে কী ভাববে!
_তোমার মত হাদারাম বয়ফ্রেন্ড যেনো কারো কপালে না জুটে। চার বছরের প্রেমে নিজে থেকে জড়িয়েও ধরলে না। চারটা বছর পুরো ওয়েস্ট।
_বিয়ে হলে তারপর।
নিশু কিছু বলতে নিবে তখন একজন বলল,
_কী ফুসুর ফুসুর হচ্ছে দুজনার মধ্যে হুমম! এমন কারো কথায় নিশু চোখ তুলে তাকিয়ে মুখ হা হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে চোখ দুটো খুলে বাইরে পড়বে। কারণ যে কথা বলছে সে আর কেউ নয় ব্যাংকের সে আন্টি। নিশু মনে মনে বলছে,
_এই মাল্টিকালার মালটা এখানে কী করছে? আমাকে চিনে ফেললে তো ক্যাচাল হয়ে যাবে।
তখন পাস থেকে নিশুর শ্বাশুড়ি বলল,
_বৌমা ওনি তোমার ফুফু শ্বাশুড়ি।
নিশু ফুফু শ্বাশুড়ি নাম শুনে ভিরমি খাবার জোগার হলো।
চলবে______
গল্পের কাহিনী, চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।