#ফুফু_শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
#পর্ব:২
_বৌমা ওনি তোমার ফুফু শ্বাশুড়ি।
নিশু ফুফু শ্বাশুড়ি শুনে ভিরমি খাবার জোগার হলো।
_নিশু খুব নিচু স্বরে বলল, আসসালামু আলাইকুম।
আওয়াজটা শুনেই চমকে উঠলেন রেশমী (ফুফু শ্বাশুড়ি)। তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল নিশুর দিকে নিশু মনে মনে দোয়া ইউনূস, আয়াতুল কুরসী, কালিমা, যত ধরনের দোয়া ও জানে সব পড়তে লাগল।
রেশমী নিশুর কাছে এসে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
_কই দেখি আমার দিকে তাকাও তো?
নিশু ঢোক গিলে তার দিকে তাকাল। রেশমী নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_তোমার সাথে কী আমার আগে কোথাও দেখা হয়েছে?
_নিশু মনে মনে বলল, মাল্টিকালার মালটা থুক্কু মানে ফুপুটা আমায় চিনে ফেলেনিতো আবার? আল্লাহ মালুম। কিন্তু মুখে মেকি হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল, জি না ফুফু আম্মা। আমি আপনাকে আগে কখনো দেখি নাই।
_ওহ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার চোখ আগে কোথাও দেখেছি। তোমার গলার স্বরটাও বেশ চেনা চেনা লাগছে। আচ্ছা তুমি বোরকা পরো?
_একদম না। আমার বোরকা পরতে একদম ভালো লাগে না।
_ওহ।
_আজ কী বের হয়েছিলে?
_জি না ফুফু আম্মা। সারাদিন ঘরে ছিলাম। মা আমাকে দুধের সর, হলুদ, নিম পাতা, গোলাপের পাপড়ি বেটে পেস্ট করে সেটা আমার মুখে লাগিয়ে দিয়েছিল। সারা দিন মায়ের সাথেই ছিলাম। বিশ্বাস না হলে বাবা মাকে জিজ্ঞেস করুন।
নিশুর মা সুমি বেগম নিশুর কথা শুনে থতামতা খেয়ে গেলেন। ওনি মনে মনে বলছে, পাজি মেয়েটা র্নিঘাত কোন বদমাইশি করছে। এখন কী সুন্দর করে মিথ্যা বলে আমায় ফাসিয়ে দিলো। এখন আমাকেও ওর জন্য মিথ্যা বলতে হবে। এ মেয়ের জ্বালায় আল্লাহ র্নিঘাত আমাকে নরকে পাঠাবে। আমি তো ওর মত পানির মত মিথ্যা বলতে পারি না। তবুও চেষ্টা করতে হবে। মানে মানে বিয়েটা হয়ে গেলে পুরো এলাকা হাপ ছেড়ে বাঁচবে। এ তো মেয়ে না টাইম বোম, যার ঘড়ির কাটা নষ্ট যখন-তখন, যেখানে-সেখানে ধুমদাম ফেটে যায়। রেশমী নিশুর মায়ের দিকে তাকাতেই সুমি বেগম একটু হেসে বলল,
_জি বেয়ান সত্যি বলছে, সারাদিন আমার সাথেই ছিলো।
রেশমী আরো কিছু বলতে গেলে আহুর মা আহিয়া বেগম বলল,
_কী শুরু করলি রেশমী? প্রশ্ন ব্যাংক খুলে বসলি এখানেও। এখানে পুলিশগিরি করিস না বোন। যা বৌমাকে আর্শিবাদ কর।
৪!!
রাতে আহু নিশুকে ফোনে জিজ্ঞেস করল,
_নিশু সত্যি করে বলো তো ব্যপার কী? ফুপি কী তোমাকে চিনে?
_হ্যাঁ আবার না?
_মানে?
নিশু ব্যাংকের ঘটনা খুলে বলল। আহু শুনে হা হয়ে বলল,
_সর্বোনাশ টিজিং করার আর লোক পেলে না তাও রেশমী ফুফুকে!
_কেন তোমার ফুফু কী বাঘ না ভাল্লুক।
_তার চেয়েও বেশি।
_হোয়াই বেবি!
_ফুপিকে আমাদের পুরো বংশের লোক ভয় পায়। ওনি রাজশাহী জেলার ডেপুটি কমিশনার ছিলো। দীর্ঘদিন পুলিশী কাজে দেশ সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। বিয়ে পর্যন্ত করেনি। জানো ফুফু তার জীবনে পাঁচটা এনকাউন্টার করছে।
নিশুর হাত থেকে ধুম করে ফোনটা পড়ে গেলো। ফোনটা তুলে বলল,
_লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, সুব্হানাকা ইন্নি কুন্তু মিনায যালিমীন। দোয়া ইউনূস পড়ে বলল, তোমার ফুফু এত ভয়ানক?
_জি। আমার বাবা তার বড় ভাই, তবুও বাবা তাকে ভয় পায়। আমাদের বাড়িতে তার কথার নড়চড় হয়না। সে গত বছর অবসর নিছে। একবছর আমেরিকা তার ছেলে রিমন এর কাছে ছিলো।
_এই না বললে, সে বিয়ে করেনি তবে ছেলে কোথা থেকে আসছে? লাউগাছ থেকে ছিড়ে আনছে নাকি।
_নিশু পুরা কথা তো শুনবা?
_রিমন আমার বড় ফুপির ছেলে। রেশমী ফুপি ছোট। বড় ফুপি রিমনের জন্মের পর মারা যায়। রেশমী ফুপিই তখন রিমনকে নিজের ছেলের মত মানুষ করতে থাকে। রিমন তাকে মা বলেই ডাকে। আর আমরা সবাই সেটা জানি আর মানি।
_ওয়াও তোমার ফুপি তো জোশ একজন মহিলা।
_জি। কিন্তু রাগী ভিষন। যদি কোন ভাবে জানতে পারে তুমি এ অকাজ করছো তাহলে বিয়ের কথা ভুলে যাও।
_আমি কী ইচ্ছা করে করছি নাকি!
_জি আপনি ইচ্ছে করেই করছেন।
_আহু।
_হুম।
_এখন কী হবে?
_দোয়া করো যাতে তোমাকে চিনতে না পারে।
নিশু চুপ করে রইল। আহু সেটা দেখে বলল,
_নিশু
_হুম
_থার্ড পেপার মানে কী?
_তোমার মাথা আমার মুন্ডু।
৫!!
দুদিন দিন পর রেশমী তার কলেজের এক কাজে নিশুদের এলাকায় গেলো। বহু পুরানো এক বান্ধবীর সাথে গতকাল তার দেখা হয়েছে। সে এ এলাকায় থাকে। আজ সারাদিন বান্ধবীর বাসায় থাকা প্ল্যান করে আসছে সে। আহুও তার সাথে আসছে। রেশমীকে তার বান্ধবীর বাসায় নামিয়ে দিয়ে আহু নিশুর সাথে দেখা করবে।
কিন্তু নিশুদের রাস্তার মোড়ে আসতেই রাস্তার অপজিট দিকে তাকাতেই আহুর চোখ খুলে হাতে পরার উপক্রম হলো। রাস্তার অপজিড সাইডে নিশু কটা ছেলেকে ব্যাট দিয়ে আচ্ছামত পিটানি দিচ্ছে। আহু রেশমীর দিকে তাকাতেই রেশমী বলল,
_আহু ওটা তোর হবু বৌ নিশীথিনী না।
_না একদম না ফুপি। তুমি ভুল দেখছ। চলো তোমাকে তোমার বান্ধবীর বাসায় দিয়ে আসি।
_না আমি ভুল দেখিনি। ওটা নিশ্চয়ই নিশু। চলত।
রেশমী আহুর হাত ধরে টেনে রাস্তার অপর পাশে যেতে নিলো। আহু মনে মনে বলল,
_গেলো গেলো। আমার বিয়েটা গেলো! ওরে নিশু তুমি কেন করো হিসু। না মানে সাপের মস হিস হিস। সবসময় নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ঘোরো। বেচারা কোন ছেলের জানি হাত পা ভাঙছে আজ। আচ্ছা নিশু কী বিয়ের পর এমন থাকবে! আমাকেও কী মারবে। কথাটা ভাবতেই আহুর গা ঝাড়া দিলো।
রাস্তর ওপর পাশে গিয়ে ভির ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখল। একটা ছেলে রাস্তায় বসে কাঁদছে। আর দুটো বলছে,
_ভাইরে মেয়েদের হাতে মার খেয়েছিস বলে কাঁদিস না। আমরাও তো খেয়েছি আমরা কী কাঁদছি।
ছেলেটা ইইইইইই——- এ্যা—— করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
_শালা তোদের মত দুটো দামরা বন্ধু থাকতে একটা মেয়ে আমাকে এমন ভাবে মারল। শালা এমন এমন জায়গায় ব্যাট দিয়ে মারছে যে, না কাউকে দেখাতে পারব আর না সহ্য করতে পারব আর না নিজে নিজে ব্যথার মলম লাগাতে পারব।
ওদের এমন উদ্ভ্রট কথা শুনে পাশের লোকজন মুখ টিপে টিপে হাসছে। রেশমী একজনকে জিজ্ঞেস করল,
_ভাই কী হয়েছে এখানে?
_আর বলবেন না আপা ঐ তিন হারামজাদা একটা মেয়েকে দেখে শিশ মেরে টিজ করছিল। সেটা দেখে আরেকটা মেয়ে ওদের আচ্ছমত ধোলাই দিছে।
_মেয়েটা কোথায়?
_জানিনা। হুট করে কোথায় যেনো গায়েব হয়ে গেলো।
রেশমী লোকটাকে ধমক দিয়ে বলল,
_গায়েব কি করে হয়! আহু চল নিশুদের বাসায়।
_ফুপি সেখানে কেন যাবে? তোমার বান্ধবী তো ওয়েট করছে।
_আরে রাখ তো বান্ধবী চল আমার সাথে।
রেশমী নিশুদের বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলে, আহু ছেলেগুলোর কাছে গিয়ে বলল,
_ভাই কাঁদিস না। তুই এমন এলাকায় এসে মেয়েদের টিজ করলি যেখানে কিনা এক সিংহী থাকে।
_ছেলেটা চোখ মুছে বলল, ভাই তুমি কে?
_আমি ঐ সিংহীর কবলে আটকা পড়া এক নিরীহ হরিণ। ছাগল বলতে পারতাম কিন্তু তাতে সম্মানে লাগে। তার থেকে হরিণ বেটার। চলি ভাই। যাবার আগে সাবধানে যাস। তোর প্যান্টের পিছন দিক ছিড়ে গেছে। ভিতরের স্বস্তা আন্ডারওয়্যার দেখা যাচ্ছে। মেয়েদের হাতে মার খেতে আসলে একটু ব্রান্ডের জিনিস পরে আসতে হয়। বোকা ছেলে।
ছেলেগুলো বোকার মত আহুর দিকে তাকিয়ে রইল। আহু দ্রুত গতিতে হেঁটে রেশমীর কাছে গেলো।
নিশুর বাবা রেশমী আর আহুকে দেখে খানিকটা অবাক হলেন।
চলবে______