শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর_২ লেখক-এ রহমান পর্ব ১৩

0
481

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর_২
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৩

রুমের এসি চালানো। গরম খুব একটা নেই। তবুও হিম শীতল হাওয়াটা শরীরে কোন অনুভূতি তৈরি করছে না। প্রচণ্ড বাজে ভাবে ঘামছে ইভান। মুখটায় লালাভ আভা ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র। শ্বাসটাও জোরে জোরে পড়ছে। বুকের ঠিক মধ্যখানটায় একটা চিনচিনে ব্যথা সুচের মতো আঘাত করছে। চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে। ঈশা ধিরে ধিরে চোখ মেলে তাকাল। ইভান সস্তির নিশ্বাস ফেললো। কপালে হাত রেখে ভীষণ আদুরে কণ্ঠে বলল
–খারাপ লাগছে?

ঈশা মাথা নাড়ল। উঠে বসতে চাইল। ইভান তাকে খুব জত্ন করে নিজের বুকে আগলে নিলো। ঈশার শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। সে খুব একটা নড়াচড়া করতে পারছে না। ঈশার যখন সিস্টের জন্য ট্রিটমেন্ট শুরু হয় তখনই ইলহাম বলেছিল যে অনেক হাই ডোজের ঔষধ খাওয়ার কারনে এটার এফেক্ট শরীরে অনেকদিন পর্যন্ত থাকবে। আর সেটার ফলেই একটু অনিয়ম হলেই হুট করে তার প্রেশার ফল করতে পারে। খুব নিয়মের মধ্যে থাকলে সেটা তাড়াতাড়ি রিকভার করতে পারবে। কিন্তু ঈশা একদম কেয়ারলেস। সে সেরকম ভাবে কোন নিয়ম মেনে চলে না। ইভানের উচিৎ ছিল বিষয়টা খেয়াল রাখা। কিন্তু অফিসের কাজের চাপে কয়েকদিনে ইভান নিজেই অস্থির হয়ে উঠেছে। নিজের খেয়াল রাখাই তার জন্য দুস্কর হয়ে পড়েছে। তাই ঈশারও খেয়াল রাখতে পারেনি। ইভান ঈশার মুখটা আলতো করে তুলে ধরে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো
–তুমি খেয়েছ?

ঈশা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আলতো করে মাথা নাড়ল। খায়নি সে। ইভানের খুব রাগ হল। ঈশা ভাবল রাগটা হয়তো তার উপরেই করেছে না খেয়ে থাকার জন্য। কিন্তু ইভানের নিজের উপরেই রাগ হল। ঈশা ধরেই নিলো ইভান এখন তাকে বকবে। তাই মিনমিনে কণ্ঠে বলল
–আমি তোমার…।

শেষ করতে পারল না কথাটা। ইভান শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ঈশা একটু অবাক হল। ইভানের শ্বাস অনেক জোরে পড়ছে। হৃদ স্পন্দনও বেড়ে গেছে। এতটাই বেড়ে গেছে যে ভয়ঙ্কর নিস্তব্ধ রুমের মাঝে ঈশা স্পষ্ট ইভানের হৃদ স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ফেললো ঈশা। ইভান আবেগি কণ্ঠে বলল
–সরি জান। আমি আসলে অনেক টেনশনের মাঝে ছিলাম। একটু বেশীই রিয়াক্ট করে ফেলেছিলাম। আমার উচিৎ ছিল তোমার কথা শোনা। আমি সত্যিই সরি।

ঈশা চোখ খুলে ফেললো। মাথা তুলে ইভানের দিকে তাকাল। ইভানের চেহারায় অপরাধ বোধটা স্পষ্ট। ঈশার খারাপ লাগলো। তার অন্তত বোঝা উচিৎ ছিল। একটা মানুষ কত দিকে সামলাবে। এমনিতেই অফিসের কাজের চাপ থাকেই। তার উপরে ঈশাকে নিয়ে টেনশন। তার নিজের উচিৎ ছিল বিষয়টাকে সহজভাবে নেয়া। ঈশা ক্লান্ত গলায় বলল
–তুমিও খাওনি কেন?

ইভান চোখ নামিয়ে বলল
–দুপুরে তোমার সাথে খাবো বলেই তাড়াতাড়ি বাসায় এসেছিলাম। কিন্তু কয়েকদিনের চাপে এতো টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলাম যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি। আমি সত্যিই সরি ঈশা। তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা তবুও কোন না কোন ভাবে তুমি আমার কাছ থেকে কষ্ট পাও।

ঈশা কোন কথা বলল না। ইভান বাইরে চলে গেলো। ঈশা পেছনে হেলে আরাম করে বসে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিছুক্ষন পরেই ইভান ঘুরে এলো খাবার হাতে নিয়ে। ঈশা চোখ খুলে ফেললো। ইভান ঈশার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
–খেয়ে নাও।

ঈশা উত্তর দিলো না। ইভান যত্ন করে ঈশার মুখে খাবার তুলে দিলো। ঈশা কয়েকবার খেয়ে বলল
–তুমি কখন খাবে?

ইভান উত্তর দিলনা। প্রসঙ্গ পালটে বলল
–জানতে চাইবে না ফোনের মেয়েটা কে ছিল?

মুহূর্তেই ঈশার আবার সব কথা মনে পড়ে গেলো। চাপা অভিমান খেলে গেলো মনের মাঝে। মুখটা থমথমে করে বলল
–নাহ!

ইভান বুঝতে পেরে স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–আমার অফিসের ক্লায়েন্ট ছিল। আমেরিকায় থাকে। তার সাথে একটা প্রজেক্টে কাজ করছিলাম। তাই অনেকবার কথা হয়েছে। আজকেই সেই প্রজেক্টের কাজ শেষ করে দিলাম। আর কথা বলতে হবে না।

ঈশা নিচের দিকে তাকিয়ে অভিমানী কণ্ঠে বলল
–কথা বলবে। তোমাকে কে নিষেধ করেছে।

ইভান মৃদু হাসল। বলল
–বিবাহিত এক বাচ্চার মায়ের সাথে কথা বলে আমার লাভ কি?

ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। বলল
–তাই? ঐ এক বাচ্চার মাই তোমাকে ভীষণ মিস করে।

ইভান ভ্রু কুচকে তাকাল। বলল
–তোমাকে কে বলল?

–ফোনে কথা বলে শান্তি হয়না তাই মেসেজ করে জানিয়ে দেয় ঠিক কতটা মিস করে।

ইভান ভ্রু কুচকে ফেললো। কৌতূহলী কণ্ঠে বলল
–মেসেজ করে মানে?

ঈশা পাশ থেকে ইভানের ফোনটা নিয়ে মেসেজ অন করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
–এই যে। দেখো তোমাকে কতোটা মিস করে।

ইভান মেসেজটা দেখে হতাশ শ্বাস ছাড়ল। এটার কারনেই ঈশা ওরকম আচরন করেছে। কিন্তু ইভান তো এটা দেখেয়নি। ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–এরকম হাজারটা মেসেজ কোন কিছুই ইঙ্গিত করে না। আমি যতক্ষণ না এসবের প্রতি কোন ইন্টারেস্ট দেখিয়েছি। তোমার ফোনেও এমন মেসেজ আসে। সেসব নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। তুমি যে মেসেজটা দেখেছো সেটা আমাকে জানাওনি। তা কেন জানাবে? তোমার তো ধারনা আমি প্রেম করি। সন্দেহ ছাড়া আর কি করতে পারো তুমি? আর রাতে তুমি ঘুমাচ্ছিলে বলেই আমি বারান্দায় গিয়ে কথা বলেছিলাম। যাতে তোমার ঘুম নষ্ট না হয়। যদি তুমি আমার সব কথা শুনে থাকো তাহলে এটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ যে অফিসিয়াল ছাড়া অন্যকোন কথা আমাদের মাঝে হয়নি। সেটা শুনেই বা কি লাভ। তোমার মনে তো আমাকে নিয়ে সব সময় সন্দেহ কাজ করে। আগেও এমনই ছিল। যে কাজটা আমি করিই নি সেটা নিয়েই তুমি আমাকে অপবাদ দিয়েছ। তোমার এরকম আচরন আমাকে সত্যিই খুব কষ্ট দেয়। সবাই জানে আমার সবকিছু এই ঈশাতেই আটকে আছে আর শুধু তোমাতেই সীমাবদ্ধ। ইভান শুধু তার ঈশাতেই আসক্ত। আর এটা তুমিই বোঝনা।

ঈশা একটু দমে গেলো। নরম কণ্ঠে বলল
–সরি আমার ওভাবে বলা উচিৎ হয়নি। মেসেজটা দেখেই আমার অনেক রাগ হয়েছিলো। তোমার সাথে এটা নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখনই ওভাবে কথা বলা উচিৎ হয়নি। পরেও জিজ্ঞেস করতে পারতাম।

ইভান তাচ্ছিল্য হেসে বলল
–আমি আগেও বলেছি এভাবে নিজের মতো সবকিছু ভেবে না নিয়ে আমার সাথে ক্লিয়ার করে কথা বলবে। আমি এই জীবনে কখনো তোমার কাছে মিথ্যা বলিনি। এভাবে চুপ করে আমার ফোন চেক করে কোন লাভ হয়নি। উল্টা সন্দেহটা বেড়ে গেছে। বিষয়টা খারাপ। আমাকে ভালভাবে জিজ্ঞেস করলেই এমন কিছুই হতোনা।

ঈশা কোন কথা বলল না। ইভান বিষয়টা সহজ করে নিয়ে বলল
–বাদ দাও। যা হবার হয়ে গেছে। কিন্তু তুমি সকাল থেকে খাওনি কেন?

ঈশা গলা নামিয়ে বলল
–তুমি খাওনি তাই। আর ভীষণ রাগ হয়েছিলো।

–তোমাকে বারবার একটা কথা কেন বলতে হয়? নিজেকে ঠিক রাখতে গেলে নিয়ম মেনে চলতে হবে। তুমি জানো নিয়ম না মানলে তোমার জন্য ক্ষতি। তুমি কি সুস্থ থাকতে চাও না? আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তোমার তাই না?

ইভানের ধমক শুনে ঈশা দমে গেলো। ভীত কণ্ঠে বলল
–আর হবে না।

ইভান কঠিন গলায় বলল
–এবার হলে তোমাকে স্টোর রুমে বন্ধ করে রেখে আসবো। জানই তো ওখানে কত তেলাপোকা। এটা ভাববে না যে আমি করতে পারব না। আমি যতটা ভালবাসতে পারি ঠিক ততটাই শাস্তি দিতেও পারি। যে যেটা ডিজারভ করে।

চলবে……

(আজ ভীষণ ব্যস্ত। গল্প দেয়ার কথা ছিল না। তবুও আপনাদের অনুরধের ভিত্তিতে ছোট করে দিলাম। রিচেক করা হয়নি। ভুলভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here