Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera Part – 19

0
721

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
Part – 19……………………

অলোকের ব্যবহারে হতবম্ভ মায়া সেগুন কাঠের ভারী দরজাটার দিকে তাকিয়ে আছে।। বুঝতে পারছেনা অলোক কে।। কি চায়?? কেন সে তাকে জোর করে এনে বিবাহ করল?? কেনই বা তার প্রতি এত চিন্তা?? সত্যিই কি ওই বার্বান সম্রাট তাকে ভালেবাসে?? কিন্তু এটা কোন ধরনের ভালোবাসা?? যেখানে নিষ্টুরতা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না??
.
—- রাজকুমারী???
.
লিয়ার ডাকে হুশ এলো মায়ার।।
.
—- কোথায় গিয়েছিলে আমাকে ফেলে??
.
—- রাজকুমারী সম্রাটের ইশারাই””””
.
—- আজ তুমি আবারো প্রমান করলে তুমি তোমার সম্রাটের দাসী!!!
.
—- না নাহ্!! তেমন না রাজকুমারী?? আমি আপনার জন্য জান দিতে পারি!!
.
মায়া আর জবাব দিল না।। শুধু ভাবতে লাগল।। তারপর হঠাৎ করেই যেন বীরের কথা মনে পড়ল।। মনে পড়তেই লিয়া কে ডাকল
.
—- লিয়া??
.
—- জি রাজকুমারী!!
.
—- আমি আরো একবার বীরের খবর চাই।। তাকে বন্দি খানা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাই।।
.
—- জি রাজকুমারী!! আমি দ্রুত খবর নিয়ে আসছি।।
.
লিয়া চলে গেল।। বেশ কিছুক্ষন পর খবর নিয়েই এলো।। বীর কে সত্যি বন্দি দশা থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।। এবং তাকে রাজ্যের বাহির করে দেয়া হয়েছে।। শুনে মায়ার মনে খানিকটা শান্তি এলো।। যাক বার্বান সম্রাট কথা রেখেছে।।
.
বিকেলে মায়া তৈরি হয়ে বাগানে বেড়িয়ে এলো।। লিয়া রয়েছে তার পিছন পিছন।। অলোকের কথা অনুযায়ী তার সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা।। কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে?? মায়ার ইচ্ছা ঈরানভা নগরী থেকে ঘুরে আসার।। না জানি তার রাজ্য কেমন আছে?? ভালো আছে নাকি বদলে গেছে।। বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।। তারপর সামনে তাকালো মায়া।। দূর থেকে আবছা ভাবে একটা লোক কে দেখা যাচ্ছে।। কালো পোশাক পরিহিত পাশে একটা কালো ঘোড়া।। লোকটি ঘোড়ার লাগাম ধরে নিয়ে আসছে।। মায়া তাকিয়ে রইল লোকটির দিকে।। কেন তা সে জানেনা।। মনে হল সামনে কোনো রুপকথার রাজপুত্র তার জন্য এগিয়ে আসছে ঘোড়ার লাগাম ধরে।। বিভীষা তখন ছোট বেলায় একটা কালো রাজকুমারের কথা বলত।। যে সব সময় কালো ঘোড়ায় চড়ত।। মায়া সব সময় সে রাজপুত্রের স্বপ্ন ও দেখত।। সামনে আবছা ভাবে দেখা যাওয়া লোকটা কে এখন মায়ার মনে হচ্ছে সে কালো রাজপুত্র।।
.
দেখতে দেখতে লোকটি সামনে দৃশ্যমান হল।। এতক্ষন যাকে মায়া কালো রাজপুত্র বলে ভাবছিল সেটা আর কেউ না।। বার্বান সম্রাট অলোক।। মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে অলোক সামনে দাড়ালো।। দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে মায়া আর লিয়া নিচু হয়ে অভিবাদন জানালো।। অলোক হাসি মুখে তা গ্রহন করল।। তারপর মায়ার দিকে এগিয়ে এসে হাত ধরে তার উল্টা পিঠে চুমু দিল।। খানিকটা অস্বস্থি লাগল মায়ার।। অলোক হাত টা ছেড়ে দিতেই মায়া হাতের পিঠ টা পিছনে নিয়ে মুছতে লাগল।। যেন মুছলে অলোকের চুমুর অনুভুতি টা ও চলে যাবে।। তারপর অলোক হাসি মুখেই বলল
—- আমার সম্রাজ্ঞী মায়া!! আপনি কি যাত্রার জন্য প্রস্তুত??
অলোকের এমন উক্তিতে খানিকটা বিস্মিত হল।। অলোক কোনো একটা দিক ছাড়ছে না মায়া কে বিস্মিত করার।। সুক্ষ ভাবে অলোক মায়া কে নিজের দিকে টানছে।। ভ্রু কুচকে মায়া জবাব দিল
—- অবশ্যই সম্রাট!!!
.
এরপর অলোক মায়ার হাত ধরে সামনের আস্তাবলে নিয়ে গেল।। সেখানে সারি সারি বিভিন্ন রংয়ের ঘোড়া বাধা আছে।। ঘোড়ার দিকে ইশারা করে অলোক মায়া কে বলল
—– মায়া তোমার জন্য একটা ঘোড়া পছন্দ করে নাও।।
মায়া তাকিয়ে দেখল লাল, বাদামি, কালো সাদা সহ আরো অনেক ঘোড়া রয়েছে।। মায়া বেচে বেচে নিজের পছন্দের একটা ঘোড়া নিল।। দুধের মত ধবধবে সাদা ঘোড়া।। যেন পঙ্খিরাজ!!!
ঘোড়া বাছা শেষ হলে দুজনে বেড়িয়ে পড়ল ঘুরতে।। অলোক আগে আগে চলছে আর মায়া পিছু পিছু।। এতদিন যে জিনিস টা মায়ার নজরে পড়ে নি সেটা হল বার্বান রাজ্যের সৌন্দর্য্য।। যেতে যেতে মায়া হা করে দেখতে লাগল সবকিছু।। অবশেষে ঘোড়া থামলে অলোক মায়া কে নামতে সাহায্য করল।। অলোক যে জায়গায় মায়া কে নিয়ে এসেছে তা দেখে মায়ার হুশ উড়ে গেল।। এমন সৌন্দর্য্য সে কখনো দেখেনি।। এমন কি ঈরানভা তেও না।। মায়া দেখল সামনে কাচের তৈরি বিরাট পুষ্পশোভিত দ্বার।। সচরাচর দ্বার পাথরের হয়ে থাকে।। কিন্তু এটা একদম স্বচ্ছ কাচের।। যাতে একটা লতা পেচিয়ে আছে আর সেথানে ছোট ছোট ফুল ফুটে আছে।। হা করে রইল মায়া।। বিস্মিত মায়া কে হাত ধরে অলোক ভিতরে প্রবেশ করালো।। ভিতরে ঢুকে আরো অবাক হল মায়া।। ভিতরে এক পাশে এত সুন্দর ফুল ফুটে উঠে আছে যে গুলো মায়া আগে কখনো দেখেনি।। আর অপর পাশে পানির ফোয়ারা।। আরো একটু সামনে এগিয়ে যেতেই সামনে দেখল একটা ছোট্ট মহল।। তাও কাচের তৈরি।। রোদ পড়ে তা আলোক রশ্নি ছড়িয়ে ঝল মল করছে।। এ যেন স্বর্গীয় প্রাসাদ!!
এরপর অলোক আস্তে করে মায়া কে ডাকলো
.
—- মায়া??
.
—- হুম!!
.
—- মহল টা পছন্দ হয়েছে??
.
—- হুম!! এ-এটা খুব সুন্দর!!
.
—- তোমার জন্য!!
.
মায়া এতক্ষন হা করেই তাকিয়েই ছিল।। হারিয়ে গিয়েছিল প্রাসাদের সৌন্দর্য্যে।। অলোক কি বলছিল তা তার কানের আশে পাশেও যাচ্ছিল না।। হঠাৎ চমকে উঠল অলোকের স্পর্শে।। অলোক মায়া কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।। পেটের উপর অলোকের হাতের স্পর্শ মায়া কে শিহরিত হতে বাধ্য করছিল।। হুশ ফিরে এলো মায়ার।। নজর ফিরিয়ে ফেলল কাচ মহল থেকে।। অলোক ততক্ষণে তার ঘাড়ে মাথা গুজে মায়ার মিষ্টি গন্ধটা শুকছে।। অস্বস্থি লাগছিল মায়ার!! কাপা গলায় অলোক কে ডাকল
.
—- স-স-সম্রাট আ-আপপনি কি-কি করছেন??
.
অলোক জবাব দিল না।। মায়া অলোকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইল।। কিন্তু তার আগে অলোক কথা বলে উঠল
.
—- সম্রাট না!! বল অলোক!!
.
—- জি??? স-সম্রাট??
.
—- মায়া!!
.
—- অ-অ-অললোক!!!!
.
—- আরেক বার!!
.
—- অলোক!!
.
এবার অলোক ছেড়ে দিল।। মুখে এক টুকরো বিশ্ব জয়ের হাসি।। যেন সে মাত্রই বিশ্ব জয় করে বার্বান চিহ্ন একেছে।। আজ সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি সম্রাট।। কারন তার সম্রাজ্ঞী তার কাছে আছে।। তার প্রেম তার কাছে আছে।। বড় একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিল অলোক।। তারপর সে মায়াকে তার মুখো মুখি দাড় করিয়ে মুগ্ধ চোখে মায়া কে দেখতে লাগল।। কোমড় সমান লম্বা ঢেউ খেলানো চুল।। বাতাসে কয়েক টি দুষ্টু চুল উড়ছে।। মায়া তার লতার মত হাত দিয়ে সে চুল গুলো কে বার বার আয়ত্বে আনার চেষ্টা করছে।। কিন্তু অবাধ্য চুল গুলো মায়ার বাধা না শুনে ওড়নার বাহির হয়ে অলোকের দৃষ্টির সামনে উকি ঝুকি মারছে।। অলোক আঙ্গুল চালিয়ে সে চুল গুলো কে ঠিক করে দিল।। ফর্সা আপেলের মত গোল গালের দুপাশে একটু খানি করে লাল হয়ে আছে।। যেন কেউ দুই গাল ধরে খামছি দিয়ে কামড় দিয়েছে।। কিন্তু কার এত বড় সাহস যে তার মায়ার আপেলের মত গাল ধরে খামছি দেবে।। এই গাল ধরে একমাত্র সেই খামছি দিয়ে কামড় দেবে।। মায়ার ফোলা ফোলা গালে কামড় দেয়া কথা ভাবতেই মনে মনে হেসে উঠল অলোক।। বুড়ো আঙ্গুল টা বুলালো তার লাল গালের উপর।। বড় বড় সবুজ চোখ দুটো টিপ টিপ করে তাকে দেখছে।। অনেকটা সাগরের স্বচ্ছ পানির মত।। যেখানের অলোকের বার বার ডু্বতে ইচ্ছা করছে।। আর সরু নাকটা?? এক টুকরো বাশির ন্যায় ছোট্ট সরু নাক!!!
মায়া বুঝতে পারছিল না তাকে এভাবে মনোযোগ দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার কি প্রয়োজন?? বুঝতে না পেরে মায়া বলে উঠল
.
—- স-সম্রাট???
.
—- শসসসসসহ!!
.
মায়া কে চুপ থাকতে ইশারা করে অলোক আরো কতক্ষণ মায়া কে খুটিয়ে দেখল।। মায়া বিরক্তি ধরে যাচ্ছিল।। তাকে এত কি দেখার আছে???
.
মহলে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধা হয়ে এলো।। তাকে কক্ষ পর্যন্ত এগিয়ে দরবারে চলে গেলো অলোক।। মায়া গোসল সেরে সবে মাত্র দর্পনের সামনে বসেছে।। লিয়া কিছু একটা আনতে বাইরে গিয়েছে।। ঠিক তখন তার কাছে একজন দাসী এসে একটা পত্র দিল।। ভ্রু কুচকে মায়া দেখল এটা বেনামী পত্র।। তার পর আরেকটু ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো কোনে তাদের ঈরানভা রাজ্যের চিহ্ন।। চিহ্ন দেখে মায়া চোখ বড় বড় করে ফেলল।। কারন এই চিহ্নের মানে সহজে সাধারন কেউ বুঝবে না।। শুধু মাত্র গুপ্তচর বৃত্তির ক্ষেত্রে তাদের রাজ্যে এই চিহ্ন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।। মায়ার বুক ধক ধক করতে লাগল।। বীরের পত্র নয়তো?? মায়া পত্র খোলার সাহস করল না।। কারন যে কোনো মুহুর্তে লিয়া চলে আসতে পারে।। তাই মায়া রাতের জন্য সযত্নে পত্র টা লুকিয়ে রাখল।।
.
(চলবে)
.
গত কয়েক দিন ধরে আমার প্রচুন্ড জ্বর ছিল।। ওই কয়েক দিন পার্ট দিতে পারলেও কাল দিতে পারি নি কারন কাল আমার নিজেরি হুশ ছিল না।। ঘুমে ঘুমে দিন গিয়েছে।। আশা করি বুঝবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here